২৯
সত্যেন ঘরে এসে দরজা বন্ধ করলেন। পিকলু তাঁর রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।খাটে এসে জোরে জোরে শ্বাস নিলেন এবং ছাড়লেন। অতিরিক্ত টেনশনে এভাবেই নিজেকে সামলান তিনি। খাটে শুয়ে বালিশে হেলান দিলেন।মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করলেন কিছুক্ষণ।প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ফোন অফ করে ঘুমান তিনি। কী মনে হতে নির্মলকে ফোন করলেন। ওপাশ থেকে কেউ ফোন ধরল না। নিজের মনে বললেন, “ঘুমিয়ে পড়েছে নির্ঘাত।”বহুদিন সব নেশা ছেড়েছেন। অনেকদিন পরে একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছিল।বেশ খানিকটা গরম লাগছে। সত্যেন এসি চালালেন। জানলা খোলা ছিল। বন্ধ করতে গিয়ে হঠাৎ একটা হার্টবিট মিস হল।তাঁর মনে হল জানলার ওপাশে শম্ভু এবং মিঠুন দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসছে।সত্যেন জানলা বন্ধ করলেন। বুঝতে পারলেন সবটাই তাঁর দুর্বল মনের কল্পনা। বজ্রাসনে বসলেন। মনটাকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করলেন। খুব ভালো করে জানেন সত্যেন সান্যাল, দুর্বল মন কঠিন কোনও কাজের ক্ষেত্রে সবথেকে বড়ো অন্তরায় হয়ে দেখা দেয়। খাটের পাশের টেবিলের ওপর একটা কাগজ রাখা। সত্যেনের এতক্ষণ চোখে পড়েনি। তিনি কাগজটা নিয়ে দেখলেন তার ওপর গোটা গোটা হাতের লেখায় একটা কবিতা লেখা,
দীন দানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নিবেদিল রাজভৃত্য, “মহারাজ, বহু অনুনয়েসাধুশ্রেষ্ঠ নরোত্তম তোমার সোনার দেবালয়েনা লয়ে আশ্রয় আজি পথপ্রান্তে তরুচ্ছায়াতলেকরিছেন নামসংকীর্তন। ভক্তবৃন্দ দলে দলেঘেরি তাঁরে দরদর-উদ্বেলিত আনন্দধারায়ধৌত ধন্য করিছেন ধরণীর ধূলি। শূন্যপ্রায়দেবাঙ্গন; ভৃঙ্গ যথা স্বর্ণময় মধুভাণ্ড ফেলিসহসা কমলগন্ধে মত্ত হয়ে দ্রুত পক্ষ মেলিছুটে যায় গুঞ্জরিয়া উন্মীলিত পদ্ম উপবনেউন্মুখ পিপাসাভরে, সেইমতো নরনারীগণেসোনার দেউল-পানে না তাকায়ে চলিয়াছে ছুটিযেথায় পথের প্রান্তে ভক্তের হৃদয়পদ্ম ফুটিবিতরিছে স্বর্গের সৌরভ। রত্নবেদিকার ‘পরেএকা দেব রিক্ত দেবালয়ে।“
শুনি রাজা ক্ষোভভরেসিংহাসন হতে নামি গেলা চলি যেথা তরুচ্ছায়েসাধু বসি তৃণাসনে; কহিলেন নমি তাঁর পায়ে,‘হেরো প্রভু, স্বর্ণশীর্ষ নৃপতিনির্মিত নিকেতনঅভ্রভেদী দেবালয়, তারে কেন করিয়া বর্জনদেবতার স্তবগান গাহিতেছ পথপ্রান্তে বসে? ‘
‘সে মন্দিরে দেব নাই’ কহে সাধু ।
রাজা কহে রোষে,‘দেব নাই! হে সন্ন্যাসী , নাস্তিকের মতো কথা কহ।রত্নসিংহাসন ‘পরে দীপিতেছে রতনবিগ্রহ—শূন্য তাহা?’
‘শূন্য নয়, রাজদম্ভে পূর্ণ’”
কবিতাটা এতখানি লেখা। রাজদম্ভে পূর্ণ লেখাটার নিচে আন্ডারলাইন করা। সত্যেন বিড়বিড় করে বললেন, “কত সাহস হয়েছে এদের! এত বাড় বেড়েছে? দেখছি সবকটাকে কাল। দেখে নিচ্ছি।”কাগজটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে মেঝেতে ফেলে দিলেন। গ্লাসে জল রাখা ছিল টেবিলে। গোটা গ্লাসের জলটা এক ঢোকে খেয়ে নিলেন।কী মনে হতে ফোনটা বের করে আবার নির্মলবাবুকে ফোন করলেন। কেউ ফোন ধরল না। সত্যেন বিরক্ত হয়ে থানার ল্যান্ডলাইনে ফোন করলেন। কেউ একজন ফোন ধরল, সত্যেন বললেন, “বড়োবাবুকে দিন তো। জরুরি দরকার আছে।”ওপাশ থেকে উত্তর এল, “উনি বাড়িতে গেছেন। সকালে আসবেন আবার। কে বলছেন আপনি?”“সত্যেন সান্যাল।”“ওহ, স্যার আমি ধীরেন বলছি, এই থানার মেজোবাবু, কোনও সমস্যা হয়েছে?”“না, না, ঠিক আছে।”“স্যার কাল আসছি আমরা সবাই মিলে আপনার বাড়িতে।”“হ্যাঁ অবশ্যই। তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। কাল জেলা সভাপতিও আসবেন, জানেন তো?”“হ্যাঁ স্যার। ঠিক আছে, রাখছি।”ফোনটা কেটে সত্যেন চোখ বোজার চেষ্টা করলেন। কিছুতেই ঘুম আসছে না। ওষুধের বাক্সের মধ্যে একটা ঘুমের ওষুধের পাতা ছিল। সত্যেন বাক্স বের করে দেখলেন ওষুধের পাতাটা খালি।এসি ঘরের তাপমাত্রা দ্রুত কমিয়ে দিচ্ছে, তবু সত্যেন বুঝতে পারছেন কপাল, পিঠ সব ঘেমে যাচ্ছে।ঘড়িতে একটা বাজে। ভোরে উঠতে হবে তাঁকে। ফোনটা বন্ধ না করে খাটের ওপর রেখে শুতে যাবেন এমন সময় দেখলেন আবার ফোন আসছে।দেখলেন থানা থেকে ফোন। ধরলেন, “বলুন।”“সর্বনাশ হয়েছে স্যার।”ওপাশ থেকে মেজোবাবুর উত্তেজিত গলা।সত্যেন ফোনটা ধরে বসে রইলেন।
৩০
ভোর পাঁচটা। এমনিতেই রাতে ঘুম হয়নি। ঘড়িতে পাঁচটা দেখে জীবেন উঠে সত্যেনের ঘরের সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বৈঠকখানায় বসলেন।
সত্যেন প্রতিদিন পাঁচটাতে বেরিয়ে যান। জীবেন দশ মিনিট অপেক্ষা করেও যখন দেখলেন সত্যেন বেরোননি, তখন সত্যেনের ঘরের দরজায় নক করলেন।
সত্যেনের দরজা খুলতে যত দেরি হচ্ছিল, জীবেনের হার্টবিট তত বেড়ে যাচ্ছিল।
পাঁচটা পনেরো নাগাদ সত্যেন দরজা খুললেন। জীবেনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “কি রে, কী হল?”জীবেন সত্যেনের দিকে তাকালেন। সত্যেনের চোখ লাল হয়ে আছে। একটু থমকে বললেন, “তুই হাঁটতে যাবি না?”সত্যেন বললেন, “কাল সেই দুটোর সময় ঘুমোতে পেরেছি কোনও মতে, আজ আর বেরোব না। তুই ভিতরে আয়।”জীবেন সত্যেনের ঘরের ভিতর ঢুকে অবাক হলেন। এতটা অবিন্যস্ত সত্যেনের ঘর কখনোই থাকে না। সত্যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করেন। তার পরিবর্তে মেঝেতে কাগজ ছিঁড়ে পড়ে আছে। জীবেন বললেন, “এগুলো কীসের কাগজ? ছিঁড়ে মেঝেতে ফেলেছিস কেন?”সত্যেন বললেন, “কোনও এক হারামজাদা আমার সঙ্গে কবিতা কবিতা খেলছে। রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা কাগজে লিখে রেখে গেছে টেবিলে।”জীবেন অবাক হয়ে বললেন, “এই ঘরে রেখে গেছে? এত স্পর্ধা?”সত্যেন মাথা নাড়লেন, “তাই তো দেখছি, অনেকগুলো পাখা গজিয়েছে। সময়মতো সেগুলো ছাঁটতে না পারলে সান্যাল বংশের ঘোর অমঙ্গল হবার সম্ভাবনা। আর সেটা আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না।”জীবেন বললেন, “কাল তোর ঘুমোতে অত রাত হল কেন? পিকলুর জন্য?”সত্যেন বললেন, “না, পিকলু দুদিনের ছোঁড়া, নাক টিপলে দুধ বেরোয়, ওকে নিয়ে আমি রাতের ঘুম নষ্ট করব এত খারাপ সময় এসেছে নাকি আমার?”জীবেন বললেন, “তবে?”সত্যেন বললেন, “নির্মলবাবুর বাড়িতে শম্ভুর বউয়ের লাশ পাওয়া গেছে। নির্মলকে সম্ভবত মারতে গেছিল। নির্মলের মাথায় বেশ জোরে কিছু দিয়ে আঘাত করেছে। ব্লিডিং হয়েছে। হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।” জীবেন চমকে গিয়ে বললেন, “সে কী! বাঁচবে তো?”সত্যেন বললেন, “বাঁচা মরাটা তো বড়ো কথা নয়, বড়ো কথা হচ্ছে নির্মলের পরিবর্তে থানায় নতুন কে আসছে সেটা বুঝতে হবে। এই সময় নির্মলকে দরকার ছিল আমাদের। একেবারে পোষা কুকুর হয়ে গেছিল। যা করতে বলতাম তাই করত।”জীবেন একটু ইতস্তত করে বললেন, “দাদা একটা কথা আছে।”
সত্যেন বললেন, “বল।”
জীবেন বললেন, “কাল আমাকে পিকলু জানাল ও মিঠুনের মার্ডারের ব্যাপারটা পুলিশের ওপরমহলে জানিয়েছে। সম্ভবত নতুন করে ইনভেস্টিগেশন হতে পারে।”
জীবেন কথাটা বলে মাথা নিচু করলেন।
সত্যেন বললেন, “কীরকম ওপরমহল?”
জীবেন মাথা নাড়লেন, “সেটা তো আমাকে কিছু বলেনি।”
সত্যেন বললেন, “আজ কতজন লোকের খাবার কথা বাড়িতে?”
জীবেন বললেন, “অন্তত এগারোশো। বেশিও হতে পারে। খিচুড়ি ভোগের কাজ পুকুরের পাশের মাঠে শুরুও হয়ে গেছে কাল থেকেই।”
সত্যেন বললেন, “এবারে কতজন গরিবকে জামা আর শাড়ি দেওয়া হচ্ছে?”
জীবেন বললেন, “দুশোর ওপরে।”
সত্যেন বললেন, “এগুলো পুণ্য নয়? মানুষের ভালো করা নয়? গ্রামের রতন তাঁতির ছেলের টিউমার অপারেশনে গত বছর আমি একা এক লাখেরও বেশি টাকা দিয়েছিলাম। এগুলো পুণ্য নয়? মানুষের জন্য করা নয়?”
জীবেন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
সত্যেন বললেন, “নিজেদের হাতে মানুষ করা ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েগুলো যখন কথা শিখে বড়ো বড়ো কথা বলে তখন কেমন লাগে? মনে হয় না, আমাদের এত কিছু যাদের জন্য করা সেটাই আসলে ব্যর্থ হল?”জীবেন বললেন, “তুই… তুই চিন্তা করিস না, আমরা সব আছি তো। কেউ কিছু করতে পারবে না এই কেসে।”সত্যেন বললেন, “একটা ইয়ে ছেলে, উলটোপালটা বুঝিয়ে আমাদের বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করবে আর আমি হাতে চুড়ি পরে বসে থাকব, কিচ্ছু করব না? এটা সম্ভব?”
জীবেন বুঝলেন সত্যেন ভীষণ রেগে যাচ্ছেন, তিনি বললেন, “নিজেকে সামলা, আমি দেখছি, পিকলুর সঙ্গে কথা বলি, ও উঠুক।”
সত্যেন গুম হয়ে বসে থাকলেন। জীবেন সত্যেনের ঘর থেকে বেরলেন।
৩১
সকাল সাড়ে সাতটা। অঞ্জলি শুরু হয়ে যাবে একটু পরেই। প্রণতি, রিংকুরা ঠাকুর দালানে জড়ো হয়েছে। গ্রামের অনেক মহিলাই এসে বসেছেন। সত্যেন আজ বেশি সক্রিয় নন। গম্ভীর মুখে বসে আছেন একটা চেয়ার নিয়ে। দীপককে দূরে বসে থাকতে দেখেও অন্যান্যবারের মতো পাশে ডেকে আনেননি। জীবেন পুজোর দিকটা দেখছেন।
রিংকু তনয়াকে জিজ্ঞেস করল, “পিকলু অঞ্জলি দেবে না?”
তনয়া বলল, “বলতে পারব না, এখনও তো ঘুমোচ্ছে।”
রিংকু বলল, “যা ইচ্ছে করুক।”
তনয়া বলল, “তুমি আমাদের ব্যাপারটা কাউকে বলেছ দিদি?”
রিংকু যেন আকাশ থেকে পড়ল এমন মুখ করে বলল, “কোন ব্যাপারটা?”
তনয়া বলল, “যেটা কাল বললাম।”
রিংকু বলল, “না না, আমার তো মনেও নেই ঠিক করে। কেন বল তো?”
তনয়া বলল, “এমনি। মনে হল তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
রিংকু বলল, “আমার একদম এসব লোকের কান ভাঙানো স্বভাব নেই। তুই জানিস না, আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সব মেয়েদের সব গোপন কথা আমি জানি। কিন্তু কাউকে বলি না। তুই নিশ্চিন্ত থাক।”
তনয়া হাসল, “আচ্ছা দিদি। না সেরকম কিছু না।”
রিংকু বলল, “তবে পিকলু আজকাল কেমন যেন হয়ে গেছে। সেটা আশা করি তুইও বুঝতে পারছিস। কাল তো শুনলাম বাবার সঙ্গেও ওর কথা কাটাকাটি হয়েছে।”
তনয়া বলল, “এ বাবা, তাই নাকি? ওহ, আমার সঙ্গে তো ওর কোনও কথাও হয়নি কাল, এত কিছু করে এসেছে নাকি?”
রিংকু একটু উৎসাহিত হল “তা নয় তো কী, আচ্ছা ওর কি অফিসে কোনও প্রবলেম চলছে?”
তনয়া বলল, “জানি না তো এই ব্যাপারে কিছু। তুমি কিছু জানো?”
রিংকু বলল, “খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, সব জানিয়ে দেব তোকে। তুই শুধু আমার সঙ্গে যোগাযোগটা রাখবি। খবরদার পিকলু যেন এ ব্যাপারে না জানে। আর বাই দ্য ওয়ে, একটা জিনিস জানিস তো…”
তনয়া বলল, “কী?”
রিংকু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, এই সময় একটা গাড়ি এসে সান্যালবাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। চারজন খাকি উর্দিধারী পুলিশ সোজাসুজি সদর দিয়ে ঠাকুরদালানে প্রবেশ করলেন। জীবেন এগিয়ে গেলেন, “কাউকে খুঁজছেন?”
রিংকু বলল, “কী ব্যাপার বল তো?”
তনয়া বলল, “বুঝতে পারছি না তো। থানা থেকে কেউ এসেছে হয়তো।”
রিংকু হাসল, “ওসব থানা-ফানা বাবার পকেটে থাকে।”
চারজন সত্যেনের কাছে এসে কিছু কথা বললেন। সত্যেন উঠলেন। চারজনকে নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করলেন।
জীবেন ঘামছিলেন। রিংকু উঠে জীবেনের কাছে গিয়ে বলল, “কী ব্যাপার কাকামণি? কী হয়েছে?”
জীবেন হাসার চেষ্টা করলেন, “ওই কয়েকজন পুলিশ এসেছে, চিন্তার কোনও কারণ নেই, তোরা অঞ্জলির জন্য তৈরি হ।”
রিংকু ফিসফিস করে বলল, “হ্যাঁ, আমিও এতক্ষণ তনয়াকে তাই বলছিলাম জানো তো, এইসব পুলিশ-টুলিশ বাবার পকেটের ভিতর থাকে।”
জীবেন গলা নামিয়ে বললেন, “আস্তে কথা বল। পিকলুকে দেখেছিস?”
রিংকু বলল, “ঘুমোচ্ছে বলল তো তনয়া!”
জীবেন বললেন, “ঠিক আছে, আমি ওকে ডেকে নিয়ে আসছি, চিন্তা করিস না।”
রিংকু তনয়ার পাশে গিয়ে বসল। জীবেন বাড়ির ভিতর গিয়ে পিকলুর ঘরে প্রবেশ করলেন।
মশারির ভিতর পিকলু আর পিকলুর ছেলে ঘুমাচ্ছিল।
জীবেন পিকলুকে ঠেললেন, “শুনছিস?”
পিকলু উঠে বসল। বলল, “ওহ বাবা, কত দিন পরে তোমার মুখ দেখে উঠলাম বলো তো! দিনটা ভালো যাবে আজ। কটা বাজে?”জীবেন বললেন, “আটটা বাজতে চলল।”পিকলু অবাক হয়ে বলল, “আটটা বেজে গেছে! সে কী! এতক্ষণ তো সুদর্শনবাবুদের চলে আসার কথা ছিল! আসেননি?”জীবেন বললেন, “সুদর্শনবাবু মানে? স্টেট লেভেল পুলিশের কেউ?”পিকলু হাই তুলতে তুলতে বলল, “ঠিক ধরেছ। এসেছেন?”
জীবেন ঘামছিলেন, “এর পিছনে তোর হাত আছে, তাই না?”
পিকলু বলল, “আমার? কী যে বলো না, আমি একজন সাধাসিদে লোক। আমার আবার হাত কীসের?”
জীবেন রুমাল বের করে ঘাড় মাথার ঘাম মুছলেন।
পিকলু বলল, “চলো। জেঠুকে একা ছাড়া ঠিক না। আমি আর তুমিও জেঠুর ঘরে ঢুকি।”
জীবেন কড়া চোখে পিকলুর দিকে তাকালেন, “কাজটা তুই ভালো করলি না পিকলু। আজ অষ্টমীর মতো একটা দিনে বাড়িতে পুলিশ এল…”
পিকলু হাসতে হাসতে বলল, “শূন্য নয়, রাজদম্ভে পূর্ণ।”
জীবেন বুঝলেন না, হাঁ করে পিকলুর দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
৩২
“সত্যেনবাবু।”
“বলুন। ব্রেকফাস্ট দিতে বলব?”
“না না, আমাদের নিয়ে আপনাকে ব্যস্ত হতে হবে না। আমরা একটা রুটিন প্রশ্নোত্তর করে চলে যাব।”
“বেশ বেশ। আপনারা বোধহয় জানেন, এই এলাকার নির্বাচিত মন্ত্রী আমার বেশ কাছের একজন…”
“না সত্যেনবাবু জানি না। আমাদের এত কিছু না জানলেও চলে। কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছ থেকে চাই।”
“বলুন। দাঁড়ান এসি-টা চালিয়ে নি।”
“শ্যাল উই স্টার্ট?”
“হুঁ। শুরু করুন।”
“পরশু দিন আপনার ফ্যামিলিতে একটা দুর্ঘটনা ঘটে।”
“হ্যাঁ। কী বলব আর। আমার নিজের ভাগনিজামাইকে গ্রামের কয়েকজন…”
“কয়েকজন বলে তো জানি না, দেখলাম মাত্র একজনকে অ্যারেস্ট করা হয়েছিল। সেও শুনলাম অ্যারেস্ট করার সময় নাকি গণপিটুনিতে মারা গেছে।”
“বুঝতেই পারছেন, আমার ভাগনিজামাই, গণরোষ। বাধা দেবার অনেক চেষ্টা করেও বিফল হতে হল।”
“সত্যেনবাবু।”
“বলুন।”
“আপনাকে একটা খবর দি।”
“বলুন।”
“নির্মলবাবু কিছুক্ষণ আগে এক্সপায়ার করেছেন।”
“ভেরি স্যাড।”
“কেন এরকম একটা ঘটনা ঘটল, সে সম্পর্কে আপনি কিছু আলোকপাত করতে পারেন?”
“না, আমি কাল রাতেও ওঁকে ফোন করেছিলাম। তখন ধরেননি। পরে থানার ল্যান্ডলাইনে ফোন করে জানতে পারি ঘটনাটা।”
“ওহ। ফোন করেছিলেন ওঁকে? কত রাতে?”
“একটা।”“রাত একটা? সে কী! অত রাতে? খুব দরকার ছিল?”“না মানে সেরকম কিছু না। ঘুমোতে যাবার আগে মনে পড়েছিল বড়োবাবুকে বলা হয়নি আজকের জন্য। উনি তো প্রায় সারারাতই জেগে থাকেন, তাই ফোন করেছিলাম আর কি।”
“আচ্ছা। সান্যালবাবু।”
“বলুন।”
“আপনার ফ্যামিলির মনে হয় পূর্ববঙ্গে বাড়ি ছিল, তাই না?”
“হ্যাঁ।”
“দাঙ্গায় আপনাদের ফ্যামিলির কারও কিছু…”
“নিজের মাকে…”