মবিনুব রহমান।
জি।
মবিনুর রহমান।
জি।
মবিনুর রহমান।
আমি তো জবাব দিচ্ছি। বারবাব ডাকছেন কেন?
কী বলছি শুনতে পাচ্ছ?
পাচ্ছি।
আমরা কে মনে আছে?
আপনারা ‘নি’।
হ্যাঁ, তোমার মনে আছে। তুমিও একজন ‘নি’।
বুঝিয়ে বলুন।
সবকিছু বুঝিয়ে বলা যায় না।
চেষ্টা করুন।
তুমি স্বপ্ন দেখতে পাব।
স্বপ্ন সবাই দেখে।
তোমার স্বপ্ন আব্ব অন্যদেব স্বপ্ন এক নয়। অন্যদের স্বপ্ন স্বপ্নই। তোমার স্বপ্ন স্বপ্ন নয়। তুমি যা স্বপ্ন দেখবে তাই হবে।
বুঝতে পারছি না।
মানুষ পৃথিবীতে এসেছে ছয়চল্লিশটি ক্রমোজম নিয়ে। তোমার ক্রমোজম সংখ্যা সাতচল্লি যারা ‘নি’ শুধু তারাই এই বাড়তি ক্রমোজম নিয়ে আসে।
বাড়তি ক্ৰমোজমটির কাজ কী?
বাড়তি ক্ৰমোজমটির জন্যেই তুমি স্বপ্নকে মুক্ত করতে পোর। কী অসীম তোমার ক্ষমতা তা তুমি জানো না, ক্ষুদ্র অর্থে তুমি স্রষ্টা।
সব মানুষই স্রষ্টা। সৃষ্টি করাই মানুষের কাজ।
তোমার সৃষ্টির ক্ষমতা অসাধারণ।
অসাধারণ?
হ্যাঁ অসাধারণ। নিদের জন্ম হয়েছে স্বপ্ন দেখার জন্যে। তারা স্বপ্ন দেখে–নতুন সৃষ্টি হয়। প্রকৃতি তাই চায়।
একদিকে সৃষ্টি মানেই অন্যদিকে ধ্বংস।
হ্যাঁ তাই ঠিক। প্রকৃতি তাই চায়। প্রকৃতি চায়। তার জগতে ক্ৰমাগত ভাঙাগড়াব খেলা চলুক।
কিছুই বুঝতে পারছি না।
তোমার কি মনে আছে তুমি একবার চিন্বজ্যোৎস্নাব একটি জগতেব কথা চিন্তা কবেছিলে, মনে আছে?
আছে।
সেই জগৎ তৈরি হয়েছে। অপূর্ব সেই জগৎ।
আমি কি সেই জগৎ দেখতে পাবি?
হ্যাঁ পাব। তবে কল্পনায়। তোমার পৃথিবী যে মাত্রায় আছে, তোমার জগৎ সেই মাত্রার নয়।
আমি কি আমার পৃথিবীতে কিছু সৃষ্টি করতে পারি?
পার। তবে ‘নি’দের সাবধান করে দেয়া হয় যেন এই কাজটি তারা না কবে।
অসুবিধা কী?
এতে প্রাকৃতিক নিয়মে অসুবিধা দেখা দেয়। প্রকৃতি তার আইনের ব্যতিক্রম সহ্য করে না। আইন অমান্যকারীকে প্রকৃতি কঠিন শাস্তি দেয়।
আমি এই পৃথিবীতেই কিছু একটা সৃষ্টি করে দেখতে চাই প্রকৃতি আমাকে কীভাবে শাস্তি দেয়।
প্রকৃতির শান্তি ভয়াবহ। আমরা তোমাকে সাবধান করবার জন্যেই আজ এসেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার ইচ্ছা হবে প্রকৃতির নিয়ম ভাঙতে। সেটি যেন না হয় তাই বলতেই আমাদের আসা। তুমি তোমার কাজ কর। তোমার অসীম ক্ষমতা ব্যবহার কর।
আপনারা চলে যান। আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না।
আমরা চলে যাব। তোমাকে সাবধান করেই চলে যাব।
আমার প্রয়োজনে আবার কি আপনাদেব সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি?
হ্যাঁ পার।
ধন্যবাদ। এখন যান।
তুমি যে এখন এক সাময়িক অসুবিধাব মধ্যে আছ তা নিয়ে কি তুমি আলাপ করতে চাও?
হাজতবাসেব কথা বলছেন?
হ্যাঁ।
না। এটা কোনো সমস্যা নয়।
‘নি’দের যাবতীয় সমস্যা থেকে দূরে রাখার সব ব্যবস্থা প্রকৃতি করে রাখে। তোমার বেলাতেও তা করে রেখেছে। তুমি যখন যেখানে ছিলে সেখানেই তোমার পাশে রাখা হয়েছে দুজন করে অসাধারণ মানসিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ, যারা মানসিকভাবে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে। ‘নি’রা প্রকৃতির প্রিয় সন্তান।
বুঝতে পারছি না।
নীলগঞ্জে তোমার দুজন সাহায্যকারী আছে। একজন কালিপদ, অন্যজন জালালুদ্দিন। এদের মানসিক ক্ষমতা অসাধারণ। তারা সব রকম বিপদে তোমাকে সাহায্য করবে। যদিও তারা তা জানে না। তোমাকে সাহায্য করার জন্যে আরো একজন সাহায্যকারীকে আনা হয়েছে। তার নাম জেবা। জেবাও তোমাকে সাহায্য করছে। ‘নি’ প্রকৃতির বিশেষ সৃষ্টি। এদের বক্ষা করার সব রকম দায়িত্ব প্রকৃতি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে।
এইসব শুনতে আমার ভালো লাগছে না। ঘুম পাচ্ছে, আমাকে ঘুমুতে দিন।
স্বপ্ন ঝাপসা হয়ে গেল। মবিনুর রহমান গাঢ় ঘুমে তলিয়ে গেলেন। আরেকটি স্বপ্ন দেখলেন। সেই স্বপ্ন অপূর্ব ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ছে আকাশে। তাদের কলকাকলিতে চারদিক মুখরিত। তারা এক আনন্দময় সঙ্গীত সৃষ্টি করছে। আলো আঁধারী এক জগতে তাদের সঙ্গীত মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
হেড মাস্টার সাহেবেব গরুর জন্যে জাবনা তৈরি করা হচ্ছে। কালিপদ মাথা নিচু করে কাজটা করছে। হেড মাস্টার সাহেব পাশে এসে দাঁড়ালেন। তার চোখে-মুখে চিন্তিত ভাব। মবিনুর রহমানের গমের ব্যাপারটা এত দূর গড়াবে তা তিনি ভাবেন নি। এ তো বড়ই যন্ত্রণা হলো।
হেড মাস্টার সাহেব বললেন, গরু কিছু মুখে দিচ্ছে না, ব্যাপার কী কালিপদ?
কালিপদ চোখ তুলে তাকাল। চোখ নামিয়ে নিল না। তাকিয়েই রইল। এ রকম সে কখনো করে না। হেড মাস্টাব সাহেব অকারণেই খানিকটা অস্বস্তিবোধ করতে লাগলেন। প্রথম প্রশ্নটি দ্বিতীয়বার করলেন, গরু কিছু মুখে দিচ্ছে না, ব্যাপার কী কালিপদ?
কালিপদ বলল, সেইটা গরুরে জিজ্ঞেস করেন।
হেড মাস্টাব সাহেব হতভম্ব হয়ে গেলেন। হারামজাদার এত বড় সাহস! কী কথা বলছে? তারপরেও তাকিয়ে আছে। চোখ নামিয়ে নিচ্ছে না। জুতিয়ে হারামজাদার গাল ভেঙে দেওয়া দরকার।
কী বললা কালিপদ?
বললাম, গরু কেন খায় না সেইটা গরুরে জিজ্ঞাসা করেন। আমি গরুর ডাক্তার না।
তোমার সাহস অনেক বেশি হয়ে গেছে। তুমি কী বলছ তুমি নিজেও জানো না।
কালিপদ এইবার চোখ নামিয়ে নিয়ে ক্ষীণ গলায় বলল, আমার মাথার ঠিক নাই। নিরপরাধ একটা মানুষরে কোমরে দড়ি বাইন্দা নিয়া গেছে। আমার মাথার ঠিক নাই। কি বলতে কি বলছি, মনে কিছু নিয়েন না।
নিরপরাধ বলছি কেন? তুমি কি জানো না সে একটা মেয়ের সর্বনাশ করেছে? মেয়ের নাম সাবিহা।