কুন বলল, আমি নিনিতার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি। তাকে দেখতে চাচ্ছি। তার কোনো উপায় কি আছে?
মীন স্বাভাবিক গলায় বলল, আছে। খুব সহজ উপায় আছে।
সহজ উপায়টা বলো।
তোমাকে একটা খুন করতে হবে। আমাকে ধ্বংস করে ফেললেও হবে। একটা হাতুড়ি নিয়ে আমার মাথায় শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে বাড়ি দাও। এতে কাজ হবার কথা।
কুন তাকিয়ে আছে মীনের দিকে। মীনের মুখ হাসি হাসি। যেন এইমাত্র সে দারুণ মজার কোনো কথা বলেছে।
ভাইরাস V-305
ভয়াবহ ভাইরাস। এই দ্রুত পরিবর্তন ক্ষমতার ভাইরাস মানুষের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম ছয় থেকে সাত ঘণ্টার মধ্যে নষ্ট করে দেয়। দশ থেকে বারো ঘন্টার মধ্যে অবর্ণনীয় কষ্টের মৃত্যু। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই এখন পর্যন্ত নেয়া যায় নি।
—এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা
(রোগব্যাধি পরিচ্ছেদ)
নিনিতা লালকুঠিতে কতদিন পার করেছে সে জানে না। এখানে সময় এবং তারিখ জানার কোনো ব্যবস্থা নেই। কোথাও কোনো থ্রিডি পর্দা নেই। ঘড়ি নেই, ক্যালেন্ডার নেই। জায়গাটা যেন সময়ের বাইরে। দিন-রাতের প্রভেদ বোঝা যাচ্ছে। আর কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কেন্দ্র পরিচালকদের সঙ্গে অনেক দেনদরবার করে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গিয়েছিল। যেসব প্রশ্ন নিনিতা তাকে করবে বলে ভেবেছিল, তার কিছুই করা হয় নি। অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে ফিরে এসেছে।
নিনিতার প্রশ্ন : আজ কী বার? এবং এখন কটা বাজে?
উত্তর : আপনার সময় এবং তারিখ জানার প্রয়োজন নেই।
নিনিতার প্রশ্ন : কেন প্রয়োজন নেই।
উত্তর : কম্পিউটার সিডিসি ঠিক করেছেন প্রয়োজন নেই। কাজেই প্রয়োজন নেই।
নিনিতার প্রশ্ন : ভয়ঙ্কর সব অপরাধীকে এখানে রাখা হয়েছে। তাদের স্মৃতি নষ্ট করা হচ্ছে। আমি কী অপরাধ করেছি?
উত্তর : এর উত্তর সিডিসি জানে। আমি জানি না।
নিনিতার প্রশ্ন : আমি কোনো এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। কার কাছে প্রতিকার চাইব?
উত্তর : সিভিসির কাছে।
নিনিতার প্রশ্ন : প্রতিকার কীভাবে চাইব? কার মাধ্যমে চাইব?
উত্তর : লালকুঠির বাসিন্দারা কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না।
নিনিতার প্রশ্ন : আমি কি একবারের জন্যে আমার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি?
উত্তর : লালকুঠির বাসিন্দারা কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না।
মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা অসাধারণ। সে সব অবস্থায় সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। বৎসরের পর বত্সর মহাকাশযানের ছোট্ট একটা কামরায় বাস করতে তার সমস্যা হয় না। নিনিতার সমস্যা হচ্ছে। সে কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না। কয়েকদিন আগে আয়নায় নিজেকে দেখে নিনিতা চিনতে পারল না। হঠাৎ যেন তার বয়স বেড়ে গেছে। চোখের দৃষ্টি হয়েছে ঘোলাটে। তার সারাক্ষণ পানির পিপাসা হচ্ছে, অথচ সে সেভাবে পানি পাচ্ছে না। ফুড প্রো দৈনিক পানির রেশনের বাইরে একফোঁটা পানিও দেবে না। নিনিতা তার ইউনিট দিয়ে পানি কিনতে পারে, কিন্তু লালকুঠিতে তাও সম্ভব না।
নিনিতার পাশের কামরায় থাকেন বৃদ্ধ শেন। তিনি বেশ হাসিখুশিই আছেন। তাকে কখনো চিন্তিত মনে হয় না। বরং মনে হয় তিনি লালকুঠিতে হলিডে কাটাতে এসেছেন। শেন কয়েকবারই নিনিতার সঙ্গে গল্প করার চেষ্টা করেছেন। নিনিতার প্রতিবারই অসহ্য বোধ হয়েছে। ভদ্রলোকের গল্পের বিষয়বস্তু একটাই। দেখা হওয়া মাত্র তিনি বলবেন, নিনিতা, আমার স্ত্রীকে আমি কীভাবে হত্যা করি সেই গল্পটা শুনতে চাও? খুবই মজা পাবে।
এই গল্পটা আমি শুনতে চাচ্ছি না।
সে এক মিনিট আগেও বুঝতে পারে নি যে, আমি তাকে হত্যা করব। হয়েছে কী শোন …
আমি আপনাকে বলেছি যে, এই গল্প শুনতে চাচ্ছি না।
হত্যার কায়দাটা শুনলে তোমার ভালো লাগবে। আমি তাকে বললাম, এই তোমার গলাটা তো অন্য মেয়েদের তুলনায় লম্বা। কতটুকু লম্বা মেপে দেখি। বলেই দুহাতে তার গলা চেপে ধরলাম।
নিনিতা এইটুকু শুনে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তার ধারণা এই লোক তার স্ত্রীকে যেভাবে খুন করেছে তাকেও খুন করবে। পুরনো টেকনিক ব্যবহার করবে না। নতুন কোনো টেকনিকে যাবে।
লোকটির ধারেকাছে নিনিতা থাকতে চায় না। ডাইনিং হলে খেতে বসার সময় শেন এসে তার পাশে বসবেই। প্রতিদিনই কোনো না কোনো গল্প ফাঁদবে। নিনিতা এই লোকের কোনো গল্পই শুনতে চায় না, তারপরেও তাকে শুনতে হয়।
নিনিতা! তুমি কি ক্রীতদাস শব্দটার সঙ্গে পরিচিত?
নিনিতা জবাব দিল না। চুপ করে রইল।
শেন বলল, আমরা যন্ত্রের হাতের ক্রীতদাস। যন্ত্রের ইচ্ছার বাইরে যাবার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। আচ্ছা নিনিতা, তুমি কি আমাকে ঘৃণা কর?
হা।
স্ত্রীকে হত্যা করেছি এইজন্যে?
হ্যাঁ।
ব্যাপারটা অন্যভাবে দেখ না কেন? সিডিসি আমাকে বাধ্য করেছে খুন করতে।
বাধ্য করবে কেন?
যাতে তারা আমাকে এখানে এনে আটকে ফেলতে পারে। তুমি ঠান্ডা মাথায় বলো, তোমার প্রতি তারা কি অন্যায় করেছে?
হ্যাঁ।
তাহলে তো আমার প্রতিও অন্যায় করতে পারে। তাদের পরিকল্পনায় আমি স্ত্রীকে খুন করে বিচারের অপেক্ষায় আছি। অদ্ভুত না?
আমি আপনার সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে আগ্রহ বোধ করছি না।
তোমাকে কথাবার্তা চালাতে হবে না। তুমি শুধু শুনে যাও। ভাইরাস V-305 বিষয়ে আমার একটা থিওরি আছে। থিওরিটা শুনতে চাও?