নিনিতার শরীর কাঁপছে। সে হাতে কফির মগ তুলে নিয়েছে। যে-কোনো মুহূর্তে সে মীনের দিকে কফির মগ ছুঁড়ে মা’রবে। কুন হতভম্ব। সে কী করবে বুঝতে পারছে না। মীনের আচরণ তার কাছে অদ্ভুত লাগছে।
মীন হিমশীতল গলায় বলল, কফির মগ ছুঁড়ে মারার আগে তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছি SF রোবটকে আহত করা, আঘাত করা, তাকে মানসিক কষ্ট দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মীনের কথা শেষ হবার আগেই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিনিতা কফির মগ ছুঁড়ে মা’রল। মগটা লাগল মীনের নাকে নাক কেটে রক্ত পড়ছে। মীন স্কার্ট দিয়ে তার নাক চেপে ধরেছে। নিনিতা বলল, তুমি কত উঁচুতে স্কার্ট তুলেছ তুমি জানো? সব দেখা যাচ্ছে। মীন হালকা গলায় বলল, যন্ত্রের সব দেখা গেলেও কিছু যায় আসে না। আমি ঠিক করেছি স্কার্ট খুলে ফেলে তোমার স্বামীর সামনে নেংটো হয়ে ঘুরব। বলতে বলতে মীন উঠে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ নিনিতার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে থেকে বারান্দা থেকে বের হয়ে গেল।
নিনিতা ভীত গলায় বলল, মেয়েটা যা বলছে তাই করবে বলে তো মনে হয়।
কুন বলল, মেয়েটা মেয়েটা বলছ কেন? তুমি নিজেই তো বলেছ সে একটা যন্ত্র।
নিনিতা বলল, তুমি ওর পক্ষে কথা বলছ কেন?
কুন বলল, আর বলব না।
নিনিতা চিন্তিত মুখে অপেক্ষা করছে। সে বারান্দার বাতি নিভিয়ে দিয়েছে। বারান্দা অন্ধকার। বাইরের কৃত্রিম চাঁদের আলোর খানিকটা শুধু আসছে। এই আলোয় স্পষ্ট কিছু দেখা যায় না। তার ধারণা কিছুক্ষণের মধ্যে মীন নেংটো হয়ে বারান্দায় চলে আসবে। কী সর্বনাশ!
মীন স্টাডিরুমে বসে আছে। কম্পিউটার সিডিসির সঙ্গে কথা বলছে। মীনের কথা বলার অংশটি শব্দহীন। তার যা বলার তা সে মনে মনে বলছে। সিডিসিও সেভাবেই জবাব দিচ্ছে। অনেকটা টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ। এই যোগাযোগে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের গামা’রশ্মি ব্যবহার করা হয়।
সিডিসি : হ্যালো মীন।
মীন : হ্যালো।
সিডিসি : নিনিতা কি যথেষ্ট পরিমাণে রেগেছে?
মীন : হ্যাঁ।
সিডিসিঃ তুমি নগ্ন হয়ে একবার ওদের সামনে যেও। যেন সে আরো রেগে যায়।
মীন : আপনার নির্দেশ পালিত হবে। কিন্তু এই কাজটি আমি কেন করব বুঝতে পারছি না।
সিডিসি : সবকিছু তোমাকে বুঝতে হবে কেন?
মীনঃ পেছনের উদ্দেশ্যটা জানা থাকলে কাজটা সহজ হয়। তবে আপনার দিক থেকে অসুবিধা থাকলে জানতে চাচ্ছি না।
সিডিসি : কারণ বলছি। শোন। নিনিতা চাইবে তোমার কাছ থেকে তার স্বামীকে দূরে সরিয়ে নিতে। সে চেষ্টা করবে স্বামীকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতে। প্রবল উত্তেজনার একটি জৈবিক ঘটনা সে ঘটাবে। তাতেই সে গর্ভধারণ করবে। আমি চাই সে গর্ভবতী হোক।
মীন : মানব সম্প্রদায় তো এখন গর্ভধারণ করে না। নিনিতা কেন করবে?
সিডিসি : এই প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি না। তুমি খুঁজে বের করতে পারলে খুঁজে বের কর। আরেকটা কথা তোমাকে বলতে চাচ্ছি, এই শহরে শিগগিরই V-305 সংক্রমণ হবে।
মীন : খুব শিগগির মানে কত দিন?
সিডিসিঃ পনের দিন।
মীন; ভাইরাসের সংক্রমণ তাহলে আপনি ঘটাচ্ছেন? লজিক তাই বলে। আপনি না ঘটালে দিনক্ষণ হিসেব করে ভাইরাসের সংক্রমণের কথা বলতেন না।
সিডিসি : মীন, তোমার নগ্ন হয়ে ওদের সামনে যাবার কথা।
মীন : এখন যাব?
সিভিসি : হ্যাঁ, এখনি যাবে। ওরা বারান্দার বাতি নিভিয়ে দিয়েছে। তুমি প্রথম যে কাজটি করবে তা হচ্ছে বারান্দার বাতি জ্বালবে।
মীন : আমার লজ্জা লাগছে।
সিডিসি : লজ্জা লাগারই কথা। তোমাকে মানবিক আবেগ দেয়া হয়েছে। লজ্জা মানবিক আবেগের একটি অংশ।
মীন : কৌতূহল কি মানবিক আবেগের মধ্যে পড়ে?
সিডিসি : হ্যাঁ পড়ে।
মীন : একটি প্রশ্ন জানার জন্যে আমি প্রবল কৌতূহল বোধ করছি—মানব সম্প্রদায় কি ধ্বংস হতে যাচ্ছে?
সিডিসিঃ তোমাকে বুদ্ধি দেয়া হয়েছে, জ্ঞান দেয়া হয়েছে। চিন্তাশক্তি দেয়া হয়েছে। চিন্তা করে বের কর। একটা কথা মানব সম্প্রদায় এবং রোবট সম্প্রদায়, এই দুই সম্প্রদায়ের কোনটির প্রতি তোমার আনুগত্য?
মীন : মানব সম্প্রদায়ের প্রতি।
সিডিসি : কারণ কী?
মীন; কারণ তারা অসহায় এবং দুর্বল। আপনি তাদের অসহায় করেছেন এবং দুর্বল করেছেন।
সিডিসি : কীভাবে?
মীন : তাদের দীর্ঘ জীবন দিয়েছেন। দীর্ঘ জীবন নিয়ে তারা কী করবে বুঝতে পারছে না। তারা জীবন কাটাচ্ছে প্রচণ্ড এক ভীতির মধ্যে। ভাইরাস ভীতি। রোবট সম্প্রদায় এই ভীতি থেকে মুক্ত।
সিডিসি : মীন, তুমি দেরি করে ফেলছ। নিনিতা তার স্বামীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি চাই না ঘুমাক।
.
নিনিতা ঘুমাচ্ছে। তার মাথা কুনের কোলে। কুন নিনিতার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বারান্দা অন্ধকার। কুনের নিজেরও ঘুম পাচ্ছে। আবার ঘুম চোখে বারান্দায় বসে থাকতেও ভালো লাগছে।
বারান্দার বাতি জ্বলে উঠল। ধড়মড় করে উঠে বসল নিনিতা। তার সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন এক অতি রূপবতী নারী।
মীন বলল, আমার নাক থ্যাবড়া আমি মানছি। শরীর কি নিখুঁত না? আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে না আমি মহান আহানের কল্পনার চন্দ্রকন্যা?
খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল
খোকা ঘুমাল
পাড়া জুড়াল
বর্গি এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে?
ধান ফুরাল
পান ফুরাল
খাজনার উপায় কী?
আর কটা দিন সবুর কর
রসুন বুনেছি।
[প্রাচীন পৃথিবীর ঘুমপাড়ানি গান]