১৬
শ্বশুরবাড়ি দীপকের কোনও কালেই ভালো লাগে না। সবসময় শ্বশুরের জ্ঞান শুনতে হয়। কিন্তু কিছু করার নেই। রিংকু যেতে বললে তাকে যেতেই হবে। রিংকু যদি বলে সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে, তবে দীপক দ্বিধায় পড়ে যাবে, সূর্য হয়তো সত্যিই পশ্চিম দিকে ওঠে। এ বাড়িতে তাদের ঘরটা সবথেকে ভালো। দোতলায়। দক্ষিণ খোলা। সামনে একটা ব্যালকনি আছে। ব্যালকনির মধ্যে চেয়ার রাখা। গ্রীষ্মকালের সন্ধেবেলা এখানে বসে চা খাওয়ার একটা আলাদা মজা আছে। তাদের বিয়ে গ্রীষ্মকালেই হয়েছিল। সে বছর সে দ্বিরাগমনে এসে এই ঘরটার প্রেমে পড়ে গেছিল। কিন্তু রিংকুর প্রেমে বেশি পড়তে পারেনি। স্ত্রীর থেকে রিংকু অনেক বেশি তার বসের মতো আচরণ করে। দীপকের মা মাঝে মাঝেই দুঃখ করে বলেন এত ভালো ছাত্রটা বিয়ের পরে এমন বউয়ের ভেড়ুয়া হয়ে যাবে জানলে কিছুতেই তিনি ছেলের বিয়ে দিতেন না।রিংকু এসে ফ্রেশ হয়ে ঠাকুরদালানে চলে গেছিল। দীপক ব্যালকনিতে বসে ছিল চুপচাপ। বেশি ভিড় পোষায় না তার। যদি রিংকু ডাকে, তবেই সে নিচে যাবে। ঘরে ঢুকেই একপ্রস্থ কথা শুনতে হয়েছে রিংকুর কাছে। কেন কল্যাণকে প্রণাম করেছে সে! দীপক অবাক হয়ে বলেছিল সবাইকেই করেছি, ওঁকে করলে সমস্যাটা কোথায়? উত্তরে রিংকু রাগি দৃষ্টি হেনে গেছে। সম্ভবত রাতে এই নিয়ে আরও কিছু হতে পারে। পুকুরের দিকে তাকাতে দীপকের চোখে পড়ল পিকলু মন দিয়ে ছিপ ফেলে বসে আছে। দীপক ঘর থেকে বেরোল। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই রিংকুর সঙ্গে দেখা। রিংকু ব্যস্ত হয়ে কোথাও একটা যাচ্ছিল। তাকে দেখে বলল, “কোথায় যাবে? ঠাকুরদালানে?”দীপক বলল, “পিকলুর কাছে যাচ্ছি।”রিংকু অবাক হয়ে বলল, “পিকলু কোথায়?”দীপক বলল, “মাছ ধরছে।” রিংকু বলল, “তুমি কী করবে গিয়ে? তুমি মাছ ধরতে পারো?”দীপক বলল, “না। দেখব।”রিংকু বলল, “খেয়েছ?”দীপক বলল, “এখন খিদে নেই। রাস্তায় স্যান্ডউইচ খেলাম তো।”রিংকু বলল, “যাও, যেখানে ইচ্ছা যাও, আমার এখন একগাদা কাজ।”রিংকু ব্যস্ত হয়ে বাড়ির ভিতরে গেল। দীপক হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। রিংকু বারণ করলে তার যাওয়া হত না।পিকলুর সঙ্গে সারাবছর তার খুব বেশি কথা হয় না। তবে এখানে এলে পিকলুর সঙ্গেই সে সাধারণত বেশি থাকে। পিকলু খাওয়াদাওয়া ভালোবাসে। সেও। দুজনে মিলে মেলায় গিয়ে গান্ডেপিন্ডে গেলে। সান্যালবাড়িতে খাওয়া নিয়ে হাজার রেস্ট্রিকশন। প্রচুর এঁটোকাটা মানা হয়। রিংকুর মধ্যেও শুচিবাই আছে।তাকে দেখে খুশি হল পিকলু, “বাড়ি তো সরগরম। কী বুঝলে?”দীপক বুঝতে না পেরে বলল, “কী বুঝব?”পিকলু অবাক হয়ে বলল, “তুমি কি এরকমই বোকা, নাকি অভিনয় করো বলো তো সবসময়?”দীপক বলল, “আমি সত্যি বুঝিনি। কোন ব্যাপারে বলছ? মিষ্টির ব্যাপারে?”পিকলু মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ। বাড়ির জামাই মরেছে অথচ বাড়িতে কারও কোনও হেলদোল নেই। লোক খাচ্ছে, পুজো হচ্ছে, সবাই হইহই করছে, সব কিছু কেমন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না?”দীপক একটু ভেবে বলল, “এতটা তো ভাবিনি।”পিকলু বলল, “ভাবো ভাবো। না ভাবলে কী করে হবে? এখনও কত কিছু দেখার আছে জীবনে।”দীপক কয়েক সেকেন্ড চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে বলল, “তোমার ছেলে কেমন আছে?”পিকলু বলল, “ঘুমাচ্ছে। ভালোই আছে। তোমাদের কী খবর? পাঁচ বছর তো হল। কোনও খবরই পাচ্ছি না।”দীপক লজ্জা পেয়ে বলল, “হবে নিশ্চয়ই।”পিকলু বলল, “দিদি চায় না, তাই তো?”দীপক বলল, “না মানে ব্যাপারটা সেরকম না।”পিকলু বলল, “জেঠু কিন্তু দুনিয়াশুদ্ধ লোককে ফ্যামিলি প্ল্যানিং নিয়ে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে, শুধু নিজের মেয়ের বেলায় টুঁ শব্দটি নেই।”দীপক চুপ করে থাকল। পিকলু বলল, “মেলায় যাবে আজ?”দীপক বলল, “রিংকু যাবে বলছিল।”পিকলু বলল, “হয়ে গেল আর কি! যাও তবে ওর সঙ্গে।”দীপক একটু ইতস্তত করে বলল, “মিঠুনের বডিটা কোথায় আছে বলতে পারবে?”পিকলু দীপের দিকে তাকিয়ে বলল, “পোস্টমর্টেম হচ্ছে শুনছিলাম।”দীপক বলল, “দেখতে যাবে?”পিকলু অবাক হয়ে দীপকের দিকে তাকাল। একটা মাছ ঘাই মারছিল ছিপে। সে খেয়াল করল না।
১৭
খাসির মাংস আর ভাত। ভাতের হাঁড়ি আর মাংসের কড়াই দিয়ে গেল বিপিন কনস্টেবল। সঙ্গে দুটো থালা, গ্লাস।
আয়োজন দেখে চমকে ঘেঁটু বলল, “গুরু, হাজতে খাসির মাংস? ভাবতে পারছি না যে?”
বিপিন বলল, “জামাই এসেছে না? ওর জন্যই বড়োবাবু আনালেন।”
শম্ভু একটুও অবাক হল না। মন দিয়ে থালায় মনোনিবেশ করল।
ঘেঁটু খেতে খেতে বলল, “উফ, কতদিন পরে খাসির মাংস খেলাম। শেষ খেয়েছিলাম একটা বিয়েবাড়িতে।”
শম্ভু বলল, “তোকে বলেছিল?”
ঘেঁটু বলল, “না না। মাঝে মাঝে এদিক সেদিক খেয়ে আসি।”
শম্ভু বলল, “ধরা পড়লে মার খাস না?”
ঘেঁটু বলল, “উহ, মারবে, অত সোজা নাকি? উপহার নিয়ে যাই তো! চক্ষুলজ্জা বলে জিনিস আছে তো মানুষের।”
শম্ভু বলল, “মাংসটা কার জন্য খাচ্ছিস বুঝতে পারছিস তো?”
ঘেঁটু একগাল হেসে বলল, “সে আর বলতে। দুজনের জন্য এক কিলো মাংস দিয়েছে। থানায় এসেছি না বউদিবাড়ি এসেছি বুঝতেই পারছি না।”
শম্ভু বলল, “বউদিকে খুব ভালোবাসিস?”
ঘেঁটু বলল, “আমি না ভালোবাসলে কে ভালোবাসবে? দাদা তো সেই কোন মুলুকে থাকে, ন মাসে ছ মাসে একবার থাকে। আমি না দেখলে কে আর দেখবে!”
শম্ভু থালায় ভাত নিল আরও। রম্পার কথা মনে পড়ল তার। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাত মাখতে শুরু করল।
ঘেঁটু বলল, “আমি গেলে বউদি আদর করে ভাত খাওয়ায়। ঘুম পাড়িয়ে দেয়। দোষের মধ্যে মাগির বড়ো বায়না। মাঝে মাঝে বড়ো ঘ্যানঘ্যান করে।”
শম্ভু বলল, “দাদা টাকা পাঠায় না?”
ঘেঁটু দাঁত বের করে বলল, “সে আর পাঠায়? দাদা দ্যাখো গে সে মুলুকে গিয়ে আবার কোনও বউদি ধরেছে।”
শম্ভু বলল, “সোনা কত করে ভরি যাচ্ছে জানিস?”
ঘেঁটু মেটে ভেঙে ভাতে মাখতে মাখতে বলল, “আমি আদার ব্যাপারী, সোনার দাম কত জানব কী করে? বড়োবাবু এলে জিজ্ঞেস করে নিয়ো।”
শম্ভু বলল, “বেটি চারদিক থেকে লোকের গয়না দেখে আসবে, আর বাড়িতে এসে খালি আমার চাই আমার চাই করবে। তাই দেব, সদর থেকে নিয়ে আসব।”
ঘেঁটু ভাত চিবোতে চিবোতে অবাক গলায়, “কে? তোমারও বউদি আছে নাকি?”
শম্ভু বিরক্ত হল, “আমার বউ।”
ঘেঁটু বলল, “তোমার বউ তো এল না দাদা।”
শম্ভু বলল, “ওর হেবি রাগ। কাল থালা ছুড়ে মেরেছিলাম তো। এখনও রাগ করে বসে আছে।”
ঘেঁটু সন্তর্পণে মাংসের কড়াই থেকে দু পিস নিতে নিতে বলল, “মেয়েমানুষের রাগ না হলে ভালো লাগে নাকি? রাগ হবে, তবেই তো মজা।”
শম্ভুর রম্পার জন্য একটু একটু মনখারাপ হচ্ছিল। আগের দিনের কথা মনে পড়ায় একটু অনুশোচনা হচ্ছিল। সে আর খেতে পারল না। থালা রেখে উঠে পড়ল।
ঘেঁটু অবাক গলায় বলল, “এ কী! এত খাবার কে খাবে এবারে?”
শম্ভু বলল, “তুই খেয়ে নে।”
ঘেঁটু আর দ্বিতীয় কোনও কথা বলল না। মন দিয়ে খেতে লাগল।
শম্ভু মুখ হাত ধুয়ে বসতে যাবে এমন সময় নির্মলবাবু এসে বললেন, “তোমার জন্য খুশির খবর আছে শম্ভু। এখনই তোমাকে ছেড়ে দেবার অর্ডার এসেছে।”
শম্ভু অবাক হল না। বলল, “এখনই বেরোব?”
নির্মলবাবু বললেন, “হ্যাঁ, তোমার বন্ধুরা তোমাকে নিতে এসে গেছে।”
ঘেঁটু খেতে খেতে বলল, “আমাকেও ছেড়ে দিন না বড়োবাবু, একটা ব্লাউজের জন্য এত ঝামেলা আর পোষাচ্ছে না বিশ্বাস করুন।”
নির্মলবাবু ঘেঁটুকে ধমক দিয়ে বললেন, “মাংস ভাত দেওয়া হয়েছে তো। কোন খারাপটা আছিস তুই?”
ঘেঁটু ঘাড় চুলকে খানিকক্ষণ ভেবে বলল, “সেটা মন্দ বলেননি। আচ্ছা রাতে কি মাছ হবে না মাংস?”
নির্মলবাবু কটমট করে ঘেঁটুর দিকে তাকালেন। ঘেঁটু গতিক সুবিধের নয় বুঝে মাংসে মনোনিবেশ করল।
নির্মলবাবু বিপিনকে বললেন, “শম্ভুকে ছেড়ে দিন।”
শম্ভু বেরিয়ে দেখল দেবুরা তার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। সে নির্মলবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, “কোথাও সই করতে হবে?”
নির্মলবাবু হাসিমুখে বললেন, “না না। সাবধানে যেয়ো।”
শম্ভু দেবুর কাঁধে হাত রেখে বলল, “বিলিতি খাব আজ। আমি খাওয়াব।”
দেবু বলল, “ঠেকে নিয়ে এসেছি আসার আগেই। চ গিয়ে বসি।”
শম্ভু খুশিমনে বেরোল।
থানা থেকে বেরিয়ে ধানি জমি শুরু। শম্ভু দেবুর বাইকে উঠল। চারটে বাইকে আটজন। খেত ভেদ করে বাইক চলছে।
শম্ভু বলল, “আমি একবার বাড়ি হয়ে ঠেকে যাব বুঝলি? বউটা হেবি রাগ করে আছে।”
দেবু বলল, “ঠিক আছে।”
কিছুটা গিয়ে দেবু বাইক দাঁড় করাল। শম্ভু অবাক হল, “কী হল?”
দুজন এসে সরাসরি শম্ভুর পিঠে ছুরি মারল।
শম্ভু অবাক হবার সময়টুকুও পেল না।
১৮
“তোর হাতেরটা নতুন নিলি?”
দুপুরে খাওয়ার পরে ঠাকুরদালানে তনয়াকে দেখে বলল রিংকু।
তনয়া বলল, “না তো, এটা তো আগের বছরও ছিল। দেখোনি?”
রিংকু বলল, “না তো!”
তনয়া বলল, “কোনও কারণে মিস করে গেছিলে হয়তো।”
রিংকু একটু চিন্তিত হয়ে বলল, “তাই হবে। তবে আমার তো মিস করার কথা না। গয়না হলে সবথেকে বেশি চোখ পড়ে যায় আমার।”
তনয়া হাসল, “গতবার আমরা নবমীর দিন এসেছিলাম। দুদিনে নজর পড়েনি, দেখাও তো খুব বেশি হয়নি। এসে থেকেই দেখেছিলাম তুমি খুব ব্যস্ত ছিলে।”
রিংকু বলল, “তা ঠিক। সপ্তমী অবধি তাও দম ফেলবার ফুরসত থাকে। অষ্টমী, নবমী, দশমী কেমন ঝড়ের বেগে কেটে যায়।”
বাড়ির বাইরে প্যান্ডেল হয়েছে। গ্রামের লোকেরা সেখানে খাচ্ছে। সত্যেন, জীবেন ওখানেই তদারকি করছেন।
তনয়া বলল, “মিষ্টির সঙ্গে দেখা করেছ?”
রিংকু বলল, “না। কখন যাব?”
তনয়া বলল, “খারাপ লাগল ওকে দেখে।”
রিংকু তনয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল, “কেন খারাপ লাগল?”
তনয়া অবাক হল, “খারাপ লাগারই তো কথা, তাই না?”
রিংকু কথাটা ঘোরাতে চাইল, “তোরা ব্যাঙ্গালোরে নতুন ফ্ল্যাটে শিফট করে গেছিস? এবার আমরা যাব কিন্তু।”
তনয়া বলল, “সে তো যাবেই, কতবার বলেছি তোমাদের। গত মাসে তো মিষ্টিরাও…”
কথাটা বলে তনয়া চুপ করে গেল।
রিংকু বলল, “মানে? মিষ্টিরা গেছিল?”
তনয়া থতোমতো খেয়ে বলল, “না না, ওই আর কি, আসবে আসবে বলেছিল, শেষ পর্যন্ত আসেনি।”
রিংকু সন্দিগ্ধ চোখে তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোদের সঙ্গে ওদের যোগাযোগ ছিল, তাই না?”
তনয়া হাসার চেষ্টা করল, “কোথায় আর। একবার ফোন করেছিল শুধু।”
রিংকু বলল, “বাবা জানলে কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে।”
তনয়া বলল, “বাবা তো অনেক কিছু জানলেই কুরুক্ষেত্র হবে দিদি। দু বছর আগে অষ্টমীর দিন কী খেয়েছিলাম আমরা ভুলে গেলে?”
রিংকু বলল, “সেটা একরকম। পুজোর সময় আমার নিরামিষ একেবারেই ভালো লাগে না। কিন্তু মিঠুনের সঙ্গে তোদের যোগাযোগ ছিল, এটা শুনলে অনেক ঝামেলা হতে পারে।”
তনয়া বলল, “ঝামেলা তো সব কিছুতেই হতে পারে। তোমার ভাই আমাকে লুকিয়ে এক কলিগকে নিয়ে ঘুরতে গেছিল। আমি তো সেসব জেনে বুঝেও চুপ করে আছি। ঝামেলা করলেই ঝামেলা।”
রিংকু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, “পিকলু? হতেই পারে না।”
তনয়া ম্লানমুখে হাসল। বলল, “এই কথাটা জেঠুকে বলব ভেবেছি। ভালো হয় না বললে?”
রিংকু অন্য দিকে তাকাল, “সেটা তোদের ব্যাপার। ভালো মন্দ নিজেদের সম্পর্কের ব্যাপারে তোরা ভালো বুঝবি।”
তনয়া বলল, “সেটাই। বড়োরা তো জাত ধর্ম ঠিক করে বিয়ে দেবে। ছোটোরা সে বিয়েতে ঝামেলা হলে নিজেরা বুঝে নেবে। তাই না?”
রিংকু বলল, “বাবা জানলে তোর কি কোনও সুরাহা হবে? মনে হয় না। বাবা তোকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার প্রাচীন কনজারভেটিভ পদ্ধতিতে বুঝিয়ে দেবে তোর বর বিপথে গেছে তার দোষটাও আসলে তোরই। তুই-ই নিজের বরকে বেঁধে রাখতে পারিসনি। সুখী রাখতে পারিসনি।”
তনয়া হাসল, “তা ঠিক বলেছ। তবে গল্পে একটা ট্যুইস্ট আছে।”
রিংকু বলল, “কীরকম?”
তনয়া বলল, “ইদানীং আমারও একটা অ্যাফেয়ার হয়েছে। খানিকটা জোর করেই। জেদের বশে বলতে পারো। ফেসবুকে আলাপ। একদিন দেখাও করেছি ছেলেটার সঙ্গে।”
রিংকুর মুখটা হাঁ হয়ে গেল। একটু সামলে বলল, “পিকলু জানে?”
তনয়া বলল, “সমস্তটাই। আপাতত আমাদের যুদ্ধবিরতি চলছে। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলি না।”
রিংকু মাথায় হাত দিল।
বলল, “তোরা কি ডিভোর্সের কথা ভাবছিস? বাচ্চাটার কী হবে?”
তনয়া বলল, “জানি না। ব্যাপারটা ডেলি সোপ হয়ে যাচ্ছে না?”
রিংকু অবাক হয়ে তনয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল।
১৯
দীপককে নিয়ে সত্যেন ঠাকুরদালানে বসেছেন। দীপকের ইচ্ছা ছিল না। শ্বশুরের নজরে পড়ে গেছিল।
বিকেল সোয়া চারটে। কিছুক্ষণ আগে ব্যাচ শেষ হয়েছে। সত্যেন বললেন, “তোমার অফিস কেমন চলছে?”
দীপক বলল, “ভালো।”
জীবেন এখনও বাইরের প্যান্ডেলে আছেন। যারা পরিবেশন করছিল তারা খেতে বসেছে।
সত্যেন বিড়বিড় করে বললেন, “কাল অনেক কাজ, লুচি হবে, জেলার সভাপতি আসবেন, ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠে পড়তে হবে।”
দীপক বলল, “রাতে আমরা একটু বেরোতে পারি বাবা।”
সত্যেন সে কথার উত্তর না দিয়ে বললেন, “তোমার একটা ট্রান্সফার হবে শুনছিলাম, সেটা কি হবে?”
দীপক বলল, “হ্যাঁ। জানুয়ারিতে। তিন বছরের জন্য একটা প্রোজেক্টে লন্ডন যাবার কথা চলছে।”
সত্যেন বললেন, “তা যাও, রিংকুকে ছ মাস পরে এসে নিয়ে যাবে?”
দীপক মাথা নাড়ল। সত্যেন বললেন, “ভালো। মেয়েটা কদিন আমার কাছে থাকুক।”
দীপক খানিকটা ইতস্তত করে বলল, “আমাদের বাড়িতে থাকার কথা বলছিল মা।”
সত্যেন দীপকের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ও। ঠিক আছে। আমি তোমার মার সঙ্গে কথা বলে নেব।”
দীপক মাথা নাড়ল। সত্যেন বললেন, “তোমার বাবা কেমন আছেন?”
দীপক বলল, “ভালো।”
সত্যেন বললেন, “বিদেশে যাচ্ছ, খাওয়াদাওয়া নিয়ে খুব সাবধান কিন্তু। উলটোপালটা মাংস খাবে না। সে ব্যাপারে আশা করি তোমার সম্যক ধারণা আছে।”
দীপক বলল, “আছে।”
সত্যেন বললেন, “এখন তো অনেকরকম ফ্যাশান হয়েছে। ছেলেপিলের পাখা গজাচ্ছে। যা ইচ্ছা তাই করছে। তবে তোমার ওপর আমার এখনও ভরসা আছে।”
দীপক সন্তর্পণে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সত্যেন বললেন, “ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভেবেছ?”
দীপক ঘাবড়াল খানিকটা, “ভবিষ্যৎ মানে?”
সত্যেন বললেন, “সন্তান সন্ততি কী হবে, কবে হবে কিছু ঠিক করেছ তোমরা?”
দীপক বলল, “সেটা আমি ওর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। যেমন চাইবে।”
সত্যেন খানিকটা বিদ্রুপের সুরে বললেন, “তাহলে তো তুমি বড়ো সমস্যায় পড়বে। নিজের মতামত রাখতে এত কুণ্ঠা কেন?”
দীপক বলল, “আমিও এ ব্যাপারে খানিকটা ওর সঙ্গে একমত।”
সত্যেন বললেন, “এত একমত হচ্ছ বলেই সংসারের রাশটা রাখতে পারছ না। পুরুষ হবে পুরুষের মতো। মেয়েদের আঁচল ধরে চলা পুরুষ আমার একেবারেই পছন্দ না। রিংকু আমার মেয়ে হতে পারে, কিন্তু আমি চাইব তুমি একজন প্রকৃত পুরুষের মতো চলাফেরা কর।”
দীপক এ কথার উত্তরে কিছু বলল না। হাসি হাসি মুখে বসে থাকল। জীবেন এসে সত্যেনের পাশে বসলেন, “তাহলে ওরা থাকছে।”