রীণা কি বেঁচে আছে?
এটুকু বুঝতে কত সময় লাগে? এত দেরি হচ্ছে কেন?
তবু সঞ্জয় উঠে গিয়ে জানতে পারল না রীণা বেঁচে আছে কিনা।
–সঞ্জয়-please help me! ডাক্তার রুদ্র চেঁচিয়ে উঠলেন।
–আমার ব্যাগটা—
সঞ্জয় একঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের ওপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে ডাক্তার রুদ্রের কাছে গেল।
কী দেখলেন ডাক্তারবাবু?
Thank God! হার্ট বীট পাওয়া যাচ্ছে। তোমার ছেলে কি করছে?
–ঘুমিয়েছে।
–যাক, অল্পর ওপর দিয়ে গেছে। সঞ্জয় বিছানায় বসে পড়ে রীণার হাত দুটো কোলের ওপর টেনে নিল।
–হাত যে একেবারে ঠাণ্ডা।
–ও ঠিক হয়ে যাবে। তুমি একটু সেঁক দাও।
–হসপিটালে নিয়ে যাব?
না, এখনই দরকার নেই। তেমন বুঝলে আমি বলব। গাড়ি তো রয়েছেই। উঃ! আর একটু দেরি হলেই শেষ হয়ে যেত।
.
সকালবেলা।
দুজনে দুকাপ গরম কফি নিয়ে বসেছে। দরজায় শব্দ।
সঞ্জয় চমকে উঠল। এত সকালে কে? তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিল। দেখল মান্তু আর ললিতবাবু শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে।
-কি ব্যাপার?
–সকালেই চলে এলাম। মিস থাম্পি টেলিগ্রাম করেছিলেন। টেলিগ্রামটা পেতে একদিন দেরি হয়েছে। বলে টেলিগ্রামটা সঞ্জয়ের হাতে দিল।
টেলিগ্রামের বক্তব্য–যে কোনো প্রকারে আজকেই মিসেস গুপ্তকে আপনাদের কাছে এনে রাখুন। জীবন বিপন্ন।
সঞ্জয় টেলিগ্রামটা ললিতবাবুর হাতে ফেরত দিয়ে বলল, ভেতরে আসুন।
২. ডাঃ রুদ্রের ছবিপ্রীতি
০১. ডাঃ রুদ্রের ছবিপ্রীতি
মাস তিনেক পর।
অনেক চেষ্টায় মানিকতলার কাছে ওরা দুখানা ঘর পেয়েছে। মান্তুদের বাড়িতে কিছুদিন থেকে এখন ওরা এই নতুন বাড়িতে এসেছে।
এখানে এসে ওরা নিশ্চিন্ত। রীণা সম্পূর্ণ সুস্থ। ভয়টয় আর পায় না। শুধু তাই নয়, রীণার এখন মনে হয়– যা-সব এতদিন ঘটেছে সব যেন স্বপ্ন। সে বিশ্বাসই করতে পারে না কোনোদিন তার ওপর অশরীরী আক্রমণ হত। পুপুও সুস্থ আছে। হাসিখুশি প্রাণচঞ্চল শিশু।
শুধু সঞ্জয় মাঝে মাঝে ভাবে শেষ পর্যন্ত অলৌকিক কিছুর কাছে তাকেও আত্মসমর্পণ করতে হল! হ্যাঁ, আত্মসমর্পণ বইকি। বাড়ি তো বদলাতে হল!
তখনই অবশ্য অন্য যুক্তি দাঁড় করায়–পুপুর শরীর ওখানে টিকছিল না। অন্তত ওর দিকে তাকিয়েও তাকে বাড়ি বদলাতে হত। তাছাড়া নিচের তলার ভাড়াটেদের সঙ্গে বেশিদিন আর মানিয়ে চলতে পারত না। কেবল রীণার দুঃখ বন্দনাদের জন্যে। বন্দনার মাকে ওর খুব ভালো লেগেছিল। অবশ্য এর মধ্যেই বন্দনারা দুবার ঘুরে গেছে। মান্তু তো প্রায়ই আসে। বলে–এবার অনেকটা কাছে হয়েছে।
রীণা হাসে।–কই আর কাছে? কোথায় মানিকতলা আর কোথায় হাওড়ার ক্ষীরোদতলা।
মান্তু বলে, তবু তো যশোর রোড থেকে কাছে।
ডাক্তার রুদ্র প্রায় আসেন। সব মিলিয়ে রীণা এখন বেশ ভালোই আছে।
জুলাই মাস।
একদিন বিকেলে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। ডাক্তার রুদ্র এসেছেন। সঞ্জয়ও রয়েছে। গরম সিঙ্গাড়া আর কফির পেয়ালা সামনে নিয়ে আসর বেশ জমেছে রীণাদের বসার ঘরে।
ডাক্তার রুদ্র কথায় কথায় বললেন, আচ্ছা, সেই ছবিটার কি হল?
–কোন ছবি?
–সেই যে বুড়ো ভদ্রলোকের–যেটা হারিয়ে গেল।
–ওঃ! শিবানন্দ ভট্টাচার্যর?
ডাক্তার রুদ্র মাথা দোলালেন।
–এখানে আসার পর তাঁর কাছে গিয়েছিলে নাকি?
সঞ্জয় বলল, না। যাওয়া হয়নি।
–একেবারে ছেড়ে দিলে?
সঞ্জয় হাসল–আপনার দেখছি বেশ আগ্রহ রয়েছে।
–তা রয়েছে। রহস্যটা কি জানতে না পারা পর্যন্ত কৌতূহল মিটছে না।
রুদ্র একটু থামলেন। তারপর বললেন, কয়েকটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছ? প্রথমত আত্মার আবির্ভাব হত শুধু তিনতলার ঘরেই। এতদিন ধরে এত কাণ্ড হয়ে গেল কিন্তু বাড়ির একতলা-দোতলায় সবাই নিশ্চিন্ত। তাদের গায়ে আঁচটুকুও লাগেনি।
দ্বিতীয়, আক্রমণ শুধু রীণার ওপরেই। রীণা ছাড়া আর কাউকে দেখা দিত না।
–দেখা দিত না, না রীণা ছাড়া আর কেউ দেখতে পেত না? কথার মাঝখানে সঞ্জয় মন্তব্য করল।
Thats also the point. দেখা দেওয়া আর দেখা পাওয়া এই ব্যাপারটার সমাধান হলে আশা করি অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এই বলে ডাঃ রুদ্র চুপ করে ভাবতে লাগলেন।
সঞ্জয় বলল, কিন্তু আপনি কি মনে করেন শিবানন্দর কাছে গেলেই রহস্যের সমাধান হবে?
ডাক্তার রুদ্র থুতনিতে হাত বুলিয়ে একটু ভেবে বললেন, সমাধান হবেই এ কথা জোর করে বলতে পারি না। অলৌকিকতার রহস্য কখনো ভেদ করা যায় না। তবে তুমি বলছিলে না বৃদ্ধটি কলকাতার অনেক পুরনো বাড়ির ইতিহাস জানেন?
–হ্যাঁ, আমার সেই পেশেন্টের বাড়িতে তো তাই শুনেছিলাম।
তবে চলোই-না একদিন বৃদ্ধের সন্দর্শনে যাই।
–আপনি সত্যিই interested দেখছি।
–Yes, I am. ঠিকানাটা তোমার মনে আছে তো?
–একেবারে কণ্ঠস্থ। অশরীরী আত্মাটি এখানেই আমার কাছে হেরে গেছেন।
তবে একটা দিন ঠিক করে ফেলল। দেরি করা উচিত হবে না। বুঝতেই পারছ বৃদ্ধের বয়েস হয়েছে। যে কোনোদিন পৃথিবীর মায়া কাটাতে পারেন।
সঞ্জয় ক্যালেন্ডারের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বলল, সামনের রবিবার হলে আপনার অসুবিধে হবে?
ডাক্তার রুদ্র ডায়রিটা খুললেন।
না, কোনো অসুবিধে নেই। একটা মিটিং আছে সকালে। তা আমরা না হয় বিকেলে যাব।
-তুমিও যাবে নাকি? সঞ্জয় হেসে রীণাকে জিজ্ঞেস করল।
–গেলে হতো। বৃদ্ধটিকে আমারও দেখবার খুব কৌতূহল হচ্ছে।