সবাই রিমঝিম আর তার মায়ের দিকে এগিয়ে যায়। টুনি বলল, “আপনি কেমন করে খবর পেলেন? এত তাড়াতাড়ি কেমন করে চলে এলেন?”
“আমি তো জানি না! একজন আমার বাসায় একটা প্লেনের টিকিট নিয়ে গেছে। বলেছে আমার মেয়েকে পাওয়া গেছে, এক্ষুনি আসতে হবে”
বাই কাজেম আলী চাচার দিকে তাকাল। কাজেম আলী চাচা বলল, “হ্যাঁ। আমি পাঠিয়েছি।”
“আপনি কেমন করে খুঁজে বের করলেন।”
“সবগুলো থানায় খোঁজ নিয়েছি, মেয়ে হারিয়ে গেছে এরকম জিডি আছে কী না। মোহাম্মদপুর থানায় পেয়ে গেলাম, সেখান থেকে ঠিকানা বের করে ম্যাডামকে খুঁজে বের করেছি। স্যারকে বলতেই স্যার টিকিটের ব্যবস্থা করলেন। আমি এখানে থানায় জানিয়ে দিলাম। খুবই সোজা।”
টুনি কাজেম আলী চাচাকে বলল, “আপনার নামটা একেবারে সঠিক।”
“মানে?”
“কাজের মানুষ–তাই নাম কাজেম আলী।”
কাজেম আলী চাচা একটু হাসল। তারপর ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে বলল, “ম্যাডাম, হোটেলে আপনার একটা রুম বুক করে রাখা আছে। ছয়তলার ছয় শ বারো। হোটেলের বিল নিয়ে মাথা ঘামাবেন না, আমাদের স্যার সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন।”
“সে কী? আমার হোটেলের বিল আমি দিতে পারব”
“অবশ্যই পারবেন। কিন্তু স্যার দিতে চাইছেন। এই বাচ্চাদের মাঝে বড় বড় ডিটেকটিভ আছে, স্যার তাদের সবাইকে নিয়ে এসেছেন। তাদের মাঝে রিমঝিমকেও ঢোকানো হয়েছে। রিমঝিমের গার্জিয়ান হিসেবে আপনি।”
ভদ্রমহিলা আরো কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু কাজেম আলী চাচা কোনো সুযোগ দিল না। বড় একটা হাই তুলে কাছাকাছি একটা বিচ চেয়ারের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বলল, “ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমিয়ে নেই।”
সবাই দেখল, কাজেম আলী চাচা একটা বিচ চেয়ারে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। একটু পরেই তার নাক ডাকতে থাকে।
টুম্পা বলল, “কাজেম আলী চাচার নাম আসলে হওয়া উচিত ছিল ঘুমা ঘুমা আলী।”
টুনি বলল, “ঠিকই বলেছিস।”
অন্যেরাও তখন মাথা নাড়ল। তারপর মাথা ঘুরিয়ে রিমঝিমের দিকে তাকাল।
রিমঝিমের আম্মু রিমঝিমকে বুকে চেপে ধরে বালুতে পা ছড়িয়ে বসে আছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে হাতটা একটু আলগা করলেই রিমঝিম বুঝি আবার হারিয়ে যাবে, তাই কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না।
কিছুতেই না।
গুটলু
দাদি (কিংবা নানি) বসে বসে টেলিভিশন দেখছেন তখন তার টেলিফোনটা বাজল। প্রথম দুটো রিং দাদি খেয়াল করলেন না, তৃতীয় রিং শুনে ফোনটা খুঁজতে শুরু করলেন, খুঁজে খুঁজে বের করে টেলিফোনটা ধরতে ধরতে লাইন কেটে গেল। এটি অবশ্যি নতুন কিছু না, দাদি (কিংবা নানি) কখনোই একবারে ফোন ধরতে পারেন না। কমপক্ষে দুইবার চেষ্টা করতে হয়। টেলিফোনটা ধরার জন্য কোন বোতামটা টিপতে হয় সেটাও তার মনে থাকে না তাই বেশির ভাগ সময় ফোন ধরতে গিয়ে লাইন কেটে দেন।
ফোনটা খুঁজে পেয়ে তার স্ক্রিনের দিকে তাকালেন, কে তাকে ফোন করার চেষ্টা করেছে পড়ার চেষ্টা করলেন। দাদি স্ক্রিনটা স্পষ্ট দেখতে পেলেন না। কোনো কিছু ভালো করে দেখতে হলে সবাই সেটা চোখের কাছে আনে, দাদির বেলায় সেটা উল্টো। দাদি সেটাকে যতদূর সম্ভব দূরে নিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। এবারেও সেভাবে চেষ্টা করতে লাগলেন তখন টুম্পা বলল, “নানি, তোমার এত কষ্ট করতে হবে না। আমাকে দাও, আমি পড়ে দিই।”
নানি তখন টেলিফোনটা টুম্পার হাতে দিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, দেখ দেখি কে টেলিফোন করেছে। মানুষের কোনো ধৈর্য নেই, ফোনটা ধরার আগেই লাইনটা কেটে দেয়।”
টুম্পা বলল, “না নানি। তুমি ফোন ধরতে এত দেরি করো যে লাইন কেটে যায়।”
“হয়েছে–আমাকে শিখতে হবে না। কে ফোন করেছে দেখ।”
টুম্পা খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, “ঠিক বোঝা যাচ্ছে না নানি। মনে হয় লেখা দুষ্টু ছেলের মা
“দুষ্টু ছেলের মা? সর্বনাশ! দুষ্টু ছেলের মা কেন ফোন করছে? চলে আসবে তো?”
দুষ্টু ছেলের মাটি কে, সে ফোন করলে কেন সর্বনাশ, চলে আসলে কী হবে টুম্পা কিছুই বুঝতে পারল না। কিন্তু তখন আবার টেলিফোন বেজে উঠল, দুষ্টু ছেলের মা আবার ফোন করছে। টুম্পা তাড়াতাড়ি ফোনটা তার নানির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নাও নানি! সর্বনাশ হয়ে গেছে। দুষ্টু ছেলের মা আবার ফোন করেছে।”
নানি ফোনটা নিয়ে কয়েক সেকেন্ড ভয়ে ভয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে রইলেন তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে ফোনটা ধরলেন, তারপর ভয়ে ভয়ে বললেন, “হ্যালো।”
দুষ্টু ছেলের মা মানুষটি কে টুম্পা জানে না কিন্তু তার গলার স্বরে যথেষ্ট জোর, টুম্পা কাছে বসে থেকেই তার কথা স্পষ্ট শুনতে পেল। দুষ্ট ছেলের মা বলল, “চাচি! কেমন আছেন? কতদিন আপনার সাথে যোগাযোগ নাই।”
নানি ভয়ে ভয়ে বললেন, “কেন ওই যে চন্দনের বিয়েতে দেখা হলো–”বিয়েতে দেখা হলে ভিড়ের মাঝে কী কথা বলা যায়?”
নানি দুর্বল গলায় বললেন, “ইয়ে তা মানে আজকাল সবাই যেরকম ব্যস্ত এইভাবেই তো কথা বলতে হবে!”
দুষ্টু ছেলের মা তেজি গলায় বলল, “না, না চাচি, আমি এসে ভালো করে কথা বলতে চাই।”
নানি মিনমিন করে শোনা যায় না প্রায় সেইভাবে বললেন, “ঠিক আছে, এসো একবার—”
অন্যপাশ থেকে বলল, “আমার দেবরের বিয়ে। বিয়ের কার্ড দিতে আসব।”
নানি প্রায় হা হা করে উঠে বললেন, “আরে আজকাল কী আর কেউ কার্ড দিতে বাসায় আসে? কবে কোথায় বিয়ে ফোনে বলে দাও তাহলেই হবে! আমি চলে আসব।”