আমি চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম, অনেকের ধারণা আমার কিছু আদিভৌতিক ক্ষমতা আছে!
আদিভৌতিক মানে কি সুপার ন্যাচারাল?
হুঁ।
আপনার কি সত্যি আছে তেমন কোনো ক্ষমতা?
জানি না।
সত্যি জানেন না?
না।
ওসি সাহেব আমার দিকে সামান্য ঝুঁকে এসে বললেন, আপনি, আপনার আদিভৌতিক ক্ষমতা দিয়ে আমার বিষয়ে কি কিছু বলতে পারবেন?
আমি বললাম, আজ আপনার বিবাহ বার্ষিকী। এই উপলক্ষেই আপনার স্ত্রী আপনাকে গোলাপি হাফসাট উপহার দিয়েছেন। বিবাহ বার্ষিকীর দিন থেকে সিগারেট ছেড়ে দিবেন। প্ৰতিজ্ঞা করেছিলেন। আজই আপনার সিগারেট ছাড়ার প্রথম দিন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি আবার সিগারেট ধরবেন।
ওসি সাহেব চিন্তিত গলায় বললেন, আপনি যা বলেছেন তা ঠিক তবে যে কোনো বুদ্ধিমান লোক অবজারবেশন থেকে কথাগুলো বলতে পারে। আপনিই বলুন পারে না?
পারে। আচ্ছা আমার স্ত্রীর নাম কি বলতে পারবেন? আমার স্ত্রীর নাম যদি বলতে পারেন তাহলে বুঝব আপনার কিছু ক্ষমতা আছে।
আপনার স্ত্রীর নাম আমি বলতে পারব না। তবে আপনার স্ত্রীর নামের মধ্যে ধাতব শব্দ আছে। সুরেলা ধাতব আওয়াজ। আপনার স্ত্রীর নাম কি?
নূপুর!
ওসি সাহেব অস্বাভাবিক গম্ভীর হয়ে গেলেন। পকেটে হাত ঢুকিয়ে সিগারেটের প্যাকেট বের করলেন। সিগারেট ধরালেন। লম্বা টান দিয়ে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলেন। এখন তিনি একবার সিগারেটের দিকে তাকাচ্ছেন, একবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন। বিস্মিত মানুষ দেখতে ভাল লাগে। ওসি সাহেবকে দেখতে ভাল লাগছে। ভদ্রলোক হাতের সিগারেট ফেলে দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু ফেলতে পারছেন না।
রাত নয়টায় সব ঝামেলা চুকিয়ে আমি থানা থেকে ছাড়া পেলাম। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। রাস্তায় এক হাঁটু পানি। ওসি সাহেব বললেন, পুলিশের গাড়ি দিচ্ছি আপনি যেখানে যেতে চান, নামিয়ে দেব। আমি সঙ্গে যাব। বলুন কোথায় যাবেন? আমার বাসায় যাবেন? রাতে আমাদের সঙ্গে খাবেন। কিছু বন্ধুবান্ধবকে আসতে বলেছি। বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে নূপুর নিজে রাঁধবে। ওর রান্নার হাত ভাল। যাবেন?
যাব। পথে দুটা জায়গায় যেতে হবে। এক মিনিট করে লাগবে।
কোনো সমস্যা নেই। জিপে উঠুন।
পুলিশের গাড়ি প্রথম থামল সাত্তার সাহেবের হোমিও ফার্মেসীতে। সাত্তার সাহেব ফার্মেসী বন্ধ করছিলেন। পুলিশের গাড়ি দেখে চমকে উঠলেন। গাড়ি থেকে আমাকে নামতে দেখে আরো চমকালেন।
আমি বললাম, সাত্তার সাহেব, আমি যে পুলিশের লোক এটা আশা করি এখন বুঝতে পারছেন। পুলিশের গাড়ি নিয়ে ঘুরছি।
সাত্তার সাহেবের মুখ হা হয়ে গেল। আমি বললাম, পুলিশকে কখনো বিশ্বাস করবেন না। পুলিশ যখন বলেছে আমি CID-র কেউ না। তখনই আপনার বুঝা উচিত ছিল। যাই হোক এখন আপনি প্রফেসর কেরামত আলির বাসার ঠিকানা দিন। তাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপার আছে।
উনার বাসার ঠিকানা আমি জানব কিভাবে?
আমি চাপা গলায় বললাম, কেরামত আলি সাহেবের সঙ্গে আপনার ডিল হয়েছে উনার বাসায়। অবশ্যই আপনি বাসা চেনেন। ঠিকানা দিন। পুলিশি থাবড়া খাবার আগেই দিয়ে দিন।
সাস্তার সাহেব ঠিকানা দিলেন।
আমি বললাম, আমার দিক থেকে ফিফটি ফিফটি ডিল কিন্তু এখনো আছে। বলেই চোখ টিপলাম। সাত্তার সাহেবের কোনো ভাবান্তর হল না। তাঁর মধ্যে জবুথবু ভাব। ব্রেইন মনে হয় আবারো হ্যাংগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রফেসর কেরামত আলি থাকেন। ধানমন্ডিতে। রোড ৩/এ, আমার ধারণা সত্তার সাহেব আগেই টেলিফোনে আমার কথা বলে রেখেছেন। কারণ প্রফেসর সাহেব আতংকে অস্থির হয়ে ঘর থেকে বের হলেন। বিড়বিড় করে বললেন, আমাকে কি জন্যে প্রয়োজন?
আমি বললাম, আপনার সঙ্গে একটা সিগারেট খাব এই জন্যে এসেছি।
সিগারেট খাবেন?
হ্যাঁ। আপনি সিগারেট খানতো?
হুঁ।
তাহলে ধরান।
প্রফেসর সাহেবের হাতের সিগারেট কাঁপছে। তিনি যে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছেন তা বুঝা যাচ্ছে। তিনি সিগারেট টানছেন, তাকিয়ে আছেন। আমার দিকে। আমি কিছুই না বলায় তার টেনশান আরো বাড়ছে। আমি সিগারেট শেষ করে বললাম, প্রফেসর সাহেব যাই?
প্রফেসর কেরামত আলি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন। আমি নিশ্চিত এই ভদ্রলোক আজ সারারাত এক ফোটাও ঘুমাতে পারবে না। কিছুক্ষণ পর পর টেলিফোন করবেন। সাত্তার সাহেবকে। সাত্তার সাহেবও ঘুমাতে পারবেন না।
ওসি সাহেবের বাড়িতে কোনো লোকজন নেই। ফাঁকা বাসা। অনেকক্ষণ কলিং বেল বাজাবার পর ওসি সাহেবের স্ত্রী নূপুর এসে দরজা খুলল। পরীর মতো চেহারার বাচ্চা একটা মেয়ে। সে আমাকে দেখে কিছুক্ষণ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, সজল ভাই, আপনি কোত্থেকে? আমিতো ভেবেছিলাম। এই জীবনে আর আপনার সঙ্গে দেখা হবে না?
ওসি সাহেব বললেন, তুমি উনাকে চেন?
নূপুর বলল, না, চিনি না। এম্নি এম্নি সজল ভাই ডাকছি। তুমি উনাকে নিয়ে এসেছি, এই জন্যে তোমার আগামী এক হাজার অপরাধ ক্ষমা করলাম।
নূপুরের চোখ ছলছল করছে। সে যে কেঁদে ফেলার আয়োজন করছে তা পরিষ্কার। এই মেয়ের সঙ্গে আমার আগে দেখা হয়নি। সে সজল ভাই সজল, ভাই কেন ডাকছে কে জানে?
ওসি সাহেব বললেন, লোকজন কেউ আসে নি?
নূপুর বলল, না। আমি সবাইকে টেলিফোন করে আসতে নিষেধ করেছি। আজকের দিনটা শুধু আমাদের দুজনের, বাইরের লোক কেন থাকবে? তবে সজল ভাই অবশ্যই থাকবেন।
ওসি সাহেব বললেন, উনি কি বাইরের কেউ না?