কুৎসিত লাগছে। তোমাকে মাছ মাছ মনে হচ্ছে।
মাছের ঠোঁট নীল না, আমাকে মাছ মাছ কেন লাগবে?
কেন লাগবে এই উত্তর আমার কাছে নেই। আমার কাছে মাছ মাছ লাগছে।
মেয়েরা ঠোঁটে কেন রঙ লাগায় জানো?
না।
ঠোঁটকে বিশেষভাবে আলাদা করতে চায়। যেন ঠোঁটকে মনে হয় শরীরের বাইরের একটি অংশ।
আমাকে এইসব কেন শোনাচ্ছ?
তোমার অস্থিরতা কমানোর জন্যে শোনাচ্ছি।
আমার অস্থিরতা কমছে না।
মীন একটু ঝুঁকে এল কুনের দিকে। সে গলা নামিয়ে প্রায় অস্পষ্ট গলায় বলল, এই মুহূর্তে তোমার স্ত্রী আশেপাশে নেই। একজন অতি রূপবতী তোমার পাশে বসে আছে। একজন বুদ্ধিমান পুরুষ হিসেবে সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত না?
আমি বুদ্ধিমান না।
মীন হালকা গলায় বলল, তুমি বুদ্ধিমান কিনা এক্ষুনি টের পাব! আচ্ছা বলো, আগের কথাগুলি আমি ফিসফিস করে কেন বলেছি? আর কেউ পাশে নেই। ফিসফিসানি অপ্রয়োজনীয়। তারপরেও কেন ফিসফিস করে কথা বললাম?
জানি না।
অতি প্রাচীনকালে মানুষ যখন বনেজঙ্গলে ঘুরত, তখন কোনো বিপদ দেখলেই একজন আরেকজনকে ফিসফিস করে সতর্ক করত। এই ঐতিহাসিক ব্যাপারটি মানুষ তার জিনে করে নিয়ে এসেছে। এখনো কেউ যখন ফিসফিস করে, তখন পাশের জন সতর্ক হয়ে যায়। তার চিন্তাভাবনা স্থির হয়ে যায়। সময় তার কাছে থেমে যায়।
কেন এইসব আমাকে শোনাচ্ছি?
আমার প্রতি তোমাকে কৌতূহলী করার চেষ্টা করছি। আমার ধারণা সাজানো ঘটনার এটাও একটা অংশ। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তুমি আমার প্রতি কৌতূহলী হবে। হয়তো অতি ঘনিষ্ঠ কিছু সময় আমার সঙ্গে কাটাবে।
এই কাজ আমি কখনো করব না। একটা যন্ত্রকে আমি ভালোবাসব না, তাকে বিছানায় নিয়ে যাব না।
তোমার স্ত্রী এবং তুমি তোমরাও কিন্তু যন্ত্র। খুব যে নিখুঁত যন্ত্র তাও না। তোমাদের তুলনায় আমি প্রায় নিখুঁত একজন। তোমাকে ভুলানো আমার জন্যে কোনো ব্যাপারই না। পুরুষ সবচেয়ে সহজে ভোলে তার প্রশংসায়। আমি তোমার। প্রশংসা শুরু করলেই কিন্তু সিনারিও বদলে যাবে।
আমার প্রশংসা করার কিছু নেই।
স্ত্রীর প্রতি তোমার আনুগত্যকে তুমি ছোট করে দেখছ কেন? তোমার স্ত্রীও তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কাজেই তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসার কিছু তোমার মধ্যে আছে।
সেটা কী?
আমার ধারণা তোমার সারল্য। তুমি রূপবান একজন মানুষ। কিন্তু মেয়েরা পুরুষের রূপকে কখনোই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে না। তারা পুরুষের রূপকে তার দুর্বলতা ভাবে। তারা গুরুত্ব দেয় পুরুষের অনুভূতি প্রবণতাকে। যার অনুভূতি যত প্রবল সে ততই আকর্ষণীয়।
কুন বলল, আমার অনুভূতি প্রবল?
অবশ্যই। আরেকটা বিষয় বলব?
বলো।
সেন্ট্রাল কম্পিউটার সেইসব পুরুষ এবং রমণীকে সন্তান নেয়ার সুযোগ দেয় যারা শ্রেষ্ঠ। যাদের সন্তানরা আরো শ্রেষ্ঠ হবে। বলা হয়ে থাকে বিষয়টা লটারিতে ঠিক করা হয়। তা কিন্তু না।
তুমি জানলে কী করে লটারি হয় না?
লটারিতে হলে তোমরা শুরুতেই বাদ পড়তে। তোমার স্ত্রী বয়সের কারণে বাদ পড়ত।
কুন বলল, হয়তো কোনো একটা ভুল হয়েছে। বয়সের ব্যাপারটা সেন্ট্রাল কম্পিউটার খেয়াল করে নি।
সেন্ট্রাল কম্পিউটার কখনো ভুল করে না। তার সবকিছুই হিসাবের মধ্যে। এখন কি একটা দুঃসংবাদ শুনবে?
হঠাৎ দুঃসংবাদ দিতে চাচ্ছ কেন?
অন্যের দুর্ভাগ্যের কথা শুনলে নিজের দুর্ভাগ্যর যন্ত্রণা অনেকখানি কমে।
কুন বলল, দুঃসংবাদটি কী বলো।
মীন ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, চতুর্থ শহরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে V-305 ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে।
সর্বনাশ!
মীন বলল, সেই শহরের সমস্ত মানুষকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হয়তো এর মধ্যে সেই নির্দেশ কার্যকরও হয়েছে।
তুমি জানলে কীভাবে?
অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ সব SF রোবটকে জানানো হয়। চতুর্থ শহরে মেটি নয়টা SF রোবট আছে। তাদের ভাগ্যও মানুষের মতোই।
তাদেরকে কি ধ্বংস করে ফেলা হবে।
না। SF রোবট ধ্বংস করা সম্ভব না। তবে তারা সেই শহর ছেড়ে কখনো বের হতে পারবে না। তাদেরকে থাকতে হবে সিল করা শহরের ভেতরই। যদি কখনো V-305 ভাইরাস দূর করা সম্ভব হয়, তাহলেই সেই শহরে আবার বসবাস শুরু হবে। SF রোবটরা তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করবে। তবে…
কুন বিরক্ত গলায় বলল, তবে বলে থামলে কেন?
মীন বলল, এখন পর্যন্ত কোনো শহরকে ভাইরাসমুক্ত করা যায় নি। একবার ভাইরাসের আক্রমণ হওয়া মানে শহরের মৃত্যু।
কুন বলল, ভাইরাসমুক্ত করার চেষ্টা কি কখনো হয়েছে?
মীন বলল, জানি না। তবে চেষ্টা নিশ্চয়ই হয়। তা না হলে SF রোবটগুলিকে সরিয়ে আনা হতো। একটা SF রোবট তৈরি করা আর একটা আস্ত শহর তৈরি করার খরচ একই। SF রোবটের এনার্জি কনভার্টারে হিলিয়াম থ্রি পরমাণু ব্যবহার করা হয়। হিলিয়াম থ্রি আনতে হয় বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদ থেকে।
তুমি হিলিয়াম থ্রি-তে চলো?
হুঁ। তবে আমরা তোমাদের মতো খাদ্য গ্রহণ করেও এনার্জি কনভার্টারে খাদ্য থেকে এনার্জি তৈরি করতে পারি। এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তুমি কি থ্রি-ডি পর্দাটা চালু করবে? বিশেষ ঘোষণা আসার কথা।
কী ঘোষণা?
চতুর্থ শহর সিল করা হয়েছে, এই উপলক্ষে এই শহরে আনন্দ দিন ঘোষণা করা হতে পারে। এই শহর তো এখনো টিকে আছে। কাজেই আনন্দ দিন। উৎসবের দিন।