নিনিতা বলল, আমি একসঙ্গে থাকতে নিষেধ করলেই আয়না মানবী শুনবে?
চার্ন বললেন, আমি ব্যবস্থা করে দেই যাতে সে শোনে। দেব?
দিন।
চার্ন নিনিতার দিকে খানিকটা ঝুঁকে এসে বললেন, তুমি আয়না মানবীকে ডেকে বলবে, তোমাকে এবং আমার স্বামীকে একসঙ্গে দেখলেই আমার ইচ্ছা করে দুজনের একজনকে খুন করে ফেলি। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আয়না মানবী জানতে চাইবে—কাকে খুন করতে ইচ্ছা করে। তখন তুমি বলবে, আমার স্বামীকে। এতেই কাজ হবে।
নিনিতা অবাক হয়ে বলল, এই সামান্য কথাতেই কাজ হবে?
চার্ন বললেন, হ্যাঁ। প্রতিটি রোবটের ভেতর কিছু আদেশ তার লজিকে ঢুকিয়ে দেয়া। সেই আদেশ বলছে, কোনো রোবটের উপস্থিতিতে একজন মানুষ অন্য মানুষের সামান্যতম ক্ষতি যেন করতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব উপস্থিত রোবটের। রোবটিকস-এর পাঁচটি আইনের এটা একটা।
নিনিতা বলল, বাকি চারটা কী?
চার্ন হাই তুলতে তুলতে বললেন, বাকি চারটা তোমার না জানলেও চলবে। তুমি তো আর রোবট না।
নিনিতা বলল, আপনি হাই তুলছেন কেন? একটা যন্ত্র কেন হাই তুলবে?
চার্ন বললেন, একজন বৃদ্ধ মানুষ বিরক্তিকর কথাবার্তা শুনলে হাই তোলেন। আমিও সে-কারণেই তুলছি। আমি একজন আয়না মানব। মানুষের মতো আচরণ আমাকে করতেই হবে।
নিনিতা উঠে দাঁড়াল। চান তার সামনের টেবিলের ড্রয়ার খুলতে খুলতে বললেন, একটা পাস নিয়ে যাও।
কিসের পাস?
মাদার পাস। হবু মাদের মন প্রফুল্ল রাখার জন্যে এই পাস দেয়া হয়। এই পাস নিয়ে সে যে-কোনো সময় যে-কোনো জায়গায় যেতে পারবে। তুমি ইচ্ছা করলে মাটির নিচে থেকে বের হয়ে সত্যিকার আকাশ দেখতে পার।
নিনিতা হাত বাড়িয়ে পাস নিল। চার্ন বললেন, এখন কি মনের ভেতরের কুয়াশার খানিকটা কেটেছে?
নিনিতা বলল, কেটেছে।
মন ভালো হয়েছে?
হয়েছে।
যতটুকু ভালো হয়েছে সেটাকে একশগুণ বাড়িয়ে দেব?
দিন।
এই পাস দুজনের। তোমার সঙ্গে তোমার স্বামী ঘুরতে পারবেন। এখন একটু কাঁদ।
নিনিতা বলল, কাঁদব কেন?
মানব সম্প্রদায়ের নিয়ম হচ্ছে, গভীর আনন্দ পেলে তারা কাঁদে। মাদার পাস পাবার পর সব মা-ই আনন্দে কাঁদে।
আমি খুব কঠিন মেয়ে, আমি কাঁদি না।
বলতে বলতেই নিনিতার চোখে পানি এসে গেল। সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, কুনের হাত ধরে সে গর্ত থেকে বের হয়েছে। সত্যি আকাশ দেখছে।
চার্ন হাসতে হাসতে বললেন, সবচেয়ে কঠিন মেয়েটি দেখছি সবচেয়ে বেশি চোখের পানি ফেলছে।
এতকিন নভেলা রড
ভয়ঙ্কর অপরাধীদের সমাজে পুনর্বাসিত করতে এই রড ব্যবহার করা হয়। এই রডের সাহায্যে অপরাধীদের সঞ্চিত স্মৃতি মুছে ফেলা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নতুন স্মৃতি দেয়া হয়। পদার্থবিদ শেন এতকিন এতকিন নভেলা রডের জনক।
—এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা
পৃষ্ঠা ৫১৭২ (আবিষ্কার ও আবিষ্কারক)
নিনিতা ঘরে ফিরছে। ঘরে না ফিরলেও চলে। তার কাছে নীল রঙের একটা মাদার পাস আছে। শহরের যে-কোনো জায়গায় সে যেতে পারে। পাসটা পিন দিয়ে গায়ে লাগিয়ে রাখার নিয়ম। নিনিতা পাস রেখেছে হাতের মুঠোয়। কিছুক্ষণ পরপরই তাকে রক্ষী রোবটদের হাতে পড়তে হচ্ছে। এরা অস্ত্রধারী, তবে তাদের ব্যবহার ভদ্র।
ম্যাডাম, পাস?
নিনিতা হাতের মুঠো খুলে পাস দেখাল।
পাসটা গায়ে লাগিয়ে রাখলে দূর থেকে দেখতে পারি। তখন আর প্রশ্নোত্তরের ঝামেলায় আপনাকে যেতে হয় না। ম্যাডাম, কোথায় যাচ্ছেন জানতে পারি?
বিশেষ কোথাও না। এমনি ঘুরছি। কারণ ছাড়া ঘুরতে কি কোনো বাধা আছে?
কোনো বাধা নেই আপনার কাছে পাস আছে।
শহরের এমন কোথাও কি যেতে পারি যেখানে মজার কিছু হচ্ছে?
ম্যাডাম, আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারছি না বলে অত্যন্ত দুঃখিত।
নিনিতা টানেল সুপারওয়েতে উঠে পড়ল। যতদূর যাওয়া যায় সে যাবে। একা একা ঘুরবে। সে চাচ্ছে কুন তার অভাব অনুভব করুক। সে ঘরে ফিরছে না। কেন? –এই ভেবে কিছুটা অস্থির হোক। নিনিতা ঠিক করল সে ঘরে ফিরবে সন্ধ্যা মিলাবার পর।
ম্যাডাম, আপনার পাস?
নিনিতা হাতের মুঠো খুলল। আশ্চর্য তো, সেখানে পাস নেই। হ্যান্ডব্যাগে কি রেখেছে? অতি ব্যস্ত ভঙ্গিতে নিনিতা হ্যান্ডব্যাগ খুলল। সেখানেও পাস নেই।
অস্ত্রধারী রোবট শান্ত গলায় বলল, পাস সবসময় গায়ের সঙ্গে এমনভাবে লাগিয়ে রাখা উচিত যেন দূর থেকে দেখা যায়।
নিনিতা বিড়বিড় করে বলল, ভুল হয়েছে।
আপনি কি পাসটি খুঁজে পাচ্ছেন না?
না। মনে হয় কোথাও পড়ে গেছে। বিশ্বাস করুন, আমার সঙ্গে পাস ছিল। মাদার পাস।
রোবট বলল, আপনার সঙ্গে পাস ছিল তা আমি অবিশ্বাস করছি না। পাস ছাড়া আপনি এতদূর আসতে পারতেন না। তার আগেই আপনাকে আটকে দিত।
এখন আমি কী করব?
আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। আমরা পাস খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। খুঁজে না পাওয়া গেলে কম্পিউটার সিডিসিকে জানানো হবে। কী করণীয় সেই ব্যাখ্যা সিডিসি দেবে। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য বিকল্প নেই।
কোথায় অপেক্ষা করব?
আসুন আমার সঙ্গে।
নিনিতা রোবটের পেছনে পেছনে যাচ্ছে। সে যথেষ্টই চিন্তিত বোধ করছে। সে যে এখন কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করবে সে উপায় নেই। যারা ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়, তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম পাস।
ম্যাডাম, সর্বশেষ যে রোবট আপনার পাস দেখতে চেয়েছে, সে কি পাস দেখার পর আপনাকে ফেরত দিয়েছিল?