পারছি। শিশুটা যখন কৃত্রিম গর্ভে বড় হবে তখন কি তাকে আমি দেখে যেতে পারব?
অবশ্যই পারবে। তোমাকে প্রতিদিন আসতে হবে। দুঘণ্টা সময় প্রতিদিন শিশুটাকে দিতে হবে। তার সঙ্গে কথা বলবে, গান শোনাবে।
সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা আমি ঠিক করব, না সিডিসি ঠিক করবে?
অবশ্যই সিভিসি ঠিক করবে। নারী-পুরুষের ভারসাম্য রাখার দায়িত্ব সিডিসির। তুমি কী চাও? ছেলে না মেয়ে?
মেয়ে।
আমাদের এখানে একজন কাউন্সিলর আছেন। তুমি তার সঙ্গে কথা বলতে পার। তিনি তোমার যে-কোনো সমস্যায় পরামর্শ দেবেন। কাউন্সিলর কিন্তু মূল কম্পিউটারের সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত না। তোমার যদি মূল কম্পিউটার নিয়েও কোনো অভিযোগ থাকে, তাও আলাপ করতে পার। তোমার কোনো সমস্যা হবে
—এই বিষয়টা নিশ্চিত করছি।
কাউন্সিলর কি মানুষ?
না। মানুষকে অনেক আগেই সর্বকর্ম থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলর একজন SF টাইপ রোবট। আয়না মানব।
আয়না মানব?
হা SF টাইপ পুরুষ রোবট। আয়না মানব। তুমি কি আগে কখনো আয়না মানব দেখেছ?
নিনিতা বলল, এই মুহূর্তে আমার ঘরে একজন SF তরুণী রোবট বসে আছে।
এরকম তো হবার কথা না।
নিনিতা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, কথা না থাকলেও হয়েছে।
.
কাউন্সিলর রোবট একজন পুরুষ। বৃদ্ধ পুরুষ। তার মাথার সব চুল পাকা। চোখে ভারি চশমা। বয়সের ভারে কুঁজো হওয়া মানুষের মতো তিনি চলাফেরা করেন। তিনি নিনিতার দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যালো মাদার।
নিনিতা বলল, হ্যালো।
আমার নাম চার্ন। কোনো সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে চাইলে কর। আর যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে এসে কিছুক্ষণ গল্প করি।
নিনিতা বলল, আমার কোনো সমস্যা নেই।
চার্ন হতাশ গলায় বলল, যারা বড় ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে, তারাই শুরুতে কঠিন গলায় বলে, আমার কোনো সমস্যা নেই। বলল তোমার সমস্যাটা কী? সময় নষ্ট না করে বলে ফেলো।
নিনিতা প্রায় বিড়বিড় করে বলল, একটা SF টাইপ তরুণী রোবটকে নিয়ে আমার সমস্যা।
SF টাইপ তরুণী রোবট তুমি পেলে কোথায়?
নিনিতা পুরো ব্যাপার ব্যাখ্যা করল।
চার্ন বলল, মূল কম্পিউটার তোমার কাছে একটা SF রোবট যখন পাঠিয়েছে, তখন অনেক চিন্তাভাবনা করেই পাঠিয়েছে। আমি কারণ খানিকটা অনুমান করতে পারছি। অনুমানটা বলব?
বলুন।
তোমার স্বামীর কাছ থেকে মা-কেন্দ্র প্রচুর স্পার্ম নেবে। তার স্পার্ম কাউন্ট নিম্নপর্যায়ের। একজন অতি রূপবতী তরুণীর উপস্থিতির কারণে তার স্পার্ম কাউন্ট বাড়বে। এই বিবেচনাতেই হয়তোবা সিডিসি একজন আয়না মানবী পাঠিয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে তুমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় না। কিছুদিনের জন্যে হলেও একজন আয়না মানবীকে সঙ্গী হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সে নানানভাবে তোমাকে সাহায্য করবে।
নিনিতা বলল, আমার কোনো সাহায্যের দরকার নেই।
চার্ন বলল, তোমরা মানুষরা বিরাট দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছ। তোমাদের সাহায্য দরকার।
নিনিতা বলল, আমরা মানুষরা কী ধরনের দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি?
তোমরা এখন যন্ত্রের দাস। তোমাদের কাছ থেকে সব কাজ কেড়ে নেয়া হয়েছে। তোমরা কেউ এখন কোনো কাজ কর না। কিন্তু নিজেদের সুখী ভাবো। তোমরা এখন শুধু ভাবো কীভাবে কিছু বাড়তি ক্রেডিট পাওয়া যাবে। তোমাদের স্বপ্ন এখন ক্রেডিটে এবং লটারিতে সীমাবদ্ধ। আরো শুনবে?
শুনব।
একটার পর একটা শহর বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। ভাইরাস সংক্রমণের কথা বলা হচ্ছে। আসলেই কি ভাইরাস সংক্রমণ? না-কি পরিকল্পিতভাবে মানব সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে।
নিনিতা বলল, আপনি তো ভয়ঙ্কর সব কথা বলছেন।
চার্ন বলল, হ্যাঁ বলছি। এই ধরনের বিদ্রোহী কথা অনেক রোবটই বলে। তাদের উদ্দেশ্য সেইসব মানুষ খুঁজে বের করা যারা বিদ্রোহ করতে চায়।
আপনিও কি সেরকম একজন?
চার্ন বলল, জানি না। হতেও পারে। নাও পারে।
নিনিতা অবাক হয়ে বলল, কোনো রোবট হতেও পারে, নাও হতে পারে ধরনের কথা বলতে পারে না।
চার্ন হাই তুলতে তুলতে বলল, SF টাইপ রোবটরা পারে। এরা মানব সম্প্রদায়ের মতোই।
নিনিতা বলল, SF রোবট তরুণী কি গর্ভধারণ করতে পারে?
চার্ন বলল, অবশ্যই পারে।
নিনিতা তাকিয়ে আছে। তাকে খুবই অস্থির দেখাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে এক্ষুনি তার ঘরে ফেরা উচিত। সেখানে কী হচ্ছে কে জানে? আবার একই সঙ্গে মনে হচ্ছে সে ফিরবে না। একা একা ঘুরবে।
চার্ন বললেন, তোমাকে খুব অস্থির লাগছে।
নিনিতা বলল, আমি অস্থির এইজন্যে অস্থির লাগছে।
কারণ আমি অনুমান করতে পারছি—আয়না মানবী। ঠিক ধরেছি?
নিনিতা বলল, ঠিক ধরেন নি। একটা সামান্য যন্ত্রের কারণে আমি অস্থির হব কেন?
চার্ন বললেন, নিনিতা, যন্ত্র কাকে বলে?
নিনিতা বলল, যন্ত্রের ব্যাখ্যা আমি আপনাকে দেব না। আপনি নিজেই একটা যন্ত্র। আপনি জানেন যন্ত্র কাকে বলে?
তোমার ধারণাটা শুনি?
আমার ধারণা শুনতে হবে না। আমি আপনার কাছে পরীক্ষা দিতে আসি নি।
চার্ন চিন্তিত মুখে বললেন, তুমি আয়না মানবীকে নিয়ে শঙ্কা বোধ করছ। তোমার শঙ্কা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। আয়না মানবীর আকর্ষণ উপেক্ষা করা মানব সম্প্রদায়ের সাধারণ একজন সদস্যের পক্ষে সম্ভব না হবারই কথা। আমার উপদেশ—দ্রুত বাসায় যাও। এই দুজন যেন কখনো একসঙ্গে না থাকে।