এইসব ভালো লাগে : জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালি রোদ এসে আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়, আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল–
এই নিয়ে খেলা করে জানে সে যে বহুদিন আগে আমি করেছি কি ভুল পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালবেসে,
ওসি সাহেব বললেন, আরেক কাপ খাবেন?
‘জি না ।’
‘কবিতার মতো চা যখন— গোটা পাঁচ-ছয় কাপ খান।’
‘পরের কাপটা হয়তো ভালো হবে না। আমার ধারণা চা এখানে ভালো হয় না। আজ হঠাৎ করে হয়ে গেছে। স্টাটিসটিক্যাল প্রবাবিলিটির ভেতর পড়ে গেছে। স্ট্যাটিসটিক্যাল প্রবাবিলিটি বলে, এক লক্ষ কাপ চা যদি বানানো হয় তা হলে এক লক্ষ কাপ চায়ের ভেতর এক কাপ চা হবে অসাধারণ।’
ওসি সাহেব থমথমে গলায় বললেন, সায়েন্স কপচাবি না। সায়েন্স গুহ্যদ্বার দিয়ে ঢুকিয়ে দেব।
আমি বিনীত ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি আচ্ছা স্যার।’
‘এখন বল, তোদের বোমা বানাবার কারখানাটা কোথায়? সাঙ্গোপাঙ্গদের নাম বল । পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঝেড়ে কাশবি, নয়তো ঠেলার চোটে চা যে খেয়েছিস, সেই চা নাকমুখ দিয়ে বের হবে। শুরু কর।’
কী সর্বনাশের কথা- আমার ব্ৰহ্মতালু শুকিয়ে ওঠার উপক্রম হলো! এ কী সমস্যায় পড়া গেল! ওসি সাহেব সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, নিজ থেকে কথা বলতে চাইলে ভালো কথা, নয়তো রোলারের গুতা দিয়ে সব বের করব। নাভির এক ইঞ্চি উপরে একটা গুতা দিলে আর কিছু দেখতে হবে না। গত জন্মের কথাও বের হয়ে আসবে। আমি শুকনো গলায় বললাম, সার, একটা টেলিফোন করতে পারি?
ওসি সাহেব আমার দিকে ঝুঁকে এসে কাকে টেলিফোন করবি? কোনো মন্ত্রীকে? পুলিশের আইজিকে? আর্মির কোনো জেনারেলকে? টেলিফোন এবং সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশান— তোকে অ্যারেক্ট করার জন্য ধমক খেতে খেতে আমার অবস্থা কাহিল হবে–বদলি করে দেবে চিটাগাং হিলট্র্যাক্টে? শান্তিবাহিনীর বোমা খেয়ে চিত হয়ে পড়ে থাকব?
‘স্যার, আমি খুবই লোয়ার লেভেলের প্রাণী। প্রায় শিম্পাঞ্জিদের কাছাকাছি। হাইয়ার লেভেলের কাউকে চিনি না ।’
‘তা হলে কাকে টেলিফোন করতে চাচ্ছিস?’
‘এমন কাউকে টেলিফোন করব যে আমার চরিত্র সম্পর্কে আপনাকে একটা সাটিফিকেট দেবে!’
‘ক্যারেকটার সার্টিফিকেট?’
‘জি ।’
‘তোর টেলিফোনের পর হোম মিনিস্টার আমাকে ধমকাধমকি করবে না?’
‘জি না স্যার । সম্ভাবনা হচ্ছে, একটা মেয়ে খুব মিষ্টি গলায় আপনাকে আমার সম্পর্কে দুএকটা ভালো কথা কলবে।’
‘মেয়েটি কে? প্রেমিকা?’
‘জি না। আমি লোয়ার লেভেলের প্রাণী, প্রেম করার যোগ্যতা আমার নেই। প্রেম অতি উচ্চস্তরের ব্যাপার ।’
‘তোর যোগ্যতা কী?’
‘আমার একমাত্র যোগ্যতা আমি হাঁটতে পারি। কেউ চাইলে ছায়ার মতো পাশে থাকি । আমি হচ্ছি স্যার ছায়াসঙ্গী।’
ওসি সাহেব গম্ভীর মুখে টেলিফোন সেট আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। থানার ঘড়িতে রাত একটা বাজে। কাকে টেলিফোন করব বুঝতে পারছি না। রূপাকে করা যায়। এত রাতে টেলিফোন করলে রূপা ধরবে না। রূপার বাবা ধরবেন এবং আমার নাম শুনেই খট করে রিসিভার নামিয়ে রাখবেন । ফুপুর বাসায় করা যায়। ফুপু টেলিফোন ধরবেন। ঘুম-ঘুম স্বরে বলবেন, কে, হিমু? কী ব্যাপার?
আমি ব্যাপার ব্যাখ্যা করার পর তিনি হাই তুলতে তুলতে বলবেন, তোকে থানায় ধরে নিয়ে গেছে এটা তো নতুন কিছু না। প্রায়ই ধরে। রাতদুপুরে টেলিফোন করে বিরক্ত করছিস কেন?
এই দুইজন ছাড়া আর কাউকে টেলিফোন করা সম্ভব না, কারণ আর কারও টেলিফোন নাম্বার আমি জানি না। মারিয়াকে করব? এমিতেও ওর খোজ নেয়া দরকার। দুশো কিলোমিটার স্পিডে চলার পর কী হলো? পৌছতে পেরেছে তো ঢাকায়? পথে কোনো বোমা-টোমা খায়নি? মারিয়ার টেলিফোন নাম্বারটা মনে করতে হবে। পাচ বছর আগে একটা পদ্ধতি শিখিয়েছিল । অ্যাসোসিয়েশন অব আইডিয়া পদ্ধতি। নাম্বারটা হচ্ছে প্রথমে আট- তারপর আমি, তুমি, আমি, তুমি আমরা। আমি হচ্ছে, ১, তুমি হচ্ছে ২, আমরা হচ্ছে ৩; তা হলে নাম্বারটা হল ৮১২ ১২৩ ৷ ভয়াল করতেই পাশ থেকে মারিয়া ধরল। আমি খুশিখুশি গলায় বললাম, কেমন আছিস?
মারিয়া বিস্মিত হয়ে বলল, কেমন আল্লাল আপনি কে? হু আর ইউ?
‘আমি হিমু।’
‘রাত একটার সময় কেন?’
‘খোঁজ নেবার জন্যে— তোর দুশো কিলোমিটার ম্পিডে ভ্রমণ কেমন হলো?’
‘রাত একটার সময় সেটা টেলিফোন করে জানতে হবে?’
‘তোর টেলিফোন নাম্বার মনে আছে কি না সেটাও ট্রাই করলাম। এক কাজে দু কাজ |’
‘এখনও তুই-তুই করছেন?’
‘আচ্ছা, আর করব না।’
‘কোথেকে টেলিফোন করছেন?”
‘রমনা থানা থেকে । পুলিশের ধারণা আমি বোমা-টোমা বানাই। ধরে নিয়ে এসেছে। এখন জেরা করছে।’
‘ধোলাই দিয়েছে?’
‘এখন ও দেয়নি। মনে হয় দেবে। তুই কি একটা কাজ করতে পারবি? ওসি সাহেবকে মিষ্টি গলায় বলবি যে বোমা-টোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি অতি সাধারণ, অতি নিরীহ হিমু। একটুর জন্যে মহাপুরুষ হতে গিয়ে হতে পারিনি।’
‘আপনি তো সারাজীবন নানান ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চেয়েছেন–পুলিশের হাতে ধরা খাওয়া তো ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা। বের হবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কেন?’
‘এক জায়গায় একটা দাওয়াত ছিল । বলেছিলাম রাত করে যাব। ভদ্রলোক নাখেয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করবেন।’
‘ভদ্রলোকের টেলিফোন নাম্বারটা দিন। টেলিফোন করে বলে দিচ্ছি আপনি পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছেন। আসতে পারবেন না।’
‘তোর কি ধারণা বাংলাদেশের সবার ঘরেই টেলিফোন আছে?’
‘হিমু ভাই, আপনি এখনও কিন্তু তুই-তুই করছেন। কেন করছেন তাও আমি জানি। মানুষকে বিভ্রান্ত করে আপনি আনন্দ পান। কখনো তুমি, কখনো তুই বলে আপনি আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। একসময় আমি নিতান্তই একটা কিশোরী ছিলাম । বিভ্রান্ত হয়েছি। বিভ্রান্ত হবার স্টেজ আমি পার হয়ে এসেছি। অনেক কথা বলে ফেললাম। আমি আপনার সঙ্গে আর কথা বলব না। রাখি?’
‘আচ্ছা- তুই এত রাত পর্যন্ত জেগে কী করছিলি?’
‘গান শুনছিলাম।’
‘কার গান?’
‘নীল ডায়মন্ড । গানের কথা শুনতে চান?’
‘বল।’
‘What a beautiful noise
coming out from the street
got a beautiful sound
its got a beautiful beat
its a beautiful noise.’
কথা তো শুনলেন। এখন তা হলে রাখি?’
‘আচ্ছা।’
‘খট শব্দ করে মারিয়া টেলিফোন রেখে দিল ।’
ওসি সাহেব বললেন, টেলিফোনে কোনো মন্ত্রী-মিনিস্টার পাওয়া গেল?
‘জি না ।’
‘আপনার ক্যারেক্টার সাটিফিকেট দেবে এমন কাউকেও পাওয়া গেল না?’
ওসি সাহেব আবার তুই থেকে আপনি-তে চলে এসেছেন। জোয়ারভাটার খেলা চলছে। খেলার শেষ কী কে জানে। ওসি সাহেব বললেন, কী, কথা বলুন, সুপারিশের লোক পাওয়া গেল না?
‘একজনকে পেয়েছিলাম, সে সুপারিশ করতে রাজি হলো না।’
‘খুবই দুঃসংবাদ ।’
‘জি, দুঃসংবাদ ।’
‘আমাদের থানার রেকর্ড অফিসার বলল, আপনাকে এর আগেও কয়েকবার ধরা হয়েছে।’
‘উনি ঠিকই বলেছেন। আমি নিশাচর প্রকৃতির মানুষ তো- রাতে হাঁটি । রাতে যারা হাটে পুলিশ তাদের পছন্দ করে না । পুলিশের ধারণা রাতে হাটার অধিকার শুধু তাদেরই আছে।’
‘বিটের কনস্টেবলরা বলছিল আপনার নাকি আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। সত্যি আছে নাকি?’
‘নেই স্যার। হাঁটার ক্ষমতা ছাড়া আমার অন্য কোনো ক্ষমতা নেই।’
‘রোলারের দুই গুতা জায়গামতো পড়লে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বের হয়ে যায়।’
‘যথার্থ বলেছেন স্যার ।’
‘আপনার প্রতি আমি সামান্য মমতা অনুভব করছি। কেন বলুন তো?’
‘আমার কোনো আধ্যাত্মিক ক্ষমতা নেই– থাকলে সেই ক্ষমতা অ্যপ্রাই করে আমার মতো অভাজনের প্রতি আপনার মমতার কারণ বলে দিতে পারতাম ।’
‘আপনার প্রতি মমতা বোধ করছি, কারণ আমার জানামতে আপনি হচ্ছেন থানায় ধরে-আনা প্রথম ব্যক্তি, যার পক্ষে কথা বলার জন্যে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ এমন এক দেশ, যে-দেশে পুলিশের হাতে কেউ ধরা পড়লেই মন্ত্রী-মিনিস্টার, সেক্রেটারি, মিলিটারি জেনারেলের একটা সাড়া পড়ে যায়। টেলিফোনের পর টেলিফোন আসতে থাকে। শুনুন হিমু সাহেব, চলে যান। আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি।’
‘থ্যাংক য়্যু স্যার।’
‘যাবেন কিভাবে?’ গাড়ি-রিকশা সবই তো বন্ধ!’
‘হেঁটে হেঁটে চলে যাব। কোনো সমস্যা নেই।’
‘আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। পুলিশের জীব দিচ্ছি, আপনি যেখানে যেতে চান নামিয়ে দেবে । যাবেন কোথায়?’
‘কাওরান বাজার। আসগর নামের এক ভদ্রলোকের বাসায় আমার দাওয়াত।’
‘যান, দাওয়াত খেয়ে আসুন।’
আমি পুলিশের জিপে উঠে বসলাম। সেন্ট্রি-পুলিশ আমাকে তালেবর সাইজের কেউ ভেবে স্যালুট দিয়ে বসল। রোলারের গুতার বদলে স্যালুট। বড়ই রহস্যময় দুনিয়া ।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম – ০৩
পুলিশের গাড়ি আমাকে কাওরান বাজার নামিয়ে দিয়ে গেল। ড্রাইভারের গায়েও খাকি পোশাক । সে বেশ আদবের সঙ্গে গাড়ির দরজা খুলে আমাকে নামতে সাহায্য করল। তার পরই এক স্যালুট। আমি অস্বস্তির সঙ্গে চারদিকে তাকালাম- কেউ দেখে ফেলছে না তো? পুলিশ আদবের সঙ্গে গাড়ি থেকে নামাচ্ছে, স্যালুট দিচ্ছে- খুবই সন্দেহজনক। রাত প্রায় দুটা- কারও জেগে থাকার কথা না। আন্দোলনের সময় সারাদিন লোকজন ব্যস্ত থাকে । টেনশানঘটিত ব্যস্ততা । রাত দশটায় ভয়েস অভ আমেরিকার খবর শোনার পর সবার মধ্যে খানিকটা ঝিমঝিম ভাব চলে আসে । আন্দোলনের খবর যত ভয়াবহই হোক, সবাই খুব নিশ্চিন্ত মনে ঘুমুতে চলে যায়। দেশে কোনো আন্দোলন চলছে কি না তা বোঝার উপায় হলো রাত বারোটার পর পথে বের হওয়া । যদি দেখা যায় সব খাঁখাঁ করছে, তা হলে বুঝতে হবে কোনো আন্দোলন চলছে। পানের দোকানে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ভিড় জমে থাকলেও আন্দোলন হচ্ছে ধরে নেওয়া যায়। বিবিসি-র দিকে গভীর আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে লোকজন কান পেতে থাকে। আমার নিজের ধারণা, কোনো এক এপ্রিল-ফুলের রাতে বিবিসি যদি মজা করে বলে- বাংলাদেশে সরকার-পতন হয়েছে, তা হলে সরকারের পতন হয়ে যাবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাড়ি ছেড়ে অতি দ্রুত কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে উঠবেন । কেউ কোনো উচ্চবাচ্য করবে না । বাংলাদেশ টিভি থেকে বলা হবে- বিবিসির খবর অনুযায়ী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকারের পতন হয়েছে। বর্তমানে ক্ষমতায় কে আছেন তা তারা বলেননি বলে এই বিষয়ে আমরাও কিছু বলতে পারছি না ।
আমার চারপাশে কেউ ছিল না। একটা কুকুর ছিল, সে পুলিশের গাড়ি দেখে দ্রুত ডাক্টবিনের আড়ালে চলে গেল। যতক্ষণ গাড়ি থেমে রইল ততক্ষণ আর তাকে দেখা গেল না। গাড়ি চলে যাবার পরই সে মাথা বের করে আমাকে দেখল। আমি বললাম, এই আয়” সে কিছু সন্দেহ, কিছু শঙ্কা নিয়ে বের হয়ে এল। লেজ নড়ছে না- এর অর্থ হচ্ছে আমার ব্যাপারে সে নিশ্চিত হতে পারছে না । পুলিশের গাড়ি যাকে নামিয়ে দিয়ে যায় তার বাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া নিম্নশ্রেণীর প্রাণীর পক্ষেও সম্ভব না। কুকুরের সঙ্গে আমি কিছু কথাবার্তা চালালাম ।
‘কী রে, তোর খবর কী? রাতের খাওয়া শেষ হয়েছে?’
(কুকুর স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। ভবছে।)
‘তুই কি এই দিকেরই? রাতে ঘুমাস কোথায়?’
(এখন লেজ একটু নড়ল ।)
‘আমি গলির ভেতর ঢুকব। একা ভয়-ভয় লাগছে। তুই আমাকে একটু এগিয়ে দে।’
(লেজ ভালোমতো নড়া শুরু হয়েছে। অর্থাৎ আমাকে সে গ্রহণ করেছে বন্ধু হিসেবে।)
‘খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছিস কেন? তোর পায়ে কী হয়েছে?’
(প্রবল লেজ নাড়ার সঙ্গে এইবার সে কুইকুই করল। অর্থাৎ পায়ে কী সমস্যা সেটা বলল। কুকুরের ভাষা জানা নেই বলে বুঝতে পারলাম না ।)
মনে হয় তার পায়ে কেউ গরম ভাতের মাড় ঢেলে দিয়েছে। গরম মাড় কিংবা গরম পানি কুকুরের গায়ে ফেলে আমরা বড় আনন্দ পাই। ব্যথা-যন্ত্রণায় সে ছটফট করেদেখে আমাদের বড়ই ভালো লাগে। মানুষ হিসেবে সমগ্র পশুজগতে আমরা শ্রেষ্ঠ, সেটা আবারও প্রমাণিত হয় ।
আমার ধারণা, নিম্নশ্রেণীর পশু বলে আমরা যাদের আলাদা করছি, তাদের আলাদা করা ঠিক হচ্ছে না। মানুষ হিসেবে আমরা এমন কিছু এগিয়ে নেই। আমাদের বুদ্ধি বেশি বলে আমরা অহংকার করি- ওদের যে বুদ্ধি কম সেটা কে বলল? আমরা কি কখনো ওদের মাথার ভেতর ঢুকতে পেরেছি যে বলব— ওদের লজিক নেই? আমাদের ভাষা আছে, ওদের নেই।— আরেকটি নিতান্তই হাস্যকর কথা। ওদের ভাষা অবশ্যই আছে। একটা কুকুর অন্য একটা কুকুরের সাথে নানান বিষয়ে কথাবার্তা বলে। আমরা যখন শুনি তখন মনে হয় শুধুই ঘেউঘেউ করছে। দুজন চাইনিজ কিংবা জাপানিকে যখন কথা বলতে শুনি তখন মনে হয় এরা কিছুই বলছে না, শুধু “চেং বেং’-টাইপ শব্দ করছে। ওদের চেং বেং-এর সঙ্গে ঘেউঘেউ-এর তফাতটা কোথায়?
পশুদের বুদ্ধি আছে, জ্ঞান আছে, চিন্তাশক্তি আছে। সব জেনেও এদের আমরা অস্বীকার করি শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে। অস্বীকার না করলে এদের হত্যা করে আমরা খেতে পারতাম না । আমাদের লজ্জা করত ।
খোঁড়া কুকুরটা আমার আগে আগে যাচ্ছে। মনে হয় পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো সে আগেও আমাকে এ-অঞ্চলে আসতে দেখেছে। সে মনে করে রেখেছে। সে জানে আমি কোথায় যাব, তাই আগে আগে নিয়ে যাচ্ছে। নয়তো পেছনে পেছনে আসত। পথে আরও কয়েকটা কুকুর পাওয়া গেল। তারা ঘেউঘেউ করে ওঠার আগেই আমার কুকুরটা ঘেউঘেউ করল । হয়তো বলল, “ঝামেলা করিস না, আমার চেনা লোক” ।
তারাও ঝামেলা করল না। মাথা উচু করে আমাকে দেখে আবার মাথা নিচু করে ফেলল। আমার কুকুরটা আমার দিকে তাকিয়ে নিচুস্বরে কয়েকবার ঘেউঘেউ করল। এর অর্থ সম্ভবত- “রাতদুপুরে এভাবে হাঁটাহাটি করবে না। দেশের অবস্থা ভালো না । আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। বড় আফসোস! সরকার আর বিরোধীদলে কবে যে মিটমাট হবে!”
আমি কুকুরের পেছনে পেছনে আসগর সাহেব যে গলিতে থাকেন সেই গলিবের করার চেষ্টা করছি। ব্যাপারটা জটিল। শখ নদীর উপশাখা থাকে- সেই উপশাখা থেকেও শাখা বের হয়, যাকে বলা চলে উপ-উপশাখা। আসগর সাহেবের গলিও তেমনি উপ-উপগলি । ঢাকা শহরের সবচে সরু এবং সবচে দীর্ঘ গলি। শুধু যে দীর্ঘ গলি তা না, সবচে দীর্ঘ ডাস্টবিনও । গলির দুপাশের বাসিন্দারা তাদের যাবতীয় আবর্জনা কষ্ট করে দূরে নিয়ে ফেলে না, গলিতেই ঢেলে দেয়। ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি তাতে কিছু মনে করে না। কারণ গলিটার আসলেই কোনো নাম নেই। কোনো একদিন এই গলিতে বিখ্যাত কেউ জন্মাবে, তখন হয়তো নাম হবে। কুখ্যাতদের নামে গলির নাম হলে অবশ্যি এখনই এই গলির নাম রাখা যায়- “কানা কুদ্দুস লেন” । কানা কুদ্দুস কাওরান বাজার এলাকার ত্ৰাস । মানুষ-খুনকে সে মোটামুটি একটা আর্টের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তার সঙ্গে আমার মোটামুটি ভাব আছে। দিনের বেলা সে বেঙ্গল মোটর নামে মোটর পার্টসের দোকানে বসে থাকে। সে অতি বিনয়ী, আচার-ব্যবহার বড়ই মধুর। দেখা হলেই সে আমাকে প্রায় জোর করে চা, মোগলাই পরোটা খাওয়ায় ।
গলিটা আমার খুব প্রিয়, কারণ এই গলিতে রিকশা ঢুকতে পারে না। এখানে সবসময়ই হরতাল । শিশুরা প্রায়ই ইটের স্ট্যাম্প বানিয়ে ক্রিকেট খেলে। এখানে এলেই আমি আগ্রহ নিয়ে তাদের খেলা দেখি একবার আমি তাদের আম্পায়ার হিসেবেও কাজ করেছি। পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং-এ একটা রেকর্ড সেবার করেছিলাম। বোল্ড আউট হয়ে গেছে, ইটের স্ট্যাম্প বলের ধাক্কায় উড়ে চলে গেছে। আমি তাকিয়ে দেখি শিশুব্যাটসম্যান ব্যাট-হাতে কাদোকদো চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে । আমি তখন অবলীলায় কঠিন মুখে বলেছি- নো বল হয়েছে, আউট হয়নি। শিশু-ব্যাটসম্যানের চোখে গভীর আনন্দ । ফিল্ডাররা চ্যাচামেচি করছে। আমি দিয়েছি ধমক— তোমরা বেশি জান? আমি ঢাকা লীগের আম্পায়ার । আমার চোখের সামনে নো বল করে পার হয়ে যাবে, তা হবে না। স্টার্ট দা গেম। নো হাংকিপাংকি ।
এরা আমার হুকুম মেনে নিয়েছে। বয়স্ক একজন মানুষ তাদের খেলার সঙ্গে যোগ দিয়েছে- এতেই তারা আনন্দিত। বয়স্ক মানুষদের ভুলক্রটি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখতে হয়। শিশুরা জানে বয়স্ক মানুষরা ভুল করে, জেনেশুনে ভুল করে । শিশুরাই শুধু জেনেশুনে কোনো ভুল করে না ।
আসগর সাহেবকে তার বাসায় পাওয়া গেল না। দরজায় মোটা তালা ঝুলছে। এরকম হবার কথা না । আসগর সাহেব রুটিন-বাধা জীবনযাপন করেন । ন’টার আগেই জিপিওতে চলে যান। ফেরেন সন্ধ্যায়। রান্নাবান্না করে খাওয়াদাওয়া শেষ করেন। ঘর থেকে বের হন না। গত আঠারো বছরে এই রুটিনের ব্যতিক্রম হয়নি। তার নিজের কোনো সংসার নেই। জীবনের একটা পর্যায়ে হয়তো বিয়ে করে সংসার করার কথা ভেবেছেন। এখন ভাবেন না- ভাবার কথাও না এখন হয়তো মৃত্যুর কথা ভাবেন। একদিন মৃত্যু হবে, যেহেতু সৎ জীবনযাপন করছেন, সেহেতু মৃত্যুর পর বেহেশত-নসিব হবেন। সেখানে সুখের সংসার পাতবেন। এই জীবনে যা করা হয়নি, পরের জীবনে তা করা হবে।
ভদ্রলোক যে অতি সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন তা সত্যি। চিঠি লিখে সামান্য যা রোজগার করেছেন- তার সিং দেশে পাঠিয়েছেন। একবেলা খাওয়া অভ্যাস করেছেন। এতে নাকি স্বাস্থ্য ভালো থাকে। স্বাস্থ্য ভালো থাকুক বা না-থাকুক, খরচ অবশ্যই বাঁচে । তিনি খরচ বাঁচিয়েছেন। খরচ বাঁচিয়েছেন বলেই ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনা করাতে পেরেছেন। তারা আজ প্রতিষ্ঠিত ।
এক ভাই সরকারি ডাক্তার। কুড়িগ্রাম সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। অন্য ভাই এক কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক। ছোট ভাইরা এখন বড় ভাইয়ের পেশা নিয়ে লজ্জা বোধ করে। তাদের খুব ইচ্ছা বড় ভাই দেশের বাড়িতে গিয়ে স্থায়ী হোন। দেশের বাড়ি ভাইরা মিলে ঠিকঠাক করেছে। পুকুর কাটিয়ে মাছ ছেড়েছে। জমিজমাও কিছু কেনা হয়েছে। আসগর সাহেব নিজেও চান গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকতে। তার বয়স হয়েছে, শরীর নষ্ট হয়েছে- খুবই ক্লান্ত বোধ করেন। বড় ধরনের অসুখবিসুখও হয়েছে হয়তো। ডাক্তার দেখান না বলে অসুখ ধরা পড়েনি। শরীরের এই অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে থাকাটা আসগর সাহেবের জন্যে আনন্দের ব্যাপার হবার কথা । ভাইবোনরা তাকে যথেষ্ট পরিমাণ শ্রদ্ধা করে। এই মানুষটি তাদের বড় করার জন্যে বিয়েটিয়ে কিছু করেনি- সারাজীবন অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন, এই সত্য তারা সবসময় স্বীকার করে।
আলি আসগর দেশে যেতে পারছেন না। বিচিত্র এক ঝামেলায় তিনি ফেঁসে গেছেন। ঝামেলাটা হয়েছে সাত বৎসর আগে । দিন-তারিখ মনে নেই, তবে বৃহস্পতিবার ছিল এটা তার মনে আছে। তিনি তার নিজের জায়গায় টুলবক্স নিয়ে বসে আছেন, লুঙ্গি ও ফতুয়া-পরা এক লোক এসে সামনে উবু হয়ে বসল। সে কিছু টাকা মনিঅৰ্ডার করতে চায়। টাকার পরিমাণ সাত হাজার এক টাকা। লোকটি প্রায় অস্পষ্ট স্বরে বিড়বিড় করে বলল, অনেক কষ্ট কইরা ট্যাকাগুলান জমাইছি ভাইসাব- পরিবাররে পাঠামু। ট্যাকা কেমনে পাঠায় জানি না। আপনে ব্যবস্থা কইরা দেন। আপনের পায়ে ধরি ।
বলে সত্যি সত্যি সে তার পা চেপে ধরল। আসগর সাহেব আঁতকে উঠে বললেন, করেন কী, করেন কী!
‘গরিব মানুষ ভাইসাব, ট্যাকাগুলান সম্বল। বড় কষ্ট কইরা জমাইছি, কেমনে পাঠামু জানি না ।’
‘আপনার নাম কী?’
‘মনসুর।’
‘মনসুর, ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কোনো সমস্যা না। ঠিকমতো নাম-ঠিকানা বলেন। কার নামে পাঠাবেন?’
‘পরিবারের নামে ।’
‘পরিবারের নাম কী?’
‘জহুরা খাতুন।’
‘গ্রাম, পোস্টাপিস সব বলেন…। আচ্ছা দাঁড়ান, মানিওর্ডার ফরম আগে নিয়ে আসি ।’
মনিঅৰ্ডার ফরম আনতে গিয়ে দেখা গেল বৃহস্পতিবার হাফ অফিস। সব বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবারের আগে মনিঅৰ্ডার করা যাবে না। আসগর সাহেব বললেন, ভাই, আপনি শনিবার সকাল দশটার মধ্যে চলে আসবেন । আমি মনিঅৰ্ডার করে দেব। কোনো টাকা লাগবে না। বিনা টাকায় করব । চা খাবেন? চা খান ।
লোকটা চা খেল। তার মনে হয় কিছু সমস্যা আছে। চা খেতে খেতে কিছুক্ষণ কাঁদল । চলে যাবার সময় সাগর সাহেবকে অবাক করে দিয়ে বলল, ভাইজান, ট্যাকাগুলান সাথে নিয়া যাব না। আমার অসুবিধা আছে। আপনের কাছে থাউক। আমি শনিবারে আসুম।
আসগর সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, আমার কাছে টাকা রেখে যাবেন? এতগুলো টাকা ।
লোকটা আগের মতো অস্পষ্ট গলায় বিড়বিড় করে বলল, জি ভাইজান। কোনো উপায় নাই। গরিবের বহুত কষ্টের ট্যাকা। আপনের হাতে দিয়া গেলাম ভাইজান— আমি শনিবারে আসমু ।
লোকটি আর আসেনি। আসগর সাহেব সাত বৎসর টাকা নিয়ে অপেক্ষা করছেন । লোকটা আসছে না বলে তিনি দায়মুক্ত হয়ে দেশের বাড়িতে যেতে পারছেন না। সম্পূর্ণ অকারণে তিনি অন্যের সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছেন। কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদের নিজেদের তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। তারা নিজের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন অদ্ভুত সব সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। নিজেকে কিছুতেই অন্যের সমস্যা থেকে মুক্ত করতে পারে না। হাজার চেষ্টা করেও না ।
আসগর সাহেবের ঘর দোতলায় । একতলায় দরজির একটা দোকান- দরজির নাম বদরুল মিয়া । বদরুল মিয়া পরিবার নিয়ে দোতলায় থাকেন। তিনি তার একটি ঘর সাবলেট দিয়েছেন আলি আসগরকে । রাত আড়াইটা বাজে— এই সময়ে বদরুল মিয়াকে ডেকে তুলে আসগর সাহেব সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাস করা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না। বদরুল মিয়া অবিশ্যি এমিতে খুব মাইডিয়ার ধরনের লোক। বয়স পঞ্চাশের উপরে। ছোটখাটো হাসিখুশি মানুষ। মাথায় টুপি পরে হাসিমুখে অনবরত ঘটাং ঘটাং করে পামেশিন চালান। বদরুল মিয়ার বিশেষত্ব হচ্ছে, তিনি মেয়েদের ব্লাউজ ছাড়া অন্যকিছু বানাতে পারেন না। কিংবা পারলেও বানান না। ব্লাউজ মনে হয় তিনি ভালো বানান। তার দোকানে মেয়েদের ভিড় লেগেই থাকে। মেয়েরাও তাকে খুব পছন্দ করে। তাকে বদরুল চাচা না ডেকে ‘নূর চাচা’ ডাকে। কারণ বদরুল মিয়ার চেহারা দেখতে অনেকটা অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের মতো।
আমি বদরুল মিয়ার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকলাম–নূর চাচা আছেন নাকি? সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে বদরুল মিয়া বের হয়ে এলেন। মনে হয় জেগেই ছিলেন। গভীর রাতে ডেকে তোলার জন্যে তাঁকে মোটেই বিরক্ত মনে হলো না। বরং মনে হলো তিনি আমাকে দেখে গভীর আনন্দ পেয়েছে। মেয়েদের ব্লাউজের কারিগররা হয়তো আনন্দময় ভুবনে বাস করেন। তিনি হাসিমুখে বললেন, ব্যাপার কী হিমু ভাই?
‘আসগর সাহেবের খোজে এসেছিলাম। ঘর তালাবদ্ধ। খবর জানেন কিছু?’
‘জি না, কিছুই জানি না। আজ দোকান বন্ধ করেছি বারোটার সময়। তখন দেখি আসেন নাই। এরকম কখনো হয় না। উনি সন্ধ্যার সময় চলে আসেন। আমি নিজেও চিন্তাযুক্ত। দেশের অবস্থা ভালো না। আবার দিয়েছে হরতাল!’
বারোটার সময় দোকান বন্ধ করেছেন, আপনার কাজের চাপ মনে হয় খুব বেশি।’
বদরুল মিয়া আনন্দে হেসে ফেলে বললেন, সবই আল্লাহর ইচ্ছা । ব্যবসা মাশাল্লাহ ভালো হচ্ছে। আন্দোলন-টান্দোলনের সময় মেয়েছেলেরা কাপড় বেশি বানায় ।’
‘কাপড় না, ব্লাউজ মনে হয় বেশি বানায় ।’
বদরুল মিয়া আবারও মিষ্টি করে হাসলেন। আমি বললাম, আচ্ছা নূর চাচা, আপনার এই অঞ্চলের সব মেয়ের বুকের মাপ আপনি জানেন, তা-ই না?
‘এইটা জানতেই হয়—মাপ লাগে ।’
‘এই অঞ্চলের সবচে বিশালবক্ষা তরুণীর নাম কী?’
বদরুল মিয়া আবার বিনীত ভঙ্গিতে হাসলেন। কিন্তু বললেন না। গলা-খাকারি দিয়ে হাসি বন্ধ করলেন। আমি বললাম, প্রফেশনাল এথিক্স। নাম বলবেন না। খুব ভাল। নূর চাচা, যাই?
‘আসগর ভাইকে কিছু বলতে হবে?’
‘জি না, কিছু বলতে হবে না।’
‘একটু সাবধানে যাবেন হিমু ভাই। সময় খারাপ—গত রাত তিনটার দিকে একটা মার্ডার হয়েছে। কানা কুদুসের কাজ। মাথা কেটে নিয়ে গেছে। শুধু বডি ফেলে গেছে।’
‘কানা কুদ্দুস আমাকে বোধহয় মার্ডার করবে না। যাই, কেমন? এত রাতে ঘুম ভাঙালাম- কিছু মনে করবেন না।’
‘জি না, এটা কোনো ব্যাপার না। জেগেই ছিলাম, তাহাৰ্জ্জুদের নামাজ পড়ছিলাম। সময় তো ভাই হয়ে এসেছে—আল্লাহপাকের সামনে দাড়াব— কী বলব এই নিয়ে চিন্তাযুক্ত থাকি। তাহাৰ্জ্জুদের নামাজ পড়ে ওনার দরবারে কান্নাকাটি করি।’