টুনি বলল, “ভিডিওটা দেখার জন্য আমার একটা ল্যাপটপ লাগবে। জয়ন্ত কাকু একটা ল্যাপটপ কী আনা যাবে?”
“হ্যাঁ। হ্যাঁ। অবশ্যই আনা যাবে বলে জয়ন্ত কাকু তার একজন কর্মচারীকে বললেন, “আমার অফিস ঘরের টেবিল থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে আসো দেখি।”
কর্মচারীটা সাথে সাথে অফিস ঘরের দিকে দৌড়াল। শান্ত জিজ্ঞেস করল, “স্পাই পেনটা কোথায়?”
টুনি বলল, “সিকিউরিটি গার্ড আংকেলের কাছে। গার্ড আংকেল দেবেন একটু?”
মোটাসোটা সিকিউরিটি গার্ড খুবই গম্ভীর মুখে পকেট থেকে একটা ছোট প্যাকেট বের করে দিল। টুনি সাবধানে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে সেটা খুলে ভেতর থেকে একটা কলম বের করল, বলল, “এই যে স্পাই পেন।”
শান্ত বলল, “হায় খোদা! এইটা তো দেখতে একেবারে কলমের মতো।”
“এই জন্যে এইটার নাম স্পাই পেন। এর ভেতরে ভিডিও ক্যামেরা আছে। ইউএসবি পোর্ট আছে। একটু আগে আমরা কন্ট্রোল রুমের কম্পিউটারে দেখেছি। পুরো ভিডিওটা আছে, এখন সবাইকে দেখাব।”
টুনি কলমের মতো দেখতে স্পাই পেনটা সোজা করে ধরে সবাইকে দেখাতে দেখাতে বলে “এইটার সামনে ক্যামেরাটা। যখন রেকর্ড করে তখন পেছনে একটা সবুজ এলইডি জ্বলে-নেভে। ব্যাটারি কমে গেলে এলইডিটা লাল হয়ে জ্বলে, তখন চার্জ করতে হয়।”
টুনি যখন স্পাই পেনটা উঁচু করে ধরে রেখেছে তখন হঠাৎ যে ঘটনাটা ঘটল তার জন্যে কেউ প্রস্তুত ছিল না। কাদেরী বখস হঠাৎ ছুটে এসে একটা লাফ দিয়ে স্পাই পেনটা ছিনিয়ে নিয়ে উল্টো দিকে দৌড় দিল। সবাই এত হকচকিয়ে গেল যে প্রথমে কয়েক সেকেন্ড কেউ বুঝতেই পারল না কী হচ্ছে। যখন বুঝতে পারল তখন কয়েকজন কাদেরী বখসের পেছন পেছন ছুটল। বাসার বাইরে দৌড়ে গিয়ে কয়েকজন তাকে ধরে ফেলল। হাত থেকে স্পাই পেনটা কেড়ে নিল একজন। তারপর তাকে টেনেহিঁচড়ে ভেতরে নিয়ে এলো, তাকে ধরে আনার জন্যে চিকন লাল টাইটা খুব কাজে লাগল।
সিকিউরিটি গার্ড তাকে পিছমোড়া করে ধরে রাখল। অতি উৎসাহী একজন একটা ঘুষি মারার চেষ্টা করছিল জয়ন্ত কাকু তখন প্রচণ্ড একটা ধমক দিল, “খবরদার কেউ গায়ে হাত দেবে না।”
কাদেরী বখসকে ধরে জয়ন্ত কাকুর সামনে আনা হলো। মানুষটা নিচের দিকে তাকিয়েছিল, মাঝখানে সিঁথি করে যত্ন করে চুলকে দুইভাগ করে টাক মাথাটাকে ঢেকে রাখা হয়েছিল এখন সব ওলটপালট হয়ে টাক মাথা বের হয়ে কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে।
জয়ন্ত কাকু বলল, “কাদেরী সাহেব, আপনাকে আমি বিশ্বাস করে আমার এখানে চাকরি দিয়েছি আর আপনি এরকম একটা কাজ করতে পারলেন? আমার চার-চারটা পেইন্টিং চুরি করলেন। চুরি করতে গিয়ে পেইন্টিংগুলোর কত ডেমেজ করেছেন কে জানে–”
কাদেরী বখস নাক দিয়ে ফোঁস ফোঁস শব্দ করতে করতে বলল, “স্যার আমি চুরি করতে চাই নাই স্যার। আমি স্যার হাই ফেমিলির ছেলে–জীবনে এই কাজ করি নাই। আমাকে স্যার একজন বাধ্য করেছে। সেই মানুষ অনেক ভয় দেখিয়েছে।”
জয়ন্ত কাকু ধমক দিয়ে বলল, “এসব বাজে কথা বলবেন না। কেউ কাউকে ভয় দেখিয়ে চুরি করাতে পারে না।”
কাদেরী বকস দুই হাত জোর করে বলল, “স্যার, আমাকে পুলিশে দেবেন স্যার। আল্লাহর কসম লাগে স্যার, আমি সব পেইন্টিং ফেরত দেব স্যার। আমার ফেমিলি পথে বসবে স্যার।”
সবাই গোল হয়ে ঘিরে কথাবার্তা শুনেছিল। তখন একজন বলল, “ল্যাপটপ এসে গেছে। চুরির ভিডিওটা আগে দেখি আমরা।” সবাই বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ দেখি। স্পাই পেনটা কার কাছে?”
একজন স্পাই পেনটা টুনির হাতে দিল। টুনি সেটা হাতে নিয়ে একটু লাজুক মুখে হেসে বলল, “আসলে কোনো ভিডিও নাই।”
“ভিডিও নাই মানে?” শান্ত চিৎকার করে বলল, “স্পাই পেন ভিডিও রেকর্ড করে নাই?”
টুনি বলল, “এইটা স্পাই পেন না। এইটা শাহানাপুর বল পয়েন্ট কলম।” তারপর কলমটা শাহানাপুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, “নাও শাহানাপু তোমার কলম।”
শান্ত কেমন জানি রেগে উঠল, “তার মানে, তার মানে–”
টুনি হাসি হাসি মুখে বলল, “আমরা জানি চারটা পেইন্টিং চুরি গেছে। কিন্তু কে চুরি করেছে সেইটা তো জানি না। সেইটা ধরার জন্য এই নাটকটা করেছি।”
শান্ত তখনো রেগে আছে। চোখ মুখ লাল করে বলল, “তুই এইভাবে এতজন মানুষের সামনে এইভাবে মিথ্যা কথা বললি কেমন করে?”
যারা ঘিরে দাঁড়িয়েছিল তারা এতক্ষণে আসল ব্যাপারটা বুঝতে শুরু করেছে। প্রথম একজন-দুইজন, তারপর সবাই হাসতে শুরু করেছে। সবার শেষে ব্যাপারটা বুঝতে পারল কাদেরী বকস, তখন তার যা একটা চেহারা হলো সেটা আর বলার মতো না।
জয়ন্ত কাকু সিকিউরিটি গার্ডকে বলল, “আপনি একে নিয়ে যান। যদি আসলেই চারটা পেইন্টিং ফেরত দেয় একটা মুচলেকা লেখিয়ে ছেড়ে দেবেন। যদি না দেয় থানায় হ্যাঁন্ডওভার করেন।”
কাদেরী বকস নাক দিয়ে ফোঁস ফোঁস শব্দ করে বলল, “দেব স্যার। ফেরত দেব। খোদার কসম।”
সিকিউরিটি গার্ড কাদেরী বখসের হাত ধরে নিয়ে যাবার আগে টুনির কাছে এসে বলল, “থ্যাংকু টুনি। তুমি চোরকে ধরে না দিলে খুব লজ্জার ব্যাপার হতো! আমাদের চাকরি থাকত না। আমার কোম্পানির বসকে আমি তোমার কথা বলব।”
টুনি বলল, “আপনাকেও থ্যাংকু, আমার সাথে একটিং করতে রাজি হওয়ার জন্য।”
শান্ত বলল, “চল, এখনই খাই।”
সবাই বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ খাই। যা খিদে লেগেছে সেটা আর বলার মতো না।”