উম্মে কুলসুম লজ্জা পেয়ে বলল, তা আবার ভাবি নি। তাকে খুশী রাখার জন্যই তো তোমার কাছে সব সময় রয়েছি। আমাদের কথা বাদ দাও, তাসনিম আপার ব্যাপারে কিছু বললে না তো? কাল সকালে কী তাকে আসতে বলব?
সে কথা কাল বলব। এখন যা ঘুমিয়ে পড়। রাত জেগে জেগে তুই অনেক রোগা হয়ে গেছিস।
উম্মে কুলসুম ঘুমিয়ে পড়ার পর সাড়ে বারটার সময় আব্দুস সাত্তার তাসনিমকে ফোন করল।
রাতে খাওয়ার পর সায়মা আপুকে বলল, মনে হয়, উম্মে কুলসুম আজই তার ছোট ভাইয়াকে সবকিছু বলবে এবং কাল সকালে আমাদেরকে ফোন করে জানাবে।
তাসনিম বলল, আমারও তাই মনে হচ্ছে। তারপর তাকে শুতে দেখে বলল, কী রে? এক্ষুনি ঘুমাবি? আজ হাদিসের একটা বই পড়বি বলেছিলি না?
আজ ঘুম পাচ্ছে, কাল পড়ব বলে পাশ ফিরে শুল।
তাসনিম বড় লাইট অফ করে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে একটা বই নিয়ে বসল। কিন্তু পড়ায় মন দিতে পারল না। কেবল আব্দুস সাত্তারের মলিন মুখটা বই এর পাতায় ভেসে উঠতে লাগল। ভাবল, উম্মে কুলসুমের কাছে সবকিছু শোনার পর। কী তার মনের পরিবর্তন হবে? আমাকে কী ক্ষমা করবে? আবার ভাবল, উম্মে কুলসুম যদি ফোন করে যেতে বলে, তা হলে কোন মুখে তার সামনে গিয়ে। দাঁড়াব? সত্য মিথ্যা যাচাই না করে তাকে কি জঘন্য ভাষায় অপমান করেছি। তারপরও কী সে আমাকে ক্ষমা করতে পারবে? ক্ষমা করলেও কী আগের মতো ভালবাসবে? আমিও কি আগের মতো তার কাছে ফ্রি হতে পারব? এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সাড়ে বারটা বেজে গেল টের পেল না। ফোন বেজে উঠতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবল, নিশ্চয় ও ফোন করেছে। কাঁপা হাতে রিসিভার তুলে কানের কাছে নিতে আব্দুস সাত্তারের সালাম শুনে চোখে পানি এসে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সামলে নিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে ভিজে গলায় বলল, তোমার এই নাদান তাসনিম ক্ষমাপ্রার্থী। বল ক্ষমা করে দিয়েছ?
কথাগুলো আব্দুস সাত্তারের কানে কান্নার মতো শোনাল। বলল, ক্ষমা চাইছ কেন? তুমি যে ভুল করেছ, এতদিন তোমার সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে তার থেকে কম ভুল আমিও করি নি। তা হলে তো তোমার কাছে আমারও ক্ষমা চাওয়া উচিত। অবশ্য কাউকে দিয়ে চিঠি বা টেলিগ্রাম করে জানাতে পারতাম, তুমি। দুশ্চিন্তা করবে ভেবে জানাই নি। আর যাওয়ার দিন আমার যাওয়ার কথা ছিল না, পরের দিন ছিল। এয়ারপোর্টে সবাইকে যখন গাড়িতে তুলে দিলাম তখন ছোট বোনের স্বামী কিছুতেই ছাড়ল না। ও আবার আমার ছেলেবেলার বন্ধু। তাই তোমাকে ফোন করে জানাবারও সুযোগ পাই নি। ভেবেছিলাম, উম্মে কুলসুমের বিয়ের অনুষ্ঠানের পরের দিন চলে আসব। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তা ছিল না। তাই এত কিছু ঘটে গেল।
তাসনিম কান্নাজড়িত স্বরে বলল, এতকিছু বলার দরকার ছিল না। আমি জানি, তুমি এতটুকু ভুল বা অন্যায় করতে পার না। তবু যে কেন তোমার বিয়ের কথা শুনে আমি এ্যাবনরম্যাল হয়ে পড়লাম, তা আল্লাহ জানেন। কাল ফোনে তোমাকে যেভাবে অপমান করেছি, সে কথা মনে পড়লে মরে যেতে ইচ্ছা করছে। তুমি ক্ষমা না করলে, আমাকে সেই পথ বেছে নিতে হবে।
এ তুমি কী বলছ তাসনিমঃ বেহেস্তের সোনালী ঝরণা নাম নিয়ে তুমি জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে চাচ্ছ? এক্ষুনি তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও বলছি। নচেৎ …….কথাটা শেষ করতে পারল না। কান্নায় তার গলা বুজে এল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সামলে নিয়ে আবার বলল, বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, কাল তোমার কথা শুনে খুব আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম ঠিক, কিন্তু তোমার প্রতি ভালবাসা এক বিন্দু কমে নি। এরপরও যদি তুমি ক্ষমা করার কথা শুনতে চাও, তা হলে তোমাকেই আগে বলতে হবে, আমাকে ক্ষমা করেছ।
তাসনিম এতক্ষণ মনে মনে তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তার কথা শুনছিল। আব্দুস সাত্তার থেমে যেতে বলল, আল্লাহ আমাদের দু’জনকেই ক্ষমা করুন। তারপর জিজ্ঞেস করল, তোমার কাছে কে আছেন?
উম্মে কুলসুম।
তোমাকে কখন একা পাব বলবে?
আম্মু আটটার সময় আসতে পারেন, তুমি তার আগে এস। তোমাকে দেখলে উম্মে কুলসুম কেবিন থেকে বেরিয়ে যাবে।
ঠিক আছে, ইনশাআল্লাহ আসব। উম্মে কুলসুমের কাছে শুনেছি, ডাক্তার তোমাকে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। অনেক কথা বলেছ। আর নয়, এবার। ঘুমিয়ে পড়।
কথা না হয় নাই বললাম; কিন্তু ঘুম কি আসবে? তোমাকে না দেখা পর্যন্ত ঘুম আসবে না। সারারাত হয়তো জেগে কেবিনের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকব তোমার আসার অপেক্ষায়। কাল তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে যে কষ্ট পাচ্ছি, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।