কুন থ্রি-ডি পর্দা চালু করল। সেখানে নতুন আবিষ্কার করা সিরাম নক্ষত্রের একটি গ্রহে পাওয়া প্রাচীন সভ্যতার ওপর অনুষ্ঠান হচ্ছে। অতি সুসভ্য কোনো এক প্রাণী একসময় মহান সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল। তারা নেই, রেখে গেছে সভ্যতার সামান্য কিছু নমুনা। যা দেখে স্তম্ভিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাদের তৈরি ক্রিস্টাল কিউব থেকে বিরতিহীন সঙ্গীত তৈরি হয়। যার একটি সুরের সঙ্গে অন্য সুরের কোনো মিল নেই। সঙ্গীতের সঙ্গে ক্রিস্টাল কিউবের বর্ণ পরিবর্তিত হয়। পালসারের মতো নির্দিষ্ট সময় পর সেখান থেকে শক্তিশালী গামা রেডিয়েশন হয়।
কুন আগ্রহ নিয়ে প্রোগ্রাম দেখছে। ভিনগ্রহের সভ্যতা নিয়ে প্রোগ্রামগুলি এমনভাবে তৈরি যে কিছুক্ষণ দেখলেই আটকা পড়ে যেতে হয়। হঠাৎ প্রোগ্রাম প্রচার বন্ধ হলো। হাস্যমুখী একজন তরুণী (হয়তো সেও একজন SF রোবট) জানাল–
কিছুক্ষণ আগে এই শহরকে সম্মান দেখানোর জন্যে আজকের
দিনটিকে আনন্দ দিন ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ এই শহর এখন
পর্যন্ত V-305 ভাইরাস মুক্ত। আজ সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত শহরের
চন্দ্রোদ্যান সবার জন্যে উন্মুক্ত। সেখানে পানীয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
বৃহস্পতির উপগ্রহ টিটানের বিখ্যাত পানীয় ক্রেজি টিটান থাকবে।
সবাইকে পনেরো মিলিলিটারের দুটি করে বোতল দেয়া হবে। এর বেশি নয়।
মহান সঙ্গীতকার আহান আনন্দ দিবস উপলক্ষে চন্দ্রগীতি শোনাবেন,
এমনটি আমরা আশা করছি। যদিও নিশ্চিতভাবে আমরা কিছু বলতে পারছি না।
অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানানো হচ্ছে, চতুর্থ শহর সিল করে দেয়া
হয়েছে। সেই শহরবাসীদের জন্যে আমাদের গভীর সমবেদনা। আমরা
আনন্দ দিনে তাদের স্মরণ করছি।
মীন বলল, তুমি কি চন্দ্রগীতি শুনতে যাবে?
হুঁ।
ক্রেজি টিটান পানীয়টা তুমি কি আগে কখনো খেয়েছ?
দুবার খেয়েছি।
খেতে কেমন?
কুন জবাব দিল না। মীন বলল, টিটানের পানীয় শব্দটা শোনার পরপরই তোমার চোখ চকচক করা শুরু করেছে। এ থেকেই বুঝতে পারছি খেতে কেমন। আমরা SF রোবটরা এই স্বাদ কখনোই বুঝব না। সামান্য দুঃখিত বোধ করছি।
কুন বলল, কিছু দুঃখবোধ থাকা ভালো।
.
নাম এবং পিন নাম্বার দিয়ে কুন দু’টা পনেরো মিলিলিটারের বোতল পেয়েছে। মীন নিয়েছে আরো দু’টা। একজন মানুষ যা যা নিতে পারে একজন SF রোবটও পারে। তাদেরকে মানুষ থেকে আলাদা করার কোনো নিয়ম নেই।
পানীয় যে দিচ্ছে (সাধারণ s টাইপ রোবট) মীন তাকে বলল, আমার বন্ধুর স্ত্রীর জন্যে কি আমি আরো দু’টা বোতল নিতে পারি?
তিনি কোথায়?
তিনি বিশেষ কারণে আসতে পারেন নি। বিশেষ কারণ কি ব্যাখ্যা করতে
না।
আরো দু’টা বোতল পাওয়া গেল। কুন আনন্দিত গলায় বলল, মীন ধন্যবাদ।
মীন বলল, আমি আরো দু’টা বোতলের ব্যবস্থা করব। তুমি আনন্দ দিবস উদযাপন কর।
আরো দুবোতল কীভাবে পাবে?
গাধাটাইপ রোবটের সঙ্গে কিছু Tricks করব। কী Tricks তোমার না জানলেও চলবে।
কুন আবারো বলল, ধন্যবাদ। নিনিতার কথা এখন আর তার মনে আসছে। হঠাৎ মনে হচ্ছে তার জীবনটা খারাপ কাটে নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চন্দ্রগীতি শুরু হবে। পকেটে ছয় বোতল স্বর্গীয় পানীয়। এরচেয়ে বেশি একজন মানুষের আর কী-ই বা চাইবার আছে?
মহান আহান চলে এসেছেন। আজ তাঁকে বিষণ্ণ এবং অস্থির লাগছে। তিনি বিড়বিড় করে বললেন, আমার আজকের সুর চতুর্থ শহরের হতভাগ্য মানুষদের জন্যে। যদিও সেই সুর তাদেরকে স্পর্শ করবে না। এখনো গান শুরু করেন নি। সামান্য কিছু কথা, এতেই পরিবেশ বদলে গেছে। আহান তার কণ্ঠের জাদুকরী বিষাদ ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছেন। বিষাদ ক্রমেই বাড়তে থাকবে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়বে। আহান গান শুরু করেছেন।
হে চন্দ্র! তুমি আমাকে
তোমার কাছে টেনে নাও।
তোমার শীতল শরীর স্পর্শ করতে দাও।
আমি তোমার স্পর্শের বাইরে কখনো থাকব না।
তোমাকে ভিজিয়ে রাখব অশ্রুজলে।
কুনের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। মীন কুনের একটা হাত টেনে তার কোলে রাখল। কোমল গলায় বলল, তোমাদের মানুষদের প্রধান সমস্যা কী জানো? তোমাদের প্রধান সমস্যা, তোমরা গভীর আবেগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পার না। তোমাদের সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী।
তাই বুঝি?
হ্যা তাই। এবং তোমরা একটা আবেগের সঙ্গে অন্য আবেগের যোগসূত্র তৈরি করতে পারি না।
তোমরা পার?
হা পারি। তোমরা লজিক পছন্দ কর, কিন্তু লজিক ব্যবহার করতে পছন্দ কর না।
এইখানেই আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব। আমরা রোবট না।
যে জিনিস তোমরা পছন্দ কর তার চর্চা না করাটা হাস্যকর না?
আমি গান শুনছি। তুমি আমাকে বিরক্ত করছ।
মীন বলল, আমি এখন এমন একটা কথা বলব যে গান শুনতে ভালো লাগবে না। মহান আহান-সঙ্গীত আর কোনোদিনই তুমি শুনবে না।
কুন বলল, কথাটা কী?
মীন বলল, কথাটা হচ্ছে মহান আহান মনুষ্য সমাজের কেউ না। তিনি আমাদের একজন। একটি বিশেষ ধরনের SF রোবট।
কী বলছ এইসব?
তুমি যদি লজিক ব্যবহার করতে তাহলে অনেক আগেই ব্যাপারটা বুঝে ফেলতে। পৃথিবীর সব কটি শহরে আহানের মতো একজন আছে যে শহরবাসীদের মাতিয়ে রাখে। তাদের গলার ব্যাপ্তি মনুষ্য সমাজের কারোর নেই। থাকার কথাও না। তুমি লক্ষ কর নি, আহান গান করতে করতে একসময় মানুষের শ্রুতি সীমা’র বাইরে চলে যান। তখন কিন্তু তিনি থামেন না। গান গেয়েই চলেন।