হুঁ।
এমন কি হতে পারে যে সে পাসটি ফেরত দেয় নি?
নিনিতা বলল, পাস রেখে দিয়ে তার লাভ কী?
রোবট বলল, লাভ কী আমি জানি না। তবে আমাদের বলা হয়েছে যে, প্রায়ই কিছু পাস হারিয়ে যাচ্ছে। হারানো পাসগুলির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
এটা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু?
নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা কোথায় যাচ্ছি?
পুনর্বাসন কেন্দ্রে। কাছেই একটি পুর্বাসন কেন্দ্র আছে। আপনাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে অপেক্ষা করাই ভালো।
নিনিতা বলল, অন্য কোথাও কি অপেক্ষা করতে পারি?
আপনি নগরীর শেষপ্রান্তে চলে এসেছেন। এখানে অপেক্ষা করার মতো জায়গা নেই।
.
পুনর্বাসন কেন্দ্র বিষয়ে নিনিতা তেমন কিছু জানে না। শুধু এইটুকু জানে জায়গাটা ভয়াবহ অপরাধীদের জন্যে আলাদা করা। এরা বাকি জীবন এখানে কাটায়।
মানুষের জন্যে মৃত্যুদণ্ড শাস্তি অনেক আগেই বাতিল হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড একমাত্র শাস্তি এমন সব অপরাধীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে আনা হয়। এতকিন নভেলা রড দিয়ে তাদের চিকিৎসা করা হয়। এই চিকিৎসায় অপরাধী সম্পূর্ণ স্মৃতিশূন্য হয়ে যায়। তাকে নতুন করে সব শিখতে হয়। জীবন শুরু হয় শিশু অবস্থা থেকে। কিছু ভাগ্যবানদের অবশ্যি নতুন স্মৃতি দিয়ে সমাজে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের সংখ্যা সীমিত।
নিনিতা পুনর্বাসন কেন্দ্রের রিসিপশনে শুকনো মুখে বসে আছে। তাকে কফি খেতে দেয়া হয়েছে। সে কফিতে চুমুক দিচ্ছে না। কফির কাপ পাশেই পড়ে আছে। রিপিসশনে বসা মেয়েটি (সেও নিশ্চয়ই রোবট বলল, ম্যাডাম, আপনি কি কোনো কারণে ভয় পাচ্ছেন?
নিনিতা বলল, না।
আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি ভয় পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কফিতে একটা চুমুকও দেন নি।
কফি খেতে ইচ্ছা করছে না।
আপনি মন থেকে ভয় দূর করুন। এখানে যারা আছে, তারা সবাই ভয়ঙ্কর অপরাধী হলেও মানসিকভাবে শিশু। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আপনাকে একটা কামর দেব। সেখানে নিজের মতো বিশ্রাম করতে পারবেন।
নিনিতা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, বিশ্রাম করতে পারব মানে কী? আমাকে কতক্ষণ এখানে থাকতে হবে?
আজ রাত এখানেই কাটাতে হবে।
তার মানে?
রোবট হাসিমুখে বলল, আপনাকে ফুড স্লিপ দিচ্ছি। টিক মার্ক দিয়ে দিন।
নিনিতা বলল, আমি আমার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই। তার পিন নাম্বার…
রোবট নিনিতাকে কথার মাঝখানেই থামিয়ে দিয়ে বলল, পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে কারোর সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায় না।
তার জানা দরকার যে আমি এখানে আছি।
ম্যাডাম, অস্থির হবেন না।
রোবট নিনিতার হাতে ফুড স্লিপ এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র বিষয়ে একটি বুকলেট ধরিয়ে দিল, যেখানে এই কেন্দ্রের জন্যে প্রযোজ্য নিয়মাবলি লেখা। নিনিতা বুকলেট খুলে দেখল না। ফুড স্লিপেও টিক মার্ক দিল না। সে চোখ-মুখ শক্ত করে বসে রইল। রোবট বলল, আগের কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আরেক কাপ কফি কি দেব ম্যাডাম?
নিনিতা জবাব দিল না। তার মুখে থুথু জমছে। থুথু ফেলার জন্যে টয়লেটে যেতে হবে। টয়লেটে যেতে ইচ্ছা করছে না। থুথু গিলে ফেলাও যাচ্ছে না।
.
পুনর্বাসন কেন্দ্রের বত্রিশ নম্বর রুম নিনিতাকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঘর ছোট, তবে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমানোর মতো বড় বিছানা। টয়লেট ঝকঝক করছে। পুরো কামরা কাঁচের তৈরি। ঘরের ভেতরে বসে বাইরে কী হচ্ছে সবই দেখা যায়। তবে বোতাম টিপে কাঁচকে অস্বচ্ছ রাখার ব্যবস্থাও আছে।
নিনিতা কোনো খাবার খেল না। বারান্দায় রাখা পেন্সিগ্লাসের চেয়ারে বসে রইল। সামনেই খোলা মাঠ। পূনর্বাসন কেন্দ্রের বন্দিরা সেখানে কয়েকটা রঙিন ফুটবল নিয়ে মাতামাতি করছে। তাদের সবার বয়সই চল্লিশের ওপর, কিন্তু এখন তারা শিশুদের মতোই হৈচৈ করছে। দুঃখজনক দৃশ্য।
হ্যালো, আমি কি তোমার পাশের চেয়ারে বসতে পারি?
নিনিতা জবাব দিল না। সে তার চেয়ার নিয়ে একটু সরে গেল। পাশের চেয়ারে কেউ বসতে চাইলে বসবে।
আমি পদার্থবিদ শেন। স্ত্রীকে হত্যার কারণে পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসতে হয়েছে। তুমি কাকে খুন করেছ, তোমার স্বামীকে?
নিনিতা বলল, আমি কাউকে খুন করি নি। দয়া করে আমাকে বিরক্ত করবেন।
শেন বললেন, আমি ভাগ্যবান, দুবছর হয়ে গেছে এখানে আছি। এখনো তারা আমার ওপর এতকিন নভেলা বড় প্রয়োগ করে নি। তবে যে-কোনো একদিন নিশ্চয়ই করবে। সবুজ রঙের একটা গাড়ি আমাকে নিয়ে যাবে। গাড়ির রঙ সবুজ কেন জানো?
নিনিতা বলল, আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী না। কেন আমাকে বিরক্ত করছেন?
আগামীকাল ভোরে কিংবা তার পরদিন ভোরে তোমার জন্যেও সবুজ রঙের গাড়ি আসতে পারে। স্বাভাবিক মানুষের মতো কথা তুমি আর নাও বলতে পার। সুযোগ পেয়েছ, সুযোগ কাজে লাগাও। কথা বলো।
নিনিতা বলল, আপনি ভুল করছেন। আমি কোনো অপরাধ করি নি। পাস হারিয়ে ফেলেছি বলে আমাকে এখানে আনা হয়েছে। আগামীকাল ভোরে আমি বাসায় চলে যাব।
শেন বললেন, পাস হারানো অতি তুচ্ছ ঘটনা। হারানো পাস কোথায় আছে সিডিসি সঙ্গে সঙ্গে জানবে। তার জন্যে তোমাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে আনতে হয় না। একটা কথা তোমাকে বলি। পুনর্বাসন কেন্দ্রে কেউ এসেছে, অথচ তার ওপর এতকিন নভেলা রড প্রয়োগ করা হয় নি এমন কখনো ঘটে নি।
নিনিতা হতভম্ব গলায় বলল, আমি কী করেছি যে আমাকে এতকিন নভেলা বড় দেয়া হবে?