কুন বলল, প্রেমে পড়ার অর্থ কী?
মীন বলল, প্রেমে পড়ার অর্থ হলো, আপনি শারীরিকভাবে আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। নিম্নশ্রেণীর স্ত্রী-পতঙ্গ যখন পুরুষ-পতঙ্গের সঙ্গে মিলিত হতে চায়, তখন তারা শরীর থেকে ফেরোমেন নামের গন্ধ বের করে। এই গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ-পতঙ্গ ছুটে আসে। নারী এবং পুরুষের প্রেম ফেরোমেনের আরেক নাম। ভালো কথা, আপনি কি আমার খুঁতটা ধরতে পারছেন?
না।
যদি আজ সন্ধ্যার মধ্যে ধরতে পারেন তাহলে আপনাকে বিশ ক্রেডিট পুরস্কার দেব।
কুন বিস্মিত হয়ে বলল, তোমার সঙ্গে ক্রেডিট আছে?
মীন বলল, কেন থাকবে না? একজন তরুণীর যা কিছু প্রয়োজন, আমার তার সবই প্রয়োজন। SF রোবটদের প্রতিমাসে পনেরোশ ক্রেডিট করে এলাউন্স দেয়া হয়। খরুচে SF রোবটরা সব ক্রেডিট খরচ করে ফেলে। দুনিয়ার জামা কাপড় কেনে। আমি মোটেই খরুচে স্বভাবের না। আমি ক্রেডিট জমাই। আমার মাত্র দুসেট কাপড় আছে।
কুন বলল, দাঁড়াও তোমার কাপড়ের ব্যবস্থা করছি।
মীন বলল, আপনাকে কোনো ব্যবস্থা করতে হবে না। আপনি বরং আমার খুঁতটা ধরুন এবং বিশ ক্রেডিট জিতে নিন।
কুন উঠে দাঁড়াল। তার কাছে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে মীনকে চমৎকার এক সেট পোশাক কিনে দেয়া দরকার। সবচেয়ে ভালো হতো এক সেট চন্দ্র গাউন কিনে দিতে পারলে। এই গাউন শরীরের ভাঁজে ভাঁজে আলতোভাবে লেগে থাকবে। স্নিগ্ধ আলো ছড়াবে।
.
নিনিতা ঠিক আগের জায়গায় বসে আছে। ফুড প্রো তাকে আরেক কাপ কফি দিয়েছে। সে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। কফিটা বিস্বাদ লাগছে। কুন নিনিতার সামনে বসতে বসতে বলল, তুমি মীনকে দেখেছ?
হ্যা দেখেছি।
মেয়েটা অদ্ভুত সুন্দর না?
মেয়েটা মেয়েটা করছ কেন? ও কোনো মেয়ে না। ওর শরীরভর্তি যন্ত্র। কপোট্রন। ট্যাকল সুইচ। জাংশান ট্রান্সমিশন। ফাইবার টিউবস।
কুন বলল, আমরা তো তার ভেতরটা দেখছি না। তার বাইরের রূপটা কেমন?
নিনিতা শুকনো গলায় বলল, সুন্দর।
তার সৌন্দর্যে কিছু খুঁত আছে। খুঁতটা কী বলো তো?
ওর নাকটা থ্যাবড়া।
কুন বিস্মিত হয়ে বলল, আরে তাই তো। ওর নাক থ্যাবড়া।
নিনিতা বলল, তুমি ওকে মীন না ডেকে আদর করে থ্যাবড়া নাকু ডাকতে পার।
থ্যাবড়া নাকু ডাকব?
হ্যাঁ। একই সঙ্গে তার প্রতি তোমার আবেগ প্রকাশ পাবে এবং শারীরিকভাবে তাকে বর্ণনাও করা হবে।
তুমি কি কোনো কারণে মেয়েটার ওপর রেগে আছ? মে
য়েটা মেয়েটা করবে না। বলো রোবটটা।
কুন বিস্মিত হয়ে বলল, এই উপহারটা তুমি নিজে আগ্রহ করে আমাকে দিয়েছ। এখন ভয়ঙ্করভাবে অপছন্দ করছ। কেন?
নিনিতা বলল, তুমি এলসি প্যানেলে যাও। কম্পিউটার সিডিসিকে জানাও যে, উপহার তোমার পছন্দ হয় নি।
কুন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছুই তার মাথায় টুকছে না। নিনিতা বলল, যা করতে বলছি কর।
কুন বলল, এই কাজটা করা ঠিক হবে না। এতে মেয়েটাকে অপমান করা হবে। তারচেয়েও বড় কথা, মিথ্যা কথা বলা হবে। তুমি ভালো করেই জানো সিডিসির সঙ্গে মিথ্যা বলা আইনে বিরাট অপরাধ। যেই মুহূর্তে আমি প্যানেলে বসে মিথ্যা বলব—আমার শাস্তি হবে। ক্রেডিট কাটা যাবে।
নিনিতা চুপ করে গেল। কুন যা বলছে তা সত্যি। কী পরিমাণ ক্রেডিট কাটা যাবে তা নির্ভর করে অপরাধের গুরুত্বের ওপর। অপরাধের গুরুত্ব সিডিসি ঠিক করে এবং সেখানে কোনো আপিল চলে না।
নিনিতা উঠে দাঁড়াল। কুন বলল, কোথায় যাচ্ছ?
নিনিতা বলল, আমাকে মা-কেন্দ্রে যেতে হবে। আজ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হবে।
কুন বলল, চল আমিও যাচ্ছি।
নিনিতা বলল, তোমাকে যেতে হবে না। তুমি থ্যাবড়া নাকিটার হাত ধরে বসে থাক। নাকের সঙ্গে নাক ঘষাও। চুমু খেতে চাইলে চুমু খাও।
নিনিতা! তুমি শুধু শুধু রাগ করছ। সত্যি তুমি একা যাবে?
হ্যাঁ, আমি একাই যাব।
নিনিতা বের হবার সঙ্গে সঙ্গেই ফুড প্রো বলল, স্যার, আপনি মন খারাপ করবেন না। আমাদের সঙ্গে একজন SF রোবট আছে। এই রোবট যে-কোনো পরিস্থিতিকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিতে পারে। ম্যাডামকে আনন্দিত রাখা তার কাছে কোনো ব্যাপারই না। তার একটা কথাই যথেষ্ট।
কুন বলল, মীনের সঙ্গে এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করাও তো লজ্জার ব্যাপার। যন্ত্রের কাছে হাত পাতা 1
ফুড প্রো বলল, আপনাকে কিছুই বলতে হবে না। আমি মীনকে সব বুঝিয়ে বলব। যন্ত্র যন্ত্রের কাছে পরামর্শ চাইতেই পারে।
.
মা-কেন্দ্রের কাজ অতি দ্রুত শেষ হলো। নিনিতাকে গর্ভধারণ করতে হবে না। তার জরায়ু থেকে শুধু ডিম্বাণু নেয়া হবে। শিশু নিষিক্তিকরণ হবে টেস্টটিউবে। সেখান থেকে চলে যাবে কৃত্রিম গর্ভাশয়ে। গর্ভাশয়ের সময় শেষ হলেই শিশুকে বাবা-মা’র হাতে তুলে দেয়া হবে।
মা-কেন্দ্রের পরিচালক একজন রোবট মানবী। সে নিনিতাকে সব ঘুরে ঘুরে দেখাল। কৃত্রিম গর্ভব্যবস্থা কীভাবে হয় তাও দেখাল। অতি জটিল প্রক্রিয়া, যা মূল কম্পিউটার সিডিসি নিয়ন্ত্রণ করে।
নিনিতা বলল, আমি নিজে যদি গর্ভধারণ করতে চাই তাহলে সে অনুমতি কি দেয়া হবে না?
তুমি অনুমতি চেয়ে দেখতে পার, তবে দেয়া হবে বলে মনে হয় না। মাতৃগর্ভে শিশু বড় হবার অনেক সমস্যা। শিশু ঠিকমতো অক্সিজেন পাচ্ছে কি-না, খাবার পাচ্ছে কি-না তা নিয়ে সমস্যা হয়। যন্ত্র সেই সমস্যার সমাধান করেছে। যন্ত্রের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে তোমার শরীরের ওপর তো আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। পেটে সন্তান নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করলে, শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সে ঝামেলা হলো। তার প্রভাব পড়ল শিশুর ওপর। বুঝতে পারছ?