“একজন? একজন কেন?”
টুনি মুখ গম্ভীর করে বলল, “কারণ শুধু একজন এই বাচ্চাটাকে কন্ট্রোল করতে পারবে।”
“কে? কে কন্ট্রোল করতে পারবে।”
টুনি বলল, “শান্ত ভাইয়া।”
শান্ত অবাক হয়ে বলল, “আমি?”
টুনি বলল, “হ্যাঁ তুমি। এই দুষ্টু বাচ্চাটাকে কন্ট্রোল করার মতো পার্সোনালিটি শুধু তোমার আছে। আর কারো নাই।”
শান্ত খুশি হয়ে বলল, “শুধু আমার আছে? তোর তাই ধারণা। শুধু আমার?”
টুনি বলল, “শুধু তুমি যখন বাচ্চাটাকে আনতে যাবে, তখন “তখন কী?”
“যখন বাচ্চাটাকে প্রথম দেখবে তখন তার দিকে তাকিয়ে ভিলেনের মতো একটু হাসবে?”
“ভিলেনের মতো হাসব? আমি?”
“হ্যাঁ।”
“কেন?”
“এমনি একটু মজা করার জন্য। আজকালকার বাচ্চা-কাচ্চারা এগুলো দেখলে খুব মজা পায়।”
“তা ঠিক।” শান্ত মাথা নাড়ল।
“পারবে না হাসতে? তখন বুকে থাবাও দিতে পার।”
“বুকে থাবা দিয়ে ভিলেনের মতো করে হাসব? এই রকম?” বলে শান্ত বুকে থাবা দিয়ে ভিলেনের মতো হাসল, প্রথমে আস্তে আস্তে হো হো শব্দ করতে করতে সেটাকে হা হা করে অট্টহাসির মতো করে ফেলল।
যারা হাজির ছিল তারা সবাই মাথা নেড়ে বলল, ভিলেনের হাসিটা খুবই ভালো হয়েছে। হিন্দি সিনেমার ভিলেন থেকেও ভালো।
টুনি বলল, “শান্ত ভাইয়া তুমি তাহলে যাও। নিয়ে এসো। গুটলু একা একা আমার রুমে বসে আছে। এতক্ষণে আমার রুমটা জ্বালিয়ে দিয়েছে কী না কে জানে।”
শান্ত বলল, “ঠিক আছে। যাচ্ছি।ঃ তারপর ভিলেনের হাসি হাসতে হাসতে সে দোতলায় রওনা দিল।।
.
গুটলু টুনির ঘরে চেয়ারটায় বসেছিল কিন্তু তার মতো মানুষের পক্ষে চুপচাপ চেয়ারে বসে থাকা সম্ভব না। কাজেই সে এখন ঘরটাতে কী কী আছে দেখতে শুরু করল। ঘরটা তার জন্যে মোটামুটি বিরক্তকর, বই ছাড়া আর কিছু নেই। শেলফের ওপরে একটা ফ্রেমে টুনির বন্ধুদের সাথে তার একটা ছবি। ছবিটা বের করে সবার নাকের নিচে গোঁফ একে দিলে ছবিটা মনে হয় আরো ভালো দেখাবে। গুটলু টুনির ডেস্কের জিনিসপত্র ওলটপালট করে একটা মার্কার খুঁজল, খুঁজে পেল না। বলপয়েন্ট কলম দিয়েই মনে হয় কাজ চলে যাবে। বল পয়েন্ট কলমই হাতে নিয়ে ছবির ফ্রেমটা খোলার চেষ্টা করার সময় তার মনে হলো সে একজনের হাসির শব্দ শুনতে পেল। সিনেমায় ডাকাতের সর্দারেরা যেভাবে হাসে অনেকটা সেরকম।
গুটলু তখন ছবির ফ্রেমটা শেলফের ওপর রেখে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ করে তার কেমন যেন ভয় ভয় করতে থাকে। যদি এই বাসার ম্যানিয়াক সাইকোটিক ছেলেটা চলে আসে তখন কী হবে? গুটলু শুনতে পেল হাসির শব্দটা ধীরে ধীরে ঘরের দরজার সামনে থেমেছে। কেউ একজন দরজাটা খোলার জন্য ধাক্কা দিল। খুলতে না পেরে দরজায় শব্দ করল।
গুটলু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “কে?”
“আমি।”
গুটলু কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “আমি কে?”
“আমি শান্ত।”
গুটলুর মনে হলো সে হাঁটু ভেঙে পড়ে যাবে। এই বাসার ম্যানিয়াক সাইকোটিক ভয়ংকর উন্মাদ ছেলেটি এখানে চলে এসেছে। এখন কী হবে? দরজাটি বন্ধ রাখবে? মেয়েগুলো বলেছে তাহলে নাকি আরো বিপদ। দরজা ভেঙে ঢুকে যাবে তখন আরো ভয়ংকর ঘটনা ঘটবে। ভয়ে গুটলুর শরীর অল্প অল্প কাঁপতে থাকে। এখন সে কী করবে?
আবার দরজায় শব্দ হলো। খট খট খট। আবার গলার স্বর শোনা গেল, “দরজা খোলো।”
গুটলু রীতিমতো ঘামতে থাকে। দরজা বন্ধ রাখা যাবে না। তাহলে আরো বড় বিপদ হবে। গুটলু কাঁপা হাতে ছিটকিনি খুলল। ছিটকিনি খুলে দিতেই ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ভয়ংকর ম্যানিয়াক সাইকোটিক উন্মাদ ছেলেটা ঢুকে গেল। মেয়ে দুজন তাকে চোখের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছিল সে তাই চোখের দিকে তাকাল না। দরজা খোলার সময় শুধু এক ঝলক দেখেছিল তাতেই তার শরীর হিম হয়ে গেছে। কী ভয়ংকর চোখের দৃষ্টি! শুধু যে ভয়ংকর চোখের দৃষ্টি তা নয় বুকে থাবা দিয়ে রক্তশীতল করা একটা অট্টহাসি দিয়েছে। এখন কী তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে? ঘাড়ের রগ কামড় দিয়ে রক্ত চুষে খাবে? রক্তের গ্রুপটাও সে জানে না।
কিন্তু ভয়ংকর ম্যানিয়াক সাইকোটিক উন্মাদ ছেলেটা সেরকম কিছু করল। খুবই স্বাভাবিক গলায় বলল, “তুমি গুটলু?”
গুটলু মাথা নাড়ল।
“গুটলু নামটা খুবই ফানি।” ম্যানিয়াক ছেলেটা হা হা করে হাসল। বলল, “গুটলু গুটলু গুটলু। হাউ ইন্টারেস্টিং।”
গুটলু কোনো কথা বলল না। ম্যানিয়াক ছেলেটা ভুল বলে নাই। গুটলু নামটা ইন্টারেস্টিং। এই নামের জন্যে তার অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়।
“চল, নিচে আমাদের সব ভাই-বোনেরা আছে। তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।”
গুটলু মাথা নাড়ল। শুকনো গলায় বলল, “ঠিক আছে। ঠিক আছে।”
“আমাদের ঝুমু খালা খুব ভালো ডালপুরী তৈরি করে। খেলে তুমি অবাক হয়ে যাবে।”
মেয়ে, দুজন বলেছিল একেবারে নরমালভাবে থাকতে নরমালভাবে কথা বলতে। ম্যানিয়াক ছেলেটাও নরমালভাবে কথা বলছে। গুটলুও নরমাল ভাবে কথা বলল, “ডালপুরি খেতে আমারও খুব ভালো লাগে।”
দাদির আশেপাশে বাচ্চারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছিল। তারা পৃথিবীর সবচেয়ে দুষ্টু ছেলেটাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল, কিন্তু অবাক হয়ে দেখল শান্তর পিছু পিছু খুবই নিরীহ একটা বাচ্চা ছেলে কেমন যেন ভয়ে ভয়ে চারদিকে তাকাতে তাকাতে ঘরে এসে ঢুকল। কাছাকাছি একটা চেয়ারে পিঠ সোজা করে বসে পড়লো, তাকে দেখে একেবারেই দুষ্ট মনে হচ্ছে না। চোখে-মুখে দুষ্টুমির কোনো চিহ্ন নেই, সেখানে কেমন যেন আতঙ্ক!