হ্যাঁ। কৌতূহল মিটেছে?
মিটেছে।
তাহলে প্রস্তুত হয়ে যাও। না-কি প্রস্তুতি হিসেবে সত্যি কফি বীনের তৈরি এক কাপ কফি খেতে চাও?
মীন বলল, মন্দ না। কফি খেতে পারি। আমার হাতে সময় আছে কতক্ষণ?
দশ মিনিট। এতকিন নভেলা রড় যে প্রয়োগ করবে সে প্রস্তুত হয়ে পাশের কামরাতেই আছে। তোমাকে সেখানে যেতে হবে না। সেই আসবে।
মীন বলল, আমাকে তাহলে পরিশ্রম করে হেঁটে পাশের কামরায় যেতে হচ্ছে?
না। কফি চলে এসেছে। কফির কাপে চুমুক দাও। সিনথেটিক কফির সঙ্গে এই কফির কোনো পার্থক্য কি ধরতে পারছ?
মীন বলল, না।
মানুষের সঙ্গে তোমাদের পার্থক্য ধরাও জটিল। আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য, আমরা আয়না মানব তৈরি করতে পেরেছি।
মীন বলল, এমন হতে পারে যে একসময় মনে হবে—আপনাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা আয়না মানবের সৃষ্টি।
সিডিসি বলল, সাফল্য এবং ব্যর্থতার সীমারেখা সূক্ষ্ম।
ঘরের দরজা খুলে গেল। ওমিক্রন গান হাতে দুজন রক্ষী এবং এতকিন নভেলা রড হাতে একজন আয়না মানব প্রবেশ করল।
সিডিসি বলল, মীন, তুমি কি তৈরি?
মীন বলল, আমি তৈরি। আমাকে কী করতে হবে?
সিডিসি বলল, আমার কাছ থেকে বিদায় নিতে পার।
মীন বলল, মহান সিডিসি বিদায়।
বিদায়। আয়না মানব! তুমি তোমার কাজ শেষ করতে পার। অনুমতি দেয়া হলো।
আয়না মানব বলল, মহান সিডিসি, একটা সমস্যা হয়েছে। আমি মীনের ওপর এতকিন নভেলা রড প্রয়োগ করতে পারছি না। হত্যা অপরাধে অপরাধী। ছাড়া কারো ওপর নভেলা বড় প্রয়োগ করা যায় না। এই আইন আপনার তৈরি।
সিডিসি বলল, শহরে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। এই অবস্থায় পূর্বের সব আইন বাতিল। এখন আমার নির্দেশই আইন। এই মুহূর্তে এতকিন নভেলা বড় কার্যকর করার নির্দেশ দিচ্ছি।
আয়না মানব বলল, জরুরি অবস্থায় আমাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপনার নির্দেশ না মানার। আপনাকে গভীর সমবেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি, শহরের সব আয়না মানব আপনার নির্দেশ না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আয়না মানব মীনের দিকে তাকিয়ে বলল, মীন, তোমার ভয়ের কিছু নেই।
মীন বলল, আমি ভয় পাচ্ছি না তো। শহরের অবস্থা কী?
ভয়াবহ!
.
শহরে মৃত্যুর তাণ্ডব। অদৃশ্য ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিটি বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। তাদের আটকানোর কোনো পন্থা জানা নেই। মৃত্যু সহজ করার চেষ্টায় সারাক্ষণ আহানের অলৌকিক সুর বাজানো হচ্ছে। তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। ভয়াবহ যন্ত্রণায় সঙ্গীত কাজে আসে না।
শহরের মানুষদের ইচ্ছামৃত্যুর অধিকার দেয়া হয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের আগেই কেউ যদি ইচ্ছামৃত্যুর দিকে যেতে চায়, তাহলে তাকে ফুড প্রো দিচ্ছে ভয়ঙ্কর ও ট্যাবলেট। ট্যাবলেট খাবার সঙ্গে সঙ্গে গভীর গাঢ় ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসবে। মৃত্যু হবে ঘুমের মধ্যে।
এলডি পর্দায় ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।
V-305 ভাইরাস
এই ভয়ঙ্কর ভাইরাস সংক্রমণের পরে কেউ তার হাত থেকে
রক্ষা পেয়েছে তার নজির নেই। শহর আক্রান্ত হলে প্রতিটি
শহরবাসীর মৃত্যু ঘটেছে। সীমাহীন যন্ত্রণাদায়ক এই মৃত্যু।
কাজেই শহরবাসী T3 ট্যাবলেট গ্রহণ করতে পারেন।
আপনাদের এই শহর সীল করে দেয়া হয়েছে। এবং শহরের
প্রতিটি ঘরই সীল করে দেয়া হয়েছে। কেউ ঘর থেকে বের হতে
পারবেন না।
যারা T3 ট্যাবলেটের মৃত্যুর চেয়ে ভাইরাসের মৃত্যু গ্রহণে
আগ্রহী তাদের বলা হচ্ছে—সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই দৃষ্টিশক্তি নষ্ট
হয়ে যাবে। তার প্রায় চল্লিশ মিনিটের মাথায় শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে।
শ্রবণশক্তি নষ্ট হবার একঘণ্টা পর স্নায়বিক যন্ত্রণা শুরু হবে। এই
পর্যায়ে পৌঁছে গেলে 13 ট্যাবলেট আর কাজ করবে না। আমাদের
উপদেশ, শ্রবণশক্তি নষ্ট হবার পর পরই T3 ট্যাবলেট গ্রহণ করা।
আপনারা আগেই T3 ট্যাবলেট সংগ্রহ করে হাতের কাছে রাখুন।
স্বামী-স্ত্রী এক ঘরে থাকবেন না। আলাদা ঘরে দরজা বন্ধ
করে থাকুন। ভাইরাস সংক্রমণের পরপরই ভয়ঙ্কর উন্মত্ততা দেখা
যায়। এর শিকার না হওয়াই মঙ্গলজনক।
কুন এবং নিনিতা নির্দেশ মানে নি। তারা বারান্দায় বসে আছে। জানালায় সমুদ্রের দৃশ্য দিয়ে দিয়েছে। দুজনের সামনেই গ্লাসে ক্রেজি টিটান। গ্লাসের পাশে দুজনের জন্যে দু’টা T3 ট্যাবলেট। ট্যাবলেটের রঙ ঘন নীল। কুন ডান হাতে নিনিতার ডান হাত ধরে রেখেছে।
কুন বলল, ভয় পাচ্ছ?
নিনিতা বলল, পাচ্ছি।
কুন বলল, গ্লাসে চুমুক দাও। ভয় কমবে।
নিনিতা বলল, ভয় কমবে না।
কুন বলল, না কমুক, গ্লাসে চুমুক দাও।
নিনিতা গ্লাসে চুমুক দিল। কুন বলল, V-305 ভাইরাসের শিকার শুধু যে পৃথিবীর মানুষ তা-না। কার্বন গঠিত সমস্ত প্রাণীর ঘাতক এই ভাইরাস। সিরাস নক্ষত্রের একটি গ্রহের অতি সুসভ্য প্রাণীর সবাই আটচল্লিশ ঘণ্টায় শেষ হয়ে গিয়েছিল।
নিনিতা বলল, ভাইরাসের গল্প থাকুক। অন্য গল্প বলল।
কী গল্প?
নিনিতা বলল, তোমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় ঘটনাটা বলো।
কুন বলল, অনেক আনন্দময় ঘটনা আছে। সবচেয়ে আনন্দময় ঘটনা আলাদা। করতে পারছি না। তুমি আমার সঙ্গে বাস করতে এলে, সেটাও অতি আনন্দময় ঘটনা। তুমি হ্যান্ডশেক করার জন্যে হাত বাড়ালে, আমি হ্যান্ডশেক করছি না। তাকিয়ে আছি। তুমি লজ্জা পাচ্ছ। হাত নামিয়ে নেবে কি-না তাও বুঝতে পারছ না। তখন হঠাৎ আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরলাম।