শাহানা বলল, “আয় টুনি যাই। চিড়িয়াখানাটা দেখে আসি। মনে হচ্ছে সবাই মিলে অনেক মজা করছে।”
টুনি একটু ইতস্তত করে বলল, “তুমি যাও শাহানাপু। আমি এই আংকেলের সাথে বসে এই সিকিউরিটি সিস্টেমটা দেখে আসি। মনে হচ্ছে খুবই ফাটাফাটি সিস্টেম।”
শাহানা কিছুক্ষণ টুনির দিকে তাকিলে রইল। তারপর বলল, “ঠিক আছে দেখ। আমি গেলাম।”
টুনি তখন মোটাসোটা সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করল, “আমি একটু দেখি, আপনি কীভাবে কাজ করেন?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ দেখো! দেখার অবশ্য কিছু নাই। বসে থেকে স্ক্রিনগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। চোখ বুলাই!”
“সেইটাই দেখি।”
মোটাসোটা সিকিউরিটি গার্ড তখন টুনির জন্য একটা চেয়ার টেনে নিয়ে তার পাশে রাখে। টুনি সেখানে বসে স্ক্রিনগুলো দেখে। আর্ট মিউজিয়ামের ভেতর দুইটা ক্যামেরা, দুইপাশ থেকে হলঘরটা দেখা যায়। চারটা পেইন্টিং চুরি করে সেখানে সেই পেইন্টিংয়ের ছবি লাগানো হয়েছে। চুরি করার পুরো ব্যাপারটা কারো না কারো স্ক্রিনে দেখার কথা। সিকিউরিটি গার্ড কেন সেটা দেখতে পেল না?
টুনি কিছুক্ষণ স্ক্রিনগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল, “কেউ যদি পেইন্টিং চুরি করার চেষ্টা করে কিংবা নষ্ট করার চেষ্টা করে তাহলে আপনি এখানে বসে সেটা দেখে ফেলবেন, তাই না?”
“অবশ্যই। আমরা তিনজন আছি, আট ঘণ্টার শিফট। যার ডিউটি সে দেখে ফেলবে।”
“মনে করেন কেউ একটা পেইন্ট চুরি করতে চায় কিন্তু কোনো প্রমাণ রাখতে চায় না তাহলে?”
“সম্ভব না। প্রমাণ থেকেই যাবে। ক্যামেরায় সব রেকর্ড করা হতে থাকে। যদি দেখি একটা পেইন্টিং চুরি গেছে আমরা আমাদের রেকর্ড রিপ্লে করে সেটা বের করে ফেলব।”
টুনি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, “কেউ যদি ক্যামেরা দুইটা অচল করে দেয় তাহলে তো সেটা রেকর্ড হবে না?”
“না। ক্যামেরার কানেকশন খুলে ফেললে, তখন কিছু রেকর্ড হবে না। কিন্তু আমরা এখানে বসে দেখে ফেলব যে ক্যামেরা বন্ধ হয়ে আছে। তখন আমরা যাব দেখার জন্য ক্যামেরা বন্ধ হলো কেমন করে।”
টুনি বুঝে ফেলার ভঙ্গি করে মাথা নাড়ল। একটু পর জিজ্ঞেস করল, “কখনো কী আর্ট মিউজিয়ামের হলঘরের ক্যামেরা বন্ধ হয়েছে?”
সিকিউরিটি গার্ড ঘুরে টুনির দিকে ভুরু কুঁচকে তাকাল। হঠাৎ করে কেমন যেন গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেন এটা জিজ্ঞেস করছ? তোমরা কী স্যারের মিউজিয়ামে কিছু একটা দেখেছ যেটা দেখে তোমার কিছু একটা সন্দেহ হয়েছে?”
“আংকেল, আপনাকে আমি সেটা পরে বলব। আগে আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন?”
সিকিউরিটি গার্ড বলল, “তুমি জান, আসলেই আর্ট মিউজিয়ামের ক্যামেরা দুইটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।”
“কখন?”
“সপ্তাহ খানেক আগে।”
“তখন আপনি কী করেছেন?”
“আমি যখন ব্যাপারটা দেখার জন্য মিউজিয়ামে দৌড়ে যাব তখন ক্যামেরা দুইটা আবার চালু হয়ে গেল।”
“তার মানে কতক্ষণ ক্যামেরা বন্ধ ছিল?”
“খুবই কম সময়। খুব বেশি হলে দুই মিনিট হবে।”
“মাত্র দুই মিনিট?”
“হ্যাঁ। কিংবা আরো কম।”
টুনি একটু হতাশ হলো। দুই মিনিটের মাঝে চারটা পেইন্টিং তার ফ্রেম থেকে আলাদা করে, ভুয়া পেইন্টিংগুলো সেখানে আঠা দিয়ে লাগানো সম্ভব না। টুনি খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, “আর কখনো কী ক্যামেরা বন্ধ হয়েছিল?”
সিকিউরিটি গার্ড মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। হয়েছিল।”
টুনি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কবে? কখন? কীভাবে? কতক্ষণ বন্ধ ছিল?”
“একই দিনে। প্রথমবার বন্ধ হবার ঘণ্টা খানেক পর।”
“কতক্ষণ বন্ধ ছিল?”
“একই রকমভাবে, আমি যখন দেখার জন্য মিউজিয়ামে যাব, তখন আবার ক্যামেরা অন হয়ে গেল। দুই মিনিটের ভেতর।”
টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “ও। আচ্ছা। মাত্র দুই মিনিট?”
“হ্যাঁ। কিংবা আরো কম। রেকডিংটা রিপ্লে করলে তুমি একজাক্ট সময়টা পেয়ে যাবে। এত কম সময়ে কোনো কিছু করা সম্ভব না। তবু আমি তখন মিউজিয়ামে গিয়েছি সবগুলো পেইন্টিং দেখেছি। কোনো সমস্যা নাই। ভেতরে কাদেরী বক্স ছিল সেও আমার সাথে ঘুরে ঘুরে দেখেছে।”
টুনি ঘুরে সিকিউরিটি গার্ডের দিকে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, “উনি বলেছেন সব ঠিক আছে? কোনো সমস্যা নাই?”
সিকিউরিটি গার্ড টুনির দিকে তাকিয়ে বলল, “হ্যাঁ। তাই বলেছেন। আর কী বলবেন? কী সমস্যা হতে পারে? দুই মিনিটের মাঝে তো আর কেউ কিছু করতে পারে না। পেইন্টিং এত বড় একটা জিনিস, কে নিয়ে কোথায় নেবে? পুরো বাসায় সিসি টিভি লাগানো ধরা পড়ে যাবে না!”
টুনি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল, তারপর বলল, “আংকেল আমি কি সিসি ক্যামেরার ভিডিওটা দেখতে পারি? যখন ওটা বন্ধ হয়েছিল?”
“অবশ্যই দেখতে পার। কিন্তু দেখার কিছু নাই; খালি একটা হলঘর। সেখানে কেউ নাই।”
“তবু একটু দেখি? প্লিজ।”
সিকিউরিটি গার্ড একটা কম্পিউটার চালু করল। সেটা চালু হতে একটু সময় নিল। তারপর সেই কম্পিউটারের বিভিন্ন ফাইলের ভেতর ঘাটাঘাটি করে একটা ফাইল বের করে সেটা চালু করল। টুনি দেখল কম্পিউটারের মনিটরে পেইন্টিং ঝোলানো হলঘরটা দেখা যাচ্ছে। সিকিউরিটি গার্ড ঠিকই বলেছে, যেহেতু ঘরে একটা মানুষও নাই ভিডিওটা খুবই বোরিং। সত্যিকথা বলতে ভিডিওটা কী চলছে নাকি বন্ধ হয়ে আছে সেটাও বোঝার উপায় নেই।
খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে টুনি বলল, “যখন ক্যামেরাটা বন্ধ হয়েছিল সেই অংশটা কোথায়?”