তা ছাড়া কী?
বাদলের মন ঐ মেয়ের কাছে পড়ে আছে।
বাদলের মন ঐ মেয়ের কাছে, কী বলছিস তুই যে-মেয়ে লাথি দিয়ে তাকে নর্দমায় ফেলে দিল, যে তাকে ন্যাংটো করে দিল এতমানুষের সামনে, তার কাছে-
যা পাওয়া যায় না। তার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়।
বাদল যদি কোনোদিন ঐ মেয়ের নাম মুখে আনে তাকে আমি জুতাপেটা করব। জুতিয়ে আমি তার রস নামিয়ে দেব।
জুতাপেটা করেও লাভ হবে না। ফুপু। আমি বরং দেখি জোড়াতালি দিয়ে কিছু করা যায় কি না। বাদল আঁখির টেলিফোন নাম্বার দিয়েছে–যোগাযোগ করে দেখি।
বাদল তোকে ঐ মেয়ের টেলিফোন নাম্বার দিয়েছে?
হ্যাঁ।
দুধকলা দিয়ে আমি তো দেখি কালসাপ পুষেছি।
তা-ই তো মনে হচ্ছে। যে-মেয়ে তোমাদের সবাইকে ন্যাংটো করে ছেড়ে দিয়ে মজা দেখছে তার জন্যে এত ব্যাকুলতা! তার টেলিফোন নাম্বার নিয়ে ছোটাছুটি।
বড় ফুপুর রাগ চরমে উঠে গিয়েছিল। তিনি বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে রাগ সামলালেন। থমথমে গলায় বললেন, হিমু শোন। বাদল যদি এ মেয়ের কথা মুখে আনে তাকে আমরা ত্যাজ্যপুত্র করব। এই কথাটা তাকে তুই বলবি।
এক্ষুনি বলছি।
বাদল বাসায় নেই, কোথায় যেন গেছে। তুই বসে থাক, বাদলের সঙ্গে কথা না বলে যাবি না।
আচ্ছা যাব না। বাদল গেছে কোথায়?
জানি না।
আঁখিদের বাসায় চলে যায়নি তো?
বড় ফুপু রক্তচক্ষু করে তাকাচ্ছেন। এইবার বোধহয় তার ব্লাডপ্রেসার সত্যি সত্যি চড়েছে। অকারণে মানুষের চোখ এমন লাল হয় না।
ফুপু তুমি শুয়ে থাকো। তোমার মাথায় পানিটানি দেয়া হোক। আমি বাদলের সঙ্গে কথা না বলে যাচ্ছি না। ফুপা কোথায়?
আর কোথায়, ছাদে।
আমি ছাদের দিকে রওনা হলাম। আজ বুধবার— ফুপার মদ্যপান-দিবস। তার ছাদে থাকারই কথা। ফুপু অয়েলক্লথে মাথা রেখে আবার শুয়েছেন। বিপুল উৎসাহে তার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে।
ফুপা ছাদেই আছেন।
তাকে যেন আনন্দিত বলেই মনে হলো। জিনিস মনে হয় পেটে পড়েছে। এবং ভালো ডোজেই পড়েছে। তাঁর চোখেমুখে উদাস এবং শান্তি-শান্তি ভাব।
কে, হিমু?
জি।
আছিস কেমন হিমু?
জি ভালো।
কেমন ভালো— বেশি, কম, না মিডিয়াম?
মিডিয়াম।
আমার মনটা খুবই খারাপ হিমু।
কেন।
বাদলের বিয়েতে তো তুই যাসনি। বিরাট অপমানের হাত থেকে বেঁচে গেছিস। তারা বিয়ে দেয়নি। মেয়ে নিয়ে লুকিয়ে ফেলেছে।
বলেন কী?
বানোয়াট গল্প ফেঁদেছে। মেয়ে নাকি রাগ করে বান্ধবীর বাড়ি চলে গেছে। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা? যার বিয়ে সে রাগ করে বান্ধবীর বাড়ি যাবে।
আজকালকার ছেলেমেয়ে, এদের সম্পর্কে কিছুই বলা যায় না।
এটা তুই অবিশ্যি ঠিক বলেছিস। আমাদের সময় আর বর্তমান সময় এক না। সোসাইটি চেঞ্জ হচ্ছে। ঘরে-ঘরে এখন ভিসিআর, ডিশ অ্যান্টেনা। এইসব দেখেশুনে ইয়াং ছেলেমেয়েরা নানান ধরনের ড্রামা করা শিখে যাচ্ছে। বিয়ের দিন রাগ করে। বান্ধবীর বাড়ি চলে যাওয়া সেই ড্রামারই একটা অংশ। ভালো বলেছিস হিমু। well said.এখন মনে হচ্ছে মেয়েটা আসলেই রাগ করে বান্ধবীর বাড়িতে গেছে।
ছেলের বিয়ে হয়নি বলে আপনারা লজ্জার মধ্যে পড়েছেন। ওদের লজ্জা তো আরও বেশি। মেয়ের বিয়ে হলো না।
অবশ্যই, অবশ্যই। ভাগ্যিস মুসলমান পরিবারের মেয়ে! হিন্দু মেয়ে হলে তো দুপড়া হয়ে যেত! এই মেয়ের আর বিয়েই হতো না। হিমু, ছেলেরা হচ্ছে হাসের মতো, গায়ে পানি লাগে না। আর মেয়েরা হচ্ছে মুরগির মতো, একফোঁটা পানিও ওদের গায়ে লেপটে যায়। আঁখি মেয়েটার জন্যে খুবই মায়া হচ্ছে হিমু।
মায়া হওয়াই স্বাভাবিক।
ঐদিন অবিশ্যি খুবই রাগ করেছিলাম। ভেবেছিলাম মানহানির মামলা করব।
আপনার মতো মানুষ মানহানির মামলা কীভাবে করে! আপনি তো গ্রামের মামলাবাজ মোড়ল না। আপনি হচ্ছেন হৃদয়বান একজন মানুষ।
ভালো কথা বলেছিস হিমু। হৃদয়বান কথাটা খুব খাঁটি বলেছিস। গাড়ি করে যখন আমি শেরাটন হোটেলের কাছে ফুলওয়ালি মেয়েগুলি ফুল নিয়ে আসে ধমক দিতে পারি না। কিনে ফেলি। ফুল নিয়ে আমি করব কী বল। তোর ফুপুকে যদি দিই। সে রেগে যাবে, ভাববে। আমার ব্রেইন ডিফেক্ট হয়েছে। কাজেই নর্দমায় ফেলে দি। একবার তোর ফুপুকে ফুল দিয়েছিলাম। সে বিরক্ত হয়ে বলেছিল, ঢং কর কেন?
তা-ই নাকি?
এইসব দুঃখের কথা বলে কী হবে! বাদ দে।
জি আচ্ছা, বাদ দিচ্ছি।
তোর দুই বন্ধু এখনও আসছে না কেন বল তো?
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, ওদের কি আসার কথা নাকি?
আসার কথা তো বটেই। ওদের আমার খুব পছন্দ হয়েছে। প্রতি বুধবারে আসতে বলেছি। ভেরি গুড কোম্পানি। ওরা যে আমাকে কী পরিমাণ শ্রদ্ধা করে সেটা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।
ফুপু বলছিলেন ওরা নাকি ন্যাংটা হয়ে ছাদে নাচানাচি করছিল।
ফুপা গ্লাসে একটা লম্বা টান দিয়ে বললেন, তোর ফুপু বিন্দুতে সিন্ধু দেখে–কাশির শব্দ শুনে ভাবে যক্ষ্মা। ঐ রাতে কিছুই হয়নি। বেচারাদের গরম লাগছিল–আমি বললাম, শার্ট খুলে ফ্যালো। গরমে কষ্ট করার মানে কী! ওরা শার্ট খুলেছে। আমিও খুলছি, ব্যস?
ও আচ্ছা।
হিমু, তোর বন্ধু দুজন দেরি করছে কেন? এইসব জিনিস একা একা খাওয়া যায় না। খেতে খেতে মন খুলে কথা না বললে ভালো লাগে না। দুধ একা খাওয়া যায়, কিন্তু ড্রিংকসে বন্ধুবান্ধব লাগে।
আসতে যখন বলেছেন অবশ্যই আসবে।
তুই বরং এক কাজ কর, ঘরের বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থোক। ওরা হয়তো বাসার সামনে দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। বাসা চিনতে পারছে না বলে ঢুকতে পারছে না। গেট দিয়ে সোজা ছাদে নিয়ে আসবি। তোর ফুপুর জানার দরকার নেই। দুটো নিতান্তই গোবেচারা ভদ্র ছেলে–অথচ তোর ফুপু ওদের বিষদৃষ্টিতে দেখেছে। I dont know why শাস্ত্রে বলে না, নারী চরিত্র দেবা না জনন্তি কুতা মনুষ্যা–ঐ ব্যাপার আর কি হিমু-Young friend. রাস্তায় গিয়ে ওদের জন্যে একটু দাঁড়া।