রূপা বলল, উনি হয়তো আর কোনো দিন ফোন করবেন না।
খুব অবাক হয়ে সায়মা জিজ্ঞেস করল, কেন?
ঐদিন সংসদ ভবন চত্বরে আসেন নি ও এতদিন ফোন করেন নি কেন বলে তাকে ফ্রড বলেছি। তাই আর কোনো দিন বিরক্ত করবেন না বলে লাইন কেটে দিলেন।
যাক বাবা, এতদিনে তা হলে তুই একটা ফ্রড ছেলের উপদ্রব থেকে রেহাই পেলি।
তুই অবশ্য ঠিক কথা বলেছিস, তবে কী জানিস, ফ্রড হোক আর যা কিছু হোক, আজ এক দেড় বছর ধরে যার সঙ্গে ফোনে আলাপ করে কি যেন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, সেই স্মৃতি থেকে কী সহজে রেহাই পাব? তা ছাড়া ছেলেটা যে সত্যি সত্যি ফ্রড নয়, তা আমার মতো তুইও জানিস। কোনো ফ্রড ছেলে। এতদিন ধরে ভালবাসার কথা বলে ফোন করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
আমারও যে বিশ্বাস হচ্ছে না, তা নয়। প্রথম দিকে তাকে ফ্রড মনে হলেও পরে তা মনে হয় নি। একটা কথা জিজ্ঞেস করব, উত্তরটা সত্য বলবি তো?
আমি কী কোনো দিন তোকে মিথ্যে কিছু বলেছি?
তুই কী সত্যি সত্যি আব্দুস সাত্তার সাহেবকে ভালোবেসে ফেলেছিস?
রূপা কিছু না বলে চুপ করে রইল।
কয়েকদিন আগে একটা হাদিসে পড়লাম, “মৌনতা নারীদের সম্মতির লক্ষণ।”
আগে ওঁর কথা শুনে শুধু রোমাঞ্চ অনুভব করতাম। সেই সাথে দেখার ইচ্ছা হত। আজ যখন করুণস্বরে আর কখনও বিরক্ত করবেন না বলে লাইন কেটে দিলেন তখন থেকে মনের মধ্যে যেন ব্যথা অনুভব করছি। এটা যদি ভালবাসা হয়, তা হলে তাই।
তাকে ফ্রড ভেবে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা কর। দেখবি, ব্যথা দূর হয়ে গেছে।
তোকে আর উপদেশ দিতে হবে না। এবার শুয়ে পড় বলে রূপা বালিশে মাথা রাখল।
.
আরো সপ্তাহখানেক পর একদিন সায়মা জুতো কেনার জন্য আপুকে নিয়ে নিউমার্কেটে এসে একটা জুতোর দোকানে ঢুকল। শোকেসে জুতা পছন্দ করে রূপা
একজন সেলসম্যানকে ডাকতে গিয়ে অবাক। সেই গুলি খাওয়া ছেলেটা একটা বোরখা পরা মেয়ের পাশে বসে আছে। মেয়েটা নতুন জুতো পায়ে দিয়ে দেখছে। তার হাতে পায়ে মোজা। চোখ দুটো ছাড়া সারা মুখ নেকাবে ঢাকা। কি দারুণ ডাগর ডাগর দু’টো মায়াবি চোখ। নাকের উপর থেকে কপালের অল্প অংশ দেখে বুঝতে পারল, মেয়েটি অপূর্ব সুন্দরী। দুই বোন নির্বাক দৃষ্টিতে একবার মেয়েটির দিকে আর একবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল।
একজন সেলসম্যান তাদের কাছে এসে বলল, বলুন, কী জুতো দেখাব?
ততক্ষণে বোরখা পরা মেয়েটি অন্য একজন সেলসম্যানকে বলল, এটা পাল্টে আর এক সাইজ বড় দিন।
রূপা তার সেলসম্যানের কথার উত্তর না দিয়ে এগিয়ে এসে মেয়েটির পাশে বসা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিল।
আব্দুস সাত্তার ছোট বোন উম্মে কুলসুমকে নিয়ে তার জুতো কিনতে এসেছে। সে মনে করল, কোনো মেয়ে কাস্টোমার দোকানের কাউকে সালাম দিয়েছে। তাই সেদিকে খেয়াল করল না।
রূপা এবার তার সামনে এসে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, আমি আপনাকে সালাম দিয়েছি।
আব্দুস সাত্তার চিনতে পেরে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, সরি, আমি ঠিক বুঝতে পারি নি। তারপর সায়মাকে তার পাশে দেখে বলল, আজও দু’জনকে একসঙ্গে দেখছি। নিশ্চয় আপনারা দুই বোন?
রূপা মৃদু হেসে বলল, ঠিক বলেছেন।
সায়মা সালাম বিনিময় করে বলল, কেমন আছেন বলুন? সেদিন আমাদের চারণে আপনি গুলি খেয়েছিলেন। আল্লাহ আপনার হায়াত রেখেছেন, তাই বেঁচে গছেন। নচেৎ গুলিটা বুকে লাগলে বাঁচতেন কিনা সন্দেহ।
আব্দুস সাত্তার বলল, বাঁচা মরা আল্লাহ পাকের হাতে। ওসব নিয়ে আমি খনও ভাবি নি। দিন পনেরর মধ্যে সুস্থ হয়ে গেছি। তা আপনারা নিশ্চয়ই ভালো আছেন?
সায়মার আগে রূপা বলল, জ্বি ভালো। আপনার সঙ্গিনীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন না?
নিশ্চয়। আমার ছোট বোন উম্মে কুলসুম।
উম্মে কুলসুম তাদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করল।
রূপা আব্দুস সাত্তারের দিকে তাকিয়ে বলল, সেদিন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলেন। আপনার পরিচয় জানার সুযোগও দিলেন না। দিলে আপনার অসুস্থতার খোঁজখবর নিতে পারতাম।
আব্দুস সাত্তার বলল, এখানের কাজ শেষ করুন, বাইরে গিয়ে আলাপ করা। যাবে।
দোকান থেকে বেরিয়ে রূপা বলল, আপত্তি না থাকলে আমাদের বাসায় চলুন; আলাপ করা যাবে।
আব্দুস সাত্তার বলল, আজ যেতে পারব না। আরো কিছু কেনাকাটা আছে। অন্য একদিন যাব। সামনে একটা চাইনিজ রেষ্টুরেণ্ট আছে। চলুন ওখানে বসে কিছু খাওয়াও যাবে আর সেই সাথে আলাপও করা যাবে।
বেশ, তাই চলুন।
নাস্তা খাওয়ার পর কফির অর্ডার দিয়ে আব্দুস সাত্তার নাম পাল্টে বলল, আমার নাম আসিফ। তারপর রূপাকে বলল, আমরা অন্য টেবিলে বসে কফি খেতে খেতে আলাপটা সেরে নিই। ওরা দুজন এখানেই বসুক।
অন্য টেবিলে বসে বেয়ারা কফি না দেওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলল না। বেয়ারা কফি দিয়ে চলে যাওয়ার পর রূপা কিছু বলার আগে আসিফ জিজ্ঞেস করল, আপনি আব্দুস সাত্তার নামে কোনো ছেলেকে নিশ্চয় চেনেন?
নাম শুনে রূপা চমকে উঠে বলল, আপনার কথার উত্তর পরে দেব। তার আগে বলুন, ওঁর সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক?
ও আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড।
আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আমাকে চেনেন?
হ্যাঁ, ওর কাছেই আপনাদের সম্পর্কের কথা শুনেছি। খোলাখুলি বলছি শুনুন, আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে কলেজ লাইফ থেকে বন্ধুত্ব। ও যেমন পার্সোনাল সব কথা আমাকে বলে, আমিও তাকে আমার পার্সোনাল সব কিছু বলি। ঐদিন সংসদ ভবন চত্বরে নিয়ে এসে আপনাদেরকে দেখিয়ে বলল, ওদের দুজনের মধ্যে যিনি বেশি সুন্দরী তিনি রূপা, আর অন্যজন সায়মা। ওঁরা দু’বোন। আপনারা যে ওকে দেখতে এসেছেন এবং কিভাবে দেখবেন তাও বলল। আমরা আপনাদের কাছ থেকে অল্প। দূরে ছিলাম। তিনটে ছেলে আপনাদেরকে টিজ করতে দেখে আমাকে বলল, ওঁদেরকে ছেলে তিনটের হাত থেকে রক্ষা কর। তারপরের ঘটনা তো আপনারা জানেন।