জিনিয়া বলল, “আপনি কি আমাকে পছন্দ করবেন?”
উদ্দালক বলল, “আপনাকে পছন্দ না করলেও আগামী কয়েক মাস আমাকে মেয়ে দেখে বেড়াতে হবে। মা ছাড়বে না। আমি প্রেম-ট্রেম অত বুঝি না বুঝলেন। কাঠখোট্টা টাইপ লোক। তবে আপনার পাস্ট শুনে খারাপ লাগছে এটাও সত্যি।”
জিনিয়া বলল, “আমি কারও সিমপ্যাথি চাই না।”
উদ্দালক বলল, “আমি সিমপ্যাথাইজ করছিও না। জাস্ট বললাম।”
জিনিয়া বলল, “ওরা আমাকে পাগল ভাবে।”
উদ্দালক বলল, “কারা?”
জিনিয়া বলল, “সবাই। সৌপ্তিক চলে যাবার পর ওর বাড়ি যেতাম অফিস না গিয়ে। ওর অ্যালবামগুলো ঘাঁটতাম। ওর আলমারি গুছিয়ে দিয়ে আসতাম। ওর বাবা মা ওর দাদার কাছে দেরাদুনে চলে গেল। ওর মা বলল ওদের বাড়ি বেচতে পারে। আমি কিনব ভাবলাম হোম লোন নিয়ে। এসব শুনে আমার বাবা মা ভাবল আমি হয়তো পাগল হয়ে গেছি। সবাই বলে এগিয়ে যাও, এগিয়ে যাও, মুভ অন করো। সব ভুলে এগিয়ে যাওয়া এত সোজা বুঝি?”
উদ্দালক বলল, “আপনি আপনার প্রেমিককে ভালোবেসে তার বাড়িটা কিনে নিতে চেয়েছিলেন?”
জিনিয়া মাথা নাড়ল।
উদ্দালক নীললোহিত সমগ্র হাতে নিল। তৃতীয় খণ্ড। গোটা গোটা অক্ষরে সৌপ্তিক লিখেছিল, “তিন্নিকে সতু।”
বইটা বন্ধ করে রেখে সে বলল, “বেশ করেছিলেন। এতে কে কী বলল অত কান দেওয়ার দরকার ছিল না। যারা এতে সমস্যা দেখেছে, তাদের সমস্যা আছে।”
জিনিয়া বলল, “আমি কোনও দিন ওকে ভুলতে পারব না। যাকেই বিয়ে করি, আমি সুখী হব না।”
উদ্দালক বলল, “সেটাও অস্বাভাবিক কিছু না। আচ্ছা, আপনাদের বাড়ি থেকেই কি লুচির গন্ধ আসছে?”
জিনিয়া বলল, “হ্যাঁ, মা ভাজছিল।”
উদ্দালক বলল, “এই যে যতবার ছেলে পক্ষ দেখতে আসে, আপনার মা লুচি করেন?”
জিনিয়া বলল, “সৌপ্তিকরা যখন এসেছিল মা করেছিল। তারপরে আপনারাই প্রথম এলেন।”
উদ্দালক বলল, “ভীষণ অপচয়। দেখুন আপনার যা অবস্থা দেখলাম, তাতে আপনাকে বাড়ির ইমোশনাল অত্যাচার সামলাতে বিয়ে করতেই হবে। আমাকেও করতে হবে। নইলে আপনাদের বাড়িতে লুচির পর লুচি হয়ে যাবে, আর আমাকে প্রতি শনি-রবিবার বাবা-মার সঙ্গে টো টো কোম্পানি করতে হবে। চলুন আমরা বিয়ে করে নি। আমি এক ঘরে শোব, আপনি আর-এক ঘরে শোবেন। ইট উইল বি লাইক এ কন্ট্র্যাক্ট। খারাপ হবে?”
জিনিয়া কয়েক সেকেন্ড উদ্দালকের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি কিন্তু কোনও দিন ভুলেও আমাকে ছুঁতে দেব না। আর সৌপ্তিকের বাড়ির চাবি আমার কাছে আছে। মাঝে মাঝেই আমি সে বাড়ি যাব। আমি ওকে নিয়েই সারাজীবন কাটাব। আপনার কোনও আপত্তি থাকবে তাতে?”
উদ্দালক মাথা নাড়ল, “একেবারেই নয়। আমি অঙ্কের লোক। শান্তিপ্রিয়ও বটে। আপনাকে আমার ঠিকঠাক লাগছে। আমার আপনাকে বিয়ে করতে কোনও আপত্তি নেই। আপনি করবেন?”
জিনিয়া বলল, “আমি কিন্তু যে শর্তগুলো বললাম, একদম স্ট্যাম্প পেপারে আপনাকে দিয়ে সই করিয়ে নেব। আপনারও কোনও শর্ত থাকলে সেগুলো আপনি আমাকে বলতে পারেন। আমিও সই করে দেব।”
উদ্দালক বলল, “শর্ত একটাই। আপনি আমার প্রাইভেসিতে ঢুকবেন না। আমিও আপনার এরিয়ায় ঢুকব না। ডান?”
জিনিয়া উদ্দালকের দিকে তাকিয়ে কিচ্ছু না ভেবে বলল, “ডান।”
১৫
দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে তারা বেরোল জিনিয়াদের বাড়ি থেকে। ট্যাক্সিতে উঠেই মা জিজ্ঞেস করল, “অত কী কথা বলছিলি রে বাবু?”
বাবা বলল, “সেটা ও কেন বলতে যাবে? নিশ্চয়ই প্রাইভেট কোনও কথাই হবে।”
মা বলল, “এখন প্রাইভেট কোনও কথা হয় না। যা হয় বিয়ের পরে। সবাই মিলেই তো ঠিক করতে হবে।”
উদ্দালক বলল, “এখানেই বিয়ে করব। কথা এগিয়ে নাও।”
মা বলল, “মানে? তুই-ই ঠিক করে নিলি? কী এমন কথা হল?”
উদ্দালক বলল, “কথার কিছু না। প্রতি শনিবার সিএল নিয়ে তো মেয়ে দেখতে যাওয়া সম্ভব না। এই মেয়েকেই বিয়ে করে নেব। ঠিকঠাক লেগেছে।”
বাবা খুশি হয়ে বলল, “দ্যাখো, ছেলে আমার মতো হয়েছে। তুমি তো মেয়ে পছন্দ করছ না শাড়ি পছন্দ করছ বুঝেই উঠতে পারি না। দেখেই যাবে, দেখেই যাবে। তারপর সবথেকে ওঁচা শাড়িটা নিয়ে ঘরে আসবে।”
মা বলল, “আমি ওঁচা পছন্দ করি? আর তুমি? নিজে যে জামাগুলো পরো সেগুলো কে পছন্দ করে দেয় তোমায়?”
ট্যাক্সির ড্রাইভারকে মৃদু মৃদু হাসতে দেখে উদ্দালক বলল, “শোনো, এখন রাস্তাঘাটে ঝগড়া করে তো লাভ নেই। বাড়িতে গিয়ে ঝগড়া কোরো।”
মা বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ মানে যে কত চিন্তা তা যদি তুই বুঝতি! পৃথিবীর সবাই লাভ ম্যারেজ করে বাচ্চার বাবা হয়ে গেল, আর তোর জন্য টাকা খরচা করে মেয়ে দেখতে আসতে হচ্ছে। তোর লজ্জাও লাগে না।”
উদ্দালক বলল, “আমার প্রেম-ট্রেম পোষায় না। প্রেম করেই বা কটা লোক ভালো আছে? তোমাদের তো প্রেম করে বিয়ে। ভালো আছ নাকি তোমরা? সারাক্ষণ ঝগড়া করে যাচ্ছ।”
মা ধমক দিল, “তোকে অত বুঝতে হবে না। ঝগড়াটাও ভালো থাকার মধ্যেই পড়ে। অত বুঝলে তো হয়েই যেত। কী গো, ঠিক বলছি তো?”
বাবা খুক খুক করে কাশতে কাশতে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা খুব ভালো আছি। শুধু তোর মা একটু বকাঝকা বেশি করে এই যা।”
মা বলল, “কী? আমি বকাঝকা করি?”
বাবা হাসতে লাগল, উদ্দালক, সঙ্গে ট্যাক্সি ড্রাইভারও।
মা বলল, “ঠিক আছে, আমি মেয়ের মাসিকে খবর দিচ্ছি, ব্যাপারটা এগিয়ে নিয়ে যাক। ওরা একবার আসুক আমাদের বাড়ি। তোর স্কুলেও যদি ভেরিফিকেশনের জন্য যায়, ঘুরে আসুক। তবে মনে হয় না অত কিছু করবে। ভদ্র ফ্যামিলিই মনে হল। তবু তোর মাসিদের সঙ্গে একবার কথা বলে নেব। একটা বিয়ে মানে অনেক ঝামেলা।”