শেন বললেন, আমরা মানুষ রোবটদের হাতের গিনিপিগ। তারা নানান ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমাদের নিয়ে করছে। কেন করছে আমরা জানি না। জানার উপায়ও নেই। এখন কি বলব, সবুজ রঙের গাড়ি কেন আসে?
নিনিতা দিশাহারা চোখে তাকিয়ে আছে। পাশে বসে থাকা মানুষটা কী বলছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।
শেন বললেন, এতকিন নভেলা রডের রঙ সবুজ। এই জন্যে গাড়িটা আসে সবুজ রঙের। এক ধরনের Ritual বলতে পার। রডে তীব্র কম্পাংকের ওমিক্রন রশ্মির Pulse তৈরি করা হয়, যা ধাপে ধাপে মস্তিষ্কের সব কোষে পাঠানো হয়। অত্যন্ত কষ্টকর একটি প্রক্রিয়া, যা মৃত্যুর মতোই। কিংবা কে জানে হয়তো মৃত্যুর চেয়েও কষ্টকর।
আপনি এত কিছু জানেন কীভাবে?
এতকিন নভেলা রডের থিওরি ছাত্রজীবনে আমার আবিষ্কার। আমার নাম শেন এতকিন। এই আবিষ্কার আমার ওপরই একসময় প্রয়োগ করা হবে তা ভাবি নি। হা হা হা।
শেন হ্যান্ডশেকের জন্যে হাত বাড়িয়েছে। তার সঙ্গে হ্যান্ডশেক না করাটা হবে চূড়ান্ত অভদ্রতা। নিনিতা হাত বাড়াল।
তোমার হাত তুলার মতো নরম। আমার স্ত্রীর হাতও নরম ছিল। বলা হয়ে থাকে, যাদের হাত নরম তাদের হৃদয় হয় কঠিন। তোমার হৃদয় কি কঠিন?
জানি না।
আমি কীভাবে আমার স্ত্রীকে খুন করেছি সেই গল্প শুনতে চাও।
না।
যে-কোনো একটা বিষয় নিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে।
নিনিতা হতাশ গলায় বলল, আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি আপনার সঙ্গে কোনো বিষয়েই কোনো আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না।
মানসিক বিপর্যয় কাটানোর জন্যেই আলোচনা দরকার। আচ্ছা শোন, একটা মজার বিষয় শোন। এতর্কিন নভেলা রডের সাহায্যে তোমার সঞ্চিত স্মৃতি যদি কোনো পুরুষকে দিয়ে দেয়া যায়, তাহলে কেমন হয়? সে শারীরিকভাবে পুরুষ, অথচ সমস্ত স্মৃতি একজন মহিলার। কেমন মনে হচ্ছে?
আমার কোনো কিছুই মনে হচ্ছে না! প্লিজ চুপ করুন।
শেন উৎসাহের সঙ্গে বললেন, এতকিন নভেলা রড দিয়ে একটা পশুর স্মৃতিও মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া যায়। একটা মাকড়সার স্মৃতি তোমার ভেতর ঢুকিয়ে দিলে কেমন হবে! তুমি রূপবতী একজন তরুণী, অথচ তোমার সমস্ত স্মৃতি একটি মাকড়সার স্মৃতি। তুমি জানবে কবে তোমার জালে একটা পোকা ধরা পড়েছিল। কবে তুমি তোমার সঙ্গী একটি পুরুষ মাকড়সার সঙ্গে যৌনক্রিয়া করেছ। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা। আচ্ছা, তুমি কি মাকড়সার যৌনজীবন সম্পর্কে কিছু জানো?
নিনিতা উঠে দাঁড়াল। অর্ধ উন্মাদ এই মানুষটার সঙ্গে বসে থাকার কোনো মানে হয় না।
শেন বললেন, চলে যাচ্ছ? তোমার সঙ্গে গল্প করে বিশেষ আনন্দ পাচ্ছিলাম।
নিনিতার ঘরের বিছানা আরামদায়ক। সারারাত তার একফোঁটা ঘুমও হলো না। সে রাত কাটালো বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে। শেষরাতের দিকে তার ঝিমুনির মতো এসেছিল। তখন সে স্বপ্নে দেখল—সে মানুষ না, প্রকাণ্ড একটা মেয়ে মাকড়সা। পেটে ডিম নিয়ে দেয়াল বেয়ে হাঁটছে।
ক্রেজি টিটান
বৃহস্পতির উপগ্রহ টিটানের বিশেষ এক ধরনের গুলোর শিকড় থেকে প্রস্তুত পানীয়। বিশ্বব্রহ্মারে তিনটি সেরা পানীয়র একটি। এই পানীয় আনন্দময় মাদকতা, স্বপ্নাচ্ছন্নতা তৈরি করে। কিছু মাত্রার হেলুসিনেশনও তৈরি হয়। বলা হয়ে থাকে, ক্রেজি টিটান পানের অভিজ্ঞতা বর্ণনার অতীত।
—এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা
পৃষ্ঠা ৭০০০ (খাদ্য ও পানীয়)
বড় ধরনের দুর্ঘটনার সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। কুন মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে পারছে না। সে ভেবেই পাচ্ছে না নিনিতা কীভাবে পুনর্বাসন কেন্দ্রে উপস্থিত হলো। তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করতে পারছে না। পুনর্বাসন কেন্দ্র যোগাযোগের বাইরে। কেউ চেষ্টা করলে বড় ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তারপরেও সে শহরের মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। শহরের মেয়র (রোবট, টাইপ T3} অত্যন্ত বিনয়ী গলায় বলেছেন, পুনর্বাসন কেন্দ্র মেয়রের এলাকার বাইরে। আমি কোনো সাহায্যই করতে পারছি না। আপনার অস্থিরতা বুঝতে পারছি, তবে অস্থিরতা দূর করার ব্যবস্থা করতে না পেরে লজ্জিত বোধ করছি।
মীনকে নির্বিকার মনে হচ্ছে। সে দশ রঙের লিপস্টিক নিয়ে বসেছে। ঠোঁটে দিচ্ছে এবং মুছে ফেলছে। আয়নায় দেখছে। তার আচার-আচরণ মোটেই রোবটের মতো না। আর দশটা মেয়ের মতো। যেন এই মুহূর্তে সাজ করাটা জরুরি। বড় কোনো উৎসবে যাবার পূর্বপ্রস্তুতি।
কুন বলল, তোমার রূপচর্চায় বিঘ্ন না ঘটিয়ে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
মীন তার দিকে না তাকিয়েই বলল, হ্যাঁ।
আমি খুবই অস্থির বোধ করছি। আমার অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করতে পার?
মীন এবার তার দিকে তাকাল। স্পষ্ট গলায় বলল, না। কারণ তোমাকে অস্থির করার জন্যেই ঘটনা সাজানো হয়েছে।
তার মানে?
সবকিছুই পূর্বপরিকল্পিত।
বুঝিয়ে বলো।
তোমার স্ত্রী ঘর থেকে বের হবে। মা-কেন্দ্রে যাবে। তার ডিম্বাণু দিয়ে আসবে। পথ হারিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রে উপস্থিত হবে। সবই সাজানো।
কে সাজিয়েছে?
মূল কম্পিউটার সিডিসি।
কেন সাজিয়েছে?
এই অংশটি আমার কাছে পরিষ্কার না। তবে আমি চিন্তা করছি। কিছু বের করতে পারলেই তোমাকে বলব। আমার উপদেশ হচ্ছে—তুমি সাজানো একটি ঘটনার একজন। এখানে অস্থির হওয়া কোনো কাজের কথা না। আমি তোমার প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। এখন আমার প্রশ্নের জবাব দাও। ঠোঁটে এই নীল রঙটা তোমার কাছে কেমন লাগছে?