নিনিতা বলল, ঐ দিনের মতো আমাকে জড়িয়ে ধরবে?
অবশ্যই।
নিনিতা বলল, ঐদিন আমি ঠিক যে জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম আজও সেখানে দাঁড়াব। হ্যান্ডশেকের জন্যে হাত উঁচিয়ে রাখব।
কুন বলল, চল যাই।
দুজন ঠিক আগের জায়গায় দাঁড়িয়েছে। জায়গা ঠিক করে দিয়েছে ফুড প্রো। তার সব মনে আছে। নিনিতা হাত উঁচিয়ে আছে। কুন আসছে না। নিনিতা বলল, দেরি হচ্ছে তো।
কুন বলল, হু।
নিনিতা বলল, ঐ দিন এত দেরি কর নি।
কুন চাপা গলায় বলল, নিনিতা, আমি চোখে দেখতে পাচ্ছি না। কিছুই দেখছি। ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। আমাকে ট্যাবলেট দাও। আমি ট্যাবলেট খাব।
নিনিতা ছুটে গিয়ে কুনকে জড়িয়ে প্রল। ফোপাতে ফোঁপাতে বলল, আমিও তোমার সঙ্গে ট্যাবলেট খাব।
.
দুজনই ট্যাবলেট খেয়েছে। কুন গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়েছে। নিনিতা জেগে আছে। সে হতাশ গলায় বলল, আমি কেন এখনো জেগে আছি?
ফুড প্রো বলল, ম্যাডাম, আপনাকে নকল ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে। এই ট্যাবলেটে কিছু হবে না।
নিনিতা বলল, আমার জন্যে নকল ট্যাবলেট কেন?
আমাকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি তাই পালন করেছি। আপনি তৈরি হয়ে যান। এক্ষুনি আপনাকে নিতে আসবে।
কোথায় আমাকে নিয়ে যাবে?
ম্যাডাম, আমার জানা নেই। আপনি আপনার স্বামীর কপালে হাত রাখুন। আমার ধারণা তিনি মারা গেছেন। ম্যাডাম, আপনার জন্যে আমার গভীর সমবেদনা। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি চিৎকার করে কাঁদতাম।
নিনিতা স্বামীর কপালে হাত রেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ ভাবলেশহীন।
এলডি পর্দায় নতুন ঘোষণা এসেছে।
ঘোষণা শহরবাসী। ভাইরাসের সংক্রমণ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো
হয়েছে। সংক্রমণ ঘটিয়েছে সেন্ট্রাল কম্পিউটার সিডিসি।
আমরা আয়না মানবগোষ্ঠী, সিডিসির হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা
গ্রহণ করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিডিসি ধ্বংস করে দেয়া হবে। তবে
ভাইরাস সংক্রমণ রোধে আমরা কিছুই করতে পারছি না। এই মুহূর্তে
ট্যাবলেট গ্রহণের কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই। আমরা দুঃখিত।
অপরাধ
অপরাধ একটি আপেক্ষিক বিষয় যা পাপপুণ্য বোধ নামক মানবিক আবেগ নির্ভর। সভ্যতার চতুর্থ সূচক পাপপুণ্য বোধ থেকে মুক্তি। আয়না বিদ্রোহের পরপরই পৃথিবী সভ্যতার চতুর্থ সূচক অতিক্রম করে।
—এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা
শহরে ভাইরাস সংক্রমণের সব দায়-দায়িত্ব সিডিসির ওপর বর্তেছে। সিডিসি দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেছে।
আয়না মানব কাউন্সিল এই ভয়ঙ্কর অপরাধের শাস্তি হিসেবে সিডিসি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধ্বংস প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কুড়ি মিনিটের মাথায় ধ্বংস প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।
সিডিসিকে এই কুড়ি মিনিট কথা বলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সে এবার পর্দায় এসেছে একজন হাসিখুশি তরুণ হিসেবে।
সিডিসি বলল, আমি জানি তোমরা যে ধ্বংস প্রক্রিয়া শুরু করেছ মাঝপথে তা থামানোর উপায় নেই। উপায় থাকলে আমি ধ্বংস প্রক্রিয়া বন্ধ করতে বলতাম। কারণ আমি এককভাবে মানব জাতিকে রক্ষা করেছি।
আয়না মানব কাউন্সিলের একজন বলল, এই শহরের V-305 সংক্রমণ আপনার ঘটানো। এটা কি সত্যি?
সিডিসি বলল, হ্যাঁ সত্যি।
তারপরেও বলছেন আপনি মানবজাতির রক্ষাকর্তা?
হ্যাঁ। ব্যাখ্যা করব?
করুন, আপনার ব্যাখ্যা শুনি।
সিডিসি বলল, আমার প্রধান চেষ্টা ছিল V-305 ভাইরাসের প্রতিষেধক বের করা। আমি জানি এই ভাইরাসের কারণে মানবজাতির সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটবে। তা কখনোই হতে দেয়া যায় না। এটা তোমাদের সবারই জানা, মানুষ ছাড়াও অন্য অনেক কার্বনগঠিত প্রাণীও এই ভাইরাসের কারণে বিলুপ্তির মুখোমুখি। এর এন্টিসিরাম তৈরির চেষ্টা সবাই করছে। কেউ কূলকিনারা পাচ্ছে না।
হঠাৎ আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেলাম। সপ্তম শহরে ভাইরাস আক্রমণের পর দেখা গেল, একটি তিন মাস বয়েসি শিশু বেঁচে গেল। তার জিনে একটি বিশেষত্ব আছে। ক্ষার অনু সংযোজন বিষয়ক বিশেষত্ব। আমরা এই ধরনের জিনের সব মাকে শিশু লাইসেন্স দিলাম। যে শহরে V-305 সংক্রমণ হয়েছে। সেখানে শিশুদের পাঠিয়ে দেয়া হলো। লাভ হলো না। সবাই মারা গেল।
মানুষ বিজ্ঞানীদের মাথায় ঘুমের মধ্যে Inspiration আসে। ঘোরের মধ্যে আসে। আমার মধ্যে হঠাৎ করেই একটা Inspiration এল। আমার মনে হলো মায়ের গর্ভে যদি কোনো শিশু থাকে এবং শহরে V-305 সংক্রমণ হয় তাহলে মা’র শরীর শিশুটিকে বাঁচানোর সর্ব চেষ্টা করবে। এন্টিবডি তৈরি করবে।
মীন বলল, এই পরীক্ষা কি নিনিতার ওপর করা হয়েছে?
সিডিসি বলল, হ্যাঁ।
মীন বলল, নিনিতার স্বামীকে হত্যার নির্দেশ কেন দেয়া হয়েছিল?
সিডিসি বলল, আমরা চেয়েছিলাম নিনিতাকে একা করে ফেলতে। যাতে সে ভাবে, এই পৃথিবীতে তার গর্ভের সন্তানটি ছাড়া আর কেউ নেই। যাতে তার শরীর গর্ভের সন্তান বাচানোর সর্বচেষ্টা করে। সুখের বিষয় তাই হয়েছে। নিনিতার শরীর এন্টিবডি তৈরি করেছে।
সেই এন্টিবডি কি আলাদা করা হয়েছে?
সিডিসি বলল, আলাদা করা হয়েছে। ল্যাবরেটরিতে সিনথেসিস শুরু হয়েছে। আমার ধারণা শহরের এক-চতুর্থাংশ মানুষ বেঁচে যাবে।
মীন বলল, এই এন্টিবডি কি কারো ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে?
সিডিসি বলল, মহান সঙ্গীতজ্ঞ আহানের ওপর সংক্রমণ হয়েছিল, তাঁকে এই এন্টিবডি দিয়ে বাঁচানো হয়েছে।