না জানি না। কী ক্ষতি হবে বল?
বোকরা দাঁত নিয়ে তার বিয়ে হবে কী করে?
‘বোকরা’ মানে?
মানে ফোকলা আর কী!
ফোকলা দাঁতে বিয়ে হলে কী হবে?
বর তাকে কিস করবে কেমন করে? কিস করার সময় ফোকলা দাঁতের ফোকড়ে শো শো করে শব্দ হবে না!
এ কথায় খিলখিল করে হেসে উঠল দোলন। ইস তুই যা হয়েছিস না!
সেতুও হাসল। কী হয়েছি?
মহাপাজি।
তবে আমি যখন গম্ভীর গলায় কথা বলছিলাম তখন তোর চেহারাটা কেমন হয়েছিল, একজাক্টলি আমি তা দেখতে পাচ্ছিলাম।
কেমন বল তো?
সবকিছুর বর্ণনা দিয়ে লাভ নেই। মাত্র একটা বিষয়ের বর্ণনা দিচ্ছি।
কোনও অসভ্য বিষয় না তো?
আরে না।
তাহলে বল।
তোর নাকটা আরও লম্বা হয়ে যাচ্ছিল। ঠোঁট ছাড়িয়ে ঝুলে পড়ছিল।
যা ভাগ।
সেতু চুপ করে রইল।
দোলন বলল, বললি না?
কী বলব? আজ কোনও কাজ আছে কি না?
না।
ইউনিভার্সিটি?
নেই। একটা সেমিস্টার গ্যাপ দিচ্ছি। তিনমাস ফ্রি।
গুড। আমাদের বাড়ি চলে আয়।
কেন? আমাদের কি বাড়িঘর নেই যে তোদের বাড়ি আসতে হবে!
আয় সারাদিন আড্ডা দেব।
আমি কি লেসবিয়ান যে তোর সঙ্গে আড্ডা দেব?
ছি। তোর মুখে দেখি কোনও কথাই আটকায় না।
কেন আটকাবে? আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে যা মনে আসে, মুখে আসে বলতে পারব না?
ঠিক আছে যত ইচ্ছে বলার বলিস, আগে আমাদের বাড়ি আয়।
তোর ইউনিভার্সিটি নেই?
আছে। যাব না।
কিন্তু তোর সঙ্গে আড্ডা দিতে যে আমার ভাল লাগবে না।
কার সঙ্গে লাগবে?
তুই জানিস।
অপজিট সেক্স?
এখন যে তুই সেক্স সেক্স করছিস তোর মুখে আটকাচ্ছে না?
এবার যেন একটু অধৈর্য হল দোলন। এত প্যাচাচ্ছিস কেন? বল না আসবি কি না! তোর যার সঙ্গে আড্ডা দিতে ভাল লাগবে তাকেও আসতে বলি।
সত্যি?
সত্যি।
চারদিক তাকিয়ে সাবধানি গলায় সেতু বলল, তুই তাহলে শুভকে ফোন কর। বল বারোটার মধ্যে যেন তাদের বাড়িতে চলে আসে। আমি তার আগেই চলে আসব।
এক্ষুনি করছি। তবে তুই বাড়িতে বলে আয় বিকেল পর্যন্ত আমাদের এখানে থাকবি।
খাওয়া?
না খাইয়ে রাখব তোদেরকে। সিরিয়াসলি।
তারপর একটু থেমে বলল, খিচুড়ি আর ডিম ভাজা করা হবে। আয়।
তুই শুভকে ফোন কর।
করছি।
সেতুর লাইন কেটে শুভদের নাম্বারে ডায়াল করতে লাগল দোলন।
২. তোমাকে দেখছি
তোমাকে দেখছি।
আমাকে দেখার কিছু নেই।
আছে।
পাকামো করতে হবে না। যা গিয়ে পড়তে বস।
মুন্নি একটু অবাক হল। এখন পড়তে বসব কেন? হাফইয়ার্লি মাত্র শেষ হয়েছে। এখন আমাদের ছুটি।
ছুটির সময় পড়তে হয় না? ছুটির সময় পড়তে আমার ভাল লাগে না।
কিন্তু পড়া উচিত। ক্লাশ এইটের রেজাল্ট ভাল না হলে নাইনে তোকে ভাল সাবজেক্ট দেবে না। সায়েন্স কিংবা কমার্স তুই পাবি না। আমি ভিকারুননিসায় পড়েছি। ওই স্কুলের নিয়ম আমি জানি।
ওসব নিয়ে তুমি ভেব না। ভাল সাবজেক্ট আমি পাব। দেখো সায়েন্সই পাব আমি।
তারপর একটু থামল মুন্নি। মুগ্ধ গলায় বলল, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ফুপি।
এবার মুন্নির দিকে ফিরল সেতু। সুন্দর করে হাসল। আমি সব সময়ই সুন্দর।
আজ একটু বেশি লাগছে। ইস্ আমি যদি তোমার মতো সুন্দর হতাম।
উঠে মুন্নির সামনে এল সেতু। দুহাতে মুন্নির মুখটা অতি আদুরে ভঙ্গিতে তুলে ধরল। আমার মতো হবি কেন? তুই আমর চেও সুন্দর।
.
শুভকে খুঁজতে তার রুমের দিকে যাচ্ছিল মালা।
হাতে মুখবন্ধ মোটাসোটা একটা এয়ারমেইল খাম আর পঞ্চাশ টাকার একটা নোট।
রুমে ঢোকার আগেই শুভর সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেল।
শুভ বেশ ফিটফাট হয়ে বেরুচ্ছে। ফেডেড জিনসের সুন্দর প্যান্ট পরেছে, পায়ে কালো বুট, গায়ে বরফ সাদা টিশার্ট। খানিক আগে শেভ করেছে, মাথায় শ্যাম্পু করে অনেকক্ষণ ধরে গোসল করেছে বলে খুবই ফ্রেস লাগছে তাকে। তার ওপর বেশ পুরুষালি, সুন্দর গন্ধের পারফিউম ইউজ করেছে। সেতুর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা থাকলে এরকম ফ্রেস হয়েই বেরয় সে।
তবু মালা তাকে বলল, তুই কি বেরুচ্ছিস?
দেখে বোঝা যাওয়ার পরও এরকম প্রশ্ন! শুভ খুবই ঠাট্টার ছলে নিল কথাটা। সিরিয়াস মুখ করে বলল, না, টয়লেটে যাচ্ছি।
মালা একটু থতমত খেল। কী?
হ্যাঁ। এরকম সাজগোজ করে, জিনস বুট পরে, টিশার্ট পরে, পারফিউম না লাগিয়ে আমি কখনও টয়লেটে যাই?
মালার স্বভাব হচ্ছে অতিশয় ন্যাকামো করা, অতিশয় আদুরে ভঙ্গিতে কথা বলা। ভাইয়ের সঙ্গে একটা দুটো কথা বলার পরই সেই ভঙ্গিটা বেরিয়ে এল। দেখ তুই কিন্তু আমার সঙ্গে ফাজলামো করবি না। বল না, বেরুচ্ছিস?
শুভ একটু রুক্ষ্ম হল। শোন মালা…
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই চোখ বড় করল মালা। আপা না বলে হঠাৎ যে নাম ধরে ডাকছিস? বড় বোনকে কেউ নাম ধরে ডাকে?
তোর মাথায় ঘিলু আছে কী নেই পরীক্ষা করার জন্য ডাকলাম। সামান্য আছে। এজন্য নাম ধরে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে রিয়্যাক্ট করলি। তবে আর একটু ঘিলু তোর মাথায় থাকা খুব দরকার ছিল। তাহলে বুঝতি এইসব পোশাক পরে কেউ বসে থাকে না। দেখেই বোঝা যায় সে কোথাও বেরুচ্ছে। প্রশ্ন করার দরকার হয় না।
ছোট্ট শিশুর মতো আদুরে ভঙ্গিতে গাল ফোলাল মালা। হয়েছে, আর বলতে হবে না।
তারপর একটু থেমে বলল, বাইরে যখন বেরুচ্ছিসই, আমার কাজটা করে দিস সোনা।
কাজ মানে চিঠি পোস্ট করা।
হ্যাঁ। তুই তো জানিসই।
কিন্তু প্রত্যেক সপ্তাহে দুলাভাই ফোন করছেন, ফোন করলে আধঘণ্টার কম কথা বলেন না, বিদেশে থেকে বেচারা যা রোগজার করছেন সবই টেলিফোন বিলে চলে যাচ্ছে, তারপরও প্রতি সপ্তাহে তুই তাকে দেড় দুদিস্তা করে চিঠি লিখছিস! তোদের কথা কি ফুরোয় না?