“সেভাবেই বলব।”
কাজেম আলী কিছু না বলে আবার ঘুমিয়ে গেল। একজন মানুষ যে এভাবে ঘুমাতে পারে এবং ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সব কথা শুনতে পারে সেটা আগে কেউ কখনো দেখে নাই।
.
সন্ধ্যেবেলা বাবা ছোট মেয়েটাকে নিজের রুমে রেখে নিচে লবিতে এসে কাউন্টারে কিছু একটা বলে যখন ফিরে যাচ্ছিল তখন কাজেম আলী তাকে থামাল, বলল, “ভাই সাহেব, আপনার সাথে একটা ছোট মেয়ে আছে না?”
“একজন মা এসে তার মেয়ে আর মেয়ের বাবাকে খুঁজছে।”
মানুষটা ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো চমকে উঠল, দূরে সোফায় টুনি মুনিয়াকে নিয়ে বসেছিল, তারা কথা শুনতে পাচ্ছিল না কিন্তু মুখের ভাব-ভঙ্গি দেখেই বুঝে গেল।
মানুষটার চেহারা কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে যায়, কাঁপা গলায় বলল, “মহিলা? আমাকে খুঁজছে?”
“আপনাকেই খুঁজছে কী না জানি না, কিন্তু আপনার সাথে যেহেতু ছোট একটা মেয়ে আছে তাই আপনাকে জানালাম।”
“কোথায়? এখন কোথায় সেই মহিলা?”
“বিচে দেখেছি। এখন কোথায় সেটা তো জানি না।” “কী রকম মহিলা?
কাজেম আলী হাসার ভঙ্গি করল, বলল, “সেটা তো বলতে পারব না–তবে মহিলাকে খুব দুশ্চিন্তার মাঝে আছেন মনে হল। আপনার ওয়াইফ নাকি?”
“আ-আ-আমার?” মানুষটা কথাটা শেষ করল না।
একটু দূরে সোফায় বসে থাকা টুনি মুনিয়াকে ফিস ফিস করে বলল, “মুনিয়া, তুই ঠিকই ধরেছিস। বাবাটা দুই নম্বুরী। মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে এনেছে।”
“এখন? এখন কী করব?”
“বাবাটাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে আমরা বুঝে গেছি।”
“কীভাবে করবে সেটা?”
“আয় আমার সাথে।” টুনি উঠে দাঁড়াল তারপর হেঁটে হেঁটে কাজেম আলী চাচা আর মানুষটাকে কাছে গিয়ে বলল, “কাজেম আলী চাচা–”
কাজেম আলী চাচা ঘুরে তাকাল, একটু অবাক হয়ে বলল, “কী ব্যাপার?”
“মনে আছে একটা মা তার মেয়ে আর বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল?”
কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে কাজেম আলী চাচা বলল, “হ্যাঁ। তার কী হয়েছে?”
“মা তার মেয়ে আর হাজব্যান্ডকে খুঁজে পেয়েছে।”
“খুঁজে পেয়েছে?”
“জী। একটু আগে দেখা হয়েছে। মেয়েটার আব্বুর মোবাইল হারিয়ে গেছে তো সেইজন্যে ফোন করতে পারছিল না।”
কাজেম আলীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা যেন হঠাৎ করে জীবন ফিরে পেল। বলল, “পেয়েছে? খুঁজে পেয়েছে?”
“জী।” বলে টুনি মুনিয়ার হাত ধরে টেনে বলল, “আয় মুনিয়া আমরা যাই।”
মানুষটার রক্তশূন্য মুখে ধীরে ধীরে রক্ত ফিরে আসতে থাকে, হাসি হাসি মুখে বলল, “এই সিজনে কক্সবাজারে এত মানুষ আসে যে সবসময় একজন আরেকজনকে হারিয়ে ফেলে।”
টুনি কিছু বলল না, মুনিয়াকে নিয়ে হোটেলের লিফটে ঢুকে গেল।
.
রাত্রে ডিনারের টেবিলে কাজেম আলী সবাইকে একটা খবর দিল। ছোট মেয়েটাকে নিয়ে বাবা পরদিন হোটেল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। রাত্রে লবিতে একটা মানুষের সাথে বাবাটাকে পাসপোর্ট নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। কাজেই মনে হচ্ছে মেয়েটাকে নিয়ে সে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।
মুনিয়া বলল, “না, যেতে দেব না।”
অন্যরাও মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে।”
শান্ত বলল, “পুলিশে খবর দেই?”
ছোটাচ্চু বলল, “পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে পুলিশকে বললে, অন্য ঝামেলা হতে পারে।”
“তাহলে? তাহলে কী করব?”
টুনি হাসিমুখে বলল, “কিডন্যাপ করা মেয়েটাকে আমরা কিডন্যাপ করব।”
সবাই চোখ বড় বড় করে তাকাল। বলল, “কীভাবে?”
টুনি বলল, “কয়েকটা উপায় আছে। একটা হতে পারে এরকম–”
টুনি তখন তার প্ল্যানটা বলতে থাকে, অন্যেরা মন দিয়ে শুনে।
.
সকাল দশটার দিকে হোটেলের ফোন দিয়ে মানুষটার কাছে শান্ত ফোন করল। শান্ত ফোনের ওপর এক টুকরো কাপড় রেখে কীভাবে জানি গলা মোেটা করে কথা বলতে পারে।
অন্যপাশে ছোট মেয়েটার বাবা ফোন ধরল, বলল, “হ্যালো।”
“ইমতিয়াজ সাহেব?” (চেক ইন কাউন্টার থেকে কাজেম আলী চাচা মানুষটার নাম জোগার করে দিয়েছেন।)
“কথা বলছি।”
“আপনি একটু লবিতে আসতে পারবেন?”
“আমি? লবিতে? কেন?”
“আপনার মেয়ের পাসপোটটা নিয়ে একটু কথা বলতে হবে। ভিসার তারিখ নিয়ে একটা সমস্যা আছে, দুই মিনিটের জন্য নিচে আসেন।”
“কী সমস্যা?”
“নিচে আসেন সামনাসামনি বলি।”
“আসছি। পাসপোর্ট নিয়ে আসব?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ। নিয়ে আসেন।”
দুই মিনিটের ভেতর মানুষটা পাসপোর্ট নিয়ে নিচে নেমে গেল। সাথে সাথে টুনি মুনিয়াকে নিয়ে মানুষটার রুমের সামনে গিয়ে দরজার টোকা দিল।
ভেতর থেকে বাচ্চা মেয়েটার গলার স্বর শোনা গেল? “কে?”
“আমরা। দরজা খোলো। তাড়াতাড়ি।”
মেয়েটা দরজা খুলল, কেমন যেন ভয় ভয় চোখে তাকাল তাদের দিকে। জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে?”
“পরে বলব। এখন আস আমাদের সাথে। “কোথায়?”
“আমাদের রুমে।”
“কেন?”
“তোমাকে তোমার আম্মুর কাছে নিয়ে যাব।”
“সত্যি?”
টুনি বলল, “সত্যি।”
“দাঁড়াও জামাটা বদলে আসি।”
টুনি বলল, “না, না, কিছু বদলাতে হবে না। এইভাবে চলে এসো।”
টুনি মেয়েটার হাত ধরে টেনে বের করে নিয়ে আসে। তারপর দরজাটা বন্ধ করে প্লাস্টিকের কার্ড ঢোকানোর সুটের মাঝে এক টুকরো টিস্যু ভাঁজ করে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল। মানুষটা ফিরে এসে তার ঘরটা সহজে খুলতে পারবে না। আগে খিমচে খিমচে টিস্যুগুলো বের করতে হবে।
মুনিয়া মেয়েটার হাত ধরে টেনে নিতে থাকে। টুনি তাকে নিজের রুমে নিয়ে গেল। ভেতর অন্য সবাই অপেক্ষা করছে, ঢোকা মাত্র তারা দরজা বন্ধ করে ফেলল। শাহানার হাতে একটা কাঁচি, সে মেয়েটাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তোমার নাম কী আপু?”