চুপ করে বসে থাকল সে।
আদিদেব অপেক্ষা করছিলেন। ট্যাক্সি থামতে এগিয়ে গেলেন। সৌম্য বলল, “মা কোথায়?”
আদিদেব বললেন, “জিনিয়া এসেছে। ওর সঙ্গে কথা বলছে।”
সৌম্য বলল, “কখন এসেছে?”
আদিদেব বললেন, “সকালে।”
সৌম্য নাক কুঁচকাল, “এখনও যায়নি? কী সমস্যা ওর?”
আদিদেব সৌম্যর কাঁধে হাত রাখলেন, “ওকে কিছু বলিস না। মেন্টাল শকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।”
সৌম্য বলল, “সে ঠিক আছে, কিন্তু মেন্টাল শক থেকে মেন্টাল পেশেন্ট হয়ে গেলে বিপদ হয়ে যাবে।”
আদিদেব বললেন, “তোকে কিছু বলতে হবে না। তুই চেঞ্জ কর।”
সৌম্য ব্যাগটা বারান্দায় নামিয়ে সৌপ্তিকের ঘরে উঁকি মারল। রোহিণী বললেন, “এলি?”
সৌম্য বলল, “হ্যাঁ।”
রোহিণী বললেন, “তুই ফ্রেশ হ, আমি কিছু বানাচ্ছি।”
সৌম্য চলে যাচ্ছিল, জিনিয়া ডাকল, “শুনুন।”
সৌম্য অবাক হল। জিনিয়ার সঙ্গে তার আগে কোনও দিন কথা হয়নি। ডাক শুনে সে দাঁড়াল, “হ্যাঁ।”
জিনিয়া বলল, “বাড়িটা প্লিজ বিক্রি করবেন না, সৌপ্তিকের কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে।”
রোহিণী অপ্রস্তুত হলেন। সৌম্যর মাথা গরম হয়ে গেল হঠাৎ করে। সে কোনও কথা না বলে নিজের ঘরে চলে গেল।
মার ওপর রাগও হচ্ছিল। মার কাজই হল উটকো ঝামেলাগুলো প্রশ্রয় দেওয়া। ফোনে জিনিয়ার কাজকর্ম শুনেই বুঝেছিল সতু চলে যাওয়ার পর মেয়েটা সাইকো হয়ে গেছে। এখন যদি তাদের পরিবারের মধ্যে ঢুকে তার কাজকর্মও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে, তাহলে তো মহা সমস্যা!
হাত পা ধুয়ে, চেঞ্জ করে বিছানায় শুল সে। রোহিণী চা নিয়ে এসে বললেন, “চা নে। জিনিয়া চলে গেছে।”
সৌম্য চা নিয়ে বলল, “বসো।”
রোহিণী বসলেন। সৌম্য চেঁচিয়ে ডাকল, “বাবা।”
আদিদেব এলেন। সৌম্য বললেন, “মেয়েটা কি রোজ আসছে?”
আদিদেব চেয়ার টেনে বসে বললেন, “দু-এক দিন পর পর।”
রোহিণী বললেন, “ওরকম করে বলিস না বাবা। সতুকে বড়ো ভালোবাসত মেয়েটা।”
সৌম্য বলল, “বুঝেছি মা। কিন্তু তোমাদেরও তো ভালো থাকতে দিতে হবে। সর্বক্ষণ এসে যদি এই মেয়েটা পাগলামি করে যায়, তাহলে তোমরাও ডিপ্রেশনে চলে যাবে। সেটা বুঝতে পারছ কি? এখন বলছে বাড়ি বেচবেন না। আশ্চর্য! আমি কি এখানে বাড়ি বেচতে এসেছি? আমি তোমাদের নিয়ে যেতে এসেছি। ওকে কে বলেছে বাড়ি বেচব?”
রোহিণী বললেন, “আমরা চলে গেলে বাড়ি রেখেই বা কী করবি?”
সৌম্য বাবার দিকে তাকাল, “তুমিও কি তাই ভাবো?”
আদিদেব বললেন, “আমি কিছু ভাবি না। ইন ফ্যাক্ট আমার কিছু ভাবতে ইচ্ছাও করছে না আর। তুই কী করবি কর। ভালো লাগে না আর কিছু।”
সৌম্য বলল, “আমি কী করব মানে? আমাদের তো কথা হয়ে গেছে। পরশু আমরা চলে যাব। তোমাদের গোছগাছ হয়েছে? মা?”
রোহিণী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “হচ্ছে।”
সৌম্য বলল, “হয়নি তার মানে। কী চাইছ তোমরা? আমি ছুটি পাই না। কোনও ভাবে ম্যানেজ করে এলাম। ঘর ভাড়া করলাম। এদিকে এখনও তোমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে যাচ্ছ। বলা যাবে, কী চাইছ?”
আদিদেব বললেন, “যাব তো তোর সঙ্গে। চিন্তা করিস না। রেস্ট নে। এই তুমি চলো। সমু রেস্ট নিক।”
আদিদেব উঠলেন। রোহিণীও। সৌম্য বলল, “কী করল মেয়েটা সারাদিন?”
রোহিণী বললেন, “তোদের অ্যালবামগুলো দেখল। সতুর জামাকাপড়গুলো ভাঁজ করে দিল।”
সৌম্য বলল, “হয়ে গেছে। এ মেয়ে গেছে।”
আদিদেব বললেন, “মেন্টাল স্ট্রাকচার সবার সমান হয় না সমু। সবাই জন্ম থেকে কঠিন মন নিয়ে জন্মায় না। এজন্য কাউকে সাইকো ভেবে নেওয়াটা ঠিক না। মেয়েটাকে সময় দিতে হবে। দেখাই যাক না। আর তুই যদি বাড়ি এখনই না বেচিস, তাহলে জিনিয়াকেই চাবি দিয়ে যাওয়া যায়। ও মাঝে মাঝে এসে দেখে রাখবে।”
সৌম্য বলল, “যা পারো কর। কী করছ, নিজেরাই বুঝতে পারছ না। ধুস।”
সৌম্য রেগেমেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
৪
মালতী সিরিয়াল দেখছিলেন।
অগ্নি অফিস থেকে ফিরলেন। মালতী বললেন, “কফি করে দি?”
অগ্নি বললেন, “হুঁ। তিন্নি কোথায়?”
মালতী বললেন, “ফেরেনি এখনও।”
অগ্নি বললেন, “অফিস যায়নি?”
মালতী বললেন, “না। ওই বাড়ি যাবে বলছিল।”
অগ্নি গম্ভীর মুখে বসে বললেন, “তুমি কিছু বলেছ?”
মালতী বললেন, “আমি আর কত বলব? তুমিই কথা বলো।”
অগ্নি বললেন, “আমাদের কথাতে কিছু নাও হতে পারে। পূরবীকে ডাকি। পিসির কথায় যদি কিছু হয়।”
মালতী বললেন, “বিয়ের জন্য যে গয়নাগুলো কেনা হয়েছিল, সেগুলো আলমারিতে রেখে দিয়েছে। মাঝরাতে বেনারসি, গয়না, সব পরে বসে থাকছে। আমার আর ভাল্লাগছে না।”
কেঁদে ফেললেন মালতী।
অগ্নি বললেন, “ঠিক আছে। ওকে কিছুদিন সময় দাও।”
মালতী বললেন, “আর কতদিন? আমার তো মনে হচ্ছে ব্যাপারটা এবার খারাপ দিকে চলে যাচ্ছে।”
অগ্নি বললেন, “ঠিক আছে, তুমি কফি করো। আমি পূরবীকে ফোন করি।”
মালতী রান্নাঘরে গেলেন। অগ্নি বোনকে ফোন করতে গিয়ে থমকে গেলেন। সিরিয়াল চেঞ্জ করে খবরে দিলেন। খবরের পরিবর্তে একগাদা বিজ্ঞাপন দেখিয়ে যাচ্ছে। অন্যমনস্ক অবস্থায় অগ্নি চ্যানেল পালটাতে শুরু করলেন। কয়েক মিনিট পর তামিল চ্যানেল এল। কী মনে হতে সেটাই বসে দেখতে থাকলেন। মালতী কফি নিয়ে এসে বললেন, “এসব কী দেখছ?”
অগ্নি চ্যানেল চেঞ্জ করে বললেন, “দেখছিলাম না। ভাবছিলাম।”
মালতী বললেন, “কী?”