সিতাংশু এবারও কিছু না-বলে অদিতির দিকে তাকায়।
অদিতি বলে, এবার নিজের সম্বন্ধে আপনাকে কিছু ইনফরমেশন দিই। তাতে আমাকে বুঝতে আপনার পক্ষে সুবিধে হবে।
সিতাংশু স্মার্ট হবার চেষ্টা করে, বেশ তো। ডিসকাশানটা খোলামেলা হওয়াই ভালো। একটু থেমে বলে, সিগারেট খেলে আপনার আপত্তি নেই তো?
নট অ্যাট অল। অদিতি বলতে থাকে, আমি ডিভোর্সি নই, আগে আমার বিয়ে হয়নি। ভার্জিন কুমারী মেয়ে বলতে যা বোঝা যায় আমি তা-ই। তবে
তবে কী?
আপনি হয়তো জানেন আমি একটা কলেজে পড়াই।
জানি।
সেখানে আমার বেশিরভাগ কলিগই পুরুষ। এ ছাড়াও নানা দরকারে বহু পুরুষের সঙ্গে মিশতে হয়। অসংখ্য বয়-ফ্রেন্ড রয়েছে আমার।
এ নিয়ে আমার কোনোরকম শুচিবাই নেই।
ফাইন।
আপনি কি জানেন নারী-জাগরণ নামে আমাদের একটা অরগানাইজেশন আছে?
না। সেটা কী?
নারী-জাগরণ-এর উদ্দেশ্য সংক্ষেপে জানিয়ে অদিতি যা বলে তা এইরকম। পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েরা নানা কুসংস্কার এবং শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে আছে। এই নারীদের মুক্তির জন্যই তাদের সংগঠন অবিরাম যুদ্ধ করে চলেছে। যেভাবেই হোক মেয়েদের ওপর লাঞ্ছনা এবং অত্যাচার বন্ধ করতেই হবে। যতদিন-না নারীর সম্মান মর্যাদা আর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নারী-জাগরণ-এর লড়াই চলবেই।
রীতিমতো উৎসাহিত হয়ে ওঠে সিতাংশু। বলে, এ তো বিরাট কাজ। এতে আমার সাপোর্ট আছে।
যদি ডোনেশন নিতে আপনারা রাজি থাকেন, আমি দেব।
ধন্যবাদ। তেমন দরকার হলে নিশ্চয়ই আপনার কাছে নারী-জাগরণ হাত পাতবে।
সিতাংশু অল্প হাসে, তবে উত্তর দেয় না। আগেই একটা সিগারেট ধরিয়ে নিয়েছিল সে, আস্তে আস্তে সেটা টানতে থাকে।
অদিতি থামেনি। সে বলে, নারীমুক্তির জন্য যখন আন্দোলন করছি তখন বুঝতেই পারছেন আমি কী টাইপের মেয়ে। আমার যিনি স্বামী হবেন তাঁকে গ্যারান্টি দিতে হবে, বিয়ের পর আমার স্বাধীনতায় হাত দিতে পারবেন না। আমি কোথায় যাব, কার সঙ্গে মিশব, কখন বাড়ি ফিরব–এসব নিয়ে প্রশ্ন করা চলবে না।
সিতাংশু নড়েচড়ে বসে। অ্যাশট্রেতে সিগারেটের ছাই ঝেড়ে বলে, কিন্তু সংসারের দিকটাও তত মেয়েদের দেখা উচিত।
নিশ্চয়ই। সংসারের ব্যাপারে আমার যেটুকু কর্তব্য তা তো করতেই হবে।
সিতাংশুর মুখ দেখে মনে হয়, অদিতির কথায় খুশি হয়েছে। একটু চুপচাপ।
তারপর কিছুটা ইতস্তত করে সিতাংশু বলে, আমার সামান্য একটা অনুরোধ ছিল।
বলুন।
ব্যবসা করে আমার টাকাপয়সার অভাব নেই। আমার স্ত্রী চাকরি করবেন, এটা ভালো লাগছে না।
চাকরির ব্যাপারটা আগে ঠিক করে নেওয়া যাক। আপনার কত টাকা আছে, আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তবে ফোর্ড বা রকফেলারের বাড়িতে বিয়ে হলেও চাকরিটা ছাড়তে পারব না। অর্থিক স্বাধীনতা আমার কাছে খুবই ইম্পর্টান্ট। অদিতি না থেমে একটানা বলে যায়, আশা করি চাকরির ব্যাপারটা আপনার কাছে ক্লিয়ার করে দিতে পেরেছি।
সিতাংশুর ধারণা ছিল, এক কথায় চাকরি ছেড়ে দেবে অদিতি।
উত্তর শুনে ভেতরে ভেতরে একটু থমকে যায় সে। আস্তে করে বলে, হ্যাঁ। চাকরি করার যখন এত ইচ্ছে তখন আর কী বলব। ঠিক আছে তা-ই কোরো তুমি। বেশ সচেতনভাবেই, নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই হয়তো, অদিতিকে তুমি করে বলতে শুরু করে সে।
অদিতি দ্রুত একটি আঙুল তুলে জোরে মাথা নাড়ে, উঁহু উঁহু, এখনও আমরা তুমি বলার স্টেজে আসিনি। আরও কয়েকটা বিষয় আমাদের পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সিতাংশু হকচকিয়ে যায়, কী কী বিষয়?
আমার সম্বন্ধে জরুরি ইনফরমেশনগুলো মোটামুটি সবই দিয়েছি মিস্টার ভৌমিক।
কিন্তু বলুন
নিজের সম্বন্ধে আপনি এখনও কিছু জানাননি। বেটার আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্য ওটা আমার জানা দরকার–তাই না?
কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে সিতাংশু। সিগারেটের বাকি অংশটুকু অ্যাশট্রেতে নামিয়ে রেখে বলে, অবশ্যই। আমার সম্বন্ধে কী কী ইনফরমেশন পেলে আপনার সুবিধা হয় বলুন।
দেখুন, আমি ইংরেজিতে ফাস্ট ক্লাস পেয়ে এম. এ পাশ করেছি। একটা কলেজে কাজ করি। প্রথমেই জানতে ইচ্ছে হবে, যিনি আমার স্বামী হবেন তাঁর এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশনটা কী?
নিশ্চয়ই। আমি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। শিবপুর থেকে পাশ করেছি।
ঠিক আছে। শুনেছি আপনি একজন বিজনেসম্যান। কী ধরনের ব্যবসা করেন?
কনস্ট্রাকশনের। বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট হাউস, হাইরাইজ অফিস বিল্ডিং, সিনেমাহল, ব্রিজ–এইসব তৈরি করে আমার ফার্ম।
এর সঙ্গে ব্ল্যাকমানির সম্পর্ক কতটা?
ভীষণ হকচকিয়ে যায় সিতাংশু। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, অস্বীকার করব না, কিছুটা তো রয়েছেই। ইন্ডিয়াতে এমন কোনো বিজনেস আপনি দেখাতে পারবেন না যার সঙ্গে ব্ল্যাক মানি ইনভলভড় নেই। দিস ইজ আ পার্ট অফ দি গেম। নান ক্যান হেল্প। একটু থেমে জিগ্যেস করে, হঠাৎ ব্ল্যাক মানির কথা জানতে চাইলেন?
বিয়ের পর বাড়িতে সি.বি.আই, আর ইনিকামট্যাক্স রেইড় হতে পারে সেটাই বুঝতে চাইছি।
হেসে হেসে হালকা গলায় সিতাংশু বলে, আজকাল এই রেইডগুলো হল স্টেটাস সিম্বল। এ দিয়ে প্রমাণ হয় ইউ আর সামবডি। তবে–
কী?
আমাদের মতো ছোটখাটো বিজনেসম্যানদের সি.বি.আই-ওয়ালারা কাউন্টই করে না। ভয় নেই, কেউ রেইড করতে আসবে না।
সিতাংশুকে লক্ষ করতে করতে অদিতি বলে, আমি কিছু কিছু ওল্ড ভ্যালুজে বিশ্বাসী। মানুষের, বিশেষ করে প্রিয়জনদের মধ্যে মিনিমাম অনেস্টিটুকু দেখলে আমার আনন্দ হয়।