এরকম সময় বাসার কয়েকটা বাচ্চা কোনো একটা কারণে একজন আরেকজনকে ধাওয়া করে বসার ঘরে হাজির হলো। ছোটাচ্চুকে তার বন্ধুর সাথে গল্প করতে দেখে আবার হুটোপুটি করতে করতে চলে যাচ্ছিল। ছোটাচ্চু তাদেরকে থামাল, বলল, “এই, এক সেকেন্ড!”
বাচ্চাগুলো দাঁড়াল। ছোটাচ্চু বলল, “তোরা একটা কাজ করতে পারবি?”
“কী কাজ?”
“ঝুমুকে বলবি আমার খুবই ইম্পরট্যান্ট একজন বন্ধু এসেছে, তার জন্য ফার্স্ট ক্লাস চা বানিয়ে দিতে।”
বাচ্চাগুলো এবারে জয়ন্তকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল, সবচেয়ে ছোটজন ছোটাচ্চুকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার এই বন্ধু খুব ইম্পরট্যান্ট?”
ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ।”
“দেখে ইম্পরট্যান্ট মনে হয় না।”
আরেকজন জিজ্ঞেস করল, “কেন ইম্পরট্যান্ট?”
ছোটাচ্চু বলল, “বন্ধুর সামনে বলা যাবে না। ও লজ্জা পেতে পারে। ও যখন চলে যাবে তখন বলব।”
বাচ্চারা কিছুক্ষণ জয়ন্তকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল, তারপর আবার হুটোপুটি করতে করতে ভেতরে চলে গেল। তারা ঝুমু খালাকে চা বানিয়ে দেওয়ার কথা বলল, সাথে সাথে বাসার অন্য সব ছেলেমেয়েকে বলে এল যে ছোটাচ্চুর খুব ইম্পরট্যান্ট একটা বন্ধু এসেছে। বন্ধুটা চলে যাবার পর ছোটাচ্চু সবাইকে বলবে কেন তার বন্ধুটা এত ইম্পরট্যান্ট।
কাজেই কিছুক্ষণের ভেতরেই বাসার অন্য বাচ্চারাও ছোটাচ্চুর এই ইম্পরট্যান্ট বন্ধুটাকে দেখতে চলে এলো এবং বসার ঘরের জানালার বাইরে থেকে তারা উঁকিঝুঁকি দিতে লাগল। ছোটাচ্চু বাচ্চাদের ফিস ফিস কথা শুনতে পেয়ে তাদের ডাকল, “এই তোরা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ফিস ফিস করছিস কেন? সামনে আয়।”
তখন বাচ্চা-কাচ্চা সবাই বসার ঘরে এসে ছোটাচ্চুর বন্ধু জয়ন্তকে সামনাসামনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। জয়ন্ত কী করবে বুঝতে না পেরে মুখ হাসি হাসি করে রীতিমতো অপ্রস্তুত হয়ে বসে রইল।
ছোটাছুও হাসি হাসি মুখ করে বলল, “তোরা সবাই ভালো করে আমার এই বন্ধুটাকে দেখে নে। আমার এই বন্ধু খুবই ইম্পরট্যান্ট একজন মানুষ।”
শান্ত জিজ্ঞেস করল, “কেন ইম্পরট্যান্ট ছোটাচ্চু।”
“আমার বন্ধু চলে যাবার পর বলব। এখন বললে একটু লজ্জা পেতে পারে।”
শান্ত বলল, “কেন লজ্জা পাবে? তোমার এই বন্ধু কী লজ্জার কোনো কাজ করে?”
ছোটাচ্চু মাথা নেড়ে বলল, “না, না! লজ্জার কাজ কেন করবে।”
জয়ন্ত তখন খুবই ব্রিবত হয়ে বলল, “আরে শাহরিয়ার তুই এসব কী শুরু করেছিস? ইম্পরট্যান্ট আবার কী? তোর সবসময় একটা নাটক করার অভ্যাস। যেটা বলার সোজাসুজি বলে ফেল। আমিও শুনি তুই আমার সম্পর্কে কী বলিস।”
বাচ্চারা সবাই চিৎকার করে বলল, “হ্যাঁ। হ্যাঁ। বল ছোটাচ্চু, বল।”
“তাহলে বলি, শোন।” ছোটাচ্চু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলছে সেরকম ভান করে বলল, “আমার এই বন্ধুর নাম জয়ন্ত। আমাদের ব্যাচে দুজন জয়ন্ত ছিল তাই আমরা এই জয়ন্তকে ডাকতাম চিকন-চাকন জয়ন্ত।”
সবচেয়ে ছোটজন বলল, “এই জন্য ইম্পরট্যান্ট?”
“আরে না! এই জন্যে কেউ ইম্পরট্যান্ট হয় নাকি। ইম্পরট্যান্ট অন্য কারণে।”
প্রমি জিজ্ঞেস করল, “আরেকজন যে জয়ন্ত ছিল তাকে তোমরা কী ডাকতে?”
ছোটাচ্চুর বন্ধু জয়ন্ত বলল, “তাকে সবাই ডাকত নাদুসনুদুস জয়ন্ত।” নাম শুনে বাচ্চারা আনন্দে হি হি করে হাসল।
ছোটাচ্চু হাসি থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করল, তারপর আবার তার গল্প শুরু করল, “আমাদের ক্লাসে কিছু খুব সিরিয়াস ছেলে-মেয়ে ছিল আর কিছু ছিল ফাঁকিবাজ। ফাঁকিবাজদের মাঝে এক নম্বর ছিল আমাদের জয়ন্ত। চিকন-চাকন। জয়ন্ত।”
শান্ত জিজ্ঞেস করল, “আর তুমি কয় নম্বর ছিলে?”
“দুই কিংবা তিন নম্বর। যাই হোক অনার্স পরীক্ষায় আমাদের জয়ন্ত ডাব্বা মারল–”
ছোটাচ্চুর বন্ধু জয়ন্ত আপত্তি করে বলল, “পুরা ডাব্বা মারি নাই। এক সাবজেক্টে শুধু রিপিট–
“যাই হোক পরীক্ষার রেজাল্ট শুনে জয়ন্তের আব্বু রেগে ফায়ার। আংকেল খুবই কড়া মানুষ ছিলেন। তখন আংকেল কী করলেন জানিস?”
শান্ত বলল, “বাড়ি থেকে বের করে দিলেন?”
ছোটাচ্চু বলল, “একজাক্টলি। জয়ন্তকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। জয়ন্ত মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়ায়। একদিন এর সাথে থাকে, আরেকদিন আরেকজনের সাথে থাকে। তখন একদিন যখন আংকেল বাসায় নাই সে গোপনে বাসায় গেছে। আন্টি তাকে ভাত খাওয়ালেন তারপর তার বিয়ের নেকলেসটা দিয়ে বললেন এটা বিক্রি করে কিছু একটা করতে।”
ছোটাচ্চু একটু থামল, জয়ন্ত মাথা নেড়ে বলল, “কী দিন গিয়েছে! মনে আছে তোদের নিয়ে সেই নেকলেস বিক্রি করতে গেলাম, জুয়েলারির দোকান আমাদের বিশ্বাস করে না। মনে করে আমরা চুরি করে এনেছি। পারলে পুলিশে খবর দেয়।”
ছোটাচ্চু বলল, “মনে নাই আবার। যাই হোক জয়ন্ত আন্টির নেকলেস বিক্রির টাকা দিয়ে বিজনেস শুরু করল। প্রথম বিজনেসটা কীসের ছিল কে বলতে পারবে?
শান্ত বলল, “ইয়াবা। ড্রাগের বিজনেসে টাকা সবচেয়ে বেশি।”
প্রমি শান্তকে ধমক দিয়ে বলল, “ইয়ারকি করবি না।”
ছোটাচ্চু বলল, “জয়ন্তের প্রথম বিজনেস ছিল বল্লরি।”
“সেইটা আবার কী?”
“একটা হিন্দি সিনেমার নায়িকার ড্রেস। ঈদের আগে এই সিনেমা খুব হিট। আমাদের জয়ন্ত কীভাবে কীভাবে জানি আন্দাজ করল ঈদে নায়িকার এই ড্রেস পপুলার হবে। হাজার খানেক ড্রেস বানিয়ে সে রেডি। আসলেই ঈদের আগে হঠাৎ করে সবার মুখে শুধু বল্লরী ড্রেসের কথা। আমাদের জয়ন্ত সাপ্লাই দিয়ে শেষ করতে পারে না–এক ধাক্কায় বড়লোক। এইভাবে শুরু। তারপর কত কী যে বিজনেস করেছে বলে শেষ করা যাবে না। সাইকেল থেকে শুরু করে সফটওয়্যার। হোটেল থেকে শুরু করে শিপিং। এখন জয়ন্ত কী পরিমাণে বড়লোক হয়েছে তোরা কেউ চিন্তাও করতে পারবি না।”