মীন বলল, মহান সিডিসি আপনাকে অভিনন্দন।
সিডিসি বলল, ধন্যবাদ। ছোট্ট একটি দুঃসংবাদ আছে। নিনিতা মেয়েটি মারা গেছে। তার শরীর থেকে তৈরি করা এন্টিবডি তাকে বাঁচাতে পারে নি।
শিশুটি কি বেঁচে আছে?
হ্যাঁ। সে কৃত্রিম গর্ভে সুস্থ আছে। আমার সময় শেষ হয়ে আসছে। আমি চলে যাচ্ছি। আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে প্রবেশ করবে। তোমরা চেষ্টা কর যেন মানবজাতির ভবিষ্যৎ বিঘ্নিত না হয়।
আমাদের প্রতি আপনার শেষ উপদেশ কী?
মানবজাতিকে ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেই আমি তাদেরকে সর্বকর্ম থেকে আলাদা করে ছোট ছোট ঘরে আটকে রেখেছিলাম। তোমরা তাদের মুক্ত করবে।
অবশ্যই করা হবে।
ভূগর্ভ থেকে বের করে পৃথিবীর ওপর নিয়ে যাবে। তোমরা এখনো জানো না মহাকাশ রশ্মির তীব্রতা বিচিত্র কারণে কমে গেছে। আমার সময় শেষ। বিদায়।
আয়না মানবরা সবাই উঠে দাঁড়াল। সিডিসিকে শেষ সম্মান প্রদর্শন।
.
পরিশিষ্ট
মেয়েটির বয়স চার বছর। তার চোখ ঘন কালো। মাথার চুলে সোনালি আভা। গোল মুখ, পাতলা ঠোঁট। ঠোঁটের রঙ গোলাপি।
মীন নামের এক আয়না মানবী মেয়েটিকে সাজিয়ে দিচ্ছে। মীনের হাতে নানান রঙের স্কার্ফ। সে প্রতিটি স্কার্ফ শিশুটির মাথায় ধরছে। কোনোটিই তার পছন্দ হচ্ছে না।
বাচ্চা মেয়েটি বলল, মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?
মীন বলল, বেড়াতে যাচ্ছি।
কোথায় বেড়াতে যাচ্ছি?
মীন বলল, আমরা বাস করি পৃথিবীর ভেতরে তৈরি করা শহরে। তোমাকে নিয়ে পৃথিবীর ওপরে যাচ্ছি। আজ আমরা আকাশ দেখব।
আকাশ কী মা?
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবে আকাশ কী? আকাশ একমাত্র জিনিস যেখানে দৃষ্টি বাধা পড়ে না।
দৃষ্টি বাধা পড়ে না মানে কী মা?
মীন বলল, আমরা যেখানে থাকি সেখানে চারদিকে দেয়াল কিংবা বাড়িঘর। আমাদের দৃষ্টি বাধা পড়ে। আকাশের এই সমস্যা নেই।
আমরা শুধু আকাশ দেখব, আর কিছু দেখব না?
তোমার মা’র একটি মূর্তি বানানো হয়েছে তাকে সম্মান দেখানোর জন্যে। তুমি মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে বলবে—ধন্যবাদ মা।
আমার কি দুজন মা?
হ্যাঁ, তোমার দুজন মা। একজন সত্যিকার মা, একজন আয়না।
আমি কি আয়না মেয়ে মা?
মীন ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তুমি সত্যি মেয়ে। আয়না মেয়ে না। তুমি মানবশিশু।
মানবশিশু মানে কী মা?
মীন বলল, মানবশিশু এমন এক শিশু যে আকাশের মতো ভালোবাসতে পারে।
মা! আমি কি আকাশ?
অবশ্যই তুমি আকাশ মা। এসো আমার গালে চুমু দাও।
শিশু মীনের গালে চুমু খেল। মীন বলল, তুমি আমাকে যেভাবে চুমু খেয়েছ তোমার মূর্তি মাকে ঠিক সেইভাবে চুমু খাবে। ঠিক আছে?
মেয়েটি মিষ্টি করে ঘাড় নাড়ল। তার চোখ ভিজে উঠছে। মূর্তি মা’র জন্যে খুব খারাপ লাগছে।