আসগর সাহেবের সঙ্গে দেখা হলো, কথা হলো না । তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। চলে আসছি, দরজার কাছের বেড থেকে একজন ক্ষীণ স্বরে ডাকল, ভাইসাহেব!
আমি ফিরলাম ।
‘আমারে চিনছেন ভাইসাহেব?’
‘না ।’
‘আমি মোহাম্মদ আব্দুল গফুর । আপনের কাছে চিঠি নিয়ে গেছিলাম। কুড়ি টাকা বখশিশ দিলেন |’
‘খবর কী গফুর সাহেব?
‘খবর ভালো না ভাইসাহেব । বোমা খাইছি। রিকশা কইরা ফিরতেছিলাম— বোমা মারছে।”
‘রিকশায় উঠতে নিষেধ করেছিলাম…’
কপালের লিখন, না যায় খণ্ডন।’
‘তা তো বটেই।’
‘ঠ্যাং একটা কাইট্যা বাদ দিছে ভাইসাহেব ।’
‘একটা তো আছে। সেটাই কম কী? নাই মামার চেয়ে কানা মামা |’
‘ভাইসাহেব, আমার জন্যে একটু দোয়া করবেন ভাইসাহেব।’
‘দেখি, সময় পেলে করব। একেবারেই সময় পাচ্ছি না। হাঁটাহাঁটি খুব বেশি হচ্ছে। গফুর সাহেব, যাই?’
গফুর তাকিয়ে আছে। গফুরের বিছানায় যে-মহিলা বসে আছেন তিনি বোধহয় গফুরের কন্যা। অসুস্থ বাবার পাশে কন্যার বসে থাকার দৃশ্যের চেয়ে মধুর দৃশ্য আরকিছু হতে পারে না। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলরাম— ‘মা যাই?’
মেয়েটি চমকে উঠল। আমি তাকে মা ডাকব এটা বোধহয় সে ভাবেনি ।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম – ০৭
মারিয়ার বাবা আসাদুল্লাহ সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় বলাকা সিনেমা হলের সামনের পুরানো বইয়ের দোকানে। আমি দূর থেকে লক্ষ্য করলাম এক ভদ্রলোক পুরানো বইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। তাঁর হাতে চামড়ায় বাঁধানো মোটা একটা বই। তিনি খুবই অসহায় ভঙ্গিতে চারদিকে তাকাচ্ছেন, যেন জনতার ভেতর কাউকে খুঁজছেন। ভদ্রলোকের পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি, চোখে চশমা। ফটোসেনসিটিভ গ্লাস বলেই দুপুরের কড়া রোদে সানগ্লাসের মতো কালো হয়ে ভদ্রলোকের চোখ ঢেকে দিয়েছে। আমি ভদ্রলোকের দিকে কয়েক মুহূর্ত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম। হতভম্ব হবার প্রধান কারণ, এমন সুপুরুষ আমি অনেকদিন দেখিনি। সুন্দর পুরুষদের কোনো প্রতিযোগিতা নেই। থাকলে বাংলাদেশ থেকে অবশ্যই এই ভদ্রলোককে পাঠানো যেত । চন্দ্রের কলঙ্কের মতো যাবতীয় সৌন্দর্যে খুঁত থাকে- আমি ভদ্রলোকের খুঁতটা কী বের করার জন্যে এগিয়ে গেলাম এবং তাকে চমকে দিয়ে বললাম, কেমন আছেন?
অপরিচিত কেউ কেমন আছেন বললে আমরা জবাব দিই না। হয় ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকি, কিংবা বলি, আপনাকে চিনতে পারছি না। এই ভদ্রলোক তা করলেন না, সঙ্গে সঙ্গে হাসিমুখে বললেন, জি ভালো।
কাছে এসেও ভদ্রলোকের চেহারায় খুঁত ধরতে পারা গেল না। পঞ্চাশের মতো বয়স। মাথাভরতি চুল। চুলে পাক ধরেছে- মাথার আধাআধি চুল পাকা। এই পাকা চুলেই তাকে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে- কুচকুচে কালো হলে তাকে মানাত না।
অসম্ভব রূপবতীদের বেলাতেও আমি এই ব্যাপারটা দেখেছি । তারা যখন যেভাবে থাকে- সেভাবেই তাদের ভালো লাগে। কপালে টিপ পরলে মনে হয়— আহ, টিপটা কী সুন্দর লাগছে! টিপ না থাকলে মনে হয়- ভাগ্যিস এই মেয়ে অন্য মেয়েগুলির মতো কপালে টিপ দেয়নি। টিপ দিলে তাকে একেবারেই মানাত না ।
আমার ধারণা হলো— ভদ্রলোকের চোখে হয়তো কোনো সমস্যা আছে। হয়তো চোখ ট্যারা, কিংবা একটা চোখ নষ্ট । সেখানে পাথরের চোখ লাগানো। ফটোসেনসিটিভ সানগ্লাস চোখ থেকে না খোলা পর্যন্ত কিছুই বোঝা যাবে না। কাজেই আমাকে ভদ্রলোকের সঙ্গে কিছু সময় থাকতে হবে। এই সময়ের ভেতর নিশ্চয়ই তার চোখে ধুলাবালি পড়বে। চোখ পরিষ্কার করার জন্যে চশমা খুলবেন । যদি দেখি ভদ্রলোকের চোখও সম্রাট অশোক-পুত্র কুনালের চোখের মতো অপূর্ব, তা হলে আমার অনেকদিনের একটা আশা পূর্ণ হবে। আমি অনেকদিন থেকেই নিখুঁত রূপবান পুরুষ খুঁজে বেড়াচ্ছি। নিখুঁত রূপবতীর দেখা পেয়েছি- রূপবানের দেখা এখনও পাইনি।
আমি ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে পরিচিত মানুষের মতো হাসলাম । তিনিও হাসলেন- তবে ব্যাকুল ভঙ্গিতে চারদিক তাকানো দূর হলো না। আমি বললাম, স্যার, কোনো সমস্যা হয়েছে?
তিনি বিব্রত ভঙ্গিতে বললেন, একটা সমস্যা অবিশ্যি হয়েছে। ভালো একটা পুরানো বই পেয়েছি–Holder-এর Interpretation of Consicence.অনেকদিন বইটা খুঁজছিলাম- হঠাৎ পেয়ে গেলাম ।
আমি বললাম, বইটা কিনতে পারছেন না? শর্ট পড়েছে?
তিনি বললেন, জি। কী করে বুঝলেন?
‘ভাবভঙ্গি থেকে বোঝা যাচ্ছে । আমার কাছে একশো একুশ টাকা আছে— এতে কি হবে?’
‘একশো টাকা হলেই হবে।’
আমি একশো টাকার নোট বাড়িয়ে দিলাম। ভদ্রলোক খুব সহজভাবে নিলেন। অপরিচিত একজন মানুষ তাঁকে একশো টাকা দিচ্ছে এই ঘটনা তাঁকে স্পর্শ করল না। যেন এটাই স্বাভাবিক। ভদ্রলোক বই খুলে ভেতরের পাতায় আরেকবার চোখ বোলালেন- মনে হচ্ছে দেখে নিলেন মলাটে যে-নাম লেখা ভেতরেও সেই নাম কি না ।
বই বগলে নিয়ে ভদ্রলোক এগুচ্ছেন। আমি তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছি। তাঁর চোখ ভালোমতো না দেখে বিদেয় হওয়া যায় না। ভদ্রলোক হঠাৎ দাড়িয়ে পড়ে বললেন, আপনার নাম কী?
আমি বললাম, আমার নাম হিমালয় ।
ভদ্রলোক বললেন, সুন্দর নাম- হিমালয় । বললেন অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে। হিমালয় নাম শুনে সবাই সামান্য হলেও কৌতুহল নিয়ে আমাকে দেখে, ইনি তাও দেখছেন না। যেন হিমালয় নামের অনেকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় আছে।
আমরা নিউ মার্কেটের কার পার্কিং এলাকায় গিয়ে পৌঁছলাম। তিনি সাদা রঙের বড় একটা গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বললেন, আসুন, ভেতরে আসুন।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, ভেতরে যাব কেন?
তিনি আমার চেয়েও বিস্মিত হয়ে বললেন, আমার বাড়িতে চলুন, আপনাকে টাকা দিয়ে দেব। তারপর আমার ড্রাইভার আপনি যেখানে যেতে চান সেখানে পৌছে দেবে।
‘অসম্ভব! আমার এখন অনেক কাজ ।’
‘বেশ, আপনার ঠিকানা বলুন। আমি টাকা পৌঁছে দেব।’
‘আমার কোনো ঠিকানা নেই।’
‘সে কী!’
‘স্যার, আপনি বরং আপনার টেলিফোন নাম্বার দিন। আমি টেলিফোন করে একদিন আপনাদের বাসায় চলে যাব |’
‘কার্ড দিচ্ছি, কার্ডে ঠিকানা, টেলিফোন নাম্বার সবই আছে।’
‘কার্ড না দেওয়াই ভালো। আমার পাঞ্জাবির কোনো পকেট নেই। কার্ড হাতে নিয়ে ঘুরব, কিছুক্ষণ পর হাত থেকে ফেলে দেব। এরচে টেলিফোন নাম্বার বলুন, আমি মুখস্থ করে রেখে দি। আমার স্মৃতিশক্তি ভালো। একবার যা মুখস্থ করি তা ভুলি না।’
উনি টেলিফোন নাম্বার বললেন। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে গাড়িতে উঠে বসলেন। তখনও তার হাতে বইটি ধরা। মনে হচ্ছে বই হাতে নিয়েই গাড়ি চালাবেন। আমি বললাম, স্যার, দয়া করে এক সেকেন্ডের জন্যে আপনি কি চোখ থেকে চশমাটা খুলবেন?
‘কেন?’
ব্যক্তিগত কৌতূহল মেটাৰ। অনেকক্ষণ থেকে আমার মনে হচ্ছিল আপনার একটা চোখ পাথরের |’
উনি বিস্মিত হয়ে বললেন, এরকম মনে হবার কারণ কী? বলতে বলতে তিনি চোখ থেকে চশমা খুললেন। আমি অবাক হয়ে তাঁর চোখ দেখলাম।
পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর চোখ নিয়ে চারজন মানুষ জন্মেছিলেন- মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা, ট্রয় নগরীর হেলেন, অশোকের পুত্র কুনাল এবং ইংরেজ কবি শেলি। আমার মনে হলো- এই চারটি নামের সঙ্গে আরেকটি নাম যুক্ত করা যায়। ভদ্রলোকের কী নাম? আমি জানি না-ভদ্রলোকের নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। তার টেলিফোন নাম্বারও ইতিমধ্যে ভুলে গেছি। তাতে ক্ষতি নেই- প্রকৃতি তাকে কম করে হলেও আরও চারবার আমার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবে। এইসব ব্যাপারে প্রকৃতি খুব উদার- পছন্দের সব মানুষকে প্রকৃতি কমপক্ষে পাঁচবার মুখোমুখি করে দেয়। মুখোমুখি করে মজা দেখে ।
কাজেই আমি ভদ্রলোকের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো চেষ্টা আর করলাম না। আমি থাকি আমার মতো- উনি থাকেন ওনার মতো। আমি ঠিক করে রেখেছি- একদিন নিশ্চয়ই আবার তার সঙ্গে দেখা হবে, তখন তার সম্পর্কে জানা যাবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে মানুষটা ইন্টারেস্টিং। বই-প্রেমিক। হাতে বইটা পাবার পর আশপাশের সবকিছু ভুলে গেছেন। আমাকে সাধারণ ভদ্রতার ধন্যবাদও দেননি। আমি নিশ্চিত, আবার যখন দেখা হবে তখন দেবেন।
পরের বছর চৈত্রমাসের কথা (আমার জীবনের বড় বড় ঘটনা চৈত্রমাসে ঘটে। কে বলবে রহস্যটা কী?)- বেলা একটার মতো বাজে। ঝাঁঝাঁ রোদ উঠে গেছে। অনেকক্ষণ হেঁটেছি বলে শরীর ঘামে ভিজে গেছে। পাঞ্জাবির এমন অবস্থা যে দুহাতে চিপে উঠানের দড়িতে শুকোতে দেয়া যায়। তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাবার উপক্রম। ঠাণ্ডা এক গ্লাস পানি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। চোখের সামনে ভাসছে বড় মাপের একটা গ্রাস। গ্লাসভরতি পানি। তার উপর বরফের কুচি। কাচের পানির জগ-হাতে আরেকজন দাড়িয়ে আছে। গ্লাস শেষ হওয়ামাত্র সে গ্লাস ভরতি করে দেবে। জগ-হাতে যে দাড়িয়ে আছে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না- শুধু হাত দেখা যাচ্ছে, ধবধবে ফরসা হাত। হাতভরতি লাল আর সবুজ কাচের চুড়ি। জগে করে পানি ঢালার সময় চুড়িতে রিনিঝিনি শব্দ উঠছে।
কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। চৈত্রমাসের দুপুর ঢাকার রাজপথে পানির জগ-হাতে চুড়িপরা কোনো হাত থাকে না। আমি হাটতে হাটতে ভাবছি, কোনোদিন যদি প্রচুর টাকা হয় তা হলে চৈত্রমাসে ঢাকার রাস্তায়-রাস্তায় জলসত্র খুলে দেব। সেখানে হাসিখুশি তরুণীরা পথচারীদের বরফ-শীতল পানি খাওয়াবে। ট্যাপের পানি না- ফোটানো পানি। পানিবাহিত জীবাণু যে-পানিকে দূষিত করেনি সেই পানি। তরুণীদের গায়ে থাকবে আকাশি রঙ-এর শাড়ি। হাতভরতি লাল-সবুজ চুড়ি। চুড়ির লাল রং-এর সঙ্গে মিলিয়ে ঠোঁটে থাকবে আগুন-রঙা লিপষ্টিক । তাদের চোখ কেমন হবে? তাদের চোখ এমন হবে যেন চোখের দিকে তাকালেই মনে হয়—
“প্রহর শেষের আলেয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”
প্রচণ্ড রোদের কারণেই বোধহয় মরীচিক দেখার মতো ব্যাপার ঘটল। আমি চোখের সামনে জলসত্রের মেয়েগুলিকে দেখতে পেলাম। একজন না, চার-পাচ জন। সবার হাতেই পানির জগ । হাতভরতি লাল-সবুজ চুড়ি। আর তখন আমার পেছনে একটা গাড়ি থামল । গাড়ি থেকে মাথা বের তরুণীদের একজন বলল, এই যে শুনুন। কিছু মনে করবেন না, আপনার নাম কি হিমালয়?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
‘গাড়িতে উঠে আসুন। আমার নাম মারিয়া ।’
মেয়েটার বয়স তেরো-চোদ্দ, কিংবা হয়তো আরও কম। বাচ্চা মেয়েরা হঠাৎ শাড়ি পরলে অন্য একধরনের সৌন্দর্য তাদের জড়িয়ে ধরে। এই মেয়েটির বেলায়ও তা-ই হয়েছে। মেয়েটি জলসত্রের মেয়েদের নিয়মমতো আকাশি রঙের শাড়ি পরেছে। শাড়িপরা মেয়েদের কখনো তুমি বলতে নেই, তবু আমি গাড়িতে উঠতে উঠতে বললাম, কেমন আছ মারিয়া?
‘জি ভালো আছি।’
‘তোমার হাতে লাল-সবুজ চুড়ি নেই কেন?’
মারিয়া ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল, কিছু বলল না। আমি মেয়েটিকে চিনতে পারছি না–তাতে কিছু যায়-আসে না।
মারিয়া বলল, আপনি কি অসুস্থ?
‘না ।’
আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে অসুস্থ । আপনি তো আমাকে চেনেন না— আমি কে জানতে চাচ্ছেন না কেন?’
‘তুমি কে?’
‘আমি আসাদুল্লাহ সাহেবের মেয়ে।’
‘ও আচ্ছা ।’
‘আসাদুল্লাহ সাহেব কে তাও তো আপনি জানেন না!’
‘না । উনি কে?’
‘উনি হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যাকে আপনি একবার একশো টাকা ধার দিয়েছিলেন। মনে পড়েছে?’
‘হ্যা, মনে পড়েছে।’
‘যেভাবে কথা বলছেন তাতে মনে হয় এখনও মনে পড়েনি। আপনি বাবাকে বলেছিলেন– তার একটা চোখ পাথরের— এখন মনে পড়েছে?’
‘হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আমরা কি এখন তার কাছে যাচ্ছি? তাকে ঋণমুক্ত করার পরিকল্পনা?’
‘না— তিনি দেশে নেই। বছরে মাত্র তিনমাস তিনি দেশে থাকেন। আপনার সঙ্গে দেখা হবার দুমাস পরই তিনি চলে যান। এই আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলে তিনি খুব আপসেট ছিলেন। তিনি চলে যাবার আগে আপনার চেহারার নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে গিয়েছিলেন। আমাকে বলে গিয়েছিলেন যদি আপনাকে আমি বের করতে পারি তা হলে দারুণ একটা উপহার পাব। তার পর থেকে আমি পথে বের হলেই হলুদ পাঞ্জাবি-পরা কাউকে জিজ্ঞেস করি— আপনার নাম কি হিমালয়? ভালো কথা, আপনি আসলেই হিমালয় তো?’
‘হু— আমিই হিমালয় ।’
“প্রমাণ দিতে পারেন?”
‘পারি— আপনার বাবা যে-বইটা কিনেছিলেন তার নাম- Interpretation of Conscience.’
বাবা বলেছিলেন- আপনি খুব অদ্ভুত মানুষ। আমার কাছে অবিশ্যি তেমন কিছু মনে হচ্ছে না।
‘আমরা যাচ্ছি কোথায়?’
‘গুলশানের দিকে যাচ্ছি।’
গাড়ির ভেতরে এসি দেয়া- শরীর শীতল হয়ে আসছে। ঘুম-ঘুম পাচ্ছে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি জেগে থাকতে । ঘুম আনার জন্যে মানুষ ভেড়ার পাল গোণে। ঘুম না-আসার জন্যে কিছু কি গোণার আছে? ভয়ংকর কোনো প্রাণী গুনতে শুরু করলে ঘুম কেটে যাবার কথা । আমি মাকড়সা গুণতে শুরু করলাম ।
একটা মাকড়সা, দুটা মকড়সা, তিনটা- চারটা, পাচটা । সর্বনাশ! পঞ্চাশটা আবার ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা- কামড়ে সাক্ষাৎ মৃত্যু!
এত গোণাগুণি করেও লাভ হলো না । মারিয়াদের বাড়িতে যখন পৌছলাম তখন আমি গভীর ঘুমে অচেতন। মারিয়া এবং তাদের ড্রাইভার দুজন মিলে ডাকাডাকি করেও আমার ঘুম ভাঙাতে পারছে না।
মারিয়াদের পরিবারের সঙ্গে এই হচ্ছে আমার পরিচয়ের সূত্র। মারিয়ার বয়স তখন পনেরো। সেদিনই সে প্রথম শাড়ি পরে। শাড়ির রঙ বলেছি কি? ও হ্যাঁ, আগে একবার বলেছি। আচ্ছা আবারও বলি, শাড়ির রঙ জলসত্রের মেয়েদের শাড়ির মতো আকাশি নীল ।