ম্যাডাম, আমাকে প্রোগ্রাম করা হয়েছে বেশি কথা বলার জন্যে। আপনারা দুজন মাত্র মানুষ। দুজন দুজনের কথাই শুধু শোনেন। এতে বিরক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়। টেনশন তৈরি হয়। দুজনার মাঝখানে আমার কথা ফিলারের মতো আসে। এতে টেনশন কমে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে,..
প্লিজ স্টপ।
ফুড প্রো দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলার মতো শব্দ করল। নিনিতা তার স্বামীর ঘরের দিকে রওনা হলো। নিনিতার স্বামীর একটি নাম দেয়া যাক। ধরা যাক তার নাম কুন। পিন নাম্বার ব্যবহার করে গল্প চলিয়ে নেয়া কঠিন। যদিও ভবিষ্যতের পৃথিবীর কাছে মানুষের পরিচয় হিসেবে PIN নাম্বারের বিকল্প নেই। পিন নাম্বারে একজন মানুষের সকল তথ্য থাকে। নিনিতার পিন নাম্বার দিয়ে বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যাক। নিনিতার পিন নাম্বার
০০২৮৩৮৪১/০৩৭/২৩৮১
প্রথম ডিজিট o বলছে সে একজন মেয়ে। পুরুষ হলে প্রথম ডিজিট হতো ১। পরের পাঁচটি ডিজিট বলছে তার DNA code. যা হলো ০২৮৩৮। তারপরের ডিজিট তার বয়স বলছে। নিনিতার বয়স ৪১। এই সংখ্যা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদলাবে। অবলিকের পরে আছে ০৩৭, এর মধ্যেই নিনিতার পেশা এবং মেডিকেল প্রোফাইল বলা হচ্ছে। সর্বশেষ চারটি ডিজিট হচ্ছে ২৩৮১, এটি সরকার থেকে দেয়া সংখ্যা যার অর্থ শুধু সরকার (সরকার অর্থ হলো মূল কম্পিউটার সিডিসি) জানবে। তবে সর্বশেষ ডিজিটটির অর্থ পরিষ্কার। সর্বশেষ ডিজিট ১-এর অর্থ এই তরুণীকে সন্তান গ্রহণের লাইসেন্স দেয়া হয় নি। যেসব তরুণীর সর্বশেষ ডিজিট ২, তারা সন্তান গ্রহণের লাইসেন্স পেয়েছে। পৃথিবীর মাত্র ০.০০৩ ভাগ তরুণী এই লাইসেন্স পায়। কারা লাইসেন্স পাবে তা ঠিক করা হয় লটারির মাধ্যমে। এই লটারি প্রতি চার বছর পর একবার করা হয়। লটারির দিন পৃথিবীতে ছুটি থাকে। কারণ ঐ দিনটি মহাউৎসবের একটি দিন।
কুনের কাছে ফিরে আসি। সে গ্যালাক্সি নিউজ দেখছে। গ্যালাক্সিতে বিশেষ বিশেষ ঘটনার ফুটেজ দেখানো হচ্ছে। তাৎক্ষণিক নিউজ না। গ্যালাক্সির যে অংশ এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে, পৃথিবীতে তার আলো আসতে এক লক্ষ বছর লাগবে। তাদের ভিডিও ফুটেজ হবে এক লক্ষ বছরের পুরনো।
ওরিয়ন নক্ষত্রের একটি গ্রহকে দেখানো হচ্ছে। তাদের বুদ্ধিমান প্রাণীদের নিয়ে প্রতিবেদন। নিনিতা এসে কুনের রিভলভিং চেয়ারে হাত রাখল। কুন টিভির পর্দা থেকে চোখ না সরিয়ে বলল, এই গ্রহের প্রাণীগুলি দেখ। Humanoid, অবিকল মানুষের মতো, শুধু চারটা করে হাত। কী সুন্দর দেখতে, তাই না?
নিনিতা বলল, দেখতে কুৎসিত মাকড়শার মতো লাগছে।
কুন বলল, মোটেই মাকড়শার মতো লাগছে না। দেখ কী গ্রেসফুল। ইভোলিউশনে ওরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে। চারটা হাত ওদেরকে এগিয়ে দিয়েছে।
নিনিতা বলল, খেতে আস।
কুন বলল, অজি রাতের মেনু কী?
জানি না। হাবিজাবি কী সব যেন বানিয়েছে। তোমার কি বিশেষ কিছু খেতে ইচ্ছা করছে?
হুঁ। করছে।
কী খেতে ইচ্ছা করছে বলো, আমি ফুড প্রো-কে বলে ব্যবস্থা করি।
ও ব্যবস্থা করতে পারবে না। শুধু তুমি পারবে।
নিনিতা অবাক হয়ে বলল, আমি কীভাবে পারব?
কুন বলল, তুমি ছাড়া আর কেউ পারবে না। অমির চুমু খেতে ইচ্ছা করছে। খাবার হিসেবে চুমু অসাধারণ।
নিনিতা বিরক্ত গলায় বলল, মাঝে মাঝে আমাকে খুশি করার জন্যে তুমি কিছু কাণ্ডকারখানা কর। আমি খুশি হই না। বিরক্ত হই। এসো, খেতে আসি।
ফুড প্রো টেবিল সাজিয়েছে। দুটি প্লেটে ন্যাপকিন কাটা চামচ। প্লেটের পাশে ষাট মিলিলিটার করে ক্যাম্পিয়ান রেড ওয়াইন। আলাদা সালাদের বাটি। মেইন কোর্স, ডেজার্ট ক্যান্ডেল লাইটের ব্যবস্থা আছে। মোমবাতি জ্বলছে। খাবার শেষ হওয়া মাত্র সব চলে যাবে ফুড প্রোর ওয়েস্ট ডিসপোজালে। সবই অ্যাটমিক স্পশারে নষ্ট করে ফেলা হবে। আবার নতুন করে তৈরি হবে।
সালাদ মুখে দিয়ে কুন বলল, অসাধারণ।
নিনিতা বলল, অসাধারণ বললে কেন? তিতকুটে একটা জিনিস। আঠালো। নাকে ঝাঁঝ লাগছে।
কুন বলল, মজা তো এখানেই। তুমি না খেলে তোমার সালাদের বাটিটা এগিয়ে দাও।
নিনিতা সালাদের বাটি ঠেলে দিয়ে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলল, ফুড প্রো তোমার পছন্দের দিকে খেয়াল রেখে খাবার তৈরি করে। আমার পছন্দ সে হিসেবে ধরে না।
ফুড প্রো বলল, ম্যাডাম, কথাটা ঠিক না। আপনার মেজাজ কোনো কারণে খারাপ বলে আপনি খেয়ে আনন্দ পাচ্ছেন না।
নিনিতা বলল, আমাদের স্বামী-স্ত্রীর কথার মধ্যে তুমি কথা বলছ কেন?
সরি। আপনাদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কথা বলব না। আপনাদের ডিনার আনন্দময় হোক।
খাওয়া শেষ হবার পরেও কোনো কথা বলবে না।
সফট কোনো মিউজিক কি দেব ম্যাডাম?
নিনিতা জবাব দিল না। হালকা বাজনা শুরু হলো। মোমবাতির শিখা বাজনার সঙ্গে যুক্ত। শিখা তালে তালে কাঁপছে। মাঝে মাঝে বড় হচ্ছে, ছোট হচ্ছে। এদিক ওদিক দুলছে। অপূর্ব আলোক নৃত্য।
কুন বলল, কম্পিউটার সেন্টার থেকে আমাকে টেলিফোন করেছিল। জানতে চাচ্ছিল আমার পছন্দের উপহার কী? তারা কী একটা গবেষণা না-কি করছে।
তুমি পছন্দের উপহারের তালিকায় কী কী নাম দিয়েছ?
আমার একটাই পছন্দ। তার নাম দিয়েছি। ক্র্যাব ন্যাধুলার পঞ্চম গ্রহের পশু রিরি।
পাগল না-কি? একটা রিরির দাম কত তুমি জানো?