আমি নিজেই সেতুর ভাইদের কাছে যেতে চাই।
জ্বি?।
হ্যাঁ। সরাসরি ওদের সঙ্গে কথা বলব। দেখি ওরা কী বলে!
সেতুর ছোট ভাইটা খুব রাগী।
হোক, তাতে আমার কী?
মানে সে যদি আপনাকে কোনও অপমানকর কথা বলে ফেলে?
ও রকম পরিবারের ছেলের এতটা অদ্র হওয়ার কথা না।
কিন্তু সেতুর বন্ধু দোলনকে সে খুব অপমান করেছে।
মা এসব কেয়ারই করলেন না। বললেন, দোলন আর আমি এক নই। আমি আজই যাব।
দুপুরবেলা সত্যি সত্যি মামুন-স্বপনের অফিসে এলেন তিনি। স্বপনের নয়, মামুনের রুমে ঢুকলেন।
উদাস হয়ে নিজের চেয়ারে বসেছিল মামুন। আচমকা বয়স্ক এবং বনেদি ধরনের মহিলাকে তার রুমে দেখে থতমত খেল। নিজের অজান্তে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে খুবই বিনীত ভঙ্গিতে সালাম দিল। স্লামালেকুম বসুন, বসুন।
মা সালামের জবাব দিলেন। তারপর বসলেন।
মামুন বলল, আমি আপনাকে ঠিক, মানে চিনতে পারিনি আর কি!
মা সরল গলায় বললেন, আমি শুভর মা।
শুভ নামটা শুনে যেন নিভে গেল মামুন। জ্বি?
হ্যাঁ বাধ্য হয়ে আপনার কাছে এসেছি। আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা বলা। দরকার।
মামুন গম্ভীর গলায় বলল, বলুন।
আমার ছেলে কী এমন অন্যায় করেছে যে তাকে আপনারা মেরে ফেলতে চাইছেন?
কথাটা বুঝতে পারল না মামুন। ভুরু কুঁচকে বলল, মেরে ফেলতে চাইছি?
হ্যাঁ। মাস্তান লাগিয়ে দিয়েছেন তার পেছনে।
মামুন অবাক। কী বলছেন আপনি?
ঠিকই বলছি।
না এমন কিছু তো আমরা করিনি।
করেছেন।
আমরা কোনও অভদ্রলোক নই যে এ ধরনের আচরণ করব!
আমিও তই মনে করতাম। অভদ্র বাড়ির মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের কোনও সম্পর্ক হওয়ার কথা নয়। আমার ছেলের রুচি খারাপ হতে পারে না।
মামুন গম্ভীর গলায় বলল, মাস্তানদের ব্যাপারে যা বলছিলেন, বলুন।
আমাদের বাড়ির সামনে প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকছে দুজন মাস্তান। শুভ কোথায় আছে জানার জন্য আমার মেয়েকে ভয় দেখিয়েছে। ওদের ভয়ে গ্রামে গিয়ে লুকিয়ে আছে আমার ছেলে।
এসব যে আমরাই করাচ্ছি তা আপনার মনে হল কেন? হতে পারে আপনার ছেলেও ওদের দলেরই। চাদা টাদার শেয়ার নিয়ে কোনও বিরোধ ইত্যাদির কারণে বন্ধু মাস্তানরাই তাকে খুঁজছে।
মামুনের কথা শুনে রেগে গেলেন মা। বাজে কথা বলবেন না। ওরকম ছেলের মা আমি নই। নিজের ছেলের সততা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা আছে বলেই এই পরিস্থিতিতে আপনার কাছে আমি আসতে পেরেছি। কখনো ভাববেন না আপনাদের টাকা পয়সা কিংবা জায়গা সম্পত্তির লোভে পড়ে আপনার বোনের সঙ্গে আমার ছেলের সম্পর্ক হয়েছে। বড়ছেলের শ্বশুর বাড়ির এক পয়সার জিনিস আমার বাড়িতে ঢোকে নি। ওসব আমরা ঘৃণা করি। টাকা পয়সা আমাদের নেই কিন্তু সতোর অহঙ্কার আছে।
এসব আমাকে শোনাচ্ছেন কেন?
ব্যাপারটা আপনারা মেনে নিন আর ওসব মাস্তানদের ফেরান।
মামুন একটু সামনের দিকে ঝুঁকল। আমরা কী মেনে নেব না নেব সেটা আমাদের ব্যাপার। এই নিয়ে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলবো না। তবে মাস্তান ইত্যাদি নিয়ে যে নোংরামোর কথা বললেন সেটা আমি অবশ্যই দেখব। আপনি কি চা খাবেন?
সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন মা। না।
এদিকে মাকে নিয়ে খুবই টেনশান করছে মালা। সুরমার রুমে এসে বলল, আমার খুব ভয় করছে ভাবী।
সুরমা অবাক হল। কেন?
মা এখনও আসছে না কেন?
তাতে কী হয়েছে?
মানে সেতুর ভাইরা কী রকম ব্যবহার করে…
মালার কথা শেষ হওয়ার আগেই সুরমা বলল, তোমার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি।
তুমি বুঝতে পারছ না ভাবী। ওরা যে রকম গুণ্ডাপাণ্ডা লাগিয়েছে, মাকে এভাবে যেতে দেয়া তোমার ঠিক হয়নি। আমি জানলে কিছুতেই যেতে দিতাম না।
তোমাকেও যেতে হবে।
কোথায়?
সেতুদের বাড়ি।
মানে?
হ্যাঁ।
কী বলছ তুমি?
ঠিকই বলছি। মা গেছেন সেতুর ভাইদের কাছে, তুমি আর আমি যাব ওর ভাবীদের কাছে। দেখি এভাবে ব্যাপারটা আমরা ম্যানেজ করতে পারি কী না!
মালার মুখ শুকিয়ে গেল। আমার ভয় করছে।
সুরমা বলল, ভয় করলে যাওয়ার দরকার নেই। আমি একাই যাব।
সুরমার চোখের দিকে তাকিয়ে কী ভাবল মালা, তারপর বলল, না, সবাই শুভর জন্য এত করছে আমি করব না কেন? আমিও তোমার সঙ্গে যাব। যা হবার হবে। এক্ষুণি রেডি হয়ে আসছি।
দ্রুত হেঁটে নিজের রুমের দিকে চলে গেল মালা।
.
শুভর মা চলে যাওয়ার পর স্বপনকে নিজের রুমে ডেকে পাঠাল মামুন।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এল স্বপন। রাগী ভঙ্গিতে মামুন বলল, মিথ্যে বলার দরকার নেই। ছোকরাটির মা আমার কাছে এসেছিলেন। তুই কি ওর পেছনে মাস্তান লাগিয়েছিস?
ভাইর মুখের দিকে তাকিয়ে স্বপন পরিষ্কার গলায় বলল, হ্যাঁ। ওর ওপর আমার খুব রাগ।
রাগ তো আমারও। সেজন্য এই ধরনের নোংরামো করতে হবে নাকি! ওরা যদি পুলিশের কাছে যায়! মাস্তানরা যদি ধরা পড়ে এবং পুলিশের কাছে যদি তোর নাম বলে দেয়, কেঁচো খুড়তে গিয়ে তো তখন সাপ বেরিয়ে পড়বে। সেতুর কেলেঙ্কারির কথা তখন চাপা থাকবে না।
ঠিক আছে আমি ওসব ম্যানেজ করছি। মাস্তান উইথড্র করব।
হ্যাঁ তাই কর।
সঙ্গে সঙ্গে উৎফুল্ল হল স্বপন। ভাইয়া, ফ্যান্টাসটিক একটা আইডিয়া পাওয়া গেছে। সেতুকে আমরা বলি, তুই যদি ডিভোর্স না করিস তাহলে শুভকে আমরা মেরে ফেলব। মাস্তান রেডি করেছি। দেখবে সঙ্গে সঙ্গে কাজ হয়ে যাবে।
স্বপনের কথা শুনে মামুনও খুশি হল। আইডিয়াটা ভাল।
কিন্তু আমি বললে কাজ হবে না বলতে হবে তোমাকে। সেতু জানে তুমি কখনও ফালতু কথা বল না।