“ভেরি গুড।”
“আমরা ছোটাচ্চুকে ছাড়াই আসতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ছোটাচ্চু জোর করে চলে এসেছে।”
জয়ন্ত হাসি মুখে বলল, “তোমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি তোমাদের ছোটাচ্চুকে ব্যস্ত রাখব যেন সে তোমাদের ডিস্টার্ব করতে না পারে।”
শান্ত বলল, “ভেরি গুড।”
জয়ন্ত ছোট কয়েকজনকে নামতে সাহায্য করল, তারপর বলল, “ডাইনিং টেবিলে তোমাদের জন্যে কিছু স্ন্যাকস্ রাখা আছে। আগে একটু খেয়ে নাও, তারপর যার যেটা পছন্দ সেটা দেখতে থাকো।
।সবাই বাসা থেকে নাশতা করে এসেছে কিন্তু খাবারের কথা শুনে আবার তাদের খিদে পেয়ে গেল। জয়ন্ত সবাইকে ভেতরে নিতে নিতে বলল, “সুইমিং পুলটা ছাদে। যারা সাঁতার জানো না তাদের জন্যে এক পাশে ছোট পুল আছে, পানি কম। তোমাদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই, আজকের জন্য আমি দুজন লাইফগার্ড নিয়ে এসেছি। তারা দেখবে।”
টুম্পা জানতে চাইল, “চিড়িয়াখানা কই?”
“বাসার পেছনে। কোনো হিংস্র প্রাণী নাই কিন্তু বানর থেকে একটু সাবধান। ছোট বাচ্চা দেখলে মাঝে মাঝে জ্বালাতন করে।”
মুনিয়া ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী রকম জ্বালাতন?”
“এই তো–মনে করো হাতে ললিপপ আছে, টান দিয়ে নিয়ে নেবে। হাজার হলেও বানর, তাই বাঁদরামি যায় না।”
শাহানা জিজ্ঞেস করল, “আর পেইন্টিংগুলো?”
“সেটা বেসমেন্টে। কাউকে বললেই নিচে নিয়ে যাবে।”
সবাই প্রথমে ডাইনিং টেবিল ঘিরে দাঁড়িয়ে খেয়ে নিল। তারপর বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই চিড়িয়াখানা দেখার জন্য ছুটল। সেটা দেখে শেষ করেই সুইমিং পুলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সেখানে ঝাপাঝাপি করে যখন খিদেটা জাগিয়ে উঠবে তখন লাঞ্চ।
জয়ন্ত চা খেয়ে ছোটাচ্চুকে নিয়ে বের হয়ে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল কী একটা জরুরি কাজ আছে সেটা সেরে দুপুরের আগেই ফিরে আসবে।
সবাই যখন বাইরে হইচই চেঁচামেচি করছে তখন শাহানা বেসমেন্টে গেল। পেইন্টিংগুলো দেখার জন্য। অন্য কারো সেগুলো নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই, শুধু টুনি শাহানার পিছু পিছু গেল। শাহানা জিজ্ঞেস করল, “তুই কোথায় যাস?”
“তোমার সাথে। পেইন্টিং দেখতে।”
“চিড়িয়াখানা দেখবি না?”
টুনি দাঁত বের করে হেসে বলল, “চিড়িয়াখানা তো সব সময় দেখি। দাদি সবসময় বলে না আমাদের বাসা হচ্ছে একটা চিড়িয়াখানা! টিকিট লাগিয়ে দিলে মানুষজন টিকিট কেটে আমাদের দেখতে আসবে।
শাহানা হাসল, বলল, “তা ঠিক।”
বেসমেন্টটা খুঁজে বের করতে একটু সময় লাগাল। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাবার পর একটা বড় হলঘর, ভেতরে কুসুম কুসুম ঠাণ্ডা। হলঘরের দেওয়ালে পেইন্টিংগুলো ঝোলানো। খুব সুন্দর করে ছোট ছোট আলো লাগানো আছে যেন পেইন্টিংগুলো ভালো করে দেখা যায়। দেখে মনে হয় একেবারে সত্যিকারের মিউজিয়াম।
শাহানা আর টুনি যখন মাত্র পেইন্টিংগুলো দেখা শুরু করেছে তখন হঠাৎ করে কোথা থেকে জানি একটা মানুষ এসে হাজির হলো। মানুষটার মাথায় চুল কম, যেটুকু চুল আছে মাঝখানে সিঁথি করে সেটা দুই ভাগ করে চাদিটা ঢেকে রেখেছে। পরনে একটা স্যুট এবং গলায় টাই। স্যুটটা মনে হয় ছোট হয়ে গেছে, শরীরের সাথে কেমন জানি টাইট করে লাগানো। গলায় লাল রংয়ের চিকন একটা টাই। মানুষটার বয়স চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের ভেতরে। নাকের নিচে হিটলারের মতো গোঁফ, সেটা আবার চিকন হয়ে ঠোঁটের ওপর দিয়ে দুই পাশে নেমে গেছে। টুনি এর আগে কখনো কারো এরকম গোঁফ দেখেনি। একজন মানুষের চেহারা দেখে তাকে পছন্দ কিংবা অপছন্দ করা ঠিক না। কিন্তু এই মানুষটাকে দেখেই টুনির কেন জানি তাকে একেবারেই পছন্দ হলো না।
মানুষটা যখন মুখ খুলল তখন টুনি বুঝতে পারল তার ধারণাটা মনে হয় ঠিকই আছে। তার কারণ মানুষটা প্রায় ধমক দিয়ে বলল, “তোমরা কে? এইখানে কী করছ?”
টুনির মনে হলো সে বলে, “আপনি কে? আপনি এইখানে কী করছেন?”
কিন্তু সে কিছু বলল না, সাথে শাহানা আছে। শাহানা খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে। কথাবার্তা যা বলার সেই বলবে। শাহানা মানুষটার দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলল, “আমরা পরিচয় দিলে মনে হয় চিনতে পারবেন না! জয়ন্ত কাকু আমাদের ফেমিলি ফ্রেন্ড। আমাদের এখানে ইনভাইট করেছেন। বিশেষ করে তার পেইন্টিং কালেকশন দেখার জন্য। সেজন্যে এসেছি।”
মানুষটা খুব বিরক্ত হওয়ার ভান করে বলল, “আমাকে কিছু বলল না–”
শাহানা বলল, “মনে হয় বুঝতে পারেন নাই যে আপনার পারমিশান নিতে হবে?”
এবারে মানুষটা একটু থতমত খেলে গেল, আমতা আমতা করে বলল, “না, মানে পারমিশান না–মানে ইয়ে–” বলে কথা শেষ না করেই থেমে গেল।
শাহানা আর টুনি অপেক্ষা করছিল কখন মানুষটা সরে যাবে তখন তারা পেইন্টিংগুলো দেখা শুরু করবে। কিন্তু মানুষটা সরে গেল না, একেবারে তাদের ঘাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে রইল।
তখন শাহানা বাধ্য হয়ে আরেকটু কথা বলল, “আপনি বুঝি এখানে আছেন?”
“হ্যাঁ। স্যার আমাকে এই আর্ট কালেকশনের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি দেখে-শুনে রাখি।”
শাহানা বলল, “ও।”
মানুষটা বলল, “ঠিক আছে, পেইন্টিং দেখতে চাইলে দেখো, কিন্তু নো ফ্ল্যাশ ফটোগ্রাফি। হাত দিয়ে ছুবে না।”
শাহানা মাথা নাড়ল, “ছুবো না।”
“ঘরটা হিউমিনিডিটি এন্ড টেম্পারেচার কন্ট্রোলড। পেইন্টিংগুলো ওয়েল প্রোটেক্টেড। সিসি ক্যামেরা দিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা মনিটর করা হয়। কাজেই উল্টাপাল্টা কিছু করো না।”