শহরবাসী সবরকম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে খাঁচায় বন্দি পশুর মতোই জীবনযাপন করছে। রোগশোকহীন দীর্ঘ জীবন আনন্দে পার করে দেয়ার চেষ্টা। এই বিষয়ে মহান সুরকার আহানের একটি গান আছে—
আমাদের রোগ নেই,
জরা নেই।
ক্ষুধা কিংবা অক্ষুধা নেই।
স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন নেই।
জ্ঞান নেই, অজ্ঞানতাও নেই।
আমরা শহরবাসী,
আমাদের শহরও নেই।
শহর যে সম্পূর্ণ উত্তেজনাহীন তাও বলা যাবে না। প্রধান উত্তেজনা লটারি। বৎসরজুড়েই নানান ধরনের লটারির ব্যবস্থা আছে। যেমন
বিশেষ নাগরিক লটারি
অল্পকিছু নাগরিক প্রতিবছর বসন্ত উৎসবের দিন এই লটারিতে
জেতেন। শহরের অতি উন্নত অংশে তারা জায়গা পান। বিশেষ
ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান। সেই বিশেষ সুযোগ সুবিধা কী
তা নগরবাসীরা জানেন না। বিশেষ নাগরিক লটারিতে জেতা
অতি সৌভাগ্যবানরাই তা জানেন। মহান সঙ্গীতকার আহান
একজন বিশেষ নাগরিক। গুজব প্রচলিত আছে যে, পানির
তীব্র সংকটের সময়েও বিশেষ নাগরিকদের জলকেলির
সুবিধা আছে। মিথ্যা পানি না, সত্যিকার পানির একটি রিজার্ভ।
তবে এই গুজব সত্যি নাও হতে পারে।
মুক্তি লটারি
এই লটারি দুবছর পরপর হয়। যারা এই লটারি জেতেন তারা
পৃথিবীর কঠিন পরিবেশ থেকে মুক্তি লাভ করেন। মানুষের নতুন
আবাস চাঁদ বা মঙ্গলে তাদের স্থান হয়। চাঁদ বা মঙ্গলের জীবন খুব
যে আনন্দের জীবন তা-না। কঠিন পরিশ্রমের জীবন। তারপরেও
বেশির ভাগ মানুষ আশা করে, কোনো এক সময় তারা মুক্তি
লটারি জিতবে। পৃথিবীর গহ্বর থেকে বের হয়ে আসবে। খুপড়ির
মতো ঘরে কর্মহীন জীবনযাপনের চেয়ে মুক্ত হাওয়ায় কঠিন
পরিশ্রম করাকে তারা শ্রেয় মনে করে।
সুপার লটারি
এই লটারি চার বছরে একবার হয়। একমাত্র লটারি যা ইচ্ছা করলে
কেউ গ্রহণ নাও করতে পারে। যারা সুপার লটারিতে জেতেন, তারা
সৌরমণ্ডলের বাইরের কোনো গ্রহের দিকে যাবার সুযোগ পান। মনুষ্য
বাসযোগ্য সম্পূর্ণ নতুন একটি গ্রহ খুঁজে বের করায় আনন্দ যেমন
আছে, কঠিন হতাশাও আছে। মহাকাশযান শত শত বৎসর পার করেও
এমন কোনো গ্রহ নাও পেতে পারে। অতি বিপদজনক সুপরি লটারি
কেউ প্রত্যাখ্যান করেছে এমন নজির নেই।
সুপার লটারি বিষয়েও আহানের একটি গান আছে—
আমি মাটির অনেক নিচের একটি গর্তে বাস করি।
আমার মাথার ওপর সীসার কঠিন পুরো ছাদ
অথচ স্বপ্ন দেখি সুপার লটারির
যা আমাকে নিয়ে যাবে আকাশের কাছে।
সেই সময়ের পৃথিবী অপরাধমুক্ত পৃথিবী। অপরাধের কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি মানুষের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে মহা কম্পিউটার সিডিসি। জন্মের পরপর সবার শরীরে একটি মনিটার চিপ চুকিয়ে দেয়া হয়। এই চিপ সারাক্ষণ সিডিসির কাছে খবর পাঠাতে থাকে। কেউ কোনো কারণে উত্তেজিত হওয়া মাত্র ঘরের থ্রিডি ক্যামেরা চালু হয়ে যায়। একজন মনোবিজ্ঞানীর (রোবর্ট) ছবি পর্দায় ভেসে ওঠে।
মনোবিজ্ঞানী হাসিমুখে প্রশ্ন করে, আপনার কী সমস্যা? কী কারণে বিচলিত বোধ করছেন? আসুন কিছুক্ষণ গল্প করি। তার আগে একটা ওষুধ খেলে কেমন হয়? আপনি ফুড প্রোর কাছে যান। সে দু’টা ওষুধ দেবে। প্রথম খাবেন নীল রঙের ট্যাবলেট। তার ঠিক পাঁচ মিনিট পর লাল রঙেরটা।
তারপরেও অপরাধ হয়। ভয়ঙ্কর ধরনের অপরাধ। হত্যাকাণ্ড। স্ত্রী স্বামীকে মেরে ফেলেন কিংবা স্বামী স্ত্রীকে। দীর্ঘদিন ছোট্ট একটা ঘরে থাকার কারণে এটা ঘটে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় কেবিন ফিভার। অপরাধীকে শাস্তি দেবার বিধান নেই। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লালকুঠিতে। সেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় তার স্মৃতি নষ্ট করে দেয়া হয়। তার নতুন জীবন শুরু হয়। শিশু থেকে ক্রমে ক্রমে বড় হওয়া লালকুঠিতে যারা যায়, তারা আর কখনো মূল শহরে ফিরতে পারে না।
শহরের মানুষদের জন্যে প্রচুর আনন্দ উপকরণ থাকলেও তারা মূল আনন্দ পায় ক্রেডিট জমিয়ে। একশ বছর পার হবার পর যখন খাবার পানি বন্ধ করে দেয়া হবে, তখন ক্রেডিট খরচ করে পানি কেনা যাবে। এক ক্রেডিটের বিনিময়ে ত্রিশ দিনের পানি।
উপহার হিসেবেও ক্রেডিট লেনদেনের ব্যবস্থা আছে। সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর ভেতর ক্রেডিটের লেনদেন হয়। মূল কম্পিউটার সিডিসি প্রায়ই কিছু ক্রেডিট বিতরণ করে। কোনো কোনো ভাগ্যবানের থ্রিডি পর্দায় হঠাৎ লেখা ওঠে
অভিনন্দন!
কম্পিউটার সিডিসি আপনাদের দুজনকেই পাঁচ ক্রেডিট করে দিচ্ছে।
আপনাদের জন্যে উপহার।
অপরাধীর (যার স্থান হয়েছে লালকুঠিতে) সমস্ত ক্রেডিট সরকার নিয়ে নেয়। এইসব ক্রেডিটই পরে সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। তাও হয় লটারিতে।
চার হাজার নয়ের পৃথিবী লটারির পৃথিবী। আনন্দময় দুঃস্বপ্নের পৃথিবী। সেই পৃথিবী শাসন করে রোবটরা।
রোবট বিজ্ঞান তখন উন্নতির চরম শিখরে। রোবট তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে Neno chips. যা মানুষের দৃষ্টিসীমা’র বাইরে। অসাধারণ তার ক্ষমতা।
পৃথিবীতে এসেছে SF Humonoid Robot. সিলিনিয়ামের s এবং ফ্রেনসিয়ামের F থেকে SF, এরা মুক্তবুদ্ধি রোবট। দেখতে অবিকল মানুষের মতো। আচার-ব্যবহারও সেরকম।
সাধারণ রসিকতা হিসেবে বলা হয়, একটি SF রোবটকে মানুষের কাছ থেকে আলাদা করার তিনটি উপায়
১. SF রোবট মানুষের চেয়ে বেশি ভোজনরসিক।
২. SF রোবটদের লজ্জা মানুষের চেয়ে বেশি।
৩. SF রোবটরা মানুষের চেয়ে দ্রুত প্রেমে পড়ে।