- বইয়ের নামঃ কি পেলাম
- লেখকের নামঃ কাসেম বিন আবুবাকার
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
১-২. বদরপুর গ্রাম
কি পেলাম – ইসলামিক প্রেমের উপন্যাস – কাসেম বিন আবুবাকার
০১.
চাঁদপুর জেলার চার নাম্বার পশ্চিম মবিদপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত বদরপুর গ্রাম। এই গ্রামে শফিউদ্দিন নামে একজন উচ্চি মধ্যবিত্ত লোক ছিলেন। উনি ও ওঁর স্ত্রী সাত বছরের একটা ছেলে ও দশ বছরের একটি মেয়ে রেখে এক বছরের মধ্যে মারা যান। ছেলেটার নাম শাহেদ আলী আর মেয়েটির নাম করিমন। মা বাবা মারা যাওয়ার পর দুভাইবোন নানার বাড়ি, খালার বাড়ি ও চাচাঁদের কাছে মানুষ হতে লাগল। শাহেদ আলী নানার বাড়ি থেকে প্রাইমারী পর্যন্ত পড়ে আর পড়াশুনা করল না। বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়ি ঘুরে বেড়িয়ে মানুষ হতে লাগল। জ্ঞান হওয়ার পর এখানে ওখানে অনেক রকম কাজকর্ম করল। তারপর ব্যবসা করে বেশ সাবলম্বী হয়ে উঠল। এদিকে করিমন বড় হয়ে যাওয়ার পর চাচারা তার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আরো কিছুদিন পর শাহেদ আলীর চাচারা ভিনো হয়ে গেল। শাহেদ আলী পৈত্রিক দুকামরা পাকা ঘর ও বিঘে তিনেক ফসলি জমি পেল। সে খুব পরিশ্রমী ছেলে। কিছুদিনের মধ্যে বেশ গুছিয়ে উঠল।
বদরপুর গ্রামের মাইল দেড়েক উত্তরে বাকিলাহ গ্রামের জয়নুদ্দিন বেশ অবস্থাপন্ন লোক। ওঁর এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে কামাল বড়। আর মেয়ে মেহেরুন্নেসা ছোট।
কামাল এস.এস.সি. পাশ করে বাবার সঙ্গে বিষয় সম্পত্তি দেখাশুনা করে। মেহেরুন্নেসা ক্লাশ নাইনে উঠার পর মেয়ের বাড়ন্ত চেহারা দেখে জয়নুদ্দিন তাকে আর স্কুলে পড়ালেন না। মেয়ের বিয়ের বয়স হতে তিনি পাত্রের সন্ধান করতে লাগলেন। বদরপুরের শাহেদ আলীর খবর পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, ছেলেটা এতিম হলেও কর্মঠ এবং ধার্মিক। অবস্থাও খুব একটা খারাপ না। চিন্তা করলেন, ঐ ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিলে শ্বশুর, শাশুড়ী, ভাসুর, দেবর ও জায়েদের কোনো ঝামেলা তাকে পোহাতে হবে না। খুব নিঝঞ্ঝাটে সংসার করতে পারবে। তবে ছেলেটা মেয়ের চেয়ে কম লেখাপড়া করেছে। এটাই শুধু একটা বাধা। জয়নুদ্দিন স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে পরামর্শ করার সময় শাহেদ আলীর কথা বলে বললেন, হোক সে মেহেরুন্নেসার থেকে কম শিক্ষিত, তবুও আমি তাকেই জামাই করব। মেহেরুন্নেসা আমাদের খুব চালাক মেয়ে। অল্পদিনেই সংসারে উন্নতি করতে পারবে। স্ত্রী বেশি শিক্ষিত হলে স্বামী তাকে মেনে গুনে চলে। মেয়ে আমাদের সুখী হবে।
স্বামীর কথা শুনে স্ত্রী মাহফুজা বিবি অমত করলেন না। কিন্তু বাবার কথা শুনে কামাল বলল, আপনি যখন ভালো মনে করছেন তখন আর অমত করব না। তবে মেহেরুন্নেসা যদি ছেলে তার চেয়ে কম শিক্ষিত জেনে মনে কষ্ট পায়?
জয়নুদ্দিন বললেন, সেরকম বুঝলে আমি তাকে বুঝিয়ে বলব। তারপর স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি মেহেরুন্নেসার সঙ্গে আলাপ করে আমাকে জানিও।
মেহেরুন্নেসার গায়ের রং ফর্সা না হলেও দেখতে মোটামুটি ভালই। সুন্দর স্বাস্থ্য। গোলগাল চেহারা! বাবা স্কুলের পড়াশুনা বন্ধ করে দিলেও বাড়িতে রীতিমত পড়াশুনা করে। দুভাইবোনের মধ্যে খুব মিল। বোনের পড়াশুনার ঝোঁক দেখে কামাল তাকে ভালো ভালো গল্পের বই জোগাড় করে দেয়। অনেক ধর্মীয় বইও কিনে দেয়।
মেহেরুন্নেসা সব ধরণের বই পড়তে ভালবাসে। সংসারের কাজেও খুব পটু। মাকে কোনো কাজ করতে দেয় না। বেশ চটপটে মেয়ে। কিন্তু খুব ধার্মিক।
মাহফুজা বিবি একদিন মেয়েকে তার বাবার কথা জানিয়ে মতামত জানতে চাইলেন।
মেহেরুন্নেসা বিয়ের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে রইল।
মেয়ে লজ্জা পেয়েছে বুঝতে পেরে মাহফুজা বিবি বললেন, এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? তোর আব্বার মুখে ছেলেটার কথা যা শুনলাম, তাতে আমার মনে হয়, তুই সুখে থাকবি। ছেলেটা তোর থেকে কম লেখাপড়া করেছে এই যা। চুপ করে থাকিস না, তোর আব্বা জিজ্ঞেস করলে কি বলব বল?
মেহেরুন্নেসা আরো অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে মাথা নিচু করেই বলল, তোমরা যদি ভালো মনে কর, তবে আমার অমত নেই। তারপর সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে গেল।
জয়নুদ্দিন স্ত্রীর মুখে মেয়ের মতামত জেনে খুশি হলেন। তারপর অল্পদিনের মধ্যে শাহেদ আলীর সঙ্গে মেয়ের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলেন।
মেহেরুন্নেসা স্বামীর ঘরে এসে স্বামীকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালবেসে খেদমত করতে লাগল। সেই সঙ্গে সংসারের উন্নতির জন্য তাকে পরামর্শ দিতে লাগল।
শাহেদ আলী নিজে যেমন ধার্মিক ও সংসারী, স্ত্রীকেও সেরকম দেখে যারপরনাই খুশি হয়ে আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করে সুখে দিন কাটাতে লাগল।
বিয়ের তিন বছর পর তাদের ঘর আলো করে এক পুত্র সন্তান জন্ম নিল। শাহেদ আলী সাতদিনে দুটো খাসি জবেহ করে ছেলের নাম রাখলেন জাহেদ। তারপর দুতিন বছর অন্তর তাদের আরো দুই ছেলে ও তিন মেয়ে জন্মাল। মেয়েদের নাম কুলসুম, রোকেয়া ও জুলেখা। আর ছেলেদের নাম বখতিয়ার ও বাহাদুর। বাহাদুর সকলের ছোট। সংসার বেড়ে যাওয়ায় শাহেদ আলী নিজের ও শ্বশুরের চেষ্টায় কাতার চলে গেলেন। প্রথমবারে দুবছর পরে আসেন। তারপর বছরে একবার করে আসতে লাগলেন।
এদিকে মেহেরুন্নেসা সংসারের হাল ধরলেন। তিনি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে লাগলেন।