আবদুল্লাহ্ বলিল, এরূপ মহৎ-হৃদয় না হলে ভগবান আপনাদের এত উন্নতি দিয়েছেন? যার যেমন মন তার তেমন ভাগ্য!
আবদুল খালেক আনন্দে অধীর হইয়া বলিয়া উঠিল, সোবহান আল্লাহ্!
আবদুল্লাহ্ সজল চক্ষে হরনাথবাবুকে বলিল, মহাশয়, আপনি যদি সুদ ছেড়ে দেন তবে ও আসল টাকাটা আমিই দিয়ে দিব।
হরনাথবাবু আবদুল্লাহর প্রতি সৈয়দ সাহেব যে ব্যবহার করিয়াছিলেন সে সংবাদ জানিতেন। ইত্যাকার ব্যবহার সত্ত্বেও আবদুল্লাহর এই উদারতায় তিনি অত্যন্ত আশ্চর্য হইলেন।
আবদুল্লাহ দৃঢ় এবং শান্তভাবে বলিল, তা দেখুন, আমার শ্বশুর আমার সঙ্গে কিছু দুর্ব্যবহার করেছিলেন সত্য, কিন্তু তার ইদানীং যা অবস্থা পঁড়িয়েছিল তাতে ওরূপ ব্যবহারে আমি খুব দুঃখিত হই নি। লোকজনকে দান-খয়রাত করা ও পেট-ভরে লোককে খাওয়ানো, তার একটা নেশা ছিল; আমিই-বা কি কম খেয়েছি! আমার স্ত্রীকে তিনি যা যত্ন করতেন আর ভালবাসতেন তেমন বাৎসল্য পুস্তকে ভিন্ন দেখা যায় না।
হরনাথবাবু সমস্তই শুনিলেন। এই মহৎ উদার যুবকের প্রতি তাঁহার মন আপনা হইতে নত হইয়া পড়িল। শ্রদ্ধায়, প্রীতিতে তাঁহার সমগ্র অন্তর্দেশ ভরিয়া উঠিল। তিনি উঠিয়া আবদুল্লাহকে বুকের মধ্যে জড়াইয়া ধরিয়া বলিলেন, ভাই, তোমার মহত্ত্বের কাছে আজ আমি নতশিরে পরাজয় স্বীকার করছি। আজ হতে সত্যিই তুমি আমার ভাই। এ-ঋণ তোমার পরিশোধ করতে হবে না। আমি এখনই তার ব্যবস্থা করছি। এই বলিয়া হরনাথবাবু সম্মুখস্থ দেরাজ টানিয়া ডিক্রিখানি বাহির করিয়া তাহাদের সম্মুখেই টুকরা টুকরা করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলিলেন। আবদুল্লাহ্ বা আবদুল খালেকের মুখে একটিও কথা ফুটিল না, শুধু নির্বাক বিস্ময়ে তাহারা হরনাথবাবুর মুখের পানে চাহিয়া রহিল।