না ফুরোয় না। সারাজীবন ধরে বললেও ফুরোবে না।
খামটা শুভর হাতে দিল মালা। যেখানেই যাস চিঠিটা পোস্ট করে তারপর যাবি।
ডানহাতে খাম ধরে বা হাতটা মালার দিকে বাড়াল শুভ। রিকশা ভাড়া দে।
পঞ্চাশ টাকার নোটটা দিল মালা। চিঠি পোস্ট করতে বিশ টাকা আর দশটাকা তোর রিকশা ভাড়া। বাকি বিশ টাকা আমাকে ফেরত দিবি।
শুনে খ্যাক করে উঠল শুভ। তোর সাহস তো কম না। ছোটভাইর কাছে বিশটাকা ফেরত চাইছিস? আচ্ছা দেব কিন্তু তোর চিঠি আর কখনও পোস্ট করব না।
মালা মুম্বাই সিনেমার ভাইভক্ত বোনের ভঙ্গিতে বলল,এখন আমাকে তাহলে কী করতে হবে?
বল, বিশটাকা ফেরত দিতে হবে না, সোনা।
মালা মিষ্টি করে হাসল। আচ্ছা বললাম।
পুরো সেনটেনসটা বল।
বিশটাকা ফেরত দিতে হবে না, সোনা।
দ্যাটস গুড।
টাকাটা পকেটে খুঁজে বাড়ি থেকে বেরুল শুভ।
.
এক্সপোর্টফেয়ার থেকে কিছু ফুল কিনেছিল দোলন।
আসল ফুলের চেয়েও সুন্দর। বাড়িতে কারও আসার কথা থাকলে ড্রয়িংরুমের ফুলদানিগুলোতে সেই ফুল খুবই মন দিয়ে, পরিপাটি করে সাজায়।
কথাটা সেতু জানে।
এখন কি সেই ফুলই সাজাচ্ছে দোলন! না হলে সেতু যে ওদের বাড়িতে ঢুকল টের পেল না কেন! সেতুর আসার কথা থাকলে নীচতলার বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থাকে সে। অন্তত পাঁচ দশমিনিট আগ থেকে গেট বরাবর কোথাও না কোথাও সে থাকবেই যেখান থেকে সেতুকে ঢুকতে দেখা যাবে।
আজ কী হল?
নাকি সময়ের অনেক আগে চলে এসেছে সেতু!
সেতু ঘড়ি দেখল। না, ঠিক সময়েই এসেছে। বারোটা বাজতে দশমিনিট বাকি।
সেতু তারপর পা টিপে টিপে দোলনদের ড্রয়িংরুমের সামনে এসে দাঁড়াল।
হ্যাঁ যা ভেবেছিল তাই। ফুল সাজাচ্ছে দোলন। খুবই মগ্ন হয়ে সাজাচ্ছে। কোনওদিকে খেয়াল নেই।
নিঃশব্দে খানিক দাঁড়িয়ে দোলনকে দেখল সেতু, তারপর মৃদুশব্দে গলা খাকাড়ি দিল। দোলন একেবারে চমকে উঠল। দরজার দিকে তাকিয়ে সেতুকে দেখে হাসল। ও তুই? কখন এলি?
সেতু ভেতরে ঢুকল।
অনেকক্ষণ।
যাহ।
সত্যি। তুই টেরই পাচ্ছিলি না।
তারপরই যেন সেতুকে খেয়াল করে দেখল সে। দেখে খুবই মুগ্ধ হল। চোখ বড় করে বলল, কিন্তু তোকে দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
কেন?
কী যে সুন্দর লাগছে!
ফুল রেখে সেতুর একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়াল দোলন। এই, তুই এত সুন্দর কেন?
লম্বা সোফায় এককোণে বসল সেতু। বাস মালিকদের মতো কথা বলবি না।
মানে?
কোনও কোনও বাসের পেছনে লেখা দেখবি ‘পৃথিবী এত সুন্দর কেন? এই কেনর উত্তর কী?
ঠোঁটের মজাদার একটা ভঙ্গি করল দোলন। বাপরে, তুই দেখি মহাযুক্তিবাদি হয়ে গেছিস।
কিন্তু সে কোথায়?
নিশ্চয় রিকশায়। অস্থির হওয়ার কিছু নেই। বলেছে টাইমলি চলে আসবে। যে টাইমে আসার কথা সেই টাইমের আরও সাত মিনিট বাকি আছে।
আচমকা সেতু তারপর বলল, তোদের বাড়িতে কী হয়েছে?
দোলন অবাক হল। কই কিছু হয়নি তো।
তাহলে এমন ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগছে কেন? অবশ্য তোদের বাড়িটা এমনিতেই ভুতুড়ে ধরনের।
আর তোদেরটা হচ্ছে জঙ্গল। দিনদুপুরে বেজী চড়ে বেড়ায়।
কথাটা পাত্তা দিল না সেতু। বলল, বল না বাড়িটা আজ এত ভুতুড়ে লাগছে কেন?
দোলন তার লম্বা নাকের ডগাটা একটু মুছল। বাড়িতে কেউ নেই। আমি আর দুটো কাজের বুয়া।
খালাম্মা খালুজান কোথায়?
দুজনেই যশোর গেছেন। ভাইয়ার ওখানে।
বাড়িতে শুধু তুই?
হ্যাঁ। অসুবিধা কী?
এই বয়সী মেয়েকে কাজের বুয়াদের কাছে রেখে…
দোলন হাসল। মা বাবা দুজনেই জানেন আমি খুবই বাঁজখাই টাইপের মেয়ে। আমার কাছে কেউ ভিড়বে না।
তোর জায়গায় আমি হলে এই চান্সটা যে কী নেয়া নিতাম না।
কী করতি?
ওকে রেখে দিতাম বাড়িতে।
শুনে চোখ বড় করল সেতু। কী?
হ্যাঁ।
কীভাবে?
টাকা পয়সা দিয়ে কাজের বুয়া দুটোকে ম্যানেজ করে ফেলতাম। ওকে বলতাম বাড়ি থেকে ব্যাগট্যাগ নিয়ে চলে আস। বলবে ঢাকার বাইরে কোনও বন্ধুর ওখানে বেড়াতে যাচ্ছ।
তারপর?
মা বাবা যে কদিন না আসবে আমার সঙ্গে থাকবে সে।
রাতেও?
তবে!
বলিস কী? রাতে একসঙ্গে থাকা মানে…
মানে ফানে নিয়ে আমি ভাবছি না। যাকে ভালবাসি, যার জন্য মরে যেতেও পারি তাকে নিয়ে ওসব ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না ভাব করব কেন? সে যেমন করে আমাকে চাইবে আমিও তেমন করে তাকে চাইব। দুজন দুজনকে চাইলে অসুবিধা কী?
ওরকম করে চাসনি এখনও?
না। চান্স পাইনি। জায়গা কোথায়?
আমি ব্যবস্থা করে দিই। তুই আমাদের বাড়িতে কয়েকদিন থাকবি বলে চলে আয়। শুভ ভাইকেও বল চলে আসতে।
সেতু খুবই উজ্জ্বল হল। অমন করতে পারলে বেশ হয়, না?
হ্যাঁ। করবি?
ধ্যাৎ!
লজ্জায় লাল হল সেতু। এসব ভাবতে ভাল লাগে কিন্তু করতে পারব না। বিয়ের আগে অমন করে শুভকে আমি পেতে চাই না। আমার মন ভরবে না।
ঠিক তখুনি কলিংবেল বাজল। দোলন লাফিয়ে উঠল। ওই এসে গেছে। তুই বোস, আমি গেট খুলে দিচ্ছি।
দোলন ছুটে বেরিয়ে গেল।
.
দুপুরবেলা অফিস ফেলে বাড়ি চলে এসেছে শাহিন এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি।
আজ কেন ফিরল?
বেডরুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অবাক বিস্ময়ে স্বামীর দিকে তাকাল সুরমা। উতলা গলায় বলল, কী হয়েছে? এ সময় ফিরে এলে যে? অফিস করনি?
কাতর ভঙ্গিতে বিছানায় বসল শাহিন। ছুটি নিয়ে এসেছি। শরীর ভাল লাগছে না।
কোনও রকমে জুতোটা খুলল শাহিন, মোজা খুলতে পারল না। শুয়ে পড়ল।
ভারি শরীর নিয়েও দ্রুত বিছানার কাছে ছুটে এল সুরমা। ব্যস্ত ভঙ্গিতে শাহিনের কপালে হাত দিল। জ্বর এল না-কি? হ্যাঁ, শরীর বেশ গরম।