ধনন্তরি বানান ভুল। MC. MR. PL এ কি হয় তা জানা যায় নি। আমি উনার ক্লিনিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি চশমার ফাফ দিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, তুই চাকর, তুই থাকবি চাকরের মতো তুই MC র বুঝবি কি? আর তুই এখানে এসেছিস কেন? আমার চেম্বারে তোর দরকার কি?
স্যারের জন্যে ওষুধ নিতে এসেছি। উনার ঘুম কম হচ্ছে। হোমিওপ্যাথিতে ঘুমের ওষুধ আছে?
গাধার মতো কথা বলবি না। এমন ওষুধ আছে, এক ফোটা খাওয়ায় দিলে হাতি সাত দিন ঘুমাবে।
আমি মুখ শুকনা করে বললাম, হাতিরা কি আপনার কাছ থেকে অযুদ্ধ নেয়?
আব্দুস সাত্তার বেশ কিছুক্ষণ। হতভম্ব ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তাঁর এসিসটেন্টকে বললেন, এই গান্ধটাকে কানে ধরে চেম্বার থেকে বের করে দাও। আর কোনো দিন যদি দেখি এই বন্দটা আমার চেম্বারে ঘুরঘুর করছে, তাহলে সবার চাকরি যাবে।
আব্দুস সাত্তার সাহেবের সম্পর্কে আর যা জানলাম তা হল–তার একটাই ছেলে। ছেলের নাম সোহাগ। বয়স আঠারো-উনিশ, এলাকার ক্যারাম চ্যাম্পিয়ন; প্রতি বোর্ড বিশ টাকা বাজিতে সারাদিন ক্যারাম খেলে। সন্ধ্যার পর বাজি জেতা টীকায় ফেনসিড়িল খেয়ে বিম ধরে থাকে। তার ফেনসি বন্ধুদের নিয়ে হঠাৎ হঠাৎ ছোটখাট ছিনতাই করে। ভদ্র ছিনতাই। যেমন— কোনো বৃদ্ধ সন্ধ্যার পর রিকশা করে বাড়ি ফিরছে। তখন সোহাগ চেঁচিয়ে বলবে, এই যে মুরুব্বী! আপনার কি যেন পড়ে গেছে। তখন রিকশা থামে। বৃদ্ধ কি পড়ে গেছে দেখার জন্যে পেছনে তাকান। সোহাগ তখন একটা মানিব্যাগ হাতে এগিয়ে আসে। এবং অতি বিনয়ের সঙ্গে বলে, মুরুত্ববী। এই মানিব্যাগটা পড়েছে। এটা কি আপনার? ব্যাগ ভর্তি টাকা।
বেশির ভাগ বৃদ্ধরাই বলে, হ্যাঁ বাবা, আমার। আল্লাহ তোমার ভাল করুক।
মানিব্যাগে কত টাকা আছে বলতে পারেন?
বাবা, গনা নাই।
বুড়ামিয়া! দুই দিন পরে কবরে যাবেন— লোভ আছে। ষোল আনা। অন্যের ব্যাগ বলতেছেন নিজের!
বাবা, ভুল হয়েছে। অন্ধকারে বুঝি নাই। আমার মানিব্যাগ পকেটেই আছে।
দেখি। পকেটের মানিধ্যাগ দেখি।
এর মধ্যে দলের বাকিরা এসে রিকশা ঘিরে দাঁড়ায়। একজনের হাতে সুন্দর কাজ করা রাজস্থানী ছুরি। এই ছুরির বিশেষত্ব হচ্ছে এমিতে দেখলে মনে হবে লতা ফুল আঁকা ছয় ইঞ্চি ধাতুর স্কেল। বোতাম টিপলেই খটাস শব্দে ছুরি বের হয়ে আসে। ছুরির মাথা বকের ঠোঁটের মতো সামান্য বাঁকা। বৃদ্ধ খটাস শব্দে ছুরি বের হওয়া দেখে। ততক্ষণে তার আক্কেল গুরুম হয়ে গেছে।
মুরুব্বী মানিব্যাগটা দিয়ে কানে ধরে বসে থাকেন। মিথ্যা বলার শাস্তি। আমরা দূর থেকে লক্ষ্য রাখব। কান থেকে হাত সরালেই এই ছুরি পেটে হান্দায়া দেব।
বিশেষ একটা জায়গা (জিয়ার মাজারের দক্ষিণ পাশে অনেককেই কানে ধরে যেতে দেখা যায়। মিউনিসিপ্যালিটির লোকজনের সঙ্গে বন্দোবস্ত করা আছে— এই জায়গায় স্ট্রিট লাইট সব সময় নষ্ট থাকে।)
এত কিছু জানলাম কিভাবে? একটু পরে বলি? আগে তরুণী মেয়েদের কাছ থেকে গয়না এবং ব্যাগ কিভাবে নেয়া হয় এটা বলি। মনে করা যাক কোনো এক তরুণী রিকশা করে যাচ্ছে। জায়গাটা অন্ধকার দেখে তরুণী খানিকটা ভীত। হঠাৎ সে দেখবে এক যুবক (সোহাগ) এগিয়ে আসছে এবং ব্যাকুল গলায় বলছে, আপু, এক সেকেন্ড দাঁড়ান। প্লীজ আপু! প্লীজ? মেয়ে কিছু বলার আগেই রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে দেয়। সোহাগ এগিয়ে আসে। হাত কচলাতে কচলাতে বলে, বন্ধুর সঙ্গে একটা বাজি ধরেছি। বাজি জিতলে এক হাজার টাকা পাই। আপা, আপনার পায়ে ধরি—-help me.
তরুণী তখন বলে, কি বাজি?
আপনাকে চুমু খাব, আপনি কিছুই বলবেন না। এই বাজি। আপু, আমি দাঁত ক্লোজ-আপ টুথপেষ্ট দিয়ে মেজে এসেছি–কোনো সমস্যা নেই।
রিকশাওয়ালা ভাই, তুমি অন্য দিকে তাকাও। তুমি থাকায় আপু লজ্জা পাচ্ছে। আপু ঐ যে দেখুন আমার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে বাজির ফলাফল দেখার জন্য। ওদেরকে বলে দিয়েছি যেন মোবাইল দিয়ে ছবি না তুলে। কেউ যদি ছবি তুলে তাহলে ভুড়ির মধ্যে ছুরি ঢুকায়ে দিব। এই দেখেন ছুরি। খটশ শব্দ হয়। ফলার ভেতর থেকে রাজস্থানী ছুরি বের হয়ে আসে। চুমুর হাত থেকে বাঁচার জন্যে তরুণী সঙ্গে যা আছে সবই দিয়ে দেয়। হাত ব্যাগ, ঘড়ি, গলায় চেইন, ইমিটেশন গয়না। কিছুই নিজের কাছে রাখে। না। ছিনতাই দলের প্রধান তখন অতি ভদ্র ভঙ্গিতে বলে— সব কেন দিয়ে দেবেন। আপা! রিকশা ভাড়া দিতে হবে না? বিশটা টাকা রাখুন, আপু। এই রিকশাওয়ালা! আপুকে সাবধানে নিয়ে যাও। অন্ধকার জায়গা এভয়েড করবে। দিনকাল খারাপ।
ঘটনা যা বললাম সবই পত্রিকায় প্রকাশিত। ছিনতাইকারি দলের প্রধান ক্যারাম চ্যাম্পিয়ান সোহাগ যে পল্টু স্যারের আপনি চাচাতো ভাই সেটা কি ভাবে জানলাম বলি–
হাসপাতাল থেকে ফেরার দ্বিতীয় দিনে সন্ধ্যায় পল্টু স্যার অস্থির হয়ে পড়লেন, নতুন বই কিনবেন। ড্রাইভারকে ডেকে বললেন, গাড়ি বের কর।
ড্রাইভার বলল, স্যার, গাড়িতো বসে গেছে। পল্টু স্যার বললেন, গাড়ি বসে গেছে মানে কি? গাড়িতো বসেই থাকে। দাঁড়িয়ে থাকে না।
ব্যাটারি বসে গেছে, স্যার। নতুন ব্যাটারি কিনতে হবে।
দুই মাস আগে না ব্যাটারি কিনলে?
ব্যাটারী হল লাকের ব্যাপার। কোনো ব্যাটারি দুই দিনেই শেষ হয়। আবার কোনোটা দুই বছর চলে। ঠিক না হিমু ভাই?
বলেই ড্রাইভার আমাকে চোখ টিপ দিল। বাধ্য হয়ে আমাকেও চোখ টিপ দিয়ে টিপ ফেরত দিতে হল।