কিছুক্ষণের মাঝে ঝুমু খালা প্লেট বোঝাই করে ডালপুরি চটপটি আর লাড়ু নিয়ে এলো। বাচ্চারা ঝপাঝাপি কাড়াকাড়ি করে খেতে থাকে। গুটলু কাড়াকাড়িতে অংশ নিল না। পিঠ সোজা করে বসে রইল। টুনি তখন একটা প্লেটে তার জন্য কিছু খাবার তুলে দিয়ে গুটলুর হাতে তুলে দিয়ে কানের কাছে। মুখ লাগিয়ে ফিস ফিস করে বলল, “শান্ত ভাইয়াকে দেখছ?”
গুটলু মাথা নাড়ল।
“সবাই কী রকম নরমালভাবে তার সাথে কথা বলছে দেখেছ?”
গুটলু আবার মাথা নাড়ল।
“আসলে কিন্তু পুরোটা অভিনয়। তার হাতে দুইটা লাড়ু দেখেছ?”
গুটলু মাথা নাড়ল।
“এই লাড়ুর ভেতর পুরো ডোজ নিউরো হেক্সা গ্লাইকোজিন আছে। যদি লাড্ড দুইটা খেয়ে ফেলে তখন বিপদ অনেকটা কেটে যাবে।”
গুটলু ভয়ে ভয়ে বলল, “খাবে তো?”
“মনে হয় খাবে। শান্ত ভাইয়া খেতে পছন্দ করে।”
গুটলু শুকনো মুখে বলল, “ও।”
“ডিনারের সময় খাবারের সঙ্গে সিডেটিভ দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলবে। তারপর ওপরে ঘরে নিয়ে চেইন দিয়ে বেঁধে ফেলবে।”
শান্ত হঠাৎ করে টুনি আর গুটলুকে লক্ষ করে বলল, “তোরা কী নিয়ে গুজগুজ ফুসফুস করছিস?”
গুটলু আতঙ্কে চমকে উঠে বলল, “না, না কিছু না কিছু না।”
টুনিও মাথা নাড়ল, বলল, “কিছু না শান্ত ভাইয়া।”
ডালপুরিটা খুবই মজার ছিল, চটপটিটাও ছিল অসাধারণ কিন্তু গুটলু সেগুলো খুব মজা করে খেতে পারল বলে মনে হলো না। সে সারাক্ষণ শান্তর দিকে তাকিয়ে ছিল। শান্ত পরপর তিনটা লাড়ু খাওয়ার পর গুটলু প্রথমবার একটুখানি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
.
গুটলুর মা বিয়ের কার্ড দিয়ে ফিরে আসতে আসতে সন্ধ্যা পার করে ফেলেছিল কিন্তু গুটলুকে নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। সে পুরো সময়টা একটা চেয়ারে পিঠ সোজা করে বসেছিল। গুটলুর মা ভেবেছিল এই বাসায় এসে গুটলুর দুই চারটি দুষ্টুমির গল্প শুনবে কিন্তু কিছুই শুনল না। তখন আরো কিছুক্ষণ দাদির সাথে গল্প করতে চাইছিল কিন্তু গুটলু চলে যাবার জন্য একেবারে অস্থির হয়ে গেল।
গুটলুকে নিয়ে গুটলুর মা চলে যাবার পর শান্ত বলল, “কী আশ্চর্য, এরকম শান্তশিষ্ট ভদ্র একটা বাচ্চার নামে সবাই কী রকম আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে, দেখেছিস?”
প্রমি বলল, “হ্যাঁ, কী সুইট একটা বাচ্চা। পুরো সময়টা চুপ করে বসে রইল। একটার চেয়ার থেকে উঠল পর্যন্ত না! কে বলেছে এই বাচ্চা দুষ্ট? মোটেও দুষ্টু না।”
দাদি (কিংবা নানি) বললেন, “হ্যাঁ। আমিও অবাক হয়ে গেলাম। চন্দনের বিয়েতে আমি নিজের চোখে দেখেছি। শামিয়ানার দড়ি ধরে–” দাদি হঠাৎ কথা থামিয়ে ভুরু কুচকে টুনির দিকে তাকালেন। বললেন, “টুনি? তুই কিছু করেছিস নাকি?”
টুনি বলল, “আমি? আমি কী করব?”
টুনি টুম্পার দিকে তাকিয়ে বলল, “টুম্পা তুই তো সারাক্ষণ আমার সাথে ছিলি। আমরা কী কিছু করেছি?”
টুম্পা মাথা নাড়ল। বলল, “না টুনি আপু। আমরা আবার কী করব?”
তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল। ঠিক তখন দাদির (কিংবা নানির) টেলিফোনটা বাজল। দাদি টেলিফোনটা খুঁজে বের করতে করতে লাইন কেটে গেল তখন আবার টেলিফোনটা বাজল। দাদি টেলিফোনটার দিকে তাকিয়ে বলল, “কী ব্যাপার গুটলুর মা আমাকে ফোন করছে কেন?”
দাদি টেলিফোনের বোতাম টিপে কানে ধরলেন। গুটলুর মায়ের গলায় জোর আছে, ফোনে কানে না লাগিয়েই সবাই শুনল গুটলুর মা বলছেন, “চাচি! আপনি তো কখনো আমাকে বলেন নাই আপনার একজন নাতিকে চেইন দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। ছাড়া পেলে সর্বনাশ হয়ে যায়–”
টুনি তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে টুম্পাকে বলল, “টুম্পা আয় আমাদের স্কুল প্রজেক্টটা শেষ করতে হবে। যাই।”
টুম্পাও লাফ দিয়ে উঠে বলল, “চল টুনি আপু।”
কিছু বোঝার আগে দুজন ঘর থেকে উধাও হয়ে গেল।
জয়ন্ত কাকুর পেইন্টিং
বুধবার দিন সন্ধ্যেবেলা একজন মানুষ ছোটাচ্চুর সাথে দেখা করতে এলো। মানুষটা ছোটাচ্চুর বয়সী এবং একটা কালো টিশার্ট আর একটা জিন্সের প্যান্ট পরে আছে, পায়ে লাল রংয়ের স্লিপার। ছোটাচ্চু তাকে দেখে একই সাথে খুবই অবাক এবং খুবই খুশি হয়ে উঠল। তাকে একেবারে জড়িয়ে ধরে বলল, “আরে জয়ন্ত, তুই? আমার বাসায়? সত্যি এসেছিস নাকি ভুল করে চলে এসেছিস?”
ছোটাচ্চুর বয়সী মানুষটা যার নাম জয়ন্ত সে বলল, “আগে কতবার এসেছি তখন তো কখনো জিজ্ঞেস করিসনি সত্যি এসেছি নাকি ভুল করে এসেছি।”
ছোটাচ্চু বলল, “তখন তুই ছিলি চিকন-চাকন জয়ন্ত! এখন তুই হচ্ছিস দ্য বিজনেস ম্যাগনেট জয়ন্ত!”
ছোটাচ্চুর বন্ধু জয়ন্ত বলল, “আমিও তো বলতে পারি তখন তুই ছিলি আধামাধা শাহরিয়ার এখন দি অরিজিনিয়াল ডিটেকটিভ শাহরিয়ার!”
ছোটাচ্চু তার বন্ধুকে সোফায় বসাতে বসাতে বলল, “আমি আর অরিজিনাল ডিটেকটিভ নাই। ছেড়ে ছুঁড়ে দিয়েছি।”
জয়ন্ত বলল, “কিছু কিছু জিনিস ছাড়তে চাইলেই ছাড়া যায় না। চিনে জেঁকের মতো তোর সাথে লেগে থাকবে। একবার যখন ডিকেটটিভ হয়েছিস, সারা জীবন তুই ডিটেকটিভ হয়ে থাকবি।”
ছোটাচ্চু বলল, “তুই শুনিসনি, একজন দুই নম্বরি বাটপার আমার এজেন্সি দখল করে নিয়েছে?”
ছোটাচ্চুর বন্ধু জয়ন্ত হাত নেড়ে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করে বলল, “আরে ধুর! এক এজেন্সি গেছে আরেক এজেন্সি আসবে। আসল জিনিস থাকে এইখানটায়–” বলে জয়ন্ত নিজের মাথায় টোকা দিল। বলল, “এইটা কোনো দুই নম্বরি বাটপার কোনোদিন দখল করতে পারবে না।”