খবর খুব ভালো। পরশু আনন্দবাস থেকে ছেলেপক্ষরা বিয়ের পাকা কথাবার্তা বলতে আসবে।
মুশতাক বিশ্বাস আলহামদুলিল্লাহ বলে একটা একশ টাকার নোট দিয়ে বললেন, এখন এটা রাখ। বিয়ের দিন তোমাকে খুশি করে দেব। তা ক’জন আসবে কিছু বলেছে? গতবারে তো পনের ষোলজন এসেছিল।
ঘটক বলল, এবারে বেশি লোক আসবে না। চার পাঁচজন আসবেন।
মুশতাক বিশ্বাস ছেলেকে বললেন, ঘটককে নাস্তা-পানি খাইয়ে বিদায় কর। আমি খবরটা তোমার মাকে জানাই বলে বাড়ির ভিতর চলে গেলেন।
রাতে এশার নামায পড়ে এসে চামচা রসুকে দেখে মুশতাক বিশ্বাস বললেন, কী ব্যাপার, তোমার যে কয়েকদিন পাত্তা নেই?
রসু সালাম বিনিময় করে বলল, আপনার কাজেই ব্যস্ত ছিলাম।
তা কাজটা হয়েছে।
জি, দু’টো গুরুত্বপূর্ণ খবর নিয়ে এসেছি।
বল, কি তোমার গুরুত্বপূর্ণ খবর?
প্রথমটা হল, গিয়াস বাজারে মুদি দোকান দিয়েছে। সে আর আপনার কোনো কাজ করবে না। দ্বিতীয়টা হল, হাশেম আলির মেয়ে যীনাত পোয়াতী হয়েছে।
শেষের কথাটা শুনে মুশতাক বিশ্বাস চমকে উঠে সামলে নিলেন। অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, কথাটা সত্য মিথ্যা যাচাই করছ?
রসু বলল, যাচাই আর কি করব? পশ্চিমপাড়ার মেয়ে পুরুষ অনেকেই জানে।
তুমি কবে জেনেছ?
শুনেছি বেশ কয়েকদিন আগে। শোনার পর যার দ্বারা এই কাজ হয়েছে, তাকে জানার জন্য পশ্চিমপাড়ার মহিমকে লাগিয়েছিলাম। সে বলল, হাবিব ডাক্তারকে মাঝে মাঝে হাশেম আলির বাড়িতে রাতে থাকতে ও ভোরে চলে যেতে দেখেছে। তার কথা সত্য কিনা জানার জন্য পরশু রাতে মহিমদের ঘরে আমি রাত কাটাই। সে ও আমি হাবিব ডাক্তারকে রাতে আসতে ও ভোরে চলে যেতে দেখেছি।
মুশতাক বিশ্বাস ভাবলেন, হাবিব ডাক্তারের মতো লোক এমন গর্হিত কাজ করতে পারল? সে কি ধর্মের মুখোশ পরে এরকম শয়তানি কাজ করে বেড়াচ্ছে?
মাতব্বরকে চুপ করে থাকতে দেখে রসু আবার বলল, কথাটা আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নি। তাই সত্য মিথ্যা যাচাই করে আপনাকে জানাতে এলাম। আপনি গ্রামের মাতব্বর। এরকম কাজের বিচার না করলে সবার উপর আল্লাহর গজব নাজেল হবে। আর সেজন্য আপনি দায়ী হবেন।
বিচার তো হবেই। ভাবছি, গ্রামের সবাই হাবিব ডাক্তারকে পীরের মতো মানে। তার বিচার করতে হলে ঘটনার সততার মজবুত সাক্ষীর দরকার। শুধু তোমার ও মহিমের সাক্ষীতে কাজ হবে না। তা ছাড়া হাশেম আলির ভাইপো আজরাফ মাস্টারের খুব পেয়ারের লোক হাবিব ডাক্তার। তার সাক্ষী আগে দরকার। আচ্ছা, পাড়ার লোকেরা এত বড় একটা কাণ্ড আজরাফ মাস্টারকে জানাই নি কেন বলতে পার?
সে কথা আমি মহিমকে বলেছিলাম। সে আপনার কথাটাই বলল, “হাবিব ডাক্তার আজরাফ মাস্টারের খুব পেয়ারের লোক।” তাই কেউ বলতে সাহস করে নি।
তুমি কাল আজরাফ মাস্টারকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলবে। আর শোন, এই ব্যাপারটা গোপন রাখবে। কারো কাছে বলবে না। বিচারের সময়। সবাই জানুক, এটাই আমি চাই।
ঠিক আছে, তাই হবে। আর কিছু বলবেন?
না, তুমি এবার যাও।
পরেরদিন রসু এসে খবর দিল, আজরাফ মাস্টার আজ সকালের দিকে বৌ ছেলে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গেছে। এক সপ্তাহ পর ফিরবে।
ঠিক আছে, এক সপ্তাহ পরে ফিরলে তাকে আমার কথা বলবে। পরশু আনন্দবাস থেকে লোকজন আসবে আতিকার বিয়ের দিন ঠিক করতে। তুমি এখন যাও। পরশুদিন সকালের দিকে এস।
জি, আসব বলে রসু চলে গেল।
মুশতাক বিশ্বাস ঘটনাটা বিশ্বাস করতে পারলেন না। নিজের রুমে এসে চিন্তা করতে লাগলেন, হাবিব ডাক্তার হাশেম আলির বাড়িতে রাত কাটায়, তার ভাইপো হয়ে পাশাপাশি বাড়িতে থেকে আজরাফ মাস্টারের চোখে পড়বে না, এটা কেমন করে হয়? তখন তার গিয়াসের কথা মনে পড়ল, সে বলেছিল, “হাবিব ডাক্তার যীনাতের সাথে মেলামেশা করে।” তবু কথাটা বিশ্বাস করতে পারলেন না। নামি দামি লোকের ছেলে, তার উপর শুধু একজন বড় ডাক্তার নয়, আলেমও। বিয়েও করেছে। বিয়ের কথা শুনে মনে পড়তে চিন্তা করলেন, যীনাতকেই বিয়ে করে নি তো? কিন্তু তা হলে তো গ্রামের সবাই জানত? বিয়ের কথাতো আর চাপা থাকে না? বিশেষ করে আজরাফ মাস্টারতো আগেই জানবে? সেই তো এখন তাদের সংসার চালাচ্ছে?
এমন সময় শাফিয়া বানু স্বামীকে ভাত খাওয়ার জন্য ডাকতে এসে তাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বললেন, চুপচাপ বসে আছ যে, ভাত খাবে না?
মুশতাক বিশ্বাস এতই চিন্তামগ্ন ছিলেন যে, স্ত্রীর কথা শুনতে পেলেন না। তাকিয়ে বললেন, কিছু বললে?
শাফিয়া বানু উকিল নোটিশের কথা জানেন। নোটিশের ব্যাপারে যে আজ সকালে চুয়াডাঙ্গা কোর্টে স্বামী ও ছেলে উকিলের কাছে গিয়েছিল তাও জানেন। তাই স্বামীর কথা শুনে বললেন, কী এত ভাবছিলে যে, আমার কথা শুনতে পেলে না? উকিল সাহেব কি বললেন, তাও তো বললে না? ওরা কি টাকা নিয়ে মামলা তুলে নিতে চায় নি?
মামলা তুলে নিতে চেয়েছে, তবে টাকাটা বেশি দাবি করেছে। সে যাই হোক, আমি সে কথা ভাবছি না। তারপর যীনাতের ব্যাপারটা চেপে গিয়ে বললেন, ভাবছিলাম, আতিকার বিয়েটা ভালোভাবে মিটে গেলে নিশ্চিন্ত হতে পারি।
শাফিয়া বানু বললেন, ওরা তো পরশু দিন আসছে। বিয়ের দিনটা কাছাকাছি করবে।
সেকথা তোমাকে বলে দিতে হবে না। পারভেজকে বাজার হাট করার লিস্ট করতে বলেছ? কালকেই সবকিছু কিনে ফেলতে হবে।