তুমি বিরাট ভুল করেছ মবিনুর রহমান। এই পৃথিবীতে দীর্ঘদিন পর পর একজন নি আসে। তুমি এসেছ। কল্পনাতীত ক্ষমতা তোমাকে দেয়া হয়েছে। এই ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না।
আমি কথা বলতে চাচ্ছি না।
রূপাকে তোমার প্রয়োজন নেই।
কে বলল প্রয়োজন নেই।
আমরা বলছি।
তোমরা বললে তো হবে না। আমার প্রয়োজন আমি বুঝব। আমি এই মেয়েটিকে আমার জগতেই তৈরি করব।
মবিনুর রহমান।
আমাকে ডাকাডাকি করে কোনো লাভ হবে না। আমি আমার প্রচণ্ড ক্ষমতা অনুভব করছি। প্রতিটি রক্ত কণিকায় অনুভব করছি। আমি সেই ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করব।
মবিনুর রহমান কিছুক্ষণের জন্যে বাস্তবে ফিরে এলেন। কালিপদ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
কালিপদ!
জি।
একটু বাইরে গিয়ে দেখ তো নৌকায় কি কাউকে দেখা যায়?
কালিপদ ঘর থেকে বের হয়ে চমকে উঠল। সে ছুটে নদীর কাছে এলো। নদী ভাঙতে শুরু করেছে। ভয়ঙ্কর গর্জন হচ্ছে নদীতে। নৌকা দুলছে কাগজের নৌকার মতো। আশ্চর্য ব্যাপার, নৌকার ভেতর কাকে যেন দেখা যায়। কালিপদ বলল, কে কে? কেউ জবাব দিল না। কিন্তু কালিপদ স্পষ্ট শুনল কেউ-একজন যেন গুনগুন করে গান গাইছে। মিষ্টি মেয়েগলা।
কালিপদ আবার ডাকল–কে? নৌকার ভেতরে কে? আশ্চৰ্য, কথা বলে না। মানুষটা কে?
মবিনুর রহমান বের হয়ে এলেন। কালিপদের দিকে তাকিয়ে বললেন–তুমি চলে যাও কালিপদ। এক্ষুণি যাও। এক্ষুণি।
মবিনুর রহমানের গলায় এমন কিছু ছিল যে কালিপদ ভয় পেয়ে ছুটে চলে গেল। সে দৌড়াতে দৌড়াতে যাচ্ছে। একবারও পেছন ফিরে তাকাচ্ছে না।
নদী ভাঙতে ভাঙতে এগুচ্ছে মবিনুর রহমানের দিকে। তিনি তা দেখেও দেখছেন না। মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন। তাকিয়ে আছেন নৌকার দিকে। আকাশ ঘন কৃষ্ণবর্ণ। মেঘেব পর মেঘা জমছে। ভয়াবহ দুর্যোগের আর দেরি নেই। মবিনুর বহমান উঁচু গলায় ডাকলেন–রূপা, রূপা! নৌকার ভেতব থেকে কাচের চুড়িব শব্দ হচ্ছে। নীল শাড়ির আভাস খানিকটা পাওয়া গেল। ফর্সা চুড়ি পরা হাত এক পলকের জন্যে বের হয়ে এলো। মবিনুর রহমান চোখ বন্ধ করে আছেন। তিনি তাঁর পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করবেন।
তিনি জানেন প্রকৃতি এই অনিয়ম সহ্য করবে না। নদী কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে গ্ৰাস করবে। তিনি আবার ডাকলেন–রূপা, রূপা!
রূপা নৌকাব ভেতর থেকে বের হয়ে এলো।
তিনি কোমল গলায় বললেন, কেমন আছ রূপা?
রূপা বলল, স্যার আমার ভীষণ ভয় লাগছে।
নদী এগুচ্ছে। নদীব জল ফুলেফেপে উঠছে। মবিনুর বহমান দাঁড়িয়ে আছেন।
রূপা আবার বলল, স্যার আমার ভয় লাগছে। খুব ভয় পাচ্ছি স্যার।
মবিনুর রহমান হাসলেন। তাঁর পায়ের নিচের মাটি কাঁপছে। প্রকৃতি আর তাঁকে সময় দেবে না। তাতে কিছু যায় আসে না। তিনি হাসিমুখে রূপার দিকে তাকিয়ে আছেন।