সুদেববাবু খুশি হয়ে বললেন, “মনে থাকবে?”
উদ্দালক বলল, “নিশ্চয়ই মনে থাকবে। আপনি এত রিসার্চ করেছেন কলকাতার মেয়েদের ব্যাপারে, আমার মনে থাকবে না?”
সুদেববাবু বললেন, “বাহ। এসো, আমি আঙুর এনেছি, আঙুর খাও।”
ঘণ্টা পড়ে গেল প্রার্থনার। উদ্দালক বলল, “টিফিনে খাই? আপাতত দেশ বন্দনায় মন দি?”
সুদেববাবু দাঁত বের করে বলল, “আমার শালির নামও বন্দনা। সুন্দর নাম না?”
উদ্দালক অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে হেসে ফেলল।
১১
অফিসে দেরি করে ঢুকল জিনিয়া। বস সুপ্রতিম রায় তার ডেস্কে এসে বললেন, “সব ঠিক আছে জিনিয়া?”
জিনিয়া বলল, “হ্যাঁ স্যার। ঠিক আছে।”
সুপ্রতিম বললেন, “শরীর?”
জিনিয়া ঘাড় নাড়ল।
সুপ্রতিম বললেন, “যাওয়ার সময় অফিস ভেহিকেলে যেয়ো। একা যেতে হবে না। আমি বলে রাখব।”
জিনিয়া বলল, “থ্যাংকিউ স্যার।”
সুপ্রতিম বললেন, “টেক কেয়ার।”
সুপ্রতিম যেতে সুলগ্না তার কাছে এসে বলল, “তোকে নিয়ে খুব ভাবছেন স্যার আজকাল। তোর কথাই জিজ্ঞেস করছিলেন।”
জিনিয়া কম্পিউটার অন করে বলল, “ও।”
সুলগ্না বলল, “কী হল? আজকে আর গালাগালি দিলি না।”
জিনিয়া বলল, “ভালো লাগছে না।”
সুলগ্না তার পাশে বসল। জিনিয়ার থমথমে মুখে দেখে বলল, “কাল আসিসনি কেন? কোথাও গেছিলি?”
জিনিয়া মিথ্যে বলল, “বাড়িতেই ছিলাম, সারাদিন শুয়ে ছিলাম।”
সুলগ্না বলল, “শোন না, আজ অফিসের পরে রক্ষিতের বাড়িতে পার্টি আছে। চ, ভালো লাগবে।”
জিনিয়া বলল, “যাব না। কাজ আছে।”
সুলগ্না বলল, “কী হয়েছে ইয়ার তোর? এরকম করছিস কেন?”
জিনিয়া ক্লান্ত গলায় বলল, “কালকের কাজগুলো করি। অনেক কাজ বাকি। গত কয়েক দিন রোজ তাড়াতাড়ি বাড়ি গেছি। সেগুলোও সারতে হবে। তোর আর কিছু বলার না থাকলে এখন যা।”
সুলগ্না আহত গলায় বলল, “ওকে, ওকে। কাজ কর তুই। সরি।”
সুলগ্না চলে গেল।
জিনিয়া পাথরের মতো মুখ করে কাজ করে গেল। লাঞ্চে একা একা বেরোল। সুলগ্না বেরোল তবে জিনিয়ার থেকে একটু দূরত্ব রেখে। একটা ছোটো ছাউনিতে জিনিয়া রুটি, পনির খেয়ে একা একা রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আবার অফিসে ফিরে এল।
সুলগ্না আবার জিনিয়ার কাছে গিয়ে বলল, “আজ ডাকলি না? একা একা খেয়ে এলি?”
জিনিয়া সুলগ্নার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার ভালো লাগছে না কিছু। তুই বুঝতে পারিস না কেন আমি এরকম করছি? আমাকে একটু একা ছাড়তে পারবি না? লিভ মি অ্যালোন। প্লিজ।”
সুলগ্না বলল, “ঠিক আছে। ছেড়ে দেব একা। আমাকে যদি মনে হয় কিছু বলার আছে তো বল। খুলে বল। যদি মনে হয় আমি তোর সিক্রেট রাখতে পারব, তাহলেই বল, নইলে বলতে হবে না। ওকে?”
জিনিয়া খানিকক্ষণ দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে রইল। সুলগ্না একগ্লাস জল এগিয়ে দিল জিনিয়ার দিকে। বলল, “জলটা খা।”
জিনিয়া জলটা পুরোটা খেয়ে নিল। তারপর বলল, “ওর বাবা মা দেরাদুন চলে যাচ্ছে।”
সুলগ্না বলল, “সৌপ্তিকের বাবা মা?”
জিনিয়া ঘাড় নাড়ল।
সুলগ্না বলল, “বেশ। তাতে কী হবে?”
জিনিয়া মাথা নাড়ল, “জানি না কী হবে। আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে সৌপ্তিক এটা আমার সঙ্গে ঠিক করল না। খুব বাজে করল। সেদিন আমি ওকে যেতে বারণ করেছিলাম। আমাকে উলটোপালটা বুঝিয়ে চলে গেল জানিস?”
সুলগ্না জিনিয়ার হাত ধরে নরম গলায় বলল, “ঠিক করেনি তো। খুব ভুল করেছে। কিন্তু এগুলো ওর হাতেও ছিল না, তোর হাতেও ছিল না। প্রি-ডেস্টিনড। কারও তো কিছু করার নেই বল? আর ওর বাবা-মার এখানে একা একা থাকাটাও ঠিক হত না। ওঁরা চলে গেলে ঠিক ডিসিশনই নিয়েছেন। এবার তোকেও একটা ডিসিশন নিতে হবে।”
জিনিয়া উদভ্রান্ত মুখে সুলগ্নার দিকে তাকিয়ে বলল, “কী ডিসিশন নিতে হবে? মুভ অন করার? হবে না। আমি পারব না।”
সুলগ্না মাথা নাড়ল, “স্বাভাবিক। এরকম শক থেকে বেরোতে পারা কারও পক্ষে সম্ভবও না। তবে কী বল তো, আমাদেরকেও নিজেদের একটা সেকেন্ড চান্স দেওয়া উচিত। হতে পারে, আমরা আগের মতো ভালো না থাকলেও, শান্তিটা পেতে পারি। পারসোনালি এটা আমি ফিল করি। তোকে আমি বিয়ে করতে বলছি না, বা কোনও রিলেশনে জড়াতে বলছি না। শুধু বলছি, গিভ ইওর লাইফ অ্যানাদার চান্স। দিয়ে দেখ, অন্তত একটা চেষ্টা তো কর।”
জিনিয়া কিছু বলল না। মনিটরের দিকে ফিরে আবার কঠিন মুখে কাজ করতে শুরু করল।
সুলগ্না কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে উঠল। নিজের কিউবিকলে যাওয়ার আগে বলল, “প্লিজ কাম ব্যাক জিনিয়া। প্লিজ।”
জিনিয়া এবারেও কোনও উত্তর না দিয়ে কাজ করে যেতে থাকল।
১২
রাত আটটা নাগাদ জিনিয়া বাড়ি ফিরল। মালতী আর অগ্নি টিভি দেখছিলেন।
অগ্নি বললেন, “অফিসের গাড়ি দিয়ে গেল?”
জিনিয়া ব্যাগ টেবিলে রেখে সোফায় বসল, “হ্যাঁ।”
অগ্নি বললেন, “অফিসে সব ঠিকঠাক?”
জিনিয়া বলল, “হ্যাঁ।”
মালতী বললেন, “ও বাড়ি গেছিলি? কী হল?”
জিনিয়া বলল, “ওরা চলে যাচ্ছে কাল। বাড়ি ফাঁকা হয়ে যাবে।”
মালতী বললেন, “বাড়ি বিক্রি করবে?”
জিনিয়া বলল, “না। চাবি দিয়ে গেছে আমাকে। মাঝে মাঝে দেখে আসব।”
মালতী হাঁফ ছাড়লেন অগ্নির দিকে তাকিয়ে। পরক্ষণেই চিন্তিত মুখে বললেন, “কিন্তু ওদের বাড়ি চুরি-টুরি হলে তোর ঘাড়ে আসবে না তো?”
জিনিয়া মার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়ে চুপ করে গেল।