সিকিউরিটি গার্ড বলল, “ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করে বের করতে হবে।”
তারপর মাউস দিয়ে এখানে সেখানে টোকা দিয়ে দ্রুত ভিডিওটা চালু করে জায়গাটা বের করে আনল। টুনি তখন ভিডিওটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখল। আর্ট মিউজিয়ামটা দেখা যাচ্ছে, ভেতরে কেউ নেই, শুধু ছবিগুলো ঝুলছে। হঠাৎ করে পুরোটা অন্ধকার হয়ে গেল। ওপরে ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে, ঠিক এক মিনিট একত্রিশ সেকেন্ড পর আবার ক্যামেরা চালু হয়ে স্ক্রিনে আর্ট মিউজিয়ামটা ভেসে উঠল। টুনি কিছুক্ষণ দেখে কেমন যেন একটু উত্তেজিত গলায় বলল, “এই জায়গাটা আবার দেখাবেন প্লিজ।”
“আবার?”
“হ্যাঁ। প্লিজ।”
সিকিউরিটি গার্ড অংশটা আবার দেখাল, দেখে টুনি এবারে আগের থেকে উত্তেজিত গলায় বলল, “আবার দেখাবেন প্লিজ? আবার। আবার!”
সিকিউরিটি গার্ড একটু অবাক হয়ে বলল, “আবার?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি কী দেখছে বারবার?”
“আপনি ভালো করে দেখেন, তাহলে আপনিও দেখতে পাবেন।”
মোটাসোটা সিকিউরিটি গার্ড আবার দেখাল। নিজেও দেখল কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই দেখতে পেল না। হলঘরটা দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ ক্যামেরা বন্ধ হয়ে স্ক্রিনটা অন্ধকার হয়ে গেল, একটু পর আবার ক্যামেরা চালু হয়ে হলঘরটা দেখা যেতে শুরু করল।
টুনি উত্তেজিত হয়ে বলল, “দেখলেন? আপনি দেখলেন?”
সিকিউরিটি গার্ড মাথা নাড়ল, বলল, “না, আমি তো আজব কিছু দেখছি!”
টুনি বলল, “কেন দেখছেন না? প্রথমে আপনি দেখছেন সিসি ক্যামেরার ছবি। তারপর এটা এক-দুই মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে আবার যখন চালু হলো তখন সেই দৃশ্যটা আলাদা! সেটা অরিজিনাল সিসি ক্যামেরার ছবি না। সেটা সিসি ক্যামেরার সামনে ধরে রাখা এই ঘরটার একটা ছবি। তাকিয়ে দেখলে ছবিটা একটু খানি আলাদা।”
সিকিউরিটি গার্ড দেখল এবং চমকে উঠে বলল, “মাইয়াগো মাইয়া। কী সর্বনাশ!”
টুনি বলল, “আপনি বুঝতে পারছেন কী করা হয়েছে? জয়ন্ত কাকুর এই মিউজিয়ামের একটা ছবি তুলে সেই ছবিটা সিসি ক্যামেরার সামনে ঝুলিয়ে রেখে ক্যামেরাটাকে ব্লক করেছে। সেই জন্যে ঘরের ভেতর কী হচ্ছে ক্যামেরাতে দেখা যাচ্ছে না! কিন্তু ঘরের ছবিটা ঠিকই দেখা যাচ্ছে, তাই কেউ সন্দেহ করছে না।”
সিকিউরিটি গার্ড বলল, “এই ঘরে আরেকটা ক্যামেরা আছে।”
টুনি বলল, “সেই ক্যামেরটাতেও নিশ্চয়ই তাই করেছে।”
সিকিউরিটি গার্ড অন্য ক্যামেরার ভিডিওটাও খুঁজে বের করল এবং দেখা গেল সত্যি সত্যি ঐ ক্যামেরাও দেড় মিনিট বন্ধ ছিল তারপর যখন আবার চালু হলো তখন ক্যামেরায় যেরকম ছবি দেখার কথা সেরকম একটা ছবি দেখা যাচ্ছে। তবে একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে ছবিটা ক্যামেরার সত্যিকারের ছবি না।
সিকিউরিটি গার্ড জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলল, “কতক্ষণ এই ঘরটাকে ব্লক করে রেখেছে?”
“পুরো এক ঘণ্টার মতন! মনে নাই আপনি বলেছেন এক ঘণ্টা পর আবার ক্যামেরাগুলো এক দুই মিনিটের জন্য অচল হয়েছিল? তখন ছবিগুলো সরিয়ে আগের মতো করেছে। ততক্ষণে কাজ যা করার করা হয়ে গেছে।”
সিকিউরিটি গার্ড কেমন যেন ভয় পাওয়া গলায় বলল, “কী কাজ করেছে? তুমি বলেছিলে আমাকে বলবে। বল।”
টুনি বলল, “এই মিউজিয়ামের চারটা ওয়েল পেইন্টিং কেটে সেখানে পেইন্টিংটার একটা ছবি আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। আসল পেইন্টিং নাই। যেটা আছে সেটা ভুয়া পেইন্টিং।”
সিকিউরিটি গার্ড চিৎকার করে বলল, “কী বলছ তুমি?”
“বিশ্বাস না করলে আপনি নিজে দেখে আসেন। তবে ভালো করে লক্ষ্য না করলে বোঝা যায় না।”
“কে এই কাজ করেছে?”
“আপনিই বলেন।”
“আমি কীভাবে বলব?”
“আপনি এই বাসায় থাকেন। সিকিউরিটির দায়িত্বে আছেন। আপনি না বললে, কে বলবে?”
“কিন্তু প্রমাণ ছাড়া একজনকে দোষ দিই কেমন করে?”
টুনি কিছু না বলে, উঠে দাঁড়াল। মোটাসোটা সিকিউরিটি গার্ড বলল, “কই যাও?”
“বাইরে। দেখি অন্যরা কী করে?”
“কিন্তু পেইন্টিং চোরকে খুঁজে বের করবে না?”
টুনি বলল, “দেখি চিন্তা করে।”
“বেশি করে চিন্তা করো। আমি ভেবেছিলাম তোমার চাচা হচ্ছে। ডিটেকটিভ। তুমিও দেখি ডিটেকটিভ। আরো বড় ডিটেকটিভ।”
“কিন্তু আপনি কাউকে কিছু বলবেন না।”
“না, বলব না।”
টুনি কিছু বলল না, চিন্তা করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে এলো।
.
দুপুরের খাবার সময় জয়ন্ত কাকু আর ছোটাচ্চু ফিরে এলেন। টুনি ছোটাচ্চুর কাছে গিয়ে বলল, “ছোটাচ্চু, তুমি একটা কাজ করতে পারবে?”
“কী কাজ?”
“জয়ন্ত কাকুকে বলতে পারবে দুপুরে লাঞ্চের সময় যেন এই বাসার সবাইকে একটু ডেকে আনে।”
“সবাইকে? কেন?”
“আমি একটা জিনিস দেখেছি সেটা সবাইকে বলতে চাই।”
ছোটাচ্চু ভুরু কুঁচকে বলল, “কী দেখেছিস?”
“এখন বলব না। সবাইকে এক সাথে বলব।”
ছোটাচ্চু একটু অবাক হয়ে টুনির দিকে তাকিয়ে রইল। টুনি নিচু গলায় বলল, “আরো একটা কথা।”
“কী কথা?”
“আমি যেসব কথা বলব তুমি সেগুলো চুপচাপ শুনে যাবে। আপত্তি করবে না।”
“কী বলবি?”
“যখন বলব, তখন শুনো।”
“কী আশ্চর্য।”
টুনি বলল, “কোনো আশ্চর্য না। তুমি দেখো।”
ছোটাচ্চু কী করবে বুঝতে পারল না, তবে টুনি যে শুধু শুধু একরম একটা নাটক করবে না তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
.
দুপুরে খাবার সময় ডাইনিং টেবিলে সব রকম খাবার দিয়ে বোঝাই করা হয়েছে। খাওয়া শুরু করার আগে জয়ন্ত কাকু একটা খালি কাঁচের গ্লাস নিয়ে একটা চামুচ দিয়ে সেখানে টুং টুং শব্দ করে বলল, “ঘোষণা। জরুরি ঘোষণা।”