SF রোবটরা মানুষের মতোই নাগরিক সুবিধার অধিকারী। তারাও লটারিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। SF নারী রোবটরা গর্ভধারণে সক্ষম, তবে তাদেরকে সেই অধিকার এখনো দেয়া হয় নি। শোনা যাচ্ছে, পরীক্ষামূলকভাবে কিছু SF নারী রোবটকে মাতৃত্বের লাইসেন্স দেয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে Egg এবং Sperm দুটোই নেয়া হবে মানুষের কাছ থেকে। নারী SFরোবট শুধুই গর্ভধারণ করবে।
আয়না মানব
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ রোবট বিজ্ঞানীদের তৈরি SF রোবট। এদের অন্য নাম আয়না মানব। আয়নায় মানুষকে যেমন দেখায় এরা সেরকম। Mirry image.
—এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা
এটা কি কোনো স্বপ্নদৃশ্য?
নিনিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আয়নার সামনে একজন মেয়ে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে। চুলের মাথায় জট লেগে গেছে। সে জট ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। মাঝে-মাঝে চিরুনির টান প্রবল হচ্ছে, মেয়েটি ব্যথায় উফ শব্দ করছে। আয়নায়। মেয়েটির চেহারা খানিকটা দেখা যাচ্ছে।
এমন রূপবতী মেয়ে শুধু স্বপ্নেই দেখা যায়।
নিনিতা পুরোপুরি নিশ্চিত হলো সে স্বপ্ন দেখছে। অন্যধরনের স্বপ্ন। তার কল্পনায় নিশ্চয়ই অতি রূপবতী কোনো মেয়ের ছবি ছিল। সেই ছবি স্বপ্নে ধরা দিয়েছে। নিনিতা বলল, কে?
মেয়েটি তার দিকে ফিরল। উঠে দাঁড়াল এবং মিষ্টি গলায় বলল, আমার নাম মীন। ম্যাডাম, আপনার ঘুম কি পুরোপুরি কেটেছে? আপনাকে কফি দিতে বলব?
নিনিতা স্পষ্ট চোখে চারদিক দেখছে। এই তো পাশেই কুন ঘুমুচ্ছে। গভীর ঘুম। ঘড়িতে বাজছে সাতটা দশ। কুন আটটার আগে কখনো ঘুম থেকে উঠে না। ঘরের ভেতরে নরম আলো (কৃত্রিম আলো, দিন-রাতের প্রভেদ বুঝানোর জন্যে আলোর পরিবর্তন সেন্ট্রাল কম্পিউটার করে।
নিনিতা বিছানায় উঠে বসতে বসতে বলল, তুমি কে?
ম্যাডাম, কিছুক্ষণ আগে আমি আমার নাম বলেছি। আবারো বলছি–আমার নাম মীন।
তুমি ঘরে ঢুকেছ কীভাবে?
সেন্ট্রাল কম্পিউটার ব্যবস্থা করেছে যেন আমি ঘরে ঢুকতে পারি।
নিনিতা বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি দয়া করে আমার হতভম্ব ভাব কাটাবার ব্যবস্থা কর। পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা কর।
ম্যাডাম, আজ আপনার স্বামীর জন্মদিন। আপনি তাকে কী উপহার দেবেন তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সেন্ট্রাল কম্পিউটারের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। সেন্ট্রাল কম্পিউটার আমাকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে।
তোমাকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে?
হা ম্যাডাম। আমি SF টাইপ হিউমোনয়েড রোবট। আয়না মানবী। আমি আপনার স্বামীর আনন্দসঙ্গী হিসেবে কিছুদিন থাকব। তারপর চলে যাব। আপনার স্বামীর জন্মদিনের উপহারের স্থায়িত্ব অল্প কিছুদিন।
নিনিতা বলল, আমি সিডিসির কাছে পরামর্শ চেয়েছিলাম। তাকে বলি নি উপহার সরাসরি পাঠিয়ে দিতে।
ম্যাডাম, কিছু সিদ্ধান্ত সিডিসি নিজেই নিয়ে নেয়। তার কাছে পরামর্শ চাওয়ার এই বিপদ আছে।
উপহার হিসেবে তোমাকে আমার একেবারেই পছন্দ হয় নি।
মীন বলল, ম্যাডাম, এই উপহার আপনার স্বামীর পছন্দ হবে। যেহেতু জন্মদিনটা তার, উপহার পছন্দটাও তার। আপনার পছন্দ-অপছন্দ অর্থহীন।
নিনিতা বলল, উপহার হিসেবে তুমি অশ্লীল। অরুচিকর।
ম্যাডাম, আপনি ঈর্ষাবশত এই কথা বলছেন। আমাকে ঈর্ষা করার কিছু নেই। আমি আয়না মানবী।
নিনিতা বলল, আমি শুনেছি SF রোবট এমন যে তাকে মানুষ থেকে আলাদা করা যায় না। মানুষের মতোই তাকে ক্ষুধা-তৃষ্ণার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
ম্যাডাম, আপনি ঠিকই শুনেছেন।
পুরুষদের রাতের সঙ্গী হবার ক্ষমতাও কি তোমার আছে?
আছে।
তাহলে তোমাকে আমি কেন ঈর্ষা করব না বলো।
মীন বলল, আমি মাত্র অল্প কিছুদিনের জন্যে এসেছি। এই কদিন আমার অবস্থান থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন।
কী শিখতে পারব?
আপনার স্বামী কী পছন্দ করেন, কী করেন না তা শিখবেন।
রাতে তুমি যখন তার সঙ্গে শোবে তখন আমি দূর থেকে তোমাদের আনন্দ সময় দেখে অহ্লাদ বোধ করব?
ম্যাডাম! আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার স্বামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় পার করলেও অতি ঘনিষ্ঠ সময় পার করব না। এখন আসুন আমরা দুজন লবিতে বসে কফি খাই। আপনার স্বামী আটটার আগে ঘুম থেকে উঠেন না। এই খবর ফুড প্রো আমাকে দিয়েছে। অন্তরঙ্গ কিছু কথা বলার সময় আমরা পাচ্ছি।
নিনিতা বলল, তোমার সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই। অন্তরঙ্গ কথা বলার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি চাই কুনের জেগে ওঠার আগেই তুমি বিদায় হবে। আয়না মানবীর আমার প্রয়োজন নেই।
মীন বলল, ম্যাডাম, তা সম্ভব না। সিডিসি আমাকে পাঠিয়েছে। কাজেই আপনার স্বামীর সঙ্গে আমাকে দেখা করতেই হবে। তবে আমার হাত থেকে বাচার আপনার একটা সহজ উপায় আছে।
সহজ উপায়টা কী?
আপনার স্বামী যদি বলেন, জন্মদিনের উপহার তার পছন্দ হয় নি তাহলে এ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে নেয়া হবে।
সে তোমাকে কখনোই পছন্দ করবে না। কখনোই না, কখনোই না।
ম্যাডাম! আপনি ভাবছেন আমি আপনাদের মাঝখানে সমস্যা হিসেবে এসেছি। আসলে তা-না। আমার উপস্থিতি আপনাদের দুজনের জন্যেই আনন্দময় হবে।
নিনিতা বলল, আমি যথেষ্ট আনন্দে আছি। বাড়তি আনন্দের আমার প্রয়োজন নেই।
তাহলে আমরা দুজন নিরিবিলিতে সকালের প্রথম কফি খাচ্ছি না?
না।
মীন বলল, আমি লবিতে অপেক্ষা করি। আপনার স্বামীর ঘুম ভাঙলে তাঁর সঙ্গে কথা হবে। উনি আমাকে অপছন্দ করলে আমি চলে যাব।