বাবাজীরা বল্লেন, “আমরা অতি দীন-হীন গৃহস্থলোক, আমরা কি ষোড়শোপচারে বাবার পূজা কত্তে পারি? এর মধ্যে যেরূপ হয়, সংক্ষেপে বাবার যথাযোগ্য পুজা আপনি আমাদে করিয়ে দিবেন।”
পাণ্ডাজী বল্লেন, “চলো চলো।”
বাবাজীরা আপন আপন তল্পিতল্পা নিয়ে, পাণ্ডাজীর সুশিক্ষিত গুণ্ডাদ্বয় সমভিব্যাহারে বাবার মন্দিরে উপনীত হয়ে, ‘বাবা বিশ্বনাথ’ বলে সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত কল্লেন। পাণ্ডাজীর কৃপায় ফুল, বিল্বপত্র, গঙ্গাজল ইত্যাদি সমস্ত দ্রব্যের আয়োজন করা হয়েচে। পাণ্ডাজী, বাবার পুজো করিয়ে, “বাসা কি আমাদের বাড়ীতে লওয়া হবে, না আপন ইচ্ছায় করে নেবে; আচ্ছা আমার সঙ্গে এসো।” এই কথা বলে বাবাজীদের সঙ্গে নিয়ে, একটি দোকানে এসে তিন দিবসের জন্য ঘর ভাড়া করে দিলেন।
বাবাজীরা লুচি এবং মিষ্টান্নভক্ত বেশী, সুতরাং ভাতের প্রত্যাশা রাখেন না। সমস্ত দিন ঘুরে ফিরে, কাশীর সমস্ত দেখে বেড়াতে লাগলেন। একজন যাত্রাওয়ালা বাবাজীদের নূতন চেহারা দেখে এসে বল্লেন, “আপনারা নূতন এসেছেন, বোধ হয় আজ কিম্বা কাল। আপনাদের এখনও কিছু দেখা হয় নাই, আসুন, আমি আপনাদের নিয়ে সমস্ত দেখিয়ে শুনিয়ে দিই। আপনারা কি এই বাড়ীতে থাকেন?” এই কথা বলে যাত্রাওয়ালা নিজ দলস্থ দু’ একটি সঙ্গীকে ইঙ্গিত করে দিয়ে, তাদের সঙ্গে নিয়ে চলে গেল। “এই দেখুন, বাবা বিশ্বনাথের মন্দি রাজা রণজিৎ সিংহের নিৰ্ম্মিত, এই দেখুন ‘সাণ্ডায়েল’–এই অন্নপূর্ণার মন্দির।”
“এইবার চলুন দুর্গাবাড়ী দর্শন করে আসবেন। দুর্গাবাড়ী এই স্থান হতে কিঞ্চিৎ দূর, অতএব আপনারা পোঁটলা পুঁটলি যা কিছু আছে, সেই সমস্ত সমিভ্যারে নিয়ে চলুন। কারণ, এ স্থানে কার কাছে রেখে যাবেন?”
যাত্রাওয়ালার এইরূপ কথা অনুসারে বাবাজীর। আপন পুটলি এবং জীবনসর্ব্বস্ব হরিনামের ঝুলি এবং মালা যাহার ভিতর খুঁজিলে বোধ হয় একখানি মনোহারির দোকান সমেত অবস্থিতি করে; চাই কি সময়ে দুটা চারটা মিষ্টান্নও পাওয়া যায়। কারণ, যদি হরিনাম কত্তে কত্তে গলা শুকিয়ে উঠে, এক আঁধটি বদনে ফেলে দিয়ে ‘হরেকৃষ্ণ’ বলে জল পান করে থাকে।
যাত্রাওয়ালাদের সঙ্গে বাবার দুর্গাবাড়ী দর্শনে যাত্রা কল্লেন। পরে দুর্গাবাড়ী বানরের উৎপাতে এবং যাত্ৰাওয়ালাকে কৃপাতে বাবাজীদের দুর্দ্দশার কত দূর শেষ হলো, সে কথা আর আমরা অধিক লিখিতে পারলাম না।
।।সম্পূর্ণ।।