খালেদা বলল, তোমাকে কিছু বলতে হবে না। শবনমের পরীক্ষার পর বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার কথা। তার আগে একদিন গিয়ে মুবিনের অমতের কথা বলে আসব।
.
০৮.
সাখাওয়াত হোসেন চট্টগ্রাম যাওয়ার তিন মাস পর অসুস্থ হয়ে বাড়ি এলেন। শ্বশুরের অসুখের কথা শুনে মজিদ স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেখতে এলেন। একদিন। মজিদ শ্বাশুড়ীকে মুবিনের অমতের কথা বলল।
যুবাইদা খানম আতঙ্কিত হয়ে বললেন, তা হলে এখন কি হবে বাবা? তোমার শ্বশুর শুনলে তো হার্টফেল করবে।
মজিদ বলল, ওঁকে এখন একথা জনাবেন না। আর বিয়ে শাদীর ব্যাপার আল্লাহ পাকের হাতে। তিনি শবনমের জোড়া যেখানে রেখেছেন সেখানেই হবে। ওসব নিয়ে আপনি দুঃশ্চিন্তা করবেন না। আব্বা সুস্থ হয়ে উঠলে আপনি তাকে জানাবেন। উনি জ্ঞানী লোক। সামলে নেবেন।
সেখানে খালেদাও ছিল। স্বামী থেমে যেতে বলল, হ্যাঁ আম্মা, তোমার জামাই ঠিক কথা বলেছে। আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই হবে। মানুষ জোর করে কিছু করতে পারে না।
যুবাইদা খানম বললেন, তোমরা শবনমের জন্য অন্য ছেলের খোঁজ কর। এদিকে সামসুদ্দিনের জন্য খালেদার আব্বা ফজল ঘটককে মেয়ে দেখতে বলেছিল। সে সময় ফজল ঘটক চৌকিরঘাটের একটা মেয়ের কথা বলেছিল। মেয়েটা নাকি দেখতে শুনতে ভালো। কলেজে পড়ে। অনেক রকম হাতের কাজও জানে। কিন্তু মেয়ের বাপের অবস্থা ভালো নয়। শুনে আমরা না করে দিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ফজল ঘটক এসে বলল, সামসুদ্দিন নাকি তাকে বলেছে, সে ঐ মেয়েকে বিয়ে করবে।
খালেদা বলল, সামসুদ্দিন যখন জেনে শুনে গরীবের মেয়েকে বিয়ে করতে চায় তখন আর অসুবিধা কিসের?
যুবাইদা খানম বললেন, আমি তোর আব্বাকে সে কথা বলেছি। শুনে সেও তাই বলল।
খালেদা বলল, চৌকিরঘাট তো কাছেই। আব্বা একটু সুস্থ হলে তোমাদের জামাইকে নিয়ে একদিন মেয়ে দেখতে যাব।
যুবাইদা খানম একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ভেবেছিলাম, শবনম ও সামসুদ্দিনের বিয়ে একসঙ্গে দেব, কিন্তু তা আর হবে কি না আল্লাহ মালুম।
মজিদ এতক্ষন চুপ করে ছিল। শাশুড়ী থেমে যেতেই বলল, সামসুদ্দিন ভাইয়ের এবার বিয়ে দেওয়া উচিত। বয়স অনেক হয়েছে। আল্লাহর যখন মর্জি হবে তখন শবনমের হবে। তা ছাড়া শবনমের বয়সই বা কত? এর মধ্যে যদি সে রকম ভালো ছেলে পাওয়া যায়, তা হলে এক সঙ্গেই হবে। নচেৎ ও পাশ করার পর কলেজে পড়ক। আমরা ছেলের সন্ধান করতে থাকি।
যুবাইদা খানম বললেন, তোমরা যা ভালো বুঝ তাই কর বাবা।
খালেদা প্রায় মাস খানেক হতে চলল বাপের বাড়িতে রয়েছে। মজিদও শ্বশুর বাড়িতে থেকে স্কুল করছে। মাঝে মাঝে অবশ্য বাড়িতে যায়।
সাখাওয়াত হোসেন সুস্থ হওয়ার পর আব্বার অনুমতি নিয়ে খালেদা স্বামী ও মাকে নিয়ে চৌকির ঘাটে মেয়ে দেখতে গেল। মেয়ে পছন্দ হলেও মেয়ের বাপের আর্থিক অবস্থা দেখে খুশি হতে পারল না। ফিরে এসে আব্বাকে সে কথা জানাল।
সাখাওয়াত হোসেন বললেন, আমি মেয়ের বাপের অবস্থা জানি। তোর আম্মা গরিবের মেয়েকে বৌ করতে চায় না। কিন্তু সামসুদ্দিন যখন ঐ মেয়েকে বিয়ে করবে বলেছে তখন আর আপত্তি করার কি আছে। ভাবছি এবারে দিন করে ফেলব। তিনি স্ত্রীর কাছে শবনমের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার কথা আগে শুনেছেন। এখন ছেলের বিয়ের কথা বলার পর বললেন, শবনমের বিয়েটাও একই সঙ্গে দেব ভেবেছিলাম। তা আর হল না।
মজিদ বলল, আব্বা, আল্লাহপাকের যা মর্জি তাতে আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। শবনম এখন পড়াশোনা করতে থাকুক। আমরা ওর জন্যে পাত্রের খোঁজ করব। তেমন। ভালো ছেলে পাওয়া গেলে বিয়ের ব্যবস্থা করা যাবে।
সাখাওয়াত হোসেন বললেন, তাই হবে বাবা, আল্লাহর মর্জি ছাড়া তো মানুষ কিছু করতে পারে না।
শবনমের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সে পড়া নিয়ে ব্যস্ত। আপার উপর অভিমান এখনো যায়নি। ভাগনা-ভাগনিদের আদর করলেও আপা বা দুলাভাইয়ের সঙ্গে ভালো করে কথা বলে না।
একদিন খালেদা তাকে বলল, তুই যে সেই থেকে আমার উপর রাগ করে আছিস, তা আমি জানি। আমি তোর বড় বোন। একটু শাসন করার অধিকারও কি আমার নেই? আর তোর দুলাভাই দুঃখ করছিল, তুই নাকি তার সঙ্গে ভালো করে কথা বলিস না। তার উপর রাগ করে আছিন কেন? সে কি তোকে কিছু বলেছে?
শবনম কোন কথা না বলে চুপ করে রইল।
কিরে কিছু বলছিস না যে?
শবনম ভিজে গলায় বলল, তোমাদের উপর রাগ করলেই বা কি, আর না করলেই বা কি। তোমরা অভিভাক। ছোটরা অন্যায় করলে শাসন তো করবেই। তারপর কুঁপিয়ে উঠল।
খালেদা তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার উপর রাগ করে থাকিস না বোন। সে দিন রাগের মাথায় যা করেছি, তা ভুলে যা। আর শোন, আমার বড় ননদের দেবরের সঙ্গে যে তোর বিয়ের কথা হয়েছিল, তা ভেঙ্গে গেছে। ছেলে এখন বিয়ে করবে না বলে জানিয়েছে। তোর দুলাভাই আম্মা আব্বাকে সে কথা জানিয়ে বলল, শবনম পাশ করার পর কলেজে পড়ক, পরে আমরা ভালো ছেলে দেখে ওর বিয়ে দেব।
কথাটা শুনে শবনমের মন মুবিনের উপর কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল। ভাবল, ছেলেটা সত্যিই খুব ভালো। তারপর মনে মনে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করল।
এর কয়েক দিন পর মজিদ স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়ি চলে গেল। সাখাওয়াত হোসেন মেয়ে জামাই থাকতেই চৌকিরঘাটের মেয়ের সাথে সামসুদ্দিনের বিয়ের দিন ঠিক করে চট্টগ্রামে চলে গেছে। শবনম শেষ পরীক্ষা দিয়ে এসে চিন্তা করল, আতাহার ভাই চিঠিতে জানিয়েছিল; পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে এসে যা করার করবে; কিন্তু এল না কেন? এলে তো নিশ্চয় দেখা করত?