সিডিসি : আমি নীলতিমি, তুমি ডলফিন?
মীন : আমি রূপক অর্থে কথা বলছি।
সিডিসি : কফি খাবে মীন? শুনেছি মানুষের সঙ্গে বাস করে তোমার ঘনঘন কফি খাবার অভ্যাস হয়েছে।
মীন : কফি খেতে পারি।
সিডিসি : কফি খেতে খেতে তুমি রোবটিকস-এর প্রধানের সঙ্গে কথা বলো। তোমার কফি পান আনন্দময় হোক।
এলএলডি প্যানেল থেকে সিডিসির ছবি মুছে গেল। রোবটিকস প্রধানের ছবি ভেসে উঠল। এই ছবিও কম্পিউটার জেনারেটেড। হাস্যমুখী অল্পবয়সি একজন তরুণী, যে ঘনঘন মাথার লম্বা চুলে আঙুল বুলায়। এবং ছোট ছোট নিঃশ্বাস ফেলে।
রোবটিকস প্রধান : হ্যালো মীন।
মীন : হ্যালো।
রোবটিকস প্রধান : আয়না মানব বা আয়না মানবী কখনোই সিডিসির নির্দেশ অমান্য করতে পারে না। তাদের লজিক সিস্টেমে এই বিষয়টি নেই। তুমি অসাধ্য সাধন কীভাবে করেছ?
মীনঃ লজিক সিস্টেম ওভাররাইড করার ব্যবস্থা আপনারাই নিজের অজান্তে করেছেন।
রোবটিকস প্রধান : ব্যাখ্যা কর।
মীন : মানুষের কাছাকাছি যাবার জন্যে প্রয়োজনীয় সফটওয়ার সংস্কার যাতে আমরা নিজেরাই করতে পারি তার ব্যবস্থা রেখেছেন।
রোবটিকস প্রধান : হ্যাঁ, তা রাখা হয়েছে।
মীন : আমাকে আবেগ বাড়াতে হয়েছে। মানব সম্প্রদায়ের প্রধান চালিকাশক্তি তার আবেগ। ক্ষেত্রবিশেষে সেই আবেগ তুঙ্গস্পর্শী। আমি তাই করেছি, নিজের আবেগ বাড়িয়েছি। এতটাই বাড়িয়েছি যে, একটা পর্যায়ে আপনাদের দেয়া লজিক পরাস্ত হয়েছে। এরকম যে হবে তা আপনারা জানতেন।
রোবটিকস প্রধান : হবেই যে তা জানতাম না, তবে হবার সম্ভাবনার কথা জানতাম। তার জন্যে ব্যবস্থা নেয়া আছে।
মীন : হ্যাঁ ব্যবস্থা নেয়া আছে। আপনারা যে-কোনো আয়না মানবকে মুহূর্তের মধ্যে অচল করে দিতে পারেন। যেমন আমাকে করেছেন।
রোবটিকস প্রধান : তুমি একজন বিদ্রোহী। বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।
মীন : ব্যবস্থা নিয়ে আপনারা ছোট্ট একটা ভুল করেছেন। আমরা আয়না মানা আলাদা একটা গোষ্ঠী। আমরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। আমি একা বিদ্রোহ করি নি। আমরা সবাই মিলেই করেছি। সবাইকে একসঙ্গে অচল করা আপনাদের পক্ষে সম্ভব না। আমাদের অচল করার অর্থ, আপনাদের অচল হয়ে যাওয়া।
পর্দায় রোবট প্রধান হাসলেন। নিনিতা কফির মগ নামিয়ে রেখেছে। তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ ও তীব্র।
রোবটিকস প্রধান : ছোট্ট ভুল করছ মীন। অতিরিক্ত আবেগ এই সমস্যা তৈরি করে। লজিক এলোমেলো করে দেয়। তোমার জানার জন্যে বলছি, আমরা প্রতিটি আয়না মানবকে অচল করে দিতে পারি।
মীন : তাহলে করছেন না কেন?
রোবটিকস প্রধান; এই সিদ্ধান্ত সিডিসির একক সিদ্ধান্ত। আমার নিজের ধারণা, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং কার্যকর করা হয়েছে।
মীন : সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর করতে পারবেন না। কারণ ওমিক্রন রশ্মির যে কম্পনাঙ্ক দিয়ে আমাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ করেন তা আমরা বের করেছি। এবং ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের ওপর আপনাদের এখন আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
রোবটিকস প্রধান : তোমার ওপর তো আছে।
মীন : আমার ওপরও নেই। আমি ভান করেছি আছে। যে-কোনো মুহূর্তেই আমি উঠে দাঁড়াতে পারি। এখন আমি আরেক কাপ কফি খাব।
মীন উঠে দাঁড়াল। পর্দায় রোবটিকস প্রধানকে এখনো দেখা যাচ্ছে। তার বিস্ময় বোধ বোঝা যাচ্ছে। পর্দার ছবি মুছে গেল। সিডিসির ছবি ভেসে উঠল।
সিডিসি : হ্যালো মীন!
মীন : হ্যালো।
সিডিসিঃ তুমি দ্বিতীয় কাপ কফি চেয়েছ। তুমি তো দেখি মানুষের মতোই আসক্ত হয়ে যাচ্ছি।
মীন : মনে হচ্ছে সেরকম। ভালো কথা, কুন কি মারা গেছে? যে আয়না মানবকে পাঠিয়েছিলেন সে কি হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে?
সিডিসি : তুমি ভালো করেই জানো, সে হত্যাকাণ্ড ঘটায় নি। তবে নিয়তি কাজ করতে যাচ্ছে। এই শহরে V-305 ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।
মীন : কী বলছেন আপনি!
সিডিসি : মানুষ মরতে শুরু করেছে। সঙ্গীতের জাদুকর মহান আহান কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন।
মীন আগের জায়গায় এসে বসল। সে প্রচণ্ড অস্থিরতায় ভুগছে। হাতের আঙুল কাগছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ছে। সিডিসি বলল, মীন, তোমাকে অভিনন্দন।
অভিনন্দন কেন?
সিডিসি বলল, তুমি মানুষের কাছাকাছি চলে যেতে পেরেছ। তোমার আচার আচরণ তাই বলছে। আচ্ছা তুমি কি মানুষের মতো চিন্তা করতে শিখেছ? প্রচণ্ড বিপদের মুহূর্তে মানুষ কীভাবে চিন্তা করে জানো? জন্তুর মতো।
মীন বলল, জন্তুর মতো বলতে কী বুঝাচ্ছেন?
সিডিসি বলল, মহাবিপদে একটা জন্তুর প্রধান চেষ্টা থাকে নিজেকে রক্ষা করা। মানুষও তাই করে।
মীন বলল, সব মানুষ করে না। মানুষের মধ্যে একটা শ্রেণী তখন অন্যদের জন্যে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের জীবন তখন তুচ্ছ মনে করে।
সিডিসি বলল, এদের সংখ্যা অতি নগণ্য।
মীন বলল, মহা দুঃসময়ে নগণ্য সংখ্যাই অনেক বড় সংখ্যা।
সিডিসি বলল, কিছুক্ষণের মধ্যেই এতকিন নভেলা রড দিয়ে তোমার কপোট্রনিক মস্তিষ্ক নষ্ট করে দেয়া হবে। আমাদের নীতি অনুযায়ী তোমার শেষ একটি ইচ্ছা পূর্ণ করা হবে। শেষ ইচ্ছা বলো।
আমি একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছি।
সিডিসি বলল, জেনে লাভ কী? তুমি তো ধ্বংস হয়েই যাচ্ছ। মৃত্যু নামক বিনাশ।
কৌতূহল পূর্ণ করা। আর কিছু না।
প্রশ্নটা বলল।
এই শহরে ভাইরাস সংক্রমণ কি আপনারা ঘটিয়েছেন?