এটা নিয়েই ভাবি। বিগ বেংগের আগে কী ছিল? অনন্ত শূন্য ছিল? যদি তাই থাকে তাহলে তো বিগ বেংগ-এর ফলে ইউনিভার্স সৃষ্টি হতে পারে না।
অসুবিধা কোথায়?
তাহলে ধরে নিতে হবে থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র কাজ করছে না। তা তো হয় না। প্রকৃতি তার নিজের নিয়ম কখনো ভঙ্গ করে না।
আপনি তা কী করে জানেন?
কেন জানব না? আমিও তো প্রকৃতিরই অংশ।
আপনার দুরবিনটা কি খুব ভালো দুরবিন?
জি। শনি গ্রহের বলয় পরিষ্কার দেখা যায়। এক রাতে সময় করে আসুন। আপনাকে 6थींद।
এখানে আসতে খুব ভরসা পাচ্ছি না। বাড়ির যা অবস্থা। যে কোনো মুহৰ্তে ছাদ মাথার উপর ভেঙে পড়বে বলে মনে হচ্ছে–তাছাড়া আমার কেন জানি মনে হচ্ছে। এ বাড়িতে বিষাক্ত সাপ আছে। ভাঙা বাড়ি সাপদের খুব প্রিয়।
মবিনুর রহমান সহজ গলায় বললেন, সাপ আছে ঠিকই। দুটো চন্দ্রবোড়া সাপ পাশের ঘরে থাকে।
সাপ আপনি টেনেন? চন্দ্ৰবোড়া বুঝলেন কী করে?
অনুমানে বলছি। সব সাপ ডিম দেয়। এই সাপটা সরাসরি বাচ্চা দিয়েছে। একমাত্র চন্দ্রবোড়াই সরাসরি বাচ্চা দেয়। একত্ৰিশটা বাচ্চা দিয়েছে।
বসে বসে গুনেছেন?
জি না। একদিন বারান্দায় বসে ছিলাম। দেখলাম, সাপটা বাচ্চাগুলি নিয়ে বের হয়েছে। তখন গুনলাম।
একত্ৰিশটা সাপের বাচ্চা এবং দুটা সাপ নিয়ে বাস করতে আপনার ভয় লাগে না?
একটু লাগে। রাতে আমি ঘরে থাকি না। নৌকায় ঘুমাই। তবে আমার মনে হয় ভয়ের কিছু নেই। আমরা সহাবস্থান নীতি গ্ৰহণ করেছি। আমি ওদের কিছু বলি না। ওরাও আমাকে কিছু বলে না। ওরা আমার গায়ের গন্ধ চেনে। আমিও ওদের গায়ের গন্ধ চিনি। আগেভাগেই সাবধান হয়ে যাই।
চা তৈরি হয়ে গেছে। মবিনুর রহমান ফ্রাঙ্ক এনে দিলেন। ফ্লাঙ্ক-ভর্তি চা নিয়ে তিনি নৌকায় রাত্রিযাপন করেন। তিনি লজ্জিত গলায় বললেন, খাবার-দাবার তো কিছু নেই রূপা। মুড়ি আছে। মুড়ি নিয়ে যাবে?
হ্যাঁ নিয়ে যাব। আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে।
রূপা, তানভিরকে নিয়ে নৌকায় উঠে খুশি খুশি গলায় বলল, সুন্দর না?
তানভির বলল, অবশ্যই সুন্দর। নৌকায় বসে চা খাওয়ার এই আইডিয়া অসাধারণ আইডিয়া। আমরা রোজ এখানে আসব। নৌকা চালানো শিখে নেব।
নদীতে কিন্তু খুব স্রোত।
হোক স্রোত। স্রোত কোনো সমস্যা না।
গুড়ের চা কেমন লাগছে?
অসাধারণ লাগছে। এই পরিবেশে সবকিছুই অসাধারণ লাগে।
আমার স্যারকে আপনার কেমন লাগল?
ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার। তবে এই জাতীয় ক্যারেক্টর আমি আগেও দেখেছি। এরা কিছুটা অদ্ভুত। তবে যতটা না অদ্ভুত মানুষের কাছে তারা নিজেদের তার চেয়েও অদ্ভুত করে তুলে ধরে।
রূপা বলল, স্যার সম্পর্কে আমি আপনাকে খুব-একটা গোপন কথা বলতে পারি। বলব?
বলো!
কাউকে কিন্তু বলতে পারবেন না। অসম্ভব গোপন ব্যথা, পৃথিবীব কেউ জানে না। আমি কাউকে বলি নি। শুধু আপনাকে বলব, তবে কথা দিতে হবে আপনি কাউকে বলবেন না।
অবশ্যই আমি কাউকে বলব না।
কথাটা কী জানেন? স্যারকে আমি পাগলের মতো পছন্দ করি। সব সময় আমি উনার কথা ভাবি। রাতের পর রাত আমি ঘুমোতে পারি না। আমি ঠিক করেছি যেভাবেই হোক তাকে বিয়ে কবব। বাকি জীবন কাটিয়ে দেব তার সেবা করে।
তানভির অবাক হয়ে রূপার দিকে তকয়ে রইল। তার চোখ হয়েছে মাছের চোখের মতো। চোখে পলক পড়ছে না।
রাতের খাবার দেয়া হয়েছে
রাতের খাবার দেয়া হয়েছে।
রূপা বলল, আমি আগে আগে খোশ, নেব। আমার ভীষণ ক্ষিধে পেয়েছে। মিনু বলল, তুমি আমার সঙ্গে খাবে রূপা। সেকেন্ড ব্যাচে।
ভাবি তুমি তো খাও থার্ড ব্যাচে। রাত এগারোটা বাজে খেতে খেতে।
আজ তুমিও রাত এগারোটায় খাবে। এসো আমার ঘরে। তোমার সঙ্গে খুব জরুরি কিছু কথা আছে।
ক্ষিধেয় তো মরে যাচ্ছি ভাবি।
মিনু গম্ভীর গলায় বলল, মানুষ এত সহজে মরে না রূপা।
রূপা মিনুর ঘরে ঢুকল। ভাবি কী বলবেন তা সে আঁচ করতে পারছে। তানভিব সব কিছুই প্ৰকাশ করেছে। সে নিশ্চয় জনে জনে বলে নি। প্রথমে বলেছে ভাইয়াকে, সেখান থেকে শুনেছে ভাবি, ভাবির কাছ থেকে শুনেছে মা। মার কাছ থেকে বাবা। সবাই অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকে দেখছে। বাবা তখন থেকে বাবান্দায় বসে আছেন। বাবার এমন গম্ভীর মুখ সে এর আগে কখনো দেখে নি।
মিনু ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। রূপা বলল, দরজা বন্ধ করছ, কেন ভাবি?
তোমার সঙ্গে যে-বিষয় নিয়ে কথা বলব আমি চাই না তা কেউ শুনুক, এই জন্যেই দরজা বন্ধ করছি। তুমি পা তুলে আরাম করে বিছানায় বস।
রূপা তাই করল। মিনু বলল, তুমি তানভির সাহেবকে কী বলেছ?
অনেক কিছুই তো বলেছি। তুমি কোনটা জানতে চাচ্ছি?
অনেক কিছু মানে কী?
অনেক কিছু মানে অনেক কিছু। আমি প্রচুর বকবক করেছি।!
তুমি যে প্রচুর বকবক করেছ তা বুঝতে পারছি। বকবক করতে গিযে ভয়ঙ্কর সব কথা বলেছ।
আমি কোনো ভয়ঙ্কর কথা বলি নি।
অবশ্যই বলেছি–তুমি কি বলে নি যে ঘাটের মরা ঐ বুড়ো মাস্টার সাহেবের প্রেমে তুমি হাবুড়ুবু খাচ্ছ?
বলেছি।
মিনু ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি জানি তুমি ঠাট্টা করে বলেছ। আমিও তানভিব সাহেবকে তাই বললাম। কিন্তু রূপা এই জাতীয় ঠাট্টা কবা কী উচিত? তানভির সাহেব বুদ্ধিমান মানুষ। তাকে যখন বলেছি–রূপা, ঠাট্টা করেছে, তিনি একসেপ্ট করেছেন। অন্য কেউ তো তা কববে না।
রূপা বলল, তোমাদের তানভিব সাহেব মোটেই বুদ্ধিমান নন। বুদ্ধিমান হলে তিনি বুঝতে পারতেন আমি তাঁর সঙ্গে মোটেই ঠাট্টা করি নি।